![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটবেলায় পুকুর পাড়ের বেলগাছ তলায় একটি বটবৃক্ষের চারা লাগিয়েছিলাম । প্রতিদিন প্রভাতে ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করতাম আর বৃটবক্ষের দিগে তাকিয়ে থাকতাম ,কখনো কখনো বটচারায় জল দিয়ে স্লান করিয়ে পবিত্র করতাম । সেবার আমার ফুপু ও তার মেয়ে মৃন্ময়ী এসেছিল । মৃন্ময়ী সারাক্ষন ও আমার পিছনে পড়ে থাকতো ,আমি যা করতাম ও অভাগ হয়ে তা দেখতো , আমি গাছে উঠলে বাড়ন করে বলতো ওখানে উঠনা , পড়ে যেয়ে হাত ভে্ঙ্গে যাবে । আমি কখনো ওকে ধমক লাগিয়ে বলতাম ভাগ এখান থেকে । মৃন্ময়ী অনেক একরোখা ও জেদি ছিল । আমি যখন বটচারায় জল স্লান করাতাম ও থম ধরে বসে বসে দেখতো ।
রাতের বেলা আবার বায়না ধরলো আমার সাথে শুবে যদিও এক-দু’বছর আগে আমাদের বাসায় এলে ও আমার সাথেই ঘুমাতে যেত। আমরা সারা-রাত ভূতের গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে যেতাম। দু’বছরের মধ্য আমার শরীর গঠনটা আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে , তাতেই সম্ভবত সবার নাকোচ একটা ভাব –মৃন্ময়ী আমার সাথে ঘুমাতে পারবে না ।সব-সময় আমার সাথে এসে শুত গল্প করতাম এই লোভেই মৃন্ময়ী আমার সাথে শুতে চেত কিন্তু মৃন্ময়ী খুব একরোখা আর জেদি কান্নাঁ-কাটিঁ করে কান-জ্বালা পালা করে দিচ্ছিলো । সবশেষে ফুপু রাজি হলো আমার সাথেই মৃন্ময়ী থাকবে, ফুপু আমাকে একপাশে ঢেকে নিয়ে বললো –বাবা গল্প –টল্প করে তোমরা ঘুমিয়ে যেয়ো আর মৃন্ময়ীর শরীর ঘেসে শুইয়ো না ! আমি তখন ওসব কথার মানে বুঝিনি । আমি বুঝতাম ও আমার বন্ধুর মত,খেলার সাথী । সে রাতে অনেক ভূতের গল্প মৃন্ময়ীকে শুনালাম ,এবং আমার প্রায় সব গল্পই শেষ হয়ে গেছিলো-একটা গল্প শেষ না করতে করতে মৃন্ময়ী বলতো আরেকটা বল ।
আমি ক্লার্ন্ত হয়ে বললাম-মৃন্ময়ী এবার তুই গল্প বল । আমার গল্প সব শেষ হয়ে গেছে । মৃন্ময়ী বললো-আমি যে পাড়ি না । আমি বললাম-তাহলে ঘুমিয়ে যা!আমি আর গল্প বলতে পারবো না রাত অনেক হয়েছে তারপর ভোরে উঠে মাথা ধরবে ।
মৃন্ময়ী কিছুক্ষন নীরব থেকে বললো- দাদা জানিস আমার ছোট কাকার কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছিল , কাকিমা এত সুন্দর সেজেছে না কত মানুষ তাকে দেখতে এলো ।
-ও
মৃন্মীয়ী :আচ্ছা দাদা তোকে একটা কথা বলি?
-বল।
মৃন্ময়ী: বড় হয়ে তুই্ আমাকে বিয়ে করবি। আমি ওমন করে কাকিমার মত সাজবো ।
আমি বললাম :- নারে, আমি বড় হয়ে পাহাড়ে চলে যাবো সেখানে সাপ ধরবো । জানিস কয়েকদিন আগে আমাদের পাড়ায় এক সাপুড়ে কত বড় একটা সাপ নিয়ে এসেছিল ! ওটা নাকি পাহাড় থেকে ধরেছে । আমিও ওমন করে পাহাড়ে চলে যাবো ।
মৃন্ময়ী রেগে বললো: আমাকে বিয়ে না করলে, তোমার বটচারা ভেঙ্গে দিব।দেখ !
