নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ন্যায়
- মঞ্জুর চৌধুরী
দুম করে একটা গুলির শব্দ হলো।
ঈদের মৌসুম চলছে। রাস্তায় লোকজনের প্রচন্ড ভিড়। হঠাৎ গুলির আওয়াজে লোকজন ঘাবড়ে গিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। যে যেদিকে নিরাপদ মনে করছে, সেদিকে পালাচ্ছে।
একজন লোক বুকে হাত দিয়ে রাস্তায় পড়ে গেলেন।
বুকের ঠিক বাম পাশটায় বুলেট বিধেছে। খুব কাছ থেকে গুলি করায় শরীর ভেদ করে বুলেট বেরিয়ে গেছে। গলগল করে রক্ত পড়ছে। হাতের চাপে রক্ত ঝরা বন্ধ হচ্ছেনা।
ভদ্রলোকের নাম খন্দকার জাকির হোসেন। বারিস্টার মানুষ। স্ত্রী-পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের শপিংয়ে গুলশানের পিংক সিটিতে এসেছিলেন।
তাঁর রক্তাক্ত দেহের পাশে বসে স্ত্রী হাউমাউ করে কাঁদছেন। তিনিও স্বামীর বুকে হাত চেপে রেখে রক্ত থামাবার চেষ্টা করছেন। স্বামীর রক্তে তাঁর হাত ভেসে যাচ্ছে।
তিনি চিৎকার করে বলছেন, "কেউ এম্বুলেন্সে খবর দিন, প্লিজ! কেউ এম্বুলেন্সে খবর দিন!"
কেউ তাঁর কথা শুনছে না। সবাই নিজের নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত। লোকজনের ছোটাছুটি এখন বন্ধ হয়েছে। তবে কেউ তাঁদের কাছে এগিয়ে আসছে না। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখছে।
বারিস্টার সাহেবের স্ত্রী মৃত স্বামীর বুক চেপে বসে আছেন। তাঁর পাশে তাঁদের ছয় বছরের শিশু সন্তান "আব্বু, আব্বু" বলে কাঁদছে।
সিনেমার ট্র্যাজিক দৃশ্যের সফল বাস্তবায়ন।
******
পুলিশ এসে জায়গাটাকে ঘিরে ফেলেছে। সাব ইন্সপেক্টর খালেদ রশিদ চারজন কনস্টেবলকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বারিস্টার সাহেবকে আগে থেকেই চিনতেন। নানান কেসের কারনে নানান সময়ে তাঁদের কথাবার্তা হয়েছে। চেনাজানা একজন তরতাজা মানুষকে এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে তাঁর মনটা খুব খারাপ হলো।
বারিস্টার সাহেবের স্ত্রীর কাছে গিয়ে তিনি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত স্বরে বললেন, "ভাবি, আপনি ধৈর্য্য ধরুন। আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দিন। আমরা কথা দিচ্ছি, এই কেসে আমরা আমাদের সামর্থের পুরোটা ঢেলে দিব।"
ভদ্র মহিলা শোকে একদম উন্মাদ হয়ে গেছেন। তিনি জম্বির মতন উঠে দাঁড়িয়ে পুলিশের গাড়িতে গিয়ে বসলেন। তাঁর ছেলে এখনও "আব্বু আব্বু" বলে কেঁদে চলেছে।
খালেদ রশিদের নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল। তাঁর মেয়ের বয়সও এরকম। আগামী মাসে পাঁচ হবে। এখনই স্কুলে যায়। প্রতিদিন ক্লাসে কী হয় সব এসে বিস্তারিত জানায়।
তাঁর নিজেরও যদি কখনও কিছু হয়ে যায়, তাহলে তাঁর মেয়েকেও এভাবে কাঁদতে হবে। আবেগে তাঁর চোখ ভিজে গেল।
ডিউটির সময়ে তিনি কখনও বাড়িতে ফোন দেন না। এখন দিলেন। স্ত্রীকে ফোন করে বললেন, "সাথী, জাহীনকে দাওতো।"
অসময়ে স্বামীর ফোন পেয়ে সাথীও খুব অবাক হলেন।
"ও মাত্রই পড়তে বসেছে। কেন? হঠাৎ কী দরকার?"
"আহ! দাও না। পাঁচ মিনিট বেশি পড়লে কি সে বিদ্যাসাগর হয়ে যাবে?"
