নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আমি দামী, না ফার্নিচার?"

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৩৯

স্ফুলিঙ্গ
মঞ্জুর চৌধুরী

ঘরময় অল্প বয়সী মেয়েরা খিলখিল করে হাসতে হাসতে ছোটাছুটি করছে।
অন্য কোনদিন হলে এরা সবাই সালমা বেগমের কাছে কড়া ভাষায় একটা ধমক খেত। আজকে উল্টো সালমা বেগমেরই ইচ্ছে করছে এদের সাথে ছোটাছুটিতে যোগ দিতে। নিতান্তই বয়সের সাথে বেমানান বলে তিনি নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রেখেছেন।
আজকে তাঁর একমাত্র মেয়ে সামিরার আখদ অনুষ্ঠান। ঘরের মধ্যেই কাজী ডেকে কলিমা পড়ানো হবে। সন্ধ্যায় দরবার হলে মূল দাওয়াত।
আখদ উপলক্ষ্যে ছেলের বাড়ির কিছু গণ্যমান্য আত্মীয় স্বজন এসেছেন। সামিরার ঘনিষ্ঠ কিছু বান্ধবী এসেছে। তাঁদেরও কিছু আত্মীয়-স্বজন, মুরুব্বী এসেছেন। এতেই অতিথি সংখ্যা পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। পঞ্চাশজনকে বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ানো কি সহজ ব্যপার? তাও যদি কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসতো! সবাই নিজের নিজের সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত। খাওয়া দাওয়ার পুরো দায়িত্বটাই সালমা বেগমকে একা সামলাতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর তাঁর মাথা খারাপের মত হয়ে যাচ্ছে। তিনি কাজের মেয়েকে ধমকা-ধমকি করে আবার নিজেকে সামলে নিচ্ছেন।
"পোলাও টিপে টিপে দেখছিসতো সেদ্ধ হয়েছে কিনা? দেখিস আবার যেন গলে না হয়ে যায়। বিয়ে বাড়িতে কেউ 'পোলাও ভর্তা' খেতে আসেনা।"
"মাংসের লবণ দেইনাই এইটা তুই মনে করায় দিবি না? একা মানুষ কয়দিক সামাল দিব?"
"সালাদ কাটতেই কি জিন্দেগী শেষ করে ফেলবি নাকি? আরওতো কাজ আছে নাকি? জলদি হাত চালা!"
ব্যস্ততার এক ফাঁকে তিনি গিয়ে উঁকি দিলেন সামিরার ঘরে। মেয়েকে তার বান্ধবী এবং বোনেরা ঘিরে রেখেছে। তারা সবাই রসিকতা করছে এবং হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তিনি একবার ভাবলেন আড্ডায় যোগ দিবেন। পরে মত পাল্টালেন। তরুণী মেয়েরা বিয়ের সময়টাতে নিজেদের মধ্যে হয়তো এমন কিছু বিষয় নিয়ে রসিকতা করছে যেখানে তাঁর উপস্থিতি ঠিক মানাবে না।
তিনি সরে যাবার সময়ে সামিরা তাঁকে ডাকলো।
"মা, একটু শুনে যাবে?"
তিনি চোখের ভাষায় জানতে চাইলেন "কী?"
"তোমার ওয়ার্ডবের উপরে আমার ফোন চার্জে দিয়েছি। কাউকে দিয়ে একটু পাঠিয়ে দিবে প্লিজ?"
তিনি বললেন, 'কাবিনের আগে ফোন দিয়ে কী করবি?"
"কাজ আছে। ভীষণ জরুরী। এনে দাও না প্লিজ!"
সালমা বেগম ভুরু কুঁচকে মেয়ের দিকে তাকালেন। তারপর ফোন আনতে চলে গেলেন।
আজকালকার মেয়েদের তিনি বুঝেন না। হয়তো সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করবে। সেটাইতো আজকাল করছে সবাই। কাবিনের সময়ে এইধরনের হাস্যকর ছেলেমানুষী কাউকে মানায়?
"এই নে তোর ফোন। কী করবি? ছবি তুলবি?"
সামিরা হেসে বলল, "সেটা তোমাকে বলতে হবে কেন? তুমি যাও, তোমার কাজ করো।"
সালমা বেগম কিছু বলার আগে জায়মা বলল, "কাজী এসেছে চাচী?"
"না, এখনও আসেনি। তিহাম (সামিরার ভাই) ফোন করে জানিয়েছে কাজী সাহেব আরেকটা বিয়ে পড়িয়ে আসছেন। বেশি হলে আর মাত্র আধাঘন্টা।"
"শুক্রবারে বিয়ে হলে এই একটা সমস্যা। কাজী পাওয়া যায়না।"
"শুক্রবার দিনটা যে শুভ। সবাই এইদিনেই বিয়ে করতে চায়।"
"আমি বাব্বা শনিবারেই বিয়ে করবো। আল্লাহর সাতদিনের কোন দিনই যে অশুভ নয় সেটা প্রমাণ করতে হবেনা?"
"কিন্তু শনিবারে স্বামী সহবাস......"
বৃষ্টি কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। সালমা আন্টি মুরুব্বি মানুষ, তাঁর সামনে বলাটা বোধয় ঠিক হবেনা।
সালমা বেগম বুঝে গেলেন আসলেই তাঁর এখানে থাকা উচিৎ না। তিনি বললেন, "তোমরা এঞ্জয় করো। আমি রান্নাবান্নাটা আরেকবার দেখে আসি।"
সালমা বেগম যেতেই অন্যান্য মেয়েরা বৃষ্টিকে চাপা ভর্ত্সনার স্বরে বলল, "আন্টি আছে, খেয়াল করবি না? বেকুব কোথাকার!"
বৃষ্টি ঠোট উল্টে বলল, "আমি কী করবো? খারাপ কথা বলতে বলতে যে মুখ পঁচে গেছে! মুখ খুললেই পঁচা কথা বেরোয়।"
সবাই আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো। আর তখনই পাঁচ বছরের পিচ্চি তিশা এসে বলল, "কাজী এসেছে! কাজী এসেছে!"
সামিরা মোবাইল ফোনটা তুলে নিল।
