নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
"এই মিয়া! তুই না বলেছিলি কুরআন শরীফ পড়লে বিপদ আপদ এড়ায় চলে? আমিতো এখন নিয়মিত কোরআন পাঠ করি। তাহলে আমি কেন রেগুলার বিপদে পড়ি?"
"তুই যে কোরআন পড়িস, সেটা কি শুধুই আরবীতে? নাকি বাংলায় অর্থ বুঝে?"
"আরবীতে। বাংলায় অর্থ বুঝে পড়তে অনেক সময় লাগে।"
হেসে বললাম, "এখানেইতো গন্ডগোল করে ফেলেছিস। কী পড়ছিস, কেন পড়ছিস কিছুই বুঝতে পারছিস না।"
"সেটা বিষয় না। বিষয় হচ্ছে, আমি ডেইলি নামাজ পড়ি। ডেইলি কোরআন শরীফ পড়ি। তারপরেও দুইদিন পরপর আমার জীবনে নানান বিপদ আসে কেন?"
"বন্ধু, আমি তোকে তিনটা গল্প শোনাবো। কোরআন শরীফ থেকে। গল্পগুলো হয়তো তুই জানিস, তারপরেও আজকে তোর মেমোরী রিফ্রেশ করার প্রয়োজন আছে।"
"গল্প শুনলে কি আমার বিপদ কাটবে?"
"অবশ্যই কাটবে। প্রথম গল্পটা হযরত ইব্রাহীমের(আঃ)। তিনি যখন ইসলাম প্রচার শুরু করলেন, তখন তাঁকে শাস্তি দেয়ার জন্য বিরাট একটা অগ্নিকুন্ড তৈরী করা হলো। তাঁকে সেই আগুনে ফেলা হবে। সেই আগুনের এতই তেজ ছিল যে তার অনেক অনেক উপর দিয়েও কোন পাখি উড়ে যেতে পারছিল না। কেমন বিপদ চিন্তা কর! এই সময়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) একটা কাজ করলেন, যেটাতে তাঁর বিপদ সাথে সাথে কেটে গেল।"
"কী কাজ?"
"সেটা বলছি। তার আগে হযরত ইউসুফের (আঃ) ঘটনা বলে নেই। তাঁকে তাঁর ভাইয়েরা মেরে ফেলার জন্য পরিত্যাক্ত কুয়ায় নিক্ষেপ করেছিল। সেখান থেকে তাঁকে ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। সেখান থেকে তিনি মিথ্যা অভিযোগে জেলে বন্দী হলেন। বিপদের পর বিপদ। তিনিও সেই কাজটিই করলেন, যেটা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) করেছিলেন। এবং তাতে কাজ হলো। তাঁর বিপদও কেটে গেল!"
"কী সেটা? আয়াতুল কুরসী পড়েছিলেন?"
"বলছি দাঁড়া। আগে মূসার (আঃ) ঘটনাটাও বলে নেই। তিনি যখন তাঁর অনুসারীদের নিয়ে মিসর ছেড়ে যাচ্ছিলেন, ফিরাউনের সেনাবাহিনী তাঁদের হত্যা করতে পেছন থেকে তেড়ে আসছিল। সামনে সমুদ্র, পিছনে ফিরাউন - মূসার (আঃ) উম্মতরা বলল, 'হে মূসা (আঃ)! আজকে আমরা শেষ!' হযরত মূসাও (আঃ) তখন তাঁর পূর্ব পুরুষদের পন্থা অবলম্বন করলেন। এবং তাঁরও কাজ হলো।"
"তুই কী আদৌ বলবি কী করেছিলেন তাঁরা?"
"তাঁরা তিনজনই বিপদে ঘাবড়ে যাননি। মাথা ঠান্ডা রাখলেন। তাঁরা তাঁদের মালিকের উপর ভরসা রাখলেন। তিনিই তাঁদের বিপদ থেকে রক্ষা করলেন। বিপদে পড়াটা মোটেও চিন্তাজনক নয়, বরং বিপদে ভয় পাওয়াটাই বেশি বিপজ্জনক। তোর যদি বিশ্বাস থাকে তোকে আল্লাহ বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে দেখবি, বিপদে তুই একদমই ভয় পাচ্ছিস না। ভয় না পেলেই দেখবি তুই ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারছিস। তাহলে দেখবি তোর খারাপ সময় কেটে যাচ্ছে।"
"এইসব শুনতে ও বলতে সহজ। আসল জীবনে অ্যাপ্লাই করা অনেক কঠিন।"
"তোকে তিন নবীর গল্প যখন বললাম, আমাদের নবীজির (সাঃ) ঘটনা কেন বাদ যাবে? তিনি যখন ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন তাঁর আপনজনেরাই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাঁকে হত্যা করতে লোক লাগায়। তিনি মদিনায় পালিয়ে যান। মদিনায় পালাবার পথে তিনি এবং তাঁর একমাত্র সঙ্গী আবুবকর (রাঃ) একটা গুহায় আশ্রয় নেন। কুরাইশরা তাঁদের অনুসরণ করে গুহা পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিল। তাঁরা তাদের কথাবার্তা, চলা ফেরার শব্দ স্পষ্ট শুনছিলেন। হযরত আবুবকর (রাঃ) নবীজির (সাঃ) জীবন নিয়ে শঙ্কিত হলেন। নবীজি (সাঃ) তখন তাঁকে আশ্বস্ত করতে তাঁর পূর্বপুরুষদের মতই বললেন, 'সেই দুইজন ব্যক্তির কীই বা বিপদ হতে পারে যখন তাঁদের সাহায্যকারী তৃতীয়জন হিসেবে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়াতাআলা পাশে থাকেন?'"
"আমীন।"
"এইজন্যই কোরআন শরীফ আরবীর সাথে সাথে বাংলায়ও পড়তে বলি। পড়লে দেখতি প্রতিটা নবী রাসূলদের কী কঠিন সময়ের মধ্য দিয়েই না আল্লাহ পার করেছেন! তাঁদের প্রত্যেককে নানান বিপদ আপদ দিয়ে তিনি পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই কঠিন সময়ে ধৈর্য্য ধরেছেন। তাঁরা আমাদের মানুষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। যখন তাঁদেরকেই আল্লাহ কোন ছাড় দেননি, তুমি আমি সেখানে কী এমন রসগোল্লা? অবশ্যই আমাদের জীবনেও বিপদ আসবে, আমরাও অনেক কিছু পেয়ে হারাবো, আবার হারিয়ে হারিয়ে পাব। কিন্তু তাই বলে সামান্য টুকিটাকি বিপদে ঘাবড়ালে চলবে? সহজ কথা, যদি দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তবু হাসিমুখে যেন বলতে পারি, 'সেই দাসের কী ভয় যখন তার মালিক স্বয়ং তাঁর সাহায্যকারী!' কুরআনের অসংখ্য শিক্ষার মধ্যে এটি অন্যতম প্রধাণ শিক্ষা।"
"মজার ব্যপার কি জানিস? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একই কথা লিখে গেছেন। 'বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থণা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়!' এই বাণী বিদেশীদের এতই পছন্দ হয়েছে যে তাঁকে নোবেল পর্যন্ত দিয়ে দিল।"
"হাহাহা। তাহলেই দেখ, তোকে নোবেল পাওয়ার ফর্মূলা দিয়ে দিলাম। ঠিকঠাক মত কুরআন হাদীস মেনে চল, দেখবি হয়তো কোন একদিন শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পেয়ে গেছিস!"
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৩৪
পাজল্ড ডক বলেছেন: 'সেই দাসের কী ভয় যখন তার মালিক স্বয়ং তাঁর সাহায্যকারী!--------