"আচ্ছা, দাঁড়াও, দিচ্ছি।"
খালেদ রশিদ কানে মোবাইল ফোন ধরে রইলেন। সামনে এম্বুলেন্সে লাশ তোলা হচ্ছে। ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
লোকজনের ভিড় দেখে তাঁর খুব মেজাজ খারাপ হলো। সবাই 'তামাশা' দেখতে চলে এসেছে। মানুষের ভিড়ে যে খুনির ট্রেস হারিয়ে যায়, এইটা কেউ বুঝতে চায়না। একটা খুনের সময়ে খুনি কত রকম যে ভুল করে, কত রকমের যে সূত্র ফেলে যায়! এসবই নষ্ট করে দেয় এই তামাশা দেখতে আসা লোকজন।
ভিড় বাড়িয়ে কিই এমন ঘোড়ার আন্ডা পেড়ে ফেলছিস? মাঝে দিয়ে শুধু শুধু তাঁদের কাজকে জটিল করে তোলা!
পিপড়া যেমন এমনি এমনিই চিনির খোঁজ পায়, সাংবাদিকেরাও তেমনি খুনের খবর শুনলে পঙ্গপালের মতন এসে ভিড় করে। সাধারণ পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা, টিভি চ্যানেল - উফ! এ এক মহা যন্ত্রণার নাম!
এক চ্যাংরা মতন দেখতে টিভি সাংবাদিক তাঁর সামনেই ক্যামেরায় রিপোর্ট করছে, "লোকচক্ষুর সম্মুখে যখন দেশবরেন্য একজন বারিস্টার খুন হচ্ছিলেন, তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন।......"
খালেদ রশিদের ইচ্ছে হলো চ্যাংরার গাল বরাবর কষে একটা ‘পুলিশী থাপ্পড়’ দেন। ফাজিলের মতন কথাবার্তা! "নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন।" তুই জানলি কেমনে? তুই কি পুলিশকে তেল সাপ্লাই দেস? নাকি তুইও তাদের পাশে কোল বালিশ নিয়ে ঘুমাস?
"হারামজাদা!"
খালেদ রশিদ চিবিয়ে চিবিয়ে গালি দেন।
"হ্যালো বাবা!"
ওপাশে জাহীন ফোন ধরেছে। মুহূর্তেই তাঁর মন বদলে হয়ে গেল।
"হ্যালো মা, কেমন আছো তুমি?"
"ভাল আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?"
"আমিও ভাল আছি মা। তুমি কী করছিলে এখন?"
"পড়ছিলাম বাবা। আম্মু বলেছে না পড়লে রিকশাআলার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি রিকশাআলাকে বিয়ে করবো না বাবা।"
খালেদ রশিদ মেয়ের কথায় হেসে দিলেন।
"অবশ্যই না মা। আমিই হতে দিব না।"
হঠাৎ করে তিনি তাঁর ঘাড়ে একটা তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করলেন। অনেকটা মশার কামড়ের মতন। সেই সাথে টের পেলেন কিছু একটা সেখান থেকে তাঁর রক্তে মিশতে শুরু করেছে।
সাথে সাথে হাত দিয়ে তিনি দেখেন কেউ একটা বড় ইঞ্জেকশন তাঁর ঘাড়ে বিধে দিয়েছে। ইঞ্জেকশন খালি। ভেতরের তরল ইতিমধ্যেই তাঁর শরীরে ঢুকে গেছে। কী সেই তরল?
তিনি আতঙ্কিত হয়ে ইঞ্জেকশন পুশকারীকে খোঁজার চেষ্টা করলেন। রাতের অন্ধকারে মানুষের ভিড়ে তিনি কাউকেই সন্দেহ করতে পারলেন না।
তিনি ডাক দিলেন, "ওমর! ওমর!"
ওমর মানে ওমর ফারুক, তাঁর কনস্টেবল। ওমর লাশ ওঠানো তদারকি করছিল। স্যারের ডাক শুনে ছুটে এলো।
"স্যার?"
তিনি শুধু তাঁর হাতে ধরা ইঞ্জেকশন ওমরকে দেখাতে পারলেন। মুখ দিয়ে অনেককিছুই বলতে চাইলেন। কিন্তু তার আগেই ফেনায় তাঁর মুখ ভরে গেল। তিনি ধপ করে রাস্তায় পড়ে গেলেন।
কনস্টেবল ওমর চিৎকার দিতে লাগলেন, "ডাক্তার! ডাক্তার!"
ফোনের ওপাশে জাহীন কথা বলছে, "হ্যালো বাবা! আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? হ্যালো বাবা!"
সাথী মেয়েকে বললেন, "বাবা কাজে আছে মা। এসো, ফোন রেখে পড়তে বসো।"
"পড়তে ভাল লাগেনা মা।"
"না পড়লে যে রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে হবে!"