এরপরের ঘটনা বলার আগে কিছুদিন পিছিয়ে যেতে হবে।
সামিরা তখন মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলরস ডিগ্রী শেষ করে বেরিয়েছে।
বাড়িতে তখন তার বিয়ে নিয়ে তোড়জোড় চলছে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। যত ভাল প্রস্তাবই আসুক না কেন, প্রাথমিক বাছাই পর্বেই সবাই রিজেক্টেড হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে সামিরা একটা ঝামেলা করে ফেলেছে। ইউনিভার্সিটির একজন বড় ভাইয়ের সাথে প্রেম করে ফেলেছে। হাসান নাম। তার চেয়ে দুই বছর সিনিয়র। পাশ করে বেরিয়ে এখন একটা ভাল চাকরিও করছে। দেখতে শুনতেও বেশ হ্যান্ডসাম।
কিন্তু সামিরার বাবা মা যেসব ছেলেদের রিজেক্ট করেছেন, তাদের তুলনায় হাসান কিছুই না। বোস্টন ইউনিভার্সিটির ফিজিক্সে পিএইচডি করা ছেলে রিজেক্টেড হয়েছে। কারন বিয়ের পর মেয়ে বিদেশে থাকুক, সামিরার বাবা এটা চান না। একমাত্র মেয়ে চোখের আড়ালে গেলে তিনি বাঁচবেন কী করে?
একই অজুহাতে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে পাশ করা ছেলেও বাদ পরে গেছে। ফুপু সেদিন আরেকটি ছেলের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। বুয়েট থেকে পাশ করে বেরিয়েছে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। দেশেই ভাল একটা মাল্টিন্যাশনালে কাজ করে। কিন্তু বাবা বললেন, পিএইচডি ছেলে বাদ দেয়ার পর শুধুমাত্র ব্যাচেলর ডিগ্রী নেয়া একটি ছেলের সাথে বিয়ে দিলে আগের প্রস্তাবগুলোর প্রতি অবিচার করা হবে। অন্তত মাস্টার্স পাশতো করতেই হবে।
সেই তুলনায় হাসান কিছুই নয়। ওরা রাজার কুমার হলে হাসান ভিখিরির সন্তান।
তবু প্রেম বলে কথা!
সামিরা দুরুদুরু বক্ষে, অসংখ্য ঢোক গিলে, কম্পমান গলার স্বর স্থির রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে একটা সময়ে প্রেমের কথা মা বাবাকে বলেই দিল।
হায়রে! সে কী কেয়ামত! বাবা হৈচৈ করে বাড়ি ঘর মাথায় তুললেন। মা ভয় পাচ্ছিলেন বুঝিবা হার্ট অ্যাটাক করে বসেন! বাবা যতই চিৎকার করেন, মা ততই বলেন, "তুমি শান্ত হও! তুমি শান্ত হও!"
"রাখো তোমার শান্ত হওয়া! শান্ত হয়ে কী করবো? মেয়েকে পাঠালাম পড়ালেখা করতে, তিনি গিয়ে প্রেম করেছেন! এখন এসেছেন বিয়ে পড়িয়ে দিতে! এই দিনটার জন্যইতো তাদের পেলে বড় করেছিলাম! রাস্তাঘাট থেকে যাকে তাকে ধরে এনে বলবে বিয়ে পড়িয়ে দিতে - আমরাও সোনামুখ করে কাজী ডাকতে যাব! বেশ! তোমারও যদি কাউকে পছন্দ হয় তাহলে বলে ফেল। মা মেয়ের একসাথে কাবিন পড়িয়ে দেই!"
"এসব তুমি কী বলছো? দোহাই লাগে, তুমি শান্ত হও! প্লিজ!"
বাবার চিৎকার চ্যাচামেচি শুনে তিহাম এসে হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সামিরা কি করবে কিছু বুঝতে না পেরে কাঁদতে লাগলো। কী দিন যে গেছে!
কয়েকদিনের প্রচেষ্টায় একটা সময়ে বাবার মন নরম হলো। একদিন সকালে নাস্তার টেবিলে গম্ভীর স্বরে মাকে বললেন, "তোমার মেয়েকে বল ছেলেপক্ষকে প্রস্তাব নিয়ে বাড়িতে আসতে। মেয়ের বাড়িতে যে প্রস্তাব নিয়ে যেতে হয় এই সাধারণ কার্টেসিও কী শিখিয়ে দিতে হবে?"
পরের শুক্রবার বিকালের দিকে বারো প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে হাসানের বাবা মা এবং বড় ভাই ভাবি এসে উপস্থিত। সামিরার বাবার বরফ গলতে বেশিক্ষণ লাগলো না। ড্রয়িংরুম থেকে যতবার হাসি ঠাট্টার শব্দ আসতে লাগলো, প্রতিবার এক অজানা আনন্দে সামিরার বুক লাফিয়ে উঠতে লাগলো।
তার ইচ্ছা করছিল কোন এক মাঠে গিয়ে দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে শুধু দৌড়াতে এবং চিৎকার করে হাসতে। বেঁচে থাকায় এত সুখ!
তার ফোনে হাসানের ফোন এলো।
"তুমি এখন ফোন করেছো কেন?"
"কোন আপডেট আছে?"
"জানিনা। তবে ড্রয়িংরুম থেকে হাসাহাসির শব্দ আসছে।"
"তাহলেতো মনে হচ্ছে ভাল লক্ষণ! কী বলো?"
"বুঝতে পারছি না।"
"যদি দুই পক্ষই রাজি হয়, তাহলে আমি কিন্তু বিয়ের জন্য বেশি দেরী করতে পারবো না।"
"ইশ! বিয়ের জন্য এত তাড়া কিসের?"
"বিয়ে না হলে তোমাকে বাসরে পাব কি করে?"
"ইশ! একদম অসভ্যতা করবে না বলে দিলাম।"
"তোমার সাথে অসভ্যতা না করলে কার সাথে করবো? পাশের বাড়ির ভাবীর সাথে?"
"খবরদার! আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকালেও একদম খুন করে ফেলবো বলে দিচ্ছি।"
"তাহলে? এই বল না, বাসর রাতটা আমরা কিভাবে শুরু করবো? তোমার কোন প্ল্যান আছে?"

