নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আমার প্রিয় বন্ধু অ্যামেরিকায় চলে যাচ্ছে। আবার কবে দেখা হবে না হবে আল্লাহই জানেন। মন বিশেষ খারাপ। তারও মন খুব খারাপ। আমাদের সবাইকে ফেলে চলে যাবার জন্যতো বটেই, সেই সাথে প্রেমিকাকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্টেও বেচারার মন ব্যথিত। কাঁচা বয়সের প্রেম বলে কথা!
শেষদিন বিদায় উপলক্ষে তার প্রেমিকা ইনিয়ে বিনিয়ে তাকে একটি প্রেমপত্র লিখলো। সেই সাথে একটি কবিতা। কবিতা পড়ে আমার বন্ধু যারপরনাই আবেগাপ্লুত হয়ে গেল।
২০০১'র কথা বলছি। সেই সময়ে জনে জনে মোবাইল ফোন ছিল না। ইন্টারনেটও ভীষণ স্লো থাকায় এত সহজলভ্য ছিল না। তখনও প্রেমিক প্রেমিকারা একে অপরকে প্রেমপত্র লিখতেন। চিঠির হাতের লেখা গালে ঠেকিয়ে একে অপরকে ছুঁয়ে ফেলার কল্পনা করে নিতেন।
আমার বন্ধু তখন মাত্রই ক্লাস এইটে পড়ে। সেই বয়সে তার প্রেমিকা তাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখে ফেলেছে, তার কাছে এই আনন্দ ধরে রাখার পাত্র নেই।
সব বন্ধুকে দেখিয়ে বেরিয়েছে। সব বন্ধুই কবিতা পড়ে মহিলা কবির দারুন প্রশংসা করেছে। কোন এক বিশেষ কারনে আমারই কবিতাখানা দেখা হয়নি। যখন দেখতে চাইলাম তখন প্যাকিং শেষ। বন্ধু এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
এর দুই বছরের মাথায় বন্ধু দেশে বেড়াতে এলো। প্রেমিকার সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে বহু আগেই। প্রেমিকাই তাকে ছেড়ে গেছে। ঘটনা কি বন্ধু কিছুই বুঝতে পারছেনা। অ্যামেরিকা যাবার কয়েকদিন পরই মেয়েটা তার সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। আমরা চোখের সামনে দেখলাম একটা গুন্ডা মতন ছেলের গলায় ঝুলে গেল। বেচারা পৃথিবীর উল্টোদিকের একটি দেশে থাকায় হাহুতাশ করা ছাড়া কিছুই করতে পারলো না।
বেইলি রোডে এক আড্ডায় বন্ধু আমার মানিব্যাগ থেকে একটা চিঠি বের করে প্রচন্ড আবেগী কন্ঠে বলল, "তাহলে কি এই চিঠিতে লেখা সব কিছু মিথ্যা ছিল? আমাকে যদি ভালই না বাসতো, তাহলে এই কবিতা সে কিভাবে লিখলো?"
আমার তখন মনে পড়ে গেল যে কাব্যখানা সেদিন আমার পড়া হয়নি। বললাম, "দেখিতো কি লিখেছিল....."
বন্ধু কবিতা এগিয়ে দিল।
"যেদিন আমি থাকবো না, বুঝবে সেদিন বুঝবে
মধ্যরাতে চাঁদের আলোয়, আমার তুমি খুঁজবে।
বুঝবে ঠিকই বুঝবে।"
আমি বললাম, "খাইছে!"
বন্ধু বলল, "কী হলো?"
"এটাতো কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা!"
"না, এটা তার কবিতা।"
শুধরে বললাম, "অবশ্যই এটা তার কবিতা। কিন্তু অরিজিন্যাল কবিতাটা নজরুল ইসলামের। দুই চারটা শব্দ এদিক ওদিক করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে। সহজ ভাষায়, ও মেরে দিয়েছে।"
বন্ধু খুব আহত স্বরে বলল, "তুমি শিওর?"
"হান্ড্রেড পার্সেন্ট!"
ঘটনা হচ্ছে তখন আমিও প্রেমে পড়েছিলাম। এবং আমারও ইচ্ছে হয়েছিল কবিতা লেখার। কবিতা তেমন পড়া হয়না, লেখার নিয়মও তাই জানিনা। কাজেই কবিতা সম্পর্কে আইডিয়া নিতে হাতের কাছে যা যা কবিতা পেতাম পড়ে ফেলতাম। সেইসূত্রে কাজী নজরুল ইসলামের "অভিশাপ" কবিতাটি আমার পড়া হয়।
"তুমি প্রমান দেখাতে পারবে?"
"অবশ্যই! চল, পাশেই লাইব্রেরিতে যাওয়া যাক।"
অরিজিন্যাল কবিতাটা দেখার পর বন্ধুর চেহারা দেখে আমার মনে হলো, কেন যে বলতে গেলাম ইহা একটি অতি বিখ্যাত কবিতার ছায়া অবলম্বনে রচিত! শুধু শুধুই বেচারার মন খারাপ করে দিলাম।
বন্ধু তখন চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, "নকলিস্ট কোথাকার! তার সবকিছুতেই ধোঁকা ছিল! ভালই হলো আমাদের ব্রেক আপ হয়ে গেছে! এখন আমিও প্রেম করবো! অবশ্যই প্রেম করবো! তারচেয়ে হাজারগুণ সুন্দরী একটা মেয়েকে বিয়ে করবো! তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে প্রেম করবো!"
অল্প বয়সের আবেগ!
বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি, সাম্য ও মানবতার কবি, ইসলামি কবি, কাফের কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু দিবসে অনেক অনেক শ্রদ্ধাঞ্জলী। যাঁর কাছে এখনও আমরা নানান বাহানায় হাত পাতি। ভবিষ্যতেও পাতবো।
©somewhere in net ltd.