![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মালতীদের বাসা আমাদের বাসা শুধু কাছা-কাছিই ছিল না, আমার বাবা আর ওর বাবার মধ্য অন্তরঙ্গতাও ছিল । আমার বাবা যখন বরশিঁ নিয়ে পুকুড়ে জলের ধারে মাছ ধরতো সারাক্ষন মালতীর বাবা ইব্রাহিম মন্ডল তার পাশে বসে বসে কি নিয়ে আলোচনা করতো আর হাসতো । মাছ ধরা শেষ হলে বাবা আর মালতীর বাবা মিলে বাজারে যেত চা খেতে ।
মালতীর বাবা ওর মার সাথে প্রায়ই ঝগড়া করতো তার নাকি তরকারী ভালো হয় না ! কোন কোনদিন তাকে দেখিছি সকাল,দুপুরের ভাত সে বাড়ির উঠনে ফেলিদিয়ে দিয়েছে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে । তার স্ত্রীর উপর দুষ চাপাতো- তরকারীর মধ্য নাকি প্রতিবেলায় চুল খোজেঁ পায় । উঠনে ছড়ানো ভাত মালতী সেগুলো একহাতে ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করতো । বাবার প্রতি ওর খুব মায়া ছিল,সে না খেয়ে সে সইতে পারতো না তাই প্রায়ই দেখতাম ও একটা ছোট্ট বাটি নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে বলতো: "কাকিমা একটু তরকারি দেবেন, বাবা বলেছে আপনার হাতের তরকারি ভালো হয় কিনা তাই " । ওর বাবা আমার মার তরকারির খুব প্রশংসা করতো । যেদিন ঝগড়া হতো সেদিন আমাদের বাসা থেকে তরকারি নিয়ে ভাত দিলেই সে খেয়ে নিত ।
মালতী সব-সময় এসে একি কথা সব-সময় বলতো: "কাকিমা একটু তরকারি দেবেন, বাবা বলেছে আপনার হাতের তরকারি ভালো হয় কিনা তাই " । আমি একদিন বললাম: মালতী তুই তো আমাদেরই একজন যখন মনে হবে তরকারি নিজ হাতে নিয়ে যাস, এত বলার তরকার নেই । আমার কথাতে মালতীর কেন যেন মন ক্ষুন্ন হলো ! আজ-কাল মানুষ অল্পতেই মাইন্ড করে বসে ।
এরপর ওর বাবা ঝগড়া লাগলে চিৎকার চেচামেচী শুনি কিন্তু মালতী আর আসে না । পরশুনি মালতী নাকি ওদের বাসায় বলেছে: আমি নাকি ওকে বলেছি , তরকারী আনতে যেন ওদের বাড়ি আর না যাই । কি আশ্চার্য্য !
বিকেলে কলেজ থেকে ফিরছিলাম, দেখি মালতী পুকুরে একা জল কাটছে আমি দৌড়ে রুমে বই রেখে পুকুর পাড় আসলাম । মালতীকে বললাম- কিরে মালতী তুই নাকি তোদের বাসায় বলেচিস, আমি তরকারি নিতে না করিচি।
মালতী নিরব হয়ে বললো: আমি গোসল করচি তো!
আমি ফ্রোস করে বললাম: না ,এখন বল । তুই বলেচিস কিনা ?
মালতী:বলেচি বেশ করেচি । প্রতিদিন তোমাদের বাড়িতে তরকারি আনতে ভালো লাগে না ।
আমি: তাই বলে মিথ্যা বলবি আমার নামে।
মালতী: সরি, যাও এখন আমি গোসল করচি ।
আমি রেগে বললাম: কেন বলবি ও কথা । আমাকে বাসা থেকে সবাই এখন বকছে যে, ওদের মুখ সামলাতে পারবি।
এক-কথায়, দু'কথায় প্রচুর ঝগড়া লেগে যাই মালতীর সাথে এবং মালতীর চুলের মুঠি ধরে ওর পিঠে দু'চারটা কিল বসিয়ে দিই । মালতী কিল খেয়ে চোখ পাকিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে-অজ্ঞানের মত করে । আমি ভদ্র ছেলের মত ভয়ে বাসায় চলে এসে না খেয়েই রুমে খিল দিয়ে ঘুমিয়ে যাই, পর হয়তো বাসায় চিৎকার চেচামেচীঁতে ঘুম ভাঙ্গবে ।
পর দেখি না ।
সন্ধের পর পর আমি পড়তে বসলাম । মালতী এসে দরজায় দাড়িয়ে বলতেছে, তুমি আমাকে ওভাবে মেরে পালিয়ে এলে কেন? আমি যদি মরে যেতাম। আমি কি তোমার বউ হই ওভাবে মারবে?