"বাবা বলেছে কিছুতেই আমার বিয়ে রিকশাওয়ালার সাথে হতে দিবে না।"
******
মোটামুটি অন্ধকার একটি ঘর।
একটি কাঠের চেয়ারে একজন যুবককে শক্ত করে বাঁধা হয়েছে। সে একটুও নড়াচড়া করতে পারছেনা। চিৎকার করতে চাইছে, কিন্তু তাঁর মুখে একটি রুমাল ঢুকিয়ে টেপ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গলা দিয়ে কোন স্বর বেরুচ্ছেনা।
যুবকের নাম শিশির। সে ঢাকার একটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে পড়ে। ফিফথ ইয়ার। আর কিছুদিন পরেই সে ডাক্তার হয়ে যাবে। বাবার খুব ইচ্ছা ছেলে ইংল্যান্ড থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিক। তার বড় ভাইও সেখানেই পড়ছে। এরমধ্যে কী হয়ে গেল, তাকে কিডন্যাপ করে এইঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
সে চিন্তা করার চেষ্টা করলো ওরা কী চাইতে পারে। মুক্তিপণ? সেটাই স্বাভাবিক। ইদানিং অনেক ঘটনা সে শুনেছে। টাকার জন্য কাউকে কাউকে কিডন্যাপ করা হয়েছে, টাকা পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
তার বাবারও অনেক, অনেক টাকা আছে। সেদিকেই কারও চোখ পড়েছে হয়তো।
কত টাকা তারা চাইতে পারে? এক কোটি? দুই কোটি? পাঁচ কোটি? কত টাকা পেলে তারা তার কোন ক্ষতি করবে না?
ভয়ে শিশিরের বুক কাঁপতে থাকে। কারন কোন কোন সময়ে ওরা মুক্তিপণের টাকা পেয়েও ভিকটিমকে মেরে ফেলে। ওর ক্ষেত্রে এমন হবে নাতো?
শিশিরের জীবনের প্রতি অনেক মায়া। সে বাঁচতে চায়। আরও অনেক বছর সে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চায়।
রুমের দরজা খুলে গেল। একঝাক আলো বল্লমের মত এসে তার চোখে বিধলো। সয়ে নিতে খানিক সময় লাগলো।
কেউ একজন ঘরে ঢুকেছে। দেখে মনে হচ্ছে কোন নারী।
"কে?"
শিশির প্রশ্ন করতে চায়। পারেনা। তার মুখ বন্ধ।
স্যুইচ চেপে ঘরের বাতি জ্বালানো হলো। এবারে মেয়েটির চেহারা স্পষ্ট হলো। শিশির বিষ্ফোরিত চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। সে তাঁকে চিনতে পেরেছে। তানহা! তাদেরই সাথে এক ক্লাসে পড়তো। কত বছর আগে? তিন? চার? তাহলে সেই কিডন্যাপ করেছে?
শিশিরের শরীর হঠাৎ করেই অবশ হয়ে গেল। তীব্র টেনশন হঠাৎ করে রিলিজড হলে যেমন অনুভূতি হয়, অনেকটা সেরকম। সে হাল ছেড়ে দিল। যা হবার হবে।
"চিনতে পেরেছো শিশির?"
তানহার কন্ঠ অসম্ভব শীতল।
শিশির মাথা নাড়ে।
তানহা সামনে এগিয়ে আসতে আসতে বলে, "কেমন আছো তুমি?"
শিশির কিছু বলেনা। ভয় পাওয়া ছাড়া তার মস্তিষ্ক আর কোন কাজ করছে না।
"এখানে তোমাকে কেন ধরে এনেছি জানতে চাও না?"
শিশির জানে তাকে কেন আনা হয়েছে। তানহা তাকে খুন করতে চায়। মেয়েটির চোখের দৃষ্টি আজকে অসম্ভব নিষ্ঠুর।
তার ইচ্ছে করছে তানহার পায়ে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে। পারছে না। চোখের দৃষ্টিতে যেটুকু সম্ভব ততটুকু বোঝাবার চেষ্টা করলো।
তানহা টেবিল থেকে একটা ছুড়ি তুলে নিল।
শিশির বুঝে নিল এই তার জীবনের শেষ। সে চোখ বন্ধ করে আল্লাহর নাম নিতে লাগলো। বাংলায় বলতে লাগলো, "ইয়া আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দাও! ইয়া আল্লাহ, আমাকে বাঁচাও!"
পাঁচ বছর আগে তানহা শিশিরদের মেডিক্যাল কলেজেই ভর্তি হয়। সুন্দরী ছিল বলে সবার নজরে পড়তে একটুকুও সময় লাগেনি।
মেডিক্যাল জীবনের একদম প্রথম দিন থেকেই তাঁর সাথে বন্ধুত্ব করতে পুরুষেরা ভিড় করতে শুরু করে। কেউ প্রথম দিনেই ভালবাসার প্রস্তাব দিয়ে বসে।
তানহা সবার প্রস্তাবকেই যথাযথ সম্মানের সাথে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাঁর নিজের ভালবাসার মানুষের নাম ছিল ওয়াহিদ, তাঁর বাবার বন্ধুর ছেলে। সেই ক্লাস নাইনে পড়া থেকেই তাঁদের মধ্যে প্রেম চলছে।
ওয়াহিদ তখন মাত্রই অস্ট্রেলিয়া গিয়েছে। মেলবোর্নে, এম.বি.এ করতে। ওর মাস্টার্স শেষ হলেই ওদের বিয়ে হয়ে যাবে। এখন এইসব 'বন্ধুত্ব' 'প্রেম' করার কোন সুযোগই তাঁর নেই। সে শুধুই পড়াশোনায় ফোকাস করতে চায়। ব্যস!
