নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ে আমাদের কাছে তিনজন মানুষ ছিলেন মূর্তিমান আতংক।
প্রথমজন শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দ্বিতীয়জন কাজী নজরুল ইসলাম।
তাঁদের দাঁত ভাঙ্গা শব্দের কবিতা মুখস্ত করতে হওয়াটা ছিল যে কোন ভূতের গল্পের চেয়েও বেশি ভৌতিক বিষয়।
তৃতীয় ব্যক্তির নাম জনাব উইলিয়াম শেক্সপিয়ার।
আমাকে যখন কেউ জিজ্ঞেস করতেন ইংলিশ মিডিয়াম ছেড়ে বাংলায় এলাম কেন, তখন উত্তরে বলতাম, উঁচু ক্লাসে গিয়ে শেক্সপিয়ার পড়ার ভয়ে।
যদিও উঁচু ক্লাসে যেতে যেতে পাঠাভ্যাস গড়ে উঠেছিল, রবীন্দ্র-নজরুল-শেক্সপিয়ার মহা আগ্রহের সঙ্গেই পড়েছি।
ক্লাস সেভেনে পড়তাম তখন। চিত্রনাট্য পড়ার আগ্রহ তখনও আসেনি। শেক্সপিয়ারের একটি অতিবিখ্যাত নাটকের গল্পরূপ কিভাবে যেন আমার হাতে চলে এসেছিল। এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে এক রাজপুত্রের ট্র্যাজিক আখ্যান। বলা হয়ে থাকে এটিই শেক্সপিয়ারের লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ ট্রাজেডি।
গল্পটা পড়ে আমার এতই ভাল লেগেছিল যে পরেরদিন স্কুলে এসে আমার প্রিয় বন্ধু সামিকে গল্পটা আমার মত করে শোনাচ্ছিলাম।
সামনের বেঞ্চ থেকে একটা ছেলে হঠাৎ পেছনে ঘুরে খুবই মাতবরি স্বরে বলল, "শব্দটা আসলে 'হেলমেট' হবে। 'হ্যামলেট' না।"
দপ করে মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। তবু দাঁতে দাঁত পিষে বিনীত হেসে বললাম, "আমি হেলমেট এবং হ্যামলেটের পার্থক্য জানি। তুমি বোধয় জানোনা।"
ছেলেটা কথার মর্মার্থ বুঝলো না।
বলল, "হ্যা, একটা শুদ্ধ উচ্চারণ, আরেকটা সিলেটি উচ্চারন। হে হে হে।"
এবারে যে মেজাজটা কোথায় গিয়ে ঠেকলো সেটা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।
চোয়াল শক্ত করে বললাম, "উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাম শুনেছো?"
"শুনবো না কেন?"
ছেলেটা এমনভাবে জবাব দিল যে আমি প্রায় উড়ে গেলাম।
"তার কয়টা রচনার নাম বলতে পারবে?"
"রোমিও-জুলিয়েট।"
এইবারও আমাকে উড়িয়ে দিল।
নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললাম, "'অ্যান্ড' বাদ পড়েছে। রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট হবে।"
"ঐ একই।"
এইবারে আমি আঘাত হানলাম।
"রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটের কথা এইদেশের রিকশাওয়ালাও জানে। তুমি আমাকে আরও চারটা গল্পের নাম বলো।"
সে আমতা আমতা করে গলায় তেজ আনার চেষ্টা করতে করতে করতে বলল, "তোমার সিলেটি উচ্চারণের সাথে শেক্সপিয়ারের কী সম্পর্ক?"
এইবার আমি তাকে উড়িয়ে দিয়ে বললাম, "শেক্সপিয়ার সম্পর্কে এতটুকু জ্ঞান থাকলে তুমি 'হেলমেট' আর 'হ্যামলেটের' পার্থক্য বুঝতে।"
এতক্ষণে ছেলের মগজে বুদ্ধি ফেরত এলো, সে আর কোন কথা বাড়ালো না।
যাই হোক। সোজা কথায়, হ্যামলেট আমার জীবনে পড়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা।
সেই হ্যামলেটের বলিউড সংস্করণ বেরিয়েছে। ড্যানিশ হ্যামলেটের ভারতীয় নাম হেয়্দার।
যেদিন বিশাল ভরত্বাজ ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি হ্যামলেট বানাবেন, সেদিন থেকেই আমি অপেক্ষায় ছিলাম। এর আগে ওথেলোকে আমি ওমকারায় দেখেছি। অসাধারণ একটি ছবি!
শেক্সপিয়ারকে যদি কেউ ভারতীয় রূপে ফুটিয়ে তোলার যোগ্যতা রাখেন, তবে তিনি স্রেফ বিশাল ভরত্বাজ। এমনকি সঞ্জয় লীলা বানসালিও নয়।
অনেক অনেকদিন হলে গিয়ে বলিউডি সিনেমা দেখা হয়না। গতকাল হঠাৎ করেই ঠিক হলো মুভি ডেটে যাওয়ার। আমি আমার বউ, তারেক এবং তারেকের বউ।
আমার এবং তারেকের আগ্রহ হেয়দার নিয়ে। কেন আগ্রহ সেটাই এতক্ষণ উপরে বললাম।
কিন্তু আমাদের সাথে যে আমাদের বিবিজানেরা যাবেন! স্বর্ণার কথা জানিনা, তবে আমার বউ আবার ঋত্বিক রোশানের বিশাআআআআল ভক্ত। অনেকদিন পর স্বপ্নের নায়ক পর্দায় ফিরছেন "ব্যাং! ব্যাং!" নিয়ে। ট্রেলার দেখেই বুঝা যাচ্ছে ছবিটা দেখলে সময় খারাপ কাটবে না। টিপিকাল বলিউডি রেসিপিতে নির্মিত ছবি - দেখো, মজা নাও এবং ভুলে যাও।
হেয়দার সেদিক দিয়ে অনেক সিরিয়াস ঘরানার হয়ে যাবে। পয়সা খরচ করে সিরিয়াস মুভি দেখার কী মানে হয়?
আমি লড়াই চালিয়ে গেলাম। যুক্তি দিলাম যে বেচারা শাহিদ কাপুরের কোন ছবি বাজারে চলছে না। সে যে অসাধারণ ভাল অভিনেতা তাতে কোনই সন্দেহ নেই। টিকে থাকার জন্য বেচারাকে 'ফাটা পোস্টার নিকলা হিরো,' 'আর রাজকুমার' জাতীয় গু-গোবরে অভিনয় করতে হয়েছে। যেখানে ক্রিটিকরা বলছেন 'হেইদার' একটি মাস্টারপিস হয়েছে, এবং আমরা জানি যে বলিউডের সূত্রমতে কোন ছবি ফ্লপ যাবার দুইটি অনিবার্য্য কারন হচ্ছে, হয় সিনেমা অতিরিক্ত বাজে হয়, অথবা অতিরিক্ত ভাল হয় - কাজেই ধরেই নেয়া যায় হেইদার ফ্লপ যেতে বসেছে। ভাল ছবি করেও যদি শাহিদ কাপুরকে হারিয়ে যেতে হয়, সেটা অভিনয় কলার প্রতিই অবিচার করা হবে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা? বিবিরাই জয়ী হলেন। দেখলাম 'ব্যাং! ব্যাং!'
টাইম পাস ছবি হিসেবে খারাপ বলবো না। ছবিতে ঋত্বিক রোশন ছাড়া আর কিছু নেই। সিক্স প্যাকের হিরো এখন অনেকেই আছেন। এইট প্যাকও কেউ কেউ বানিয়ে ফেলেছেন। ঋত্বিক যা বানালো, সেটাকে কী 'টেন প্যাক্স' বলা যাবে? আমার ধারনা বলা উচিৎ।
কাহিনী? সেতো টম ক্রুজের নাইটস অ্যান্ড ডেইজ দেখলেই বুঝে যাবেন। সাথে কিছু জিরা-হলুদ-মরিচ যোগ হয়েছে কেবল।
তবুও আমার ছবিটা দেখতে খারাপ লাগেনি।
কেন?
কারন যাবার আগে আমার বউ আমাকে একটি ক্লিপ দেখিয়েছিল। বাংলা সিনেমার ক্লিপ।
যেখানে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া একদল পোলাপান ডাইনোসরের সাথে গান গাইছে।
"হ্যালো হ্যালো ডাইনাসার, হাউ আর ইউ স্যার?"
এই গানের ক্লিপ দেখার পরে স্যার অনন্ত জলিলের মুভিও ভাল লাগার কথা। সেখানে ঋত্বিক-ক্যাটরিনাতো খুব একটা খারাপ সিনেমা বানায়নি। গিয়ে দেখতে পারেন।
আমি ইনশাআল্লাহ আগামী বুঝবার হেইদার দেখবো। অনেকদিন হিন্দি 'মাস্টারপিস' দেখা হয়না।
১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:২০
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: লোল। ঋত্বিকের বডি দেখলাম, আজগুবি অ্যাকশন দেখলাম, ফাটাফাটি নাচ দেখলাম, ঋত্বিক-ক্যাটরিনার চুম্বন দেখলাম - ব্যস! আর কিছু নাই।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:০০
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: কিছু হল! রিভিউ লিখতে গিয়ে গীত গাইলেন, এটা মানি না। ব্যাং ব্যাং তে কি কি দেখলেন, চাই ডিটেইলস!
হেইদার পরে দিন!