আমি হেসেঁ বললাম: নারীদের বুঝি স্বামীরই অধীকার আছে মারার ?
মালতী: আছে তো ।
আমি: মেরেছি বেশ করেচি , মিথ্যা বলে ঝগড়া বাধালি কেন।
মালতী: আমিও তোমার কাছ থেকে চারটে বই নিয়েছিলাম ওগুলো ছিড়ে ফেলেচি ।
আমি: আমার বই কি ক্ষতি করেচিল তোর, ওগুলো ছিড়লি কেন?
মালতী: বেশ করেছি ।
আমি দৌড়ে মালতীতে ছু-মেরে ধরে ,বিছানায় শুইয়ে পরপর অনকগুলো চুমু খেলাম ওর ঘামাক্ত ঠোটে !ওর শরীরের নরম অংশ টিপে দেলাম !
এরপর যখন মালতীকে ছাড়লাম-মালতী একদম নিরব !
কিছুক্ষনপর মালতী কাপাঁ কাপাঁ গালায় বলতেছে: এ ছিল তোমার মনে?
আমি বললাম: আগে মেরেছি এখন আদর করেচি। এই বলে মালতীর দিকে যখন তাকালাম- ওর চোখে তখন জলে টল,মল করছিলো ।
আমি ফের মাথা নিচু করে বললাম: সরি ।
মালতী: হলো তো ! আর তোমাদের বাসায় আসবো না ,বলে দিলাম । মানুষ চিনে গেলাম! নামের আগে মানুষ লাগিয়ে মানুষ হওয়া যায় না! এভাবে নিরবে অপমান করতে তোমার লর্জ্বা লাগলো না । তোমার দেয়া এ-অপমানটা আমার আজীবন মন থাকবে ।
আমি: কয়েকটা চুমু খেয়েছি , তাতে কি এমন রামায়ন অশুদ্ধ হয়ে গেল ?
মালতী: যদি মেয়ে হয়ে জন্মাতে তবে বুঝতে, কিসে অপমান । চুমুতো দেওনি ,আমার জিহ্বাতে কামড় দিয়েছো ইচ্চে মত, এখন জ্বলছে জিহ্বর্বা ।
এরপর সত্যিই মালতীকে আমাদের বাড়ির আশে-পাশে আর দেখা যায়নি । মা ওকে খবর দিয়েও আর আনতে পারেনি। আগে এসে তো আমাদের নানা কাজ-টাজ কর দিয়ে যেত। এখন একদম হয় না । মা মালতীকে আনতে গিয়েও ফিরে এসেছে-, ওর কি অভিমান কি হয়েছে এত প্রশ্ন করেও জানতে পারেনি আসল ঘটনা । আমিও ভেতর ভেতর খুব পুড়ছিলাম-সত্যিই ওর অনেক খারাপ লেগেছে হয়তো, যখনি ওকে দেখে এগিয়ে যাই ও অন্যথায় চলে যায় , ওর নাগাল পাওয়া যেন আমার কাছে দুস্কর ।
অনেকদিন পর হঠাৎ মা খুব অসুস্থ হয়ে যায় । তখন ও আসলো মাকে দেখতে এবং সেবা যত্ন করলো । আমাদের রান্না করে দিত । সকাল থেকে রাত পযন্ত ও মার সেবা করতো । রান্না করে -ঘরের জানালার কাছে গিয়ে বলতো- রান্না হয়ে গেছে ,ক্ষুদা লাগলে খেয়ে যান ।
ও যখন ভাত বেড়ে দিত । ওর দিকে তাকাতে পারতাম না, মাথা নিচু করে খেয়ে নিতাম । সবাই এক সাথে খেতে বসতাম তো। কয়কবার ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকেই তাকিয়ে আমার খাওয়া দেখছে, প্লেটে ভাত শেষ হলেতই বলতো : দাদা আরেক চামিচ ভাত নাও না? মাছের ঝুল একটু নাও এ বলে আমাকে বেশি বেশি দিত । একবার আস্তে করে বলেই ফেলে-এখন পযন্ত খাওয়াটাই শিখতে পারনি, ওভাবে কেউ খায় ? আমি উত্তর না দিয়ে খেয়ে উঠলাম ।
