নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ক্লাস ওয়ানের বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায় রচনা এসেছে "তোমার প্রিয় কবি।"
আমার তখন কবিতা পড়ার বয়স না। স্কুলের বইয়ে যে কটা ছড়া থাকে, সেটাই পড়ি। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল ইসলামের সাথে সেভাবেই পরিচয়। জসিমউদ্দিন এবং সুকুমার রায়কেও চিনি। এছাড়া আর কোন বাঙ্গালি কবি সম্পর্কে কোনই ধারনা নেই।
সবাই হয় কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লিখছে, নাহয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে লিখছে। আমি লিখতে বসলাম মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে। আব্বুর প্রিয় কবি ছিলেন। আমি আব্বু ছাড়া আর কারও মুখে তখনও শুনিনি তাঁর কথা। একটাও কবিতা পড়িনি তাঁর। আব্বুর আগ্রহেই মাইকেলের জীবনী নিয়ে রচনা মুখস্ত করেছি।
দুঃখের কথা, একটাও কোট ব্যবহার করতে পারলাম না। এমন দাঁত ভাঙ্গা কঠিন বাংলার সাথে যে আমি তখনও পরিচিত নই! তার উপর আমার শিক্ষা সফর শুরু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। তাদের কাছে সবচেয়ে বড় দুই দুঃস্বপ্নের নাম - রবীন্দ্রনাথ এবং শেক্সপিয়ার। মাইকেলের কবিতা সেখানে পড়াবে কোন অজুহাতে?
আব্বুর উৎসাহ ভীষণ। তাঁর ধারনা শুধুমাত্র কবির সিলেকশনে মুগ্ধ হয়েই টিচার আমাকে পাশ মার্কস দিয়ে দিবেন। বাকি দুই চার লাইন ঠিকঠাক লিখতে পারলে ভাল মার্কস পেতে সমস্যা হবেনা।
বলে রাখা ভাল, কেবল জীবনী পড়েই আমি বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রতিভাবান কবির ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। বিরাট ঐশ্বর্য্যের ভিড়ে বড় হয়েও শেষ জীবনে এমন দীনহীন কঠিন মৃত্যু তাঁর প্রতি আমার হৃদয়কে অনেক আর্দ্র করে দিয়েছিল।
আমি যখন লিখছিলাম, আমার প্রিয় কবির নাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত, তখন আসলেই মন থেকে বিশ্বাস করেই সেটা লিখেছিলাম।
আমার এক বন্ধু সেই পরীক্ষায় লিখেছিল তার প্রিয় কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম। কারন তিনি একজন মুসলমান কবি ছিলেন। তাঁর লেখা হামদ, নাত ও ইসলামী গান যুগে যুগে মুসলমানদের ঈমানকে তাজা করে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও যাবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে তিনি অনেক বড় কবি। তাঁরও নোবেল পুরষ্কার পাওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু যেহেতু তিনি গরীব ছিলেন, তাই তিনি পাননি। তিনি আরও অনেক বড় কবি হতে পারতেন, কিন্তু তখনকার হিন্দুরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে অসুস্থ করে ফেলে। ইত্যাদি, ইত্যাদি।
একটি ছোট শিশু এতসব জটিল বিষয় নিজে থেকে লিখতে পারেনা। তাকে নিশ্চই তার অভিভাবক, অথবা গৃহ শিক্ষক এই রচনা লিখে দিয়েছিলেন। ছেলেটি আরেকটু বড় হলে হয়তোবা তাঁর 'বৌদি ইস্যু' নিয়েও কয়েক পৃষ্ঠা লিখে ফেলতো। শৈশবেই ব্রেনওয়াশের শুরু।
চিরকাল ধরেই বাংলাদেশে এক দল মানুষ আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন, যারা সবকিছুতেই ধর্মকে টেনে আনেন। খেলাধুলা-শিল্প-সাহিত্যও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়না। দেশের শ্রেষ্ঠ কবি কে, এই বিতর্কে তারা দুইভাগ হয়ে যান। নজরুল ইসলাম কেবল একজন মুসলমান ছিলেন বলেই তাঁর গুণগান গাইতে গাইতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। একই সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'হিন্দু' বলে, তাঁকে অসম্মান করার সময়ে তারা কোন সীমা-পরিসীমার ধার ধারেন না। পাকিস্তান সরকার যখন ভারতের সাথে জেদ দেখিয়ে রেডিও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল, তখন এদের পূর্ব পুরুষেরাই দাঁত কেলিয়ে সেই অন্যায় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল।
একদল মূর্খ না জেনে শুনে তাদের কথায় লাফালাফিও করে। তারা এটাও জানেনা যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন একেশ্বরবাদী ব্রাক্ষ্ম!
ধর্মের কথা বাদ দেই। সেটা উপরওয়ালা বুঝবেন। আমরা বিচার করবো মানুষের কর্ম দিয়ে। রবিঠাকুর একাই একটি দেশের আঞ্চলিক ভাষাকে মাটি থেকে তুলে অন্তরীক্ষে পৌছে দিয়েছিলেন। এমন ক্ষমতা আর কেউ দেখাতে পেরেছেন?
একজনকে শ্রেষ্ঠ বোঝাতে হলে আরেকজনকে কেন হেয় করতে হবে?
আজ বাইশে শ্রাবণ। বিশ্বকবির মহাপ্রয়াণ দিবস। এই দিন উপলক্ষে তাঁকে নিয়ে দুই চারটা কথা লিখবো, এমন যোগ্যতা আমার নেই। যাঁর আছে, তিনিই আবার তাঁর সাম্রাজ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দী। আমি বরং তাঁর লেখাটাই শেয়ার করি।
বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে প্রতিভাবান এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক কাজী নজরুল ইসলামের "রবি হারা" কবিতা থেকে নির্বাচিত কিছু চরন....
"ভারত-ভাগ্য জ্বলিছে শ্মশানে, তব দেহ নয়, হায়।
আজ বাঙলার লক্ষ্মীশ্রীর সিঁদুর মুছিয়া যায়।
বাঙালি ছাড়া কি হারালো বাঙালি কেহ বুঝিবে না আর,
বাঙলা ছাড়া এ পৃথিবীতে এত উঠিবে না হাহাকার।
ভূ-ভারত জুড়ে হিংসা করেছে এই বাংলার তরে-
আকাশের রবি কেমনে আসিল বাঙলার কুঁড়ে-ঘরে।"
০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৪:২৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৩৭
রাজিব বলেছেন: একটা সুন্দর পোস্টের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। মাস দুই এক আগে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বনানীর বাড়িতে গিয়েছিলাম যেখানে এখন থাকেন তার নাতনী খিল খিল কাজী। সেখানে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে গিয়েছিলাম খিল খিল কাজীর সাক্ষাৎকার নেবার জন্য। খিল খিল কাজী খুব পরিষ্কার করে এবং স্পষ্ট করে বলেন যে নজরুলকে অসম্ভব স্নেহ করত। উদাহরণ হিসাবে তিনি এও বলেন যে রবিন্দ্রনাথ তার সকল গ্রন্থই নিজের আত্মীয়স্বজনকে উৎসর্গ করে গেছেন। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে নজরুলের প্রতি উৎসর্গ করেন বসন্ত নাটকটি।
যাইহোক রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন এবং নজরুল রবীন্দ্রনাথকে সম্মান করতেন। এটাই ঐতিহাসিক সত্য। নজরুলের পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাস করলে এই সত্য সহজেই বের হয়ে আসে।
কাজী নজরুল ইসলামের "রবি হারা" কবিতাটি ইউটিউবে পেলাম নজরুলের সকন্ঠেঃ