তিনমাস পরেই বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেল। বিশে ডিসেম্বর। হাসানের বড় বোন অ্যামেরিকা থাকেন। ডিসেম্বরে তাঁদের হলিডে সিজন। তাঁরা তখনই দেশে আসতে পারবেন। এমনিতেই বড় ভাইয়ের বিয়েতে আসতে পারেন নি। এখন যদি ছোট ভাইয়ের বিয়েতেও বাদ পড়েন, তাহলে সারাজীবন আফসোস থেকে যাবে।
দুই পক্ষই রাজি। বিয়ের আয়োজন মহা ধুমধামে শুরু হলো।
বিয়ের শপিং করতে পাত্র ও কণ্যা দুইপক্ষই কলকাতায় চলে গেল। পার্ক স্ট্রিটের দোকানগুলোতে ভাল শাড়ি, শেরওয়ানি পাওয়া যায়। বাকি শপিংয়ের জন্য আমাদের ঢাকাতো আছেই।
সালমা বেগমের একটি শেরওয়ানি ভীষণ পছন্দ হয়েছিল। ডিজাইনটা বেশ আন-কমন।
হাসানের মাকে দেখাতেই তিনি বললেন, "আপনার রুচীর প্রশংসা অবশ্যই করতে হয় ভাবী। কিন্তু আপনার কী মনে হচ্ছে না, একটু বেশিই সিম্পল হয়ে যাচ্ছে ডিজাইনটা? আমি বলতে চাইছিলাম, বিয়েতো জীবনে একবারই করে মানুষ, একটু পাথর টাথর বসানো শেরওয়ানি না হলে কী চলবে? আপনাদের জামাই, আপনাদেরই তো ইজ্জতের ব্যপার। হিহিহি।"
শেষ পর্যন্ত তাঁদের পছন্দেই শেরওয়ানি কিনতে হলো। ঝকমকে ডিজাইনের শেরওয়ানি। পাথরের ভারে ভারী হয়ে আছে। একজন বয়ষ্কা মেয়ে মানুষের পক্ষে একা তোলা কষ্টকর। দামও পড়েছে আগেরটার প্রায় দ্বিগুণ।
সামিরার বাবা স্ত্রীকে বোঝালেন, "একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি। পয়সা কার জন্য বাঁচিয়ে রাখবো? কাউকে কোন অভিযোগের সুযোগ দিব না বলে দিলাম।"

বিয়ের কার্ড ছাপা হয়ে গেল। সামিরাদের পক্ষের কার্ড নিয়ে দাওয়াত দিতে সামিরার বাবা মা হাসানদের বাড়ি গেলেন।
কার্ড দেখে হাসানের মা খুবই উৎফুল্ল কন্ঠে বললেন, "কী যে সুন্দর কার্ড হয়েছে! আপনাদের রুচীর প্রশংসা অবশ্যই করতে হয়!"
সামিরার বাবা বললেন, "ধন্যবাদ। এসবই আমার মিসেসের পছন্দ। আমাদের বাড়ির সবকিছুই তাঁর নির্দেশে চলে। তিনিই বাড়ির বস। হাহাহা।"
হাসানের বাবা বললেন, "এটাতো সব বাড়িরই এক ঘটনা। ঐ যে একটা হিন্দি সিরিয়াল ছিল না, 'কাহানি ঘর ঘর কি?' হাহাহা।"
গল্প থেকে গল্পে হঠাৎ হাসানের মা বলে উঠলেন, "আমরা ওদের দুজনের জন্য নিকেতনে একটা ফ্ল্যাট দেখে আসলাম। আঠারোশো স্কয়ার ফুটের। তিন বেডরুম।"
হাসানের বাবা বললেন, "হ্যা, দারুন ফ্ল্যাট হয়েছে। আমার কাছে সবচেয়ে ভাল যেটা লেগেছে তা হচ্ছে ফ্ল্যাটে প্রচুর আলো বাতাস খেলে। নাহলে ঢাকা শহরের আজকালকার ফ্ল্যাটগুলোতো দেখেছেনই। কেমন অন্ধকার অন্ধকার থাকে। দিনের বেলাতেই টিউব লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়।"
সামিরার বাবা বললেন, "কেন, বিয়ের পর সামিরা এই বাড়িতে থাকবে না? যৌথ পরিবারে সুবিধাতো অনেক।"
হাসানের মা বললেন, "না ভাই। আমরা এতদিন ছেলেকে বড় করেছি, এবারে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি, এইবার সে নিজের মত উড়ুক। আমাদের বড় ছেলের ক্ষেত্রেও একই কাজ করেছি। এতে সুবিধা হচ্ছে শ্বাশুড়ি বৌয়ে ঝগড়া লাগে না। আদরটা বজায় থাকে। হাহাহা।"
সালমা বেগম বললেন, "তা কথাটা খুব একটা খারাপ বলেননি।"
হাসানের মা বললেন, "আপনারা চলুন না একদিন আমাদের সাথে, ফ্ল্যাটটা দেখে আসবেন। ফার্নিচার কিনে দেবার সময়ে আপনাদের তাহলে একটা ধারনা থাকবে।"
সামিরার বাবা মা দুজনেরই ভুরু কুঁচকে গেল।
"ফার্নিচার মানে?"
হাসানের বাবা খুবই নির্বিকার গলায় বললেন, "বিয়ের সময়ে আপনারা নিশ্চই মেয়েকে খালি হাতে বিদায় করবেন না? সেজন্যই বলছি আর কি। আমাদের মেয়ের বিয়েতে আমরা যেমন পুরো ঘর সাজিয়ে দিয়েছিলাম। গুলশানে একটা দোকান ছিল, ইতালিয়ান ফার্নিচারের, সেখান থেকেই সব কিনেছিলাম। মেয়ের সংসার যেন সুখে সুখে শুরু হয়, সেটার জন্য যতটুকু বাবা মার পক্ষে সম্ভব, সেটাই করা আর কি। এটাকে আবার যৌতুক ভেবে বসবেন না যেন। বিয়ের আসরে আমাদের 'চোর পুলিশ' খেলাটা ঠিক মানাবে না। হাহাহাহা।"
সামিরার বাবা একবার নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, "তাতো বটেই। তাতো বটেই।"
হাসানের মা বললেন, "আপনাদের মেয়েকে আপনারা দিবেন, এতে আমাদের কোনই দাবী দাওয়া নেই। আপনারা যাই দিবেন, সবই আপনাদের আশীর্বাদ। কিন্তু একটা কথা শুধু মাথায় রাখবেন, বড় বউয়ের কাছে যেন আবার সামিরা মায়ের মুখ ছোট না হয়ে যায়।"
সালমা বেগম শুকনো মুখে জানতে চাইলেন, "বড় বউয়ের বাড়ি থেকে কী ফার্নিচার দেয়া হয়েছিল?"
"মালয়েশিয়া থেকে ইম্পোর্ট করিয়েছে। এখন আপনারা আপনাদের মেয়েকে মিরপুর থেকে ফার্নিচার বানিয়ে দিতেই পারেন, কিন্তু আপনার মেয়ের না মাথা হেঁট হয়ে যায়। জায়ে জায়ে হিংসেতো সংসারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কী বলেন? হিহিহি।"
সামিরা এসবের কিছুই জানতো না। এর কয়েকদিন পর একটা ফোন কল এলো। হাসানের মা।
"হ্যালো আপা, কেমন আছেন?"
"জ্বী আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা ভাল?"
"আমরাও আলহামদুলিল্লাহ! একটু খোঁজ খবর নিতে ফোন করেছি আর কি। বিয়ের সময়ে কত ঝামেলা চলে! দেখা যাবে আলতু ফালতু ব্যপার নিয়ে মাথা ঘামাতে গিয়ে আসল কাজগুলোই করা হয়নি।"
"আপনার ভাই এটা হতে দেন না। যেকোন কাজের আগেই সবকিছু ঠান্ডা মাথায় পয়েন্টাকারে লিখে রাখেন। তারপর শুধু চেক করেন।"
"তাতো অবশ্যই। ভাইসাহেব কী আর এমনি এমনি জীবনে এত সফল হয়েছেন? তা আপা, বর কণের জন্য কোন গাড়ি যাবে সেটা ঠিক করেছেন?"
সালমা বেগম বলতেই যাচ্ছিলেন, বরতো বরের গাড়ি চড়েই আসে। তবু মুখে ব্রেক কষলেন।
"আপনাদের মাথায় কোন বুদ্ধি আছে?"
হাসানের মা বেশ উৎসাহী কন্ঠে বললেন, "আমার নাতি অ্যামেরিকা থেকে আসছে। সেখানে বিয়েতে বর লিমুজিন করে যায়। লিমুজিন বুঝেছেনতো? ঐ যে লম্বা গাড়িটা। এখন সে শখ করেছে মামার বিয়েতে লিমুজিন চড়বে।"
সালমা বেগম বললেন, "ঢাকা শহরে আপনি লিমুজিন গাড়ি কোথায় পাবেন বলেন?"
"লিমুজিন না হোক, অন্তত মার্সিডিজ গাড়িতো ভাড়ায় পাওয়া যায়। আমাদের দেশের এইসব টয়োটা ময়োটা গাড়ি অ্যামেরিকায় ঝি চাকরেরাও ব্যবহার করে। নাতি বেচারা জীবনে মাত্র একটা মামারই বর যাত্রায় যাচ্ছে, সেখানে যদি মার্সিডিজে না যায়, তাহলে চলবে?"
সালমা বেগম বললেন, "ঠিক আছে, দেখি, সামিরার বাবা কী বলেন।"
"বেয়াই সাহেব না করবেন না। উনার রুচি আপনার মতই ভাল। হিহিহি।"
মার্সিডিজের কথাও সামিরাকে বলা হলো না। বিয়ের মেনুতে আলগা মাতব্বরির কথাও না। শেষে যখন হাসানের মা সেনাকুঞ্জে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য চাপ দিলেন, তখন তিহাম এসে বড় বোনকে সব কথা খুলে বলল।
সামিরা প্রথমে ভীষণ অবাক হলো। তারপর রাগ। সে সাথে সাথে হাসানকে ফোন দিল।
"হ্যালো জান বউ, হঠাৎ ফোন দিলে যে?"
"শোন, তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে। খুব জরুরী। তোমার কাছে সময় হবে?"
হাসান খুব রোমান্টিক গলায় বলল, "তোমার জন্য জীবন হাজির জানু! বল কত সময় লাগবে? সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে শুধুই তোমার কথা শুনবো।"
"ফাজলামি কথা না, be serious হাসান!"
"ওকে। একদম এটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে তোমার কথা শুনছি। বিশ্বাস না হলে এসে দেখে যেতে পারো। এখন বল।"
সামিরা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, "তোমার বাড়ির লোকজন এসব কী শুরু করেছে বল তো?"
হাসান খুব অবাক হয়ে বলল, "কী শুরু করেছে?"
"এই যে আজকে শেরওয়ানি চাচ্ছে, তো কালকে ফার্নিচার। এখন বলছে সেনাকুঞ্জে বিয়ে দিতে হবে এবং বরকে মার্সিডিজ করে আনাতে হবে। এসব কী? আমরা আমাদের সামর্থ্যে যা পারবো করবো। তোমাদের ব্যপারে আমরা নাক গলাচ্ছি? তাহলে?"
হাসান সামিরাকে বোঝাবার চেষ্টা করে, "আহা, তুমি উল্টো মানে বের করছো। প্রতিটা সন্তানকে নিয়ে মা বাবার কিছু স্বপ্ন থাকেনা? আমার বাবা মায়েরও তেমন কিছু স্বপ্ন আছে, এই আর কি।"
"যৌতুক নেয়ার স্বপ্ন?"
"তুমি একে যৌতুক বলছো কেন?"
"যৌতুক নয়তো কী? আজকে বলছো ফার্নিচার কিনে দিতে, কালকে বলবে ফ্ল্যাট কিনে দিতে - ধীরে ধীরে মুখের হা শুধু বড়ই হবে।"
"ছিঃ! এসব কী ধরনের নোংরা ভাষা তুমি ব্যবহার করছো?"
"যৌতুক দাবী করে তোমরা কিই এমন পরিষ্কার কাজ করছো যে তোমাদের সাথে নোংরা কথা বলা যাবেনা?"
"আবারও বলছি, আমার বিয়ে নিয়ে আমার মা বাবার কিছু শখ আহ্লাদ ছিল, স্বপ্ন ছিল - এর বেশি কিছু না।"
"স্বপ্ন সেটাই দেখা উচিৎ যা নিজের টাকায় কেনা সম্ভব। ভিক্ষা করে স্বপ্ন পূরণের কী মানে হয়?"
"তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছো সামিরা।"
"লিমিট তোমরা ক্রস করেছো। আমি তোমাকে স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, তোমাকে আমি দুইদিন সময় দিলাম। এখনই ডিসিসান নাও, তুমি আসলে কাকে চাও? আমাকে? নাকি ইমপোর্টেড ফার্ণিচারকে?"
"তুমি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছো সামিরা। এসব বড়দের ব্যপার। ওদেরকেই বুঝতে দাও।"
"বড়দের উপর ছেড়ে দিলেতো তোমার সাথে আমার বিয়েই হবার কথা ছিল না। শোন হাসান, মার্সিডিজ ভাড়া করে সেনাকুঞ্জে বিয়ে করলে শাহরুখ খানকেও বিয়ে করা যায়। আমাকে যদি তাই করতে হয়, তবে আমি শাহরুখ খানকেই বিয়ে করবো, তোমাকে না। মনে রেখো, আমাকে বিয়ে করতে চাইলে নো ফার্নিচার, নো সেনাকুঞ্জ। আমি এক বস্ত্রে গৃহত্যাগ করলেও কিছু বলতে পারবে না। দুইদিন সময় দিলাম, তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে আমাকে জানাও।"
সামিরা ফোন রেখে দিল।
তিহাম এতক্ষণ বোনের পাশে বসে চোখ বড় বড় করে সব শুনছিল।
"তোর কী মনে হয় আপু? দুলাভাই রাজি হবেন?"
সামিরা আত্মবিশ্বাসের হাসি হেসে বলেছিল, "দুলাভাইতো দুলাভাই, তার বাপও রাজী হবে। দেখে নিস।"
হাসান ফোন করেই যাচ্ছে। সামিরা ফোন স্যুইচ অফ করে দিল।
পরের দিনই হাসান এসে সামিরাদের বাড়িতে উপস্থিত। একরাতেই চেহারায় ছন্নছাড়া ভাব চলে এসেছে। চুল এলোমেলো। দাড়ি শেভ করেনি।
সামিরার মন খুশিতে ভরে উঠলো। শেক্সপিয়ার বলে গেছেন, "I have to be cruel only to be kind."
সামিরার ভাষায়, হাতুড়ির আঘাত না পড়লে প্যারেক গাঁথে না।
"তুমি এমন কেন করছো?"
"আমি আবার কী করলাম?"
"এই যে এখন নতুন নাটক শুরু করলে?"
"তোমরা যৌতুক চাইবে, আর আমার দোষ হয়ে গেল?"
"যৌতুক বলছো কেন?"
"গলা নামিয়ে কথা বলো হাসান, এটা আমার বাড়ি।"
"যৌতুক বলছো কেন? ওটা বাবা মায়ের স্রেফ একটা শখ ছিল।"
"বাচ্চাদের যেমন অনেক উল্টাপাল্টা শখ মা বাবা পূরণ করেন না, তেমনি বাবা মায়েরও আলতু ফালতু শখ ছেলে মেয়েদের পূরণ করতে নেই।"
"তুমি বাড়াবাড়ি করছো সামিরা।"
"তোমরা যৌতুক চাচ্ছো হাসান! যৌতুক নিয়েই যদি বিয়ে করতে চাও, তবে অন্য কোন মেয়ে খুঁজে বের করো। আমাকে নয়।"
হাসান মাথা নিচু করে ফুপিয়ে উঠলো। সামিরার মন দ্রবীভূত হয়ে গেল। ইচ্ছে করলো তার মাথাটা তুলে ঠোটে একটা চুমু খায়। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালো।
আলতো স্বরে বলল, "তুমি যদি আমাকে ভালবাসো, আমাকে পেয়েই সুখী হও, তবে ফার্ণিচার দিয়ে কী হবে?"
হাসান বলল, "তোমার কাছে আজকে ফার্ণিচার বড় হয়ে গেল? আমাদের সুখটা তোমার চোখে পড়ছে না? তোমার বাবা মার যদি মেয়ের বিয়েতে খরচাপাতি করতে ইচ্ছে না থাকে, তবে সরাসরি বললেই পারতেন। এইভাবে তোমাকে দিয়ে বলাচ্ছেন কেন?"
সামিরার মাথায় রক্ত উঠে গেল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার ইচ্ছে হলো হাসানকে খুন করে ফেলতে। তার ভালবাসাকে, তাকে যে ফার্ণিচারের ব্র্যান্ড দিয়ে মাপা হচ্ছে এই সহজ সত্যটা গাধা বুঝতে পারছে না। উল্টো তার মা বাবাকে দোষ দিচ্ছে!
সামিরা বলল, "বেরিয়ে যাও। আমি তোমার মুখ দেখতে চাইনা।"
হাসান নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, "ফর হেভেনস সেক, ড্রামা বন্ধ করো। কয়েকদিন পরেই আমাদের বিয়ে।"
সামিরা বলল, "কয়েকদিন পরে বিয়ে আমি করবো ঠিকই, কিন্তু তোমাকে নয়।"
"পাগলের মত কথা বলো না সামিরা।"
"আগে পাগল ছিলাম, এখন সম্পূর্ণ সুস্থ্য মাথায় কথা বলছি। আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।"
সামিরার চোখে কিছু একটা ছিল যা হাসানকে একদম বোবা করে দিল। সে হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, "আমি এখন যাই। তোমার কিছু সময় লাগবে। বিকালে ফোন দিব।"