কিছুদিনপর মালতীর বড়বোন অতসীদির বিয়ে হলো । সেদিন মালতীকে কিছুটা একা পেলাম-ও আর আমি বাজারে ফুল কিনতে গেলাম । ফুল কিনতে যাবে কাউকে পাচ্ছিলো না ও, আমিই সবার সামনে বলে ফেলাম আমার সাথে যাবে আমি যাবো তোমার সাথে ।
পাড়ার ভাবীরা বললো:-হলো তো মানুষের সাথেই যা । অনেকটা বিরক্তি নিয়েই ও আামার সাথে যেতে রাজি হলো । বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশার জন্য দাড়ালাম,একটা রিকশা নিলাম ও দেখি আর উঠেনা , বলে- না এক সাথে যাবো না । তুমি আলাদা- আমি আলাদ ।
আমি ওর কাছে যেয়ে বললাম-ভয় নেই । জোর করে আর চুমু খাব না।এরপর মালতী রাজি হলো ।
রিকশায় বসে কিছুক্ষন নিরাবতা । আমি কিছুক্ষন নিরব থেকে বললাম-আসলে আমি সরি।
মালতী: ওসব কথা আর বইলো । সরি বললেও তোমাকে ক্ষমা করবো না। একমাস আমার জিহ্বৃা জলচ্ছিলো ভুলিনি ।
এরপর আমিই নিচু স্বরে বললাম: আমি তোকে যে ভালোবাসি মালতী ।
মালতী হেসে বললো: তোমার চোখে কামনা ছাড়া কোন ভালোবসা নেই !
আমি: মালতী এমন কথা তুমি বলতে পারলে?
মালতী: শুধু আমি না, তোমার ডাইরীও বলে -যেখানে তোমার প্রতিদিনর দিনলিপি লিখ রাখ ।
আমি: কেন মালতী, ভালোবাসাতে কি ষ্পর্শ থাকে না?
মালতী: হুম থাকে, তবে যে ভালোবাসা শুরু হয় স্পর্শ দিয়ে সেটা দীর্ঘদিন টেকে না ।
আমি: না ,মালতী । পুর্বে যা হয়েছিল সেটা নিয়ে বার বার এত অপমান করতে পারো না ।
মালতী : তুমি কি এজন্য আমার সাথে এলে! ঝগড়া করার জন্য ? ওসব কথা বললে কিন্তু আমি এখনি রিকশা থেকে নেমে যাব, এই বলে মালতী রিকশা ওয়ালাকে বললো- ভাই থামানতো আমি নামবো ।
এরপর মালতী নেমে গেল, রিকুয়েস্ট করে আর ওকে রিকশায় উঠাতে পারিনি । আমিও রিকশা থেকে নেমে -ওর সাথে সাথে হাটঁছিলাম । ও বার বার বিরক্ত হয়ে আমর উপর ক্ষেপে যাচ্ছিলো । মন চাচ্ছিলো আগের মত ওর পিটে আবার কিল বসিয়ে দিই ! রাস্তা নির্জন- আমি আর ও পাশা -পাশি হাটঁছিলাম, ওকে বার বার যতই বুঝাই ও ততই ক্ষেপে যায়! সাধারণ কথা যেন বলা যাবে না, পাশ কাটিয়ে কয়েকটা রিকশা চলে গেল -,ওরাও দেখলো আমার বাক-বির্তক ।
সন্ধে হয়ে গেল রাস্তা নিরব । মালতী ছু মেরে আমার কাছে এসে আমাকে চুমু দিচ্ছিলো,শেষমেষ ঠুটে দাতঁ বসিয়ে দেয় ।
আর আমার ঠোটঁ দিয়ে অল্প-স্বল্প রক্ত বের হচ্ছিলো ।
আমি অভাগ হয়ে বললাম: এ কি হলো মালতী?
মালতী: আমিও তোমাকে ভালোবাসি অমানুষ !
©somewhere in net ltd.