নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুড়া রঙ্গিলা!

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৫৯

তিন্নি তখন ওয়ালমার্টে মাত্রই অ্যামেরিকান কর্মজীবন শুরু করেছে।
"কাজ কেমন লাগছে?" - জিজ্ঞেস করতে আমি একটু অস্বস্তি বোধ করি। দেশে থাকতে সে সিমেন্স, হোলসিমের ,মতন মাল্টিন্যাশনালে কাজ করেছে, এখানে এসে একটি রিটেইল জায়েন্টের ক্যাশিয়ার, ভাল লাগারতো কথা নয়।
ও নিজে থেকেই বলল, "ওয়ালমার্টে কাজ করতে তেমন খারাপ লাগছে না। বেশিরভাগ কলিগই মিশুক।"
আমি উৎসাহের সাথে বললাম, "বাহ্! তাহলেতো দারুণ হলো! এখানে দুই তিনমাস থেকে হালকা কাজ শিখে নাও, তাহলে ব্যাংকে এপ্লাই করলে কোন সমস্যাই হবেনা।"
তারপর তিন্নি তার কলিগদের গল্প করতে থাকে।
এক আফ্রিকান-অ্যামেরিকান মহিলা আছেন, যিনি কোনভাবেই তার নাম (নুসরাত বা তিন্নি কোনটাই) উচ্চারণ করতে পারেন না। শেষে হাল ছেড়ে বলেছেন, "আমি যদি তোমাকে 'নু' ডাকি, তাহলে চলবে?"
আমি শুনে বললাম, "ভাগ্য ভাল তোমার নাম নুসরাত। 'গুলশান' হলে কেলেংকারী হয়ে যেত!"
এক মহিলা আছেন, স্পেইন থেকে এসেছেন। পেশায় ডাক্তার ছিলেন। এখানে এসে তিনিও ক্যাশিয়ারের চাকরি করছেন। ইংরেজিতে দূর্বল। একসেন্টে।
তিনি বললেন, অ্যামেরিকানদের মত উচ্চারণে ইংলিশ বলা শিখে ফেললেই তিনি নার্স অথবা অন্য কোন ভাল চাকরি নিয়ে চলে যাবেন।
আমি জানতে চাই, "কতদিন হলো ওয়ালমার্টে কাজ করছে?"
"ছয় মাসের বেশি হয়ে গেছে।"
"ওকে বলো এখনই অন্য কোথাও এপ্লাই করতে। ইংলিশ শিখতে গেলে এখানেই জিন্দেগী কেটে যাবে, তবু একসেন্ট আসবে না। এরা একসেন্ট নিয়ে মাথা ঘামায় না। কী বলতে চায় এটা ওদের বুঝাতে পারলেই হলো।"
একটা বৃদ্ধ ভদ্রলোকের কথাও সে বলে। বুড়ো নাকি তাকে অত্যন্ত স্নেহ করে। নিজের জীবনের সবকিছুই তার সাথে শেয়ার করে। বুড়োর স্ত্রী মারা গেছে, এক ছেলে ড্রাগ ডিলার এবং আরেকটা এডিক্টেড - বেচারার মনে অনেক কষ্ট।
আহারে!
দেখা গেল, ওয়ালমার্টে এই বৃদ্ধই তিন্নির সবচেয়ে ভাল বন্ধু হয়ে গেলেন।
একদিন আমার সাথে বুড়োর পরিচয়ও করিয়ে দিল। বুড়োর সাথে পরিচিত হয়ে সুখী হলাম। বয়স আশির কম হবেনা। দেখতে অবশ্য নব্বই মনে হয়।
বুড়ো একদিন তাকে তার সাথে লাঞ্চের দাওয়াত দিল। তিন্নি আমাকে বলতেই আমি বললাম, "খবরদার! এইসব অ্যামেরিকান বুড়াদের বিশ্বাস করবা না। কারও সাথেই কোন লাঞ্চ ফাঞ্চ না!"
"কেন?"
"তুমি এদের চিনো না। হাড় বজ্জাত হয়ে থাকে। মেয়ে মানুষ দেখলেই ফ্লার্ট করা শুরু করে। দেখা যাবে লাঞ্চে নিয়ে গিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসেছে!"
তিন্নি অতি বিরক্ত স্বরে বলল, "তোমারও মন শুধু ফালতু চিন্তায় ভরপুর! আমার দাদার বয়সী একজন লোক, সে আমাকে নিয়ে এইসব চিন্তা কেন করবে?"
আমি অফিসে ছিলাম। বেশি কথা বলার সুযোগ ছিল না।
কাজেই সারমর্মে বললাম, "যাই করো, খবরদার কোন লাঞ্চ ফাঞ্চ না!"
"ঠিক আছে।"
এর কয়েকদিন পর আমার ফোনে তিন্নির ফোন এলো।
"হ্যালো, কাজে বিজি?"
"তা একটুতো বিজি আছিই। কেন?"
"আর বলো না, ঐ বুইড়াটা একটা বদ, বদমাইশ, ছোটলোক!"
"কেন কী হয়েছে?"
"সে আজকে আমাকে প্রপোজ করেছে।"
আমি হোহো করে হেসে দিলাম। নিজের আলাদা কেবিন থাকায় রক্ষা।
"হাসছো কেন?"
"আমি কী বলেছিলাম? দেখলেতো? এখন বল, আমারই মন নোংরা, তাই না? হাহাহা।"