সামিরা যখন বাবাকে বলল সে হাসানকে বিয়ে করতে আগ্রহী নয়, তখন ঘরে আবার কেয়ামত ফিরে এলো। বাবা আগের মতই বাড়ি ঘর মাথায় তুললেন। পার্থক্য হচ্ছে, এবারে সামিরা ঠান্ডা মাথায় সব সামাল দিল। একদম কান্নাকাটি করলো না।
"ফাইজলামি পেয়েছিস? একবার এই ছেলেকে বিয়ে করার জন্য জেদ ধরলি। এখন যখন সব ঠিকঠাক, তখন বলছিস একে বিয়ে করবি না! জীবনকে কী পুতুল খেলা পেয়েছিস নাকি?"
সামিরা অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় বলল, "পুতুল খেলা ভাবিনা বলেইতো সময় থাকতে ঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছি বাবা। তোমার কী ধারনা, তুমি ওদের সব ডিমান্ড পূরণ করে দিলেই তারা চুপ হয়ে যাবে? বরং তাদের ক্ষিধা আরও বেড়ে যাবে। যৌতুকের প্রয়োজনে তারা আমায় মারধর করবে।"
"তুই সিনেমা বেশি দেখিস সামিরা! এসবের কিছুই হবেনা। তারা কী চাইবে? সব তাদের দিব। আমার কী টাকা পয়সার অভাব আছে নাকি?"
সামিরা এবারে বাবার চোখে চোখ রেখে বলল, "কেন বুঝতে পারছো না যে তুমি ওদের যত দামী ডিমান্ড পূরণ করতে থাকবে, নিজের মেয়েকে ততই সস্তা প্রমাণ করতে থাকবে! একটা সময়ে আমি তাদের কাছে স্রেফ সোনার ডিম পাড়া হাঁস হয়ে যাব, ডিম দেয়া বন্ধ হলেই যার কোন মূল্য থাকবে না!"
সামিরা বাবার চোখের দিকে ঠিক সেই দৃষ্টিতে তাকালো যে দৃষ্টি হাসানকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিল। বাবাও মেয়ের সাথে কোন তর্কে গেলেন না।
বিড়বিড় করে বললেন, "আত্মীয় স্বজনের কাছে কার্ড বিতরণ করা হয়ে গেছে। এখন এই ঘরে বিয়ে না হলে লোকে ছিঃ ছিঃ করবে।"
সামিরা বাবার কাঁধে হাত রেখে বলল, "তোমার মেয়ের বিয়ে ঠিকই হবে বাবা। না হলেও ক্ষতি নেই। ঐ বাড়িতে গিয়ে অসুখী হবার চেয়ে তোমার মেয়ে তোমার কাছেই কী বেশি সুখী থাকবে না?"
বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।
মেয়েদের মধ্যে কলরব উঠলো। বর কবুল বলে দিয়েছে। কাজী সাহেব এখন মেয়ের মত নিতে অন্দর মহলে আসবেন।
সামিরা তখন হাসানকে কল দিল। হাসানই ফোন ধরলো।
"হ্যালো? হ্যালো?"
সামিরা কিছু বলল না। তার কিছুই কথা বলার নেই। সে ফোনটা এমনভাবে ফেলে রাখলো যাতে ঘরের সব কথাবার্তা শোনা যায়।
বিয়ে ভাঙ্গার সময় হাসান বলেছিল, "ভুল করছো সামিরা। কার্ড ছেপে যাবার পর বিয়ে ভাঙ্গলে সেই মেয়ের ভাল বিয়ে হয়না।"
সামিরা আত্মবিশ্বাসী স্বরে বলেছিল, "আমার বিয়ে হবে। যৌতুক ছাড়াই হবে। বিয়ের কবুল বলার সময়ে আমি তোমাকে লাইভ শোনাবো।"
কাজী সাহেব বলতে লাগলেন, "সিলেট সদর থানার লামাবাজার নিবাসী, জনাব মোহাম্মদ সলমন-উস-সামাদের একমাত্র পুত্র জনাব মোহাম্মদ সামি-উস-সামাদকে আপনি, মেহজাবিন আহমেদ সামিরা, পিতা শোয়েব আহমেদ, গ্রাম আলিনগর, থানা বিয়ানীবাজার, জেলা সিলেট; বিশ লক্ষ একটাকা দেন মোহরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি আছেন?"
ফোনের ওপাশ থেকে হাসান আর্তনাদ করে উঠলো, "সামিরা, এ কাজটা করোনা! প্লিজ! এখনও সময় আছে। এখনও কিছুই হয়নি।"
সামিরা স্পষ্ট গলায় বলল, "রাজি।"
হাসানের অনুনয় সাথে সাথে থেমে গেল।
কাজী সাহেব আবার বললেন, "বলুন, আপনি রাজি?"
সামিরা আবারও স্পষ্ট গলায় বলল, "রাজি।"
কাজী সাহেব তৃতীয়বার জানতে চাইলেন, "আপনি রাজি?"
সামিরা বলল, "জ্বী, আমি রাজি।"
"আলহামদুলিল্লাহ! এখানে সই করুন।"
সামিরা নিজের নাম লিখে তারিখ লিখলো, বিশে ডিসেম্বর দুইহাজার তের।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৯/-১

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:০১

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: উচিত শিক্ষা

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:১৪

এহসান সাবির বলেছেন: বেশ বড়... পরে পড়ব আশা করি....

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:০৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৩০

জনৈক রুয়েটিয়ানের ব্লগ বলেছেন: ছোটখাট উপন্যাস লিখা ফেলসেন দেখি।
পিডিএফ বান্ধাইয়া থুইলাম, আগামী এক বৎসরের মধ্যে পইড়া ফেলাবো।

:-B

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনার দয়া।

৪| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৩২

আবু শাকিল বলেছেন: দেয়া নেয়ার ব্যাপারে মুরুব্বী রা একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে মনে হচ্ছে।

যৌতুক প্রথা নাকি গ্রামে অথবা অশিক্ষিত পরিবারে বেশি।এখন দেখছি টেকা টুকা ওয়ালা কম যান না।

গল্প অনেক ইন্টারেস্টিং । ভাল লেগেছে।

তবে গল্পে এই ঈদে প্রচার হওয়া মিডলক্লাস সেন্টিমেন্ট নাটকের কিছু মিল পেলাম। মনে হচ্ছে গল্পের থিম নাটক থেকেই নেওয়া।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: গল্পের থিম হচ্ছে যৌতুক দিব না, প্রয়োজনে বিয়েই করবো না। থিম বাস্তবের একটা পরিচিত আপু থেকে নেয়া। বিদেশে থাকায় আমার দেশী নাটক দেখা হয় না। নিজের অভিনিত নাটকও আমার দেখা হয়নি। :(

৫| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:২১

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ৪থ ভালোলাগা +++++++

চমৎকার গল্প , চমৎকার ম্যাসেজ ।

ভালো থাকবেন :)

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:২৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :)

৬| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:০০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: অনেক ভাল লাগলো । সাহসীরা সবসময় জয়ী হয় । :)

২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৩১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৭| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯

আমিনুর রহমান বলেছেন:




গল্পের লেখুনী ও বক্তব্য ভীষণ শক্ত।


যদিও বাস্তবে মেয়েরা পারে এটা করতে না। আমার বোনের পছন্দ ছিলো যে ছেলেকে তার বাবা-মা'র এমন কিছু আবদারে আমার মা তাদের আমাদের বাসা থেকেই বের করে দিয়েছিলো। এবং বিয়েও হয়নি ওই ছেলের সাথে।

আমার বোনটা তার দাম্পত্য জীবনে ১৪ বছর ধরে সুখী জীবনযাপন করছে।

২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৩৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: কিছু কিছু মেয়ে পারে, তাঁদের নিয়েই গল্পটি লেখা, যাতে যারা পারেননা, তাঁরা শিখতে পারেন কী করে 'না' বলতে হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.