![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অসাধারণ সাধারণ ভিন্ন অভিন্ন সবই সমানুপাতিক
পৃথিবীজুড়ে যে দেশগুলোতে মাথাপিছু বনের পরিমান খুবই কম বাংলাদেশ তার একটি। বর্তমানে মাথাপিছু বনের পরিমাণ ০.০২ হেক্টর যা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ০.৩৮ হেক্টর ছিল। অন্যদিকে একটি দেশের পরিবেশ ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে মোট ভূমির ২৫% বনভূমি থাকা আবশ্যক অথচ বাংলাদেশে সে পরিমাণ বনভূমি নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশর জন্য যে হুমকি রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বনভূমি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যে পরিমাণ বনভূমি অাছে দেশে তাও বিভিন্ন ভাবে উজাড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত । বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন এগিয়ে যাচ্ছে, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র বন তৈরী , বাড়ীর অঙিনায় বৃক্ষ রোপন করা, বাসার ছাদে নার্সারি তৈরী ইত্যাদি বিষয়গুলোতে মানুষের সচেতনতা বাড়ছে। বন বিভাগের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০০৫-৭ সালে দেশের মোট বনভূমির ১৬ ভাগ ছিল কৃত্রিম বন এবং বাকী অংশ প্রাকৃতিক, আর ২০১৬ সালে কৃত্রিম বনের পরিমাণ ২০ ভাগে এসেছে। যা বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন ও উপকূল বনায়ন কর্মসূচীর অবদান বলা হয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী মোট বনভূমির যে ৮০% প্রাকৃতিক বন অাছে তা মুলত তিনটি অঞ্চলে বিস্তৃত। ১: পার্বত চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের চিরহরিৎ বনাঞ্চল ২: ময়মনসিংহ -টাঙ্গাইল ও রাজশাহী অঞ্চলের শাল বনাঞ্চল এবং ৩: উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এসব বনভূমির গাছ নিধন প্রক্রিয়া চলছে অবাধে যা দৈনিক পত্রিকায় এখন সচরাচর দেখা মিলে।
বন ধ্বংশ প্রক্রিয়ার গত বছরের (২০১৬) কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বাংলাদেশর সম্মুখে অশনি সংকেত বিরাজমান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে ২০১৩ সাল থেকে ইটের ভাটা নবায়ন করা স্থগিত থাকা সত্যেও বর্তমানের প্রায় ২৬ ইটের ভাটা সক্রিয়। এতে ইটের ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বনের গাছ অন্য দিকে মাটির উপরিভাগ উর্বর অংশ যা বৃক্ষের জন্য আবশ্যক সেটি ইট তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বন আইন অনুশারে এসব বনাঞ্চলে ইট তৈরির জন্য কৃষি জমি, পাহাড়, টিলা, পুকুর, খাল থেকে মাটি নেয়া অবৈধ। এ চিত্র শুধু খাগড়াছড়িতেই নয় রাঙ্গামাটি, বান্দরবন একই ভাবে চলছে। রাঙ্গামাটি থেকে বান্দরবন যাওয়ার পথে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তার নিচে দেখা যায় ইটের ভাটা। সিলেটের জাফলং এলাকায় বন দখল করে ডাম্পিং স্পট তৈরি করে চলছে পাথর আর কয়লার ব্যবসা।
টাঙ্গাইলের সখিপুরে, ময়মনসিংহের ভালুকায় বিভিন্ন সংরক্ষিত বনের বন উজাড় হচ্ছে রাতের আধারে, এসব গাছ বহন করা হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ীতে, নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিকটস্থ করাতকলে এবং প্রকাশ্যে ফার্নিচার দোকানিরা ক্রয় করছেন। এছাড়া এসব অঞ্চলে আগুন দিয়ে গাছ পুড়িয়ে ভূমি দখল করার এক সংস্কৃতি চালু হয়েছে। ইকোটুরিজমের নামে এসব বনের পাশে রিসোর্ট বনাচ্ছে একদল, তারাই এ পদ্ধতির ব্যবহার করছে বেশি। বন অাইন অনুশারে এসব সংরক্ষিত বনের ১০ কি.মি.'র মধ্যে করাত কল স্থাপন নিষিদ্ধ থাকা সত্যেও করাত কলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। বিভিন্ন অভিযানে কিছু দিন বন্ধ থাকলে পুনরায় অাবার সক্রিয় হয়।
উপকূলীয় এলাকার বৃক্ষ নিধন বা বন উজার হচ্ছে কি হারে তা একটি প্রতিবেদনে পরিষ্কার হওয়া যায়, গত পাঁচ বছরে ভোলা জেলায় বন উজাড় সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ২ শত ৩১ টি শুধুমাত্র গত বছরেই (২০১৬) মামলা হয়েছে ৩৫ যাতে জড়িত অাছে ৮০০ জনের অধিক ব্যক্তি। সুতরং বুঝাই যাচ্ছে চলছে বন উজার প্রক্রিয়ার চলমান ধারা কতটুকু সক্রিয় । অাশার দিক এটা যে অাইনের অাওতায় অাসছে জড়িতরা কিন্ত এর বাহিরেও একদল থেকে যাচ্ছে । এছাড়া ৮১ বর্গ কিলোমিটার দ্বীপ নিঝুম দ্বীপের ছোয়া খালি ও শতপুল এলকায় বন উজার করে হালচাষের অভিযোগ আছে।
বন উজাড় থেকে আমাদের দেশের পরিবেশের ফুসফুস সুন্দরবন কতটুকু নিরাপদ? বন উজার করতে এখানে অাধুনিক ও নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে জাহাজ ব্যবহার করছে বৃক্ষ খাদক পরিবেশ ধ্বংষকারী মাহামানবরা। আইলা ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে সুন্দরবনে মৎস, কাঁকড়া, মধু সংগ্রহের অনুমতি দেয়া বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন আবার সক্রিয় হচ্ছে বন দস্যুরা। অবাক করা বিষয় হলো সুন্দর বনে অাগুন দেয়া। শুষ্ক মৌসুমে আগুন দিয়ে ঝোপঝাড় পুড়িয়ে দিয়ে ভরা মৌসুমে ঔখানে মাছের প্রাচুর্যতার আশায় থাকে জেলেরা। যার ফলশ্রুতিতে আগুন লেগে যায় বনে।
এসব প্রকৃতিক বনভূমি কি ঠিক রেখে অামদের সামাজিক বনায়ন এগিয়ে নিতে হবে। বন বিভিগের রিপোর্টে যে ৪% কৃত্রিম বন বৃদ্ধি পেল ২০০৫ তুলনায় ২০১৬ তে তা যদি হয় সমাজিক ও উপকূল বনায়নের মাধ্যমে তবে প্রশংসার দাবিদার অার যদি হয় প্রাকৃতিক বন উজাড় করে তাহলে তাদের ভূমিকা, প্রতিবেদন হবে প্রশ্নবিদ্ধ।
বনভূমি দখল, বৃক্ষ নিধন, ইটের ভাটা স্থাপন, করাত কল প্রতিষ্ঠা, পাথর-কয়লার ব্যবসা ইত্যাদি ইত্যাদি বন উজাড় প্রক্রিয়ার সব কিছুই হচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী অথবা বন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। কারণ কোন জায়গায় খোদ বন কর্মকর্তাদের নাকের ডগায় চলছে বন উজাড় করা কিন্তু তারা নিরব। আবার কিছু জায়গায় অাইনি ব্যবস্থা নিলেও তার দৌঁড় বেশি দুর যায়না কারণ এরা প্রভাবশালী।
দেশের পরিবেশে, অর্থনীতিতে , ওষধ শিল্পে, কলকারখানায় বৃক্ষের অবদান অবর্ণনীয় । বন উজাড় প্রক্রিয়ায় যে বা যারাই থাকুক চাই সঠিক তত্ত্বাবধান, আইনের বাস্তবায়ন। ২৫% বনায়নের মাধ্যমে অামাদের দেশকে শান্তির সর্গে রূপান্তরকরণে অবদানকারী হতে হবে সব পর্যায় থেকে।
-------
তথ্যসূত্র :
১. দৈনিক পত্রিকা সমূহ।
২. বন অধিদপ্তর।
৩. বাংলাপিডিয়া
২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:১৫
অাব্দুল মান্নান বলেছেন: খালের পাশের ঝোপঝাড়ে অাগুন দিয়ে পুরে দেয়া হয়, পরবর্তীতে ছাই অবশিষ্ট থাকে এবং জোয়ার অাসলে এসব জায়গায় মাছ অবস্থান নেয়।
ধন্যবাদ।
৩| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৪০
চাঁদগাজী বলেছেন:
বন বিভাগের ৪% বনায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে হয়তো খাতা কাগজে; ওরা আসলে ডাকাত
৪| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৪৫
অাব্দুল মান্নান বলেছেন:
৫| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:৫৮
রিফাত হোসেন বলেছেন: এই বিষয়ে কিচ্ছু বলার নাই, ব্যথা লাগে বুকে অনেক।
বাড়ি করার জন্য, জায়গার সবগুলি গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। চিন্তা করেছিলাম বাচাঁনো যায় কিনা, তখন হয়ত বিল্ডিং ই করা যেত না এই পুচকে জায়গাতে। জায়গার মালিকানা আমার না, তাই আমার যায় আসে না। তবে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম...
কারন এটা আমার শৈশব নিয়ে বিস্তৃত ছিল।
কাঠাল, আম, পেয়ারা,আতাফল,লেবু, ডাব, সুপারি, সজনে কি ছিল না! তাও ঢাকার মত ব্যস্ত শহরে।
পরিবার যদি বড় হয় তখন অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
এলাকার রাস্তা বড় হচ্ছে,পাশের গাছ কাটা হচ্ছে। গ্রামে পাকা বাড়ি হচ্ছে, সেখানেও হচ্ছে, চারিদিক এই হাহাকার।
বনের কথা বাদই দিলাম। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও ছোটকালে গাছগাছালিতে ভরপুর দেখেছি, সোজা কথা জঙ্গল ছিল। আজ এই গুলা পুরাই পরিষ্কার হয়ে ইমারত, মাঠ!
দূরে ঘুরতে যাবার পথে যেখানে সব সময় বন জঙ্গল দেখতাম, প্রতি বছরই মনে হয়, একটু একটু করে কাটা হয়, বাড়ি হয়, দোকান হয়, পিকনিক স্পট হয়, বলা যায় কমতে থাকে মনে হয়।
৬| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:০০
প্রাইমারি স্কুল বলেছেন: ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে ৩০ লাখ গাছ রোপণের কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। গাছগুলো হবে শহীদদের নামে।তাই বন উজার হওয়ার সম্ভবনা নাই ??
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৫৭
পুলহ বলেছেন: "শুষ্ক মৌসুমে অাগুন দিয়ে ঝোপঝাড় পুড়িয়ে দিয়ে ভরা মৌসুমে ঔখানে মাছের প্রাচুর্যতার অাশায় থাকে জেলেরা।"-- এ বিষয়টা কি একটু ব্যাখ্যা করবেন ভাই?
"বন বিভিগের রিপোর্টে যে ৪% কৃত্রিম বন বৃদ্ধি পেল ২০০৫ তুলনায় ২০১৬ তে তা যদি হয় সমাজিক ও উপকূল বনায়নের মাধ্যমে তবে প্রশংসার দাবিদার অার যদি হয় প্রাকৃতিক বন উজাড় করে তাহলে তাদের ভূমিকা, প্রতিবেদন হবে প্রশ্নবিদ্ধ। "-- ভালো বলেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ এবং সচেতনতামূলক বিষয়বস্তুর একটা লেখা । লেখকের জন্য শুভকামনা রইলো !