"আমার দাদার বয়সী একটা লোক! এক পা ইতিমধ্যেই কবরে! তার মনে এইসব থাকবে আমি কিভাবে বুঝবো? ছিঃ!"
"Welcome to America honey!"
এরপর তাকে জ্বালাতেই সুর করে গাইতে শুরু করলাম, "সখী গো, আমার মন ভালা না.....বুড়ার সাথে পীড়িত কইরা সুখ পাইলাম না!"
তিন্নি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল, "উফ! একদম ফাইজলামি করবা না! মনটা কেমন ঘিনঘিন করছে! বললাম আমি ম্যারেড, বদটা বলে, 'তো কী হয়েছে? এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার এখানে কোন বিষয়ই না!'"
আমি আবারও খিলখিল করে হাসি।
তিন্নি আবারও রাগে।
"ফাইজলামি করলে আমি কিন্তু ফোন কেটে দিব বললাম।"
আমি হাসি থামাতে পারিনা। ও রাগ করে ফোন কেটে দেয়। আমি বেশ কয়েকবার ফোন করেও তাকে পাইনা।
পরে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর ঘটনার আরেকটু বিস্তারিত শুনলাম।
ভদ্রলোক প্রথম দেখা থেকেই তিন্নিকে ভালবেসে ফেলেছে। সে তাকে নিয়ে লাঞ্চে যেতে চায়, মুভি দেখতে যেতে চায়। তিন্নি বলেছে যে আমি এসব শুনলে ভীষণ রাগ করবো। সে বলল আমাকে বলার কী দরকার?
তিন্নি মেজাজ খারাপ করে সরাসরিই বলেছে, "আপনি আমার দাদার বয়সী।"
কথাটা লোকটার মনে বিঁধেছে মনে হলো। সে বলল, "তুমি জানো, গ্রোসারী ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়ে আমাকে ডেটের প্রপোজ করেছে। ইলেক্ট্রনিক্সের একটা মেয়েও আমার জন্য পাগল। আমি শুধুই তোমার কারনে তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি! আর তুমি আমকে এই কথা বলছো?"
বুড়ো বুঝাতে চায় তার মার্কেট ভ্যালু এখনও আছে। ক্লিয়ারেন্স সেলে যাবার সময় এখনও হয়নি।
এসব কথা তিন্নি যতই বলে, আমি ততই হাসি। বুড়োর চেহারা তখন চোখে ভেসে উঠে। এই বয়সেও মন ভালই রঙ্গিলা!
এদেশে এসে মানুষ বিভিন্নভাবে কালচারাল শক খায়। ভিড়ের মধ্যে তরুণ তরুনীর অবাধ চুম্বন দৃশ্যে কেউ কেউ শক খায়। ছেলের সাথে ছেলের প্রেমের সম্পর্ক দেখে শক খায়। তিন্নি খেল বুড়োর থেকে সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব পেয়ে।
এখনও সেই ওয়ালমার্টে শপিংয়ের জন্য যাওয়া হয়। বেচারা বুড়োর সাথে প্রতিবার দেখা হয়। সে ডোর গ্রীটারের কাজ করে। কাস্টমার এলে তাকে স্বাগত জানানই তার কাজ। আমাদের দূর থেকে আসতে দেখলেই সে অন্যান্য কাজ নিয়ে হঠাৎ খুব ব্যস্ত হয়ে যায়। আমরা পাশ দিয়ে যাবার সময়ে আমাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। আমরা কিছু মনে করি না। বুঝতে পারি, তার মনের ব্যাকগ্রাউন্ডে তখন মমতাজের বিখ্যাত গানটা বাজতে থাকে। লিরিক্সে একটু অদল বদল ঘটে শুধু -
"বন্ধু যখন জামাই লইয়া, আমার দোকানের সামনে দিয়া,
রঙ্গ কইরা হাইটা যায়,
ফাইট্যা যায়, বুকটা ফাইট্যা যায়!"

মোরাল অফ দ্য স্টোরি: পুরুষ মানুষের মন কখনই বুড়ো হয় না। কবরে যাবার আগেও আরেকবার প্রেম করতে চায়।

আরও লেখা পড়তে: https://www.facebook.com/groups/canvasbd/

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৪০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: হাহাহাহাহা অসাম পোস্ট ++++++++++ রম্য হতে পারতো :)

ভালো থাকবেন অনেক :)

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:২২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.