![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার বাবা আর মল্লিকার বাবা খুব কাছের বন্ধুছিল । মল্লিকার বাবাকে প্রায়ই দেখতাম আমার বাবার সাথে পুকুর পাড়ে বসে বসে গল্প করছে, আমাদের বাসা থেকে মল্লিকাদের বাসা ৫ মিনিটের পথ ছিল। তাদের গল্পের পাশে কখনোই বসতে পারতাম না । তারাই শুধু জানতো তারা কি গল্প করতো ! মল্লিকা প্রায়ই আসতো ওর বাবাকে নিতে, এসে বলতো : বাবা মা ডাকে? দুপুরে খাবে না? বা কখনো বলতো:-মা বলেছে বাজার করে বাসায় যেতে ।মল্লিকা আমার চেয়ে তিন বছরের জুনিয়র ছিল। মল্লিকা প্রচুর দেমাগী ছিল! ও আমার সাথে কথাই বলতে চাইতো না ! অথচ ওর বাবা-আমার বাবা কত ভালো বন্ধুছিল । কেন –জানি না, মল্লিকা এমন করতো । যখন দেখতাম ওরা গোল্লাছুট খেলছে আমি ওদের ওখানে গেলেই ও আর খেলতো না , খেলা রেখে চলে যেত।কেন জানি মল্লিকা আমাকে সর্হ্য করতে পারতো না!কিন্তু ও আগে এমন ছিল না,-ও সব-সময়ই আমাকে দাদা ডাকতো আর এখন কপালে ঢুশ লাগলেও যেন কথা বলা বারন ! ।
এরপর আমি চলে এলাম ঢাকায়, আর মল্লিকা তিন বছর পর কলেজে ভর্তি হয় । কলেজ পাশ করার পর-পরই ওর বিয়ে হয়ে যায় । মল্লিকা সুন্দরী তাই ভালো অবস্থাই ওর বিয়ে হয় । গত ঈদে যখন আমি বাসায় আসলাম, ঈদের দু’দিন পর মল্লিকাও ওদের বাসায় এসেছে স্বামীর বাড়ি থেকে । ঈদের কিছুদিন খুব বৃষ্টি ছিল তাই বিকেলে বের হতে পারছিলাম না। বারান্দায় বসে বসে ছোটবোন স্নিগ্ধতার সাথে খেলছিলাম , এমন সময় দেখি মল্লিকা কিন্তু আমি আর ওকে গুরুত্ব দিইনি আমি ছোটবোনের সাথে খেলছিলামই। মল্লিকা কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে স্নিগ্ধতাকে কোলে তুলে নিলো আপু বলে । আমি দাড়িয়ে রইলাম কিছু বললাম না । মল্লিকাই বললো:- দাদা কেমন আছ?
-ভালো, তুমি?
মল্লিকা: আমিও ভালো ।
-ও ।আচ্ছা মল্লিকা তুই এমন কেন ছিলিরে , আমার সাথে কথাই বলতে চাইতি না । আমাকে সর্হ্য করতে পারতি না?কি করেছিলাম আমি বল ?
মল্লিকা : সেটা তো দাদা তুমিই জান?
-মানে?
মল্লিকা: অভিনয় করো না ।
-অভিনয় করবো কেন? সত্যিই কি হয়েছে। তোর সাথে তো আমার কোনদিন ঝগড়া লাগেনি ।
মল্লিকা: ঝগড়া না । তোমার কাজিন রিহানকে দিয়ে যে যে চিঠিগুলো পাঠিয়েছিলাম এটারও তো জবাব দেওনি ! ওগুলো নাকি টেনে ছিড়ে ফেলেছিলে আমার চিঠি শুনে ?
-না । রিহানতো আমাকে কোন চিঠি দেয়নি। সত্যিই বলছি ।
মল্লিকার চোখ হঠাৎ ছল ছল করে উঠলো জলে, চোখে জল জমে আছে কিন্তু প্রকাশ হচ্ছে না । মল্লিকা স্নিগ্ধতাকে আমার কোলে দিয়ে বললো-ওকে একটু ধরো আমি আসছি এই বলে মল্লিকা দ্রুত প্রস্থান করলো ।
রাত সাড়ে আটটার সময় মল্লিকা আমার রুমে এসে কান্না-চোখে বলতেছে , দাদা তোমার কথাই ঠিক । তোমাকে দেবার জন্য যে চিঠিগুলো ওকে দিয়ে পাঠিয়েছিলাম ও একটাও দেয়নি বরংচো তোমার নামে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলছে তোমার কাজিন তাই ওকে বিশ্বাস করেছিলাম ।কখন কবে তুমি ওর সাথে ঝগড়া করেছিলে সেটার ঝাল তুলেছে এ কাজ করে ।
আমি হঠাৎ হতভম্ব হয়ে গেলাম । মল্লিকা তুই আমাকে ভালোবাসতি?
মল্লিকা: হুম । রিহানের কথা বিশ্বাস করেই তোমাকে সর্হ্য করতে পারতাম না। ভাবতাম তুমিতো আমাকে ভালোবাসনা তাহলে কিসের সন্ধি তোমার সাথে ।
-মল্লিকা তোকেও অনেক ভালো লাগতো কিন্তু প্রকাশ করার আগেই তোর আচরন নেগেটিব ছিল যে,আর আগাইনি ।
মল্লিকার চোখে তখন জল ! দাদা কি আর হবে । সরি দাদা আমাকে ক্ষমা করে দাও , মনে মনে তোমাকে অনেক শাপ দিয়েছিলাম ।ভুল আমারি হয়েছে নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করাতে চেয়েছিলাম ।
-আম আর তেমন উত্তর দিতে পারলাম না । প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললুম- বিবাহিত জীবন কেমন চলছে ?
মল্লিকা: ভালো ।
-হুম, শুনেছি তোর স্বামী অনেক বড়লোক?
মল্লিকা: হ্যাঁ অনেক টাকার মালিক সে ।
-তোকে ভালোবাসে ।
মল্লিকা: বাসে হয়তো ।
-কেন জানিস না? তুই বাসিস না।
মল্লিকা: ওর থেকে আমিই বেশি ভালোবাসতে চেয়েছিলাম ।
-তো।
মল্লিকা: মাঝে মাঝে খুব প্রকাশ করে ভালোবাসে আবার কোন কোন সময় এমন খারাপ ব্যাবহার করে ! মরে যেতে ইচ্ছে করে ।
-পিটাতে পারিস না ।
মল্লিকা: তুমি আমার স্বামী হলে পেটাতে পারতাম। বড়লোকের ছেলেদের পেটালে ঘাঢ়-ধাক্কা দিয়ে বরে করে দিবে ।
-তাহলে তুই ভালো নেই ?
মল্লিকা: টাকা –পয়সা,খাবার –দাবার,ঘুরা-ফেরাতে অভাব নেই । অভাবটা অন্য জায়গায়, জান আমার ভেতরের কথাও তাকে বলতে পারি না এত ব্যস্ততা দেখায় ।
-তাহলে এক কাজ করতে পারবি?
মল্লিকা: কি?
-ওকে ডির্বোস দিয়ে । আমাকে বিয়ে করতে পারবি।
মল্লিকা: না, পারবো না ।
-ও ।
মল্লিকা: আমার যদি সন্তান না হতো , তাহলে তোমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যেতাম।
-ও ।
মল্লিকা : দাদা আমাকে তুমি ভুল বুঝ না । আমার সন্তানকে রেখে কোথাও থাকতে পারবো না । ওকেই এখন সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি ।
-হুম । সেটাই হওয়া উচিত কিন্তু নিজেরও তো ইচ্ছে, আহ্রলাদ আছে ।
মল্লিকা: আমার সব আনন্দ আমার সন্তানের ভেতর ।
-হুম।তোর সন্তানের প্রতি আমার প্রার্থনা রইলো ।
মল্লিকা : আচ্ছা দাদা এখন যাই । এতদিন যে মিথ্যা নিয়ে তোমার সাথে রাগ পুষেছিলাম সেটার আজ মুক্ত হলো । একটা ভুলের কারনেই তোমাকে জীবনে পেলাম না ।ভালো থেকো দাদা ।আমি এখন যাই ।তুমি নাকি কালই চলে যাবে ঢাকা?
-হ্যাঁ কালই চলে যাচ্ছি ।
মল্লিকা: ওকে দাদা ভালো থাকো ।
আচ্ছা ।
মল্লিকা চলে গেল । কিন্তু তেমন খারাপ লাগলো না । কারন প্রেম হওয়ার আগেই তো সেটার মৃত্যু হয়েছিল , ওকে তো কোন দিন আমার ভেতরে ঢুকেতে পারিনি ওর অস্বাবিক আচরনে । হাঠৎ শুনে খুব কষ্ট লাগলো । সত্যিই –এটা সত্যিই মল্লিকাদের মত মেয়েদর সাথে সংসার করাটা অনেক ভাগ্যর ব্যাপার । সেটা ছিল না কপালে।
©somewhere in net ltd.