-মৃন্ময়ী ও কাজ করিস না । আর আমি তোক বিয়ে করবো কেন? তুই না আমার বোন।
মৃন্ময়ী রেগে উপাশ করে শুয়ে থাকলো ।
মৃন্ময়ী সকালে উঠেই কান্নাঁ-কাটি করছে, আমাকে বিয়ে করবে বলে । ফুপুতো আমার দেখে অভাগ হয়ে তাকিয়ে রইলো ।
মৃন্ময়ী ওর মাকে বলছে –মা, বলো না একটু মানুষদাকে মাকে বিয়ে করতে, আমি কাকির মত সাজবো । ওর মা হেসেঁ বলবো- তোর কাকির মত সাজবি! আচ্ছা তোকে বিয়ে দিব অন্যখানে ।
মৃন্ময়ী জেদ করে বলছে- না আমি মানুষদাকেই বিয়ে করবো । ছোট্ট্ মেয়ের এমন হাস্যকর আবদারে ও মা বললো বড় হও তার পর ওর সাথেই তোমার বিয়ে ।
সকালে আমাকে দেখেই বললো-রাতে তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হওনি। বলেছিলাম না তোমার বটচারা ভেঙ্গে দিব! দেখ গিয়ে তোমার বটচারা ।আমি দৌড়ে বটচারার গাছে যেয়ে দেখি চারার মাথা ভেঙ্গে ফেলছে মৃন্ময়ী এরপর আমি মৃ্ন্ময়ী ও ফুপুর সাথে ঝগড়া বেধে দিলাম । মৃন্ময়ীর মা ও মৃন্ময়ী সেদিন বিকেলেই চলে গেল ।
এরপর অনেকদিনেই আমার ফুপুরা আমাদের উঠোন মাড়ায়নি এর কারন হলো –জমি,জমা নিয়ে ফুপুদের ও কাকা আব্বুর সাথে বিরোধ ছিল । কাকা-আব্বুরা নাকি তাদের জমি –জমা হাতিয়ে নিয়েছে , বাপের সম্পর্ত্তির মালিক আমার ফুপুরা হতে পারেনি তাই দীর্ঘদিন আমাদের বাড়িতে আসেনি ।
অনেকদিনপর আমিই মৃন্ময়ীদের বাড়ি গিয়েছিলাম ফুপুর অসুস্থতার খবর শুনে । গিয়ে দেখি ফুপু কিছুটা সুস্থ । আর মৃন্ময়ী ওর লেখা পড়া নিয়ে অনেক ব্যস্ত আমর সাথে তেমন কথাই বললো না । মৃন্ময়ীও আগের মত নেই আগে থেকে ও অনেক বড় হয়েছে-ও তখন পড়তো ক্লাস এইটে আমি ইন্টারমিডিয়েটে । মৃন্ময়ী পড়তো Scholastica তে, আর আমি শহরতলীর কোন এক সেকেলের স্কুলে ,যে স্কুল রুমে বসে রাস্তায় যাতায়াত রত ভেন দেখতাম ,খড়ি মাটির ব্লাগবোর্ড পন্ডিত মশায় অংক কষতো আর খট খট করে শব্দ উঠতো ! ব্লাগবোর্ডের শরীরের কিছু অংশ আবার ছিলে ছিল । এই হল মৃন্ময়ী আর আমি ।
কিছুদিন আগে শুনলাম আমার বাসা থেকে মৃন্ময়ীদের বাসাতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল ।
কথাটা শুনে হঠাৎ চটে গিয়েছিলাম । তারা-কেন যে, না জানিয়ে এমন কাজ করে বুঝি না । শেষে আবার অপমানের বুঝা । বছর দু’য়েক আগে মৃন্ময়ীর ফেসবুক প্রোফাইলে জাস্ট ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট্র পাঠিয়েছিলাম- এরপর থেকে ওকে আর খুজে পা্ই না পরে বুঝলাম ও আমাকে একেবারে ব্লগই করে দিয়েছে।আমার জায়গা থেকে আমি সেরা ওর জায়গা থেকে ও । বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হলো-ওর গ্রাজুয়েশন শেষের পথে –ঐ যে ছোট বেলা থেকে এত এত বছর ওর সাথে আমার কোন যোগাযোগই নেই । ওর প্রতি আলাদা কোন ফিলই কাজ করেনি কোনদিন কিন্তু মানুষতো কত কিছুই ভাবে ।
যাইহোক ওটা কিছুই না । কিছু কিছু মৃন্ময়ীরা কাছের থাকলেও কাছের না ।
©somewhere in net ltd.