শিশির তখন তাঁদের ব্যাচের সবচেয়ে হার্টথ্রব ছেলে। বিরাট প্লেবয়। আজকে এই মেয়ের সাথে প্রেম, তো কালকে ঐ মেয়ের সাথে। এ নিয়ে তার কোন রাখঢাকও নেই। মেয়েরাও কেন জানি, জেনে শুনেও তারই প্রেমে পড়ে!
দামী গাড়ি চালিয়ে আসে, বিদেশী অরিজিনাল ব্র্যান্ডের কাপড় পড়ে। বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে বাইরে খেতে যায়, গাড়িতে চড়ে এদিকে সেদিকে ঘুরতে যায় - বন্ধু মহলে সে ভীষণ জনপ্রিয় এক নাম।
সে একদিন এলো তানহার কাছে। খুবই সরলভাবে বলল, "তুমিতো জানো আমি কেমন প্লেবয়! কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমাকে দেখার পর থেকেই আমি একদম বদলে গেছি! তোমাকে ছাড়া আমি আর কিছুই কল্পনা করতে পারছিনা। তোমাকে পেলে আমি কথা দিচ্ছি, আমি সব ছেড়ে দিব! তোমাকে না পেলে আমি বাঁচব না।"
তানহা মনে মনে খুব মজা পেল। সেই পুরনো টেকনিক। অতি ফালতু কথাবার্তা। কিন্তু অনেক মেয়েই এই ফাঁদে পা দেয়।
সে হেসে বলল, "তোমার ফিলিংসের আমি সম্মান করি, কিন্তু আমার যে হাত বাঁধা। আমি এনগেজ্ড।"
শিশির বলল, "এনগেজমেন্ট ভাঙ্গতে কতক্ষণ লাগে?"
"স্যরি, আমি নিজেও তাঁকে ভালবাসি।"
"এত সহজে কী করে ধরে নিচ্ছ যে সেটাই ট্রু লাভ? শপিংয়ে গেলে আমরা কয়েকটা দোকান ঘুরে ঘুরে শপ করিনা? তাহলে বিয়ের মত এমন গ্রেভ ডিসিশনে এত তাড়াহুড়া করছো?"
"I guess, that makes me a different kind of shopper then."
শিশির তখনকার মত চুপ হয়ে গেলেও হাল ছাড়লো না। কিছুদিন পরপর এসে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এদিকে তার সাথে ভিন্নভিন্ন মেয়েকে ঠিকই দেখা যেতে লাগলো।
তানহা নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতেই বুঝিবা সবসময়ে একা একা থাকতো। খুবই লাজুক স্বভাবের ছিল। সারাজীবনে তাঁর খুব বেশি বন্ধু-বান্ধব কখনই ছিল না। সেই স্কুল জীবনের দুই চারটা বান্ধবীই তাঁর সম্বল।
মেডিক্যাল কলেজে গিয়েও সে তেমন বন্ধু বান্ধব জোগার করতে পারল না।
সেই কলেজ জীবন থেকেই তানহা নিজের বাড়ির ছাদে একটি স্কুল দিয়েছিল। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কাছে সে শিক্ষার আলো পৌছে দিতে চাইতো। তাঁদের বাসার অদূরে একটা বস্তি ছিল। সেই বস্তিরই কিছু ছেলে মেয়ে দল বেঁধে প্রতি বিকালে 'আপা'র কাছে পড়তে আসতো।
লেখাপড়ার পাশাপাশি সেই স্কুলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নৈতিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া হতো। স্কুল শেষ হতো নির্মল খেলাধুলার মাধ্যমে।
তানহার এ মহৎ উদ্যোগের কথা ব্যাচে ছড়িয়ে পড়লে একদিন শিশির এসে বলল সেও এর অংশ হতে চায়।
শিশিরের আসল উদ্দেশ্য ছিল তানহার কাছাকাছি থাকা। মনে মনে সে এই মেয়েটির প্রতি ভীষণ দূর্বল হয়ে পড়েছিল। রিজেক্ট হয়ে সে অভ্যস্ত নয়। অথচ এই মেয়েটি তাকে একদমই পাত্তা দেয় না। কিছুতো আছে এর মধ্যