![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইউব খানরে ফালাইয়া দেবার আন্দোলন করা রাজনৈতিক দলগুলিই পরের বছরের নির্বাচনে উইনার হলো। বাংলাদেশের ইতিহাসবিদরা সাধারণত ভুট্টোর আইউববিরোধী আন্দোলনের কথা মনে রাখেন না; পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ও ভাসানী ন্যাপ আর পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোর পিপলস্ পার্টি। দুই পাকিস্তানেই জোরদার আন্দোলনে আইউব পড়লেন, আইউবের পড়া মোটেই কেবল পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলনের ফল বলা যাবে না। এবং সত্তরের নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোর বিজয় পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের বিজয়ের চাইতেও বড়ো চমক আসলে; কারণ, পিপলস্ পার্টির বয়স তখন ৩ বছর মাত্র! এইখানে অপ্রাসঙ্গিক একটা কথা বলি: ১৯৬৭ সালে পিপলস্ পার্টি তৈরিতে একজন বাংলাভাষীর বিরাট অবদান ছিলো। তাঁর নাম জালালুদ্দিন আবদুর রহিম; কমিউনিস্ট জে. এ. রহিম চট্টগ্রামের লোক। পিপলস্ পার্টির একজন ফাউন্ডার উনি, প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল, পার্টির প্রথম ম্যানিফেস্টোর (Islam is our Religion; Democracy is our Politics; Socialism is our Economy; Power Lies with the People) লেখক, প্রথম শ্লোগানটাও (রুটি, কাপড়া অর মকান) ওনার লেখা।
দালাল মুসলীম লীগ এবং জামাতে ইসলামী পাকিস্তানের দুই দিকেই ধরা খায়; আইউববিরোধী আন্দোলনকারীদের ভোট দিছিলো পাকিস্তানের জনগণ। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সত্তরের নির্বাচনে ভোট দিতে আইউববিরোধীদের খুঁজছিলো নিশ্চই। কিন্তু তাঁরা মুজিব ছাড়া পায় নাই কাউকে, ভাসানী নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন (চীনা ভুতে ধরছিলো ওনারে!)। জনগণ ভাসানীরেও ভোট দেবার জন্য খোঁজাখুঁজি করার কথা; কারণ, ১৯৬৯-এর আইউববিরোধী আন্দোলনে ভাসানীও বড়ো নেতা, আওয়ামী লীগ জোর আন্দোলন করলেও মুজিব তখন জেলে। এই নির্বাচন না করায় ভাসানীর রাজনৈতিক মরণ হয় এবং পরবর্তী বাংলাদেশে উনি কলামিস্ট এবং লঘু রাজনীতিবিদ হিসাবে কয়েক বছর অনশন কইরা আর ফারাক্কায় কোদাল দিয়া কয়েকটা গায়েবি কোপ দিয়া-টিয়া লিটারেলি মরেন।
ভাসানীর রাজনৈতিক মৃত্যু বাংলাদেশের শাসন ও রাজনীতির জন্য মাল্টিডাইমেনশনাল বিপর্যয় তৈরি করে বলতে হবে। প্রথম সমস্যা হচ্ছে, মুজিব আর পূর্ব পাকিস্তান সমার্থক হইয়া উঠতে পারলো ভাসানীর রাজনৈতিক মৃত্যুতে। বাংলাদেশের ফ্রিডম ফাইটটা একান্তভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘটনা হইতে পারলো। অথচ ভাসানী নির্বাচন করলে মুক্তিযুদ্ধ হতে পারতো ন্যাপ এবং আওয়ামী লীগের কোয়ালিশন সরকারের নেতৃত্বে; এমনকি সত্তরের নির্বাচনে সম্ভবত এই দুই দল জোট করে নির্বাচন করতো; কেননা এই দুইটা দলকে মুসলীম লীগ, পিপলস্ পার্টি এবং জামাতে ইসলামীর বিরুদ্ধে জিততে হবে। ভাসানী নির্বাচন করলে স্বাধীন বাংলাদেশে শুরুতেই আমরা দুইটা বড়ো রাজনৈতিক দল পাইতে পারতাম।
এইটা হইতে পারে নাই ভাসানীর নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তের কারণে। ফলে জাতির আব্বা দেখলেন তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র বৈধ শাসক হবার যোগ্য; জনগণের প্রতিনিধি আর কোন নেতা বা রাজনৈতিক দল নাই। জাতির আব্বা ভুলে গেলেন যে, তিনি আব্বা হইলেও রাষ্ট্রের শাসক হিসাবে নাগরিকদের সারভেন্ট মাত্র। আমরা তখন বাকশাল পাইলাম। বাকশাল নিয়া বলতে গিয়া আমরা মাত্র জাতির আব্বার নিন্দা করি; কিন্তু আরো কিছু বিষয় খেয়াল করা দরকার। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি শেখ হাসিনার সরকারকে সম্মতি দিচ্ছে; সিভিল সোসাইটি এখন দেশী ওয়ার ক্রিমিনালদের শাস্তির লোভে সরাসরি বা চুপ থাকা বা দুই নেত্রীর সমান ভাগ করে দায় দেবার মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারকে অনুমোদন করে যাচ্ছে। গণতন্ত্র সাসপেন্ডেড রাখতে রাজি হয়ে আছে আমাদের সিভিল সোসাইটি। এই অনুমোদনের কারণে নিজের বৈধতা নিয়ে কোন সন্দেহ পাওয়া যায় না শেখ হাসিনার মাঝে।
একইভাবে ১৯৭৫ সালে সিভিল সোসাইটি সোসালিস্ট ড্রিমে অবসেসড হইয়া দলে দলে বাকশালে যোগ দিতে থাকেন; বুর্জোয়া পলিটিক্যাল দল আওয়ামী লীগরে দিয়া বিপ্লব করতে থাকে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি! সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা সিভিল স্বৈরতন্ত্রী শাসকরে সহযোগিতা দিলেন দলে দলে বাকশালে যোগ দিয়ে। একটি মাত্র বড়ো রাজনৈতিক দল থাকলে স্বৈরতন্ত্র ডেভলাপ করার উদাহরণ আমরা পাবো ইন্ডিয়ায়। সেই ১৯৭৫ সালেই ইন্ডিয়ায় ইন্দিরা গান্ধী ইমার্জেন্সি দিয়া স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেন। বাংলাদেশে যেমন জাসদ তৈরি হচ্ছিলো ৭২-৭৫ সালে ইন্ডিয়ায় তেমনি জনতা পার্টি; জাসদ যেমন খুনের মাধ্যমে রাজনীতি করতো ইন্ডিয়ার জনতা পার্টি তেমন ছিলো না। কিন্তু ইন্ডিয়ার কংগ্রেস এবং বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ—কোনটাই জাসদ বা জনতা পার্টিকে জনগণের রাজনৈতিক দল হিসাবে মানতে পারে নাই। কংগ্রেস এবং আওয়ামী লীগ—উভয়েই স্বৈরতন্ত্র দিয়া নতুন রাজনৈতিক দলের তৈরি হওয়াটারে মোকাবিলা করে। ইন্ডিয়ায় ১৯৭৭ সালে নির্বাচন হয় দুই বছরের ইমার্জেন্সির পরে; নির্বাচনে জিতে জনতা পার্টি প্রথম অকংগ্রেসি সরকার গঠন করে ইন্ডিয়ায়। বাংলাদেশে জাতির আব্বা মার্ডার্ড হন সেনাবাহিনীর হাতে। পাকিস্তানের দিকেও চাইতে পারি আমরা; ১৯৭৭ সালে সিভিল শাসক ভুট্টোকে উৎখাত করেন জেনারেল জিয়াউল হক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং মার্শাল ল জারি করেন।
১৯৭০ দশকে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সামরিক শাসনের তুলনামূলক আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাজনৈতিক ইনসাইট দিতে পারে আমাদের।
লোকে ভাবেন ৭৫’র ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে একটা সামরিক অভ্যুত্থান হলো। এটা ভুল; ১৫ আগস্ট দেশের প্রেসিডেন্টকে খুন করা হইলো মাত্র সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাতে। সিভিল পলিটিশিয়ান খন্দকার মোশতাক নতুন প্রেসিডেন্ট হইলেন। ক্যান্টনমেন্ট শাসন করবে বাংলাদেশ—এমন কোন চিন্তা এই খুনীদের মাঝে দেখা যায় নাই। তখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানতো, দেশের বৈধ শাসক হলেন সিভিল পলিটিশিয়ানরা। পাকিস্তানে জিয়াউল হকের অভ্যুত্থানের সাথে তুলনা করে বলবো, আমাদের ফ্রিডম ফাইটের মাধ্যমেই আমাদের সামরিক বাহিনীর ভিতরে সিভিল পলিটিশিয়ানদের এই শ্রেষ্ঠতা তৈরি হইছিলো। পরে খালেদ মোশাররফ পাল্টা জিয়াকে বন্দি করে অভ্যুত্থান করেন বটে কিন্তু তিনিও রাষ্ট্রের শাসন নিজের হাতে নেবার কথা ভাবতে পারেননি। দুয়েক জন সাংবাদিকের বরাতে জানা যায়, জাতির আব্বার খুনীরা আগে জেনারেল জিয়ার সাথে যোগাযোগ রাষ্ট্রের শাসন বিষয়ে আলাপ করছিলেন; জিয়া রাজি হননি সামনে থাকতে। এছাড়া খুনীরা রাষ্ট্রের শাসনের দিকটা সামলানোর জন্য মোশতাকের সহযোগিতা চান।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পার্থক্য ঘোচাবার কথা প্রথম ভাবেন কর্ণেল তাহের। তিনি আইউব খানের মতোই ভাবলেন, সিভিল পলিটিশিয়ানরা শাসন করলে জনগণের মুক্তি হবে না। বিপ্লবের অবসেশনের বাইরে থেকে তাহেরকে নিয়ে ভাবতে পারলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। আইউব খানের মতোই তিনি সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রের বৈধ শাসক ভাবলেন। তাহের বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সামরিক অভ্যুত্থান করেন জাসদের বেসামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। ৭ নভেম্বর বিপ্লবের প্রস্তুতি নাই বলে একমত হন জাসদের বেসামরিক/সিভিল নেতৃত্ব। জাসদের পলিটব্যুরোর অধঃস্তন সদস্য তাহের রিভল্ট করে জাসদে তাঁর অনুগত সিভিল এবং মিলিটারি সদস্যদের নিয়া বিপ্লব করতে গেলেন। খালেদ মোশাররফদের খুন করে খালেদের বন্দী জিয়াকে বন্দী করেন তাহের। জিয়ার মাধ্যমে পুরা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেন তাহের। জিয়া প্রথমে রাজি হন সম্ভবত; পরে প্রথম সুযোগেই তাহেরের হাত ফস্কে বেরিয়ে যান। তাহের-জিয়া-বিপ্লব নিয়ে আরেকটা লেখা দেখতে বলবো এখানে (দেশী বিপ্লবী বলতেই মনে তাহেরের মুখ ভাসলে বিপ্লবের সম্ভাবনা কমে)।
তাহেরের ফাঁসির পরে তখনি সামরিক শাসক হননি জিয়া। কিন্তু কিছুদিন পরে হলেও তাহেরের স্বপ্ন পূরণ করেন জেনারেল জিয়া; তাহেরের স্বপ্ন ছিলো—সেনাবাহিনী শাসন করবে দেশ, জিয়া সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন; তাহেরের ভাবশিষ্য হয়ে জিয়া ভাবলেন, সেনাবাহিনীই শাসনের সবচে যোগ্য প্রার্থী। ফ্রিডম ফাইটের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে ভিন্ন হয়ে পড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আবার সেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হিসাবে তৈরি করার ফিলজফার কর্ণেল তাহের। জেনারেল জিয়া এমনকি কর্ণেল তাহেরের অন্য স্বপ্নও পূরণ করেন; সেনাবাহিনী এবং জনগণের সমন্বিত শ্রমে খাল কাটার মাধ্যমে জিয়া তাহেরের জাসদের শ্লোগান ‘সিপাহী-জনতা ভাই ভাই’-এর প্রতীকী বাস্তবায়ন ঘটান। বাংলাদেশে সবচে ক্ষমতাবান, হিসাব-নিকাশের উর্ধ্বে এবং ধনী রাষ্ট্রীয় বাহিনী হিসাবে সেনাবাহিনীর উত্থানে তাহেরের কাছে কিছু লোন আছে ক্যান্টনমেন্টের।
কিন্তু জিয়াকে বিচার করার বেলায় আরো কিছু বিষয় ভাবতে হবে আমাদের। সেই ব্যাপারে পরে লিখবো।
ফেসবুকে নোট দিছিলাম ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:০০
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: অনেকদিন পর। ওয়েলকাম ব্যাক।