নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আহ! দারুন একটা সুসংবাদ পেলাম! মিষ্টি কিনতে হবে। কিন্তু ভাল মিষ্টি কই পাই? সব ভালভাল মিষ্টির দোকান যে হিন্দুদের!
ছেলে গণিতে একটু কাঁচা। প্রাইভেট কোচিং করাতে হবে। কিন্তু শহরের সবচেয়ে ভাল গণিত কোচিং টিচারের পদবী যে 'দেবনাথ!' মুশকিলে পরা হলো!
মেয়ের মাশাল্লাহ গান বাজনার খুব শখ। মাঝে মাঝেই একা একা গুনগুন করে। আহা! কি মধুর গলা! Natural talent! একজন ভাল টিচার রেখে দিলে হয়ত একদিন বড় শিল্পী হতে পারবে। কিন্তু, কী করে সেটা সম্ভব? গানের ওস্তাদ হিসেবে পূর্ণেন্দু ভট্টাচার্য্য ছাড়া এ শহরে আর কারও নাম যে শুনিনা!
এদিকে কয়েকদিন ধরে বুকের বাম পাশটায় চিনচিনে ব্যথা টের পাচ্ছি। গ্যাসের কারণে যে নয়, এটা নিশ্চিত। ভাল হার্ট স্পেশালিস্ট দেখাতে হবে। ডাক্তারের বিদেশী ডিগ্রী থাকলে নিজের মনেও একটা ভরসা পাওয়া যায়। শহরে ইউ.কে.র ডিগ্রীঅলা কেবল একজনই স্পেশালিস্ট আছেন। কিন্তু সুধাংশু বাবুর কাছে যাওয়াটা কী ঠিক হবে?
প্রতিমাসে চুল কাটাতে হলেও সেলুনে যেতে হয়। উফ! এ আরেক যন্ত্রণা! ভাল মুসলিম সেলুন কই পাই?
অবশ্য অফিস থেকে পূজার ছুটি নিতে কোন আপত্তি নেই। হেহেহে। হরতাল, অবরোধের বন্ধের জন্য পূজার ছুটির দিনগুলোতেও কষ্ট করে অফিসে আসতে হবে নাকি?
দূর ছাই! এদেশে থাকতে হলে দেখছি হিন্দু বিদ্বেশী হয়ে থাকা সম্ভব নয়! যদি ওদের ছাড়াই থাকতে হয়, তাহলে মক্কা চলে যাওয়াই উত্তম! সেখানে আসা করি সকল মুসলমান ভাই - বেরাদার! কিন্তু দাঁড়াও, আমি যে শুনেছি ওখানকার স্থানীয় আরবরা নাকি অনারবদের সাথে মিশে না! তাদের কাছে আমরা বাংলাদেশীরা মিসকীন! ওদের দেশে যত বছরই থাকিনা কেন, যাই করিনা কেন, কখনই নাগরিকত্ব পাওয়া যাবেনা। তাহলে সেখানে একজন রিফিউজির সাথে আমার পার্থক্য থাকবে কোথায়?
তাহলে কী আমাকে এই বাংলাদেশেই থেকে যেতে হবে? গাইতে হবে একজন অমুসলিমের লেখা জাতীয় সংগীত? পড়তে হবে শরৎ চন্দ্র, মানিক, বিভূতি ভূষণের উপন্যাস? জীবনানন্দ, নির্মলেন্দু গুণের কবিতা? অসুস্থ হলে খেতে হবে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালসের ওষুধ? কোন মানে হয় এসবের?
কিন্তু, কিছুদিন আগেও যখন টুপিওলা মুসলমানেরা মার খেল, গায়ে পাঞ্জাবি এবং মাথায় টুপি দেখলেই যেখানে সবাই ডেকে উঠতো 'জামাতি!''হেফাজতি!' নবীজিকে গালাগালি করার প্রতিবাদ করায় শুনতে হয়েছে 'মৌলবাদী,''তালেবান' গালি, তখন?
তখন সবাই চুপ ছিল কেন? তার আগেও যখন বৌদ্ধ মন্দির পোড়ানো হলো, বৌদ্ধদের ঘরবাড়ি ভাংচুর হলো, তখনও সবাই নিরব?
যীশু খ্রিষ্ট বলে গেছেন, 'চোখের বদলে চোখ উপড়ে ফেললে একদিন গোটা পৃথিবীই অন্ধ হতে বাধ্য।'
আজকে হিন্দুরা মার খাচ্ছে, কাল আসবে মুসলমানদের পালা, তারপর বৌদ্ধ খ্রিস্টানরাও উল্টা পাল্টা কিছু করলে তাদেরও সাইজ দেয়া হবে।
আমরা কখনই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজবো না। আমরা সহিংসতায় লিপ্ত হবো। শুধুমাত্র ভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থন করার অপরাধে বহু বছরের বন্ধুত্ব ভেঙ্গে দিব। শুধুমাত্র ভিন্ন স্রষ্টার আনুগত্য করে বলেই একে অন্যকে ধরে ধরে পেটাবো! দুইহাজার পঞ্চাশ সালে বাংলাদেশ নাকি বিশ্বের প্রথমসারির দেশগুলোর একটি হতে যাচ্ছে! হাহাহাহা। হাসতে হাসতে পেটের ক্ষিধা মরে গেছে। যারা এখনও সভ্যই হতে শিখেনি, তারা কিনা মাত্র পঞ্চাশ বছরেরও কম সময়ে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ হবে! আসল ঘটনা হচ্ছে, জাতি হিসেবে আমরা খুব দ্রুতই অন্ধ হতে চলেছি। দুইহাজার পঞ্চাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবেনা, ঘটনা তার আগেই ঘটে যাবে। সেইদিন আসার আগে সুন্দর এই পৃথিবীটা যা দেখার দেখে নিন।
©somewhere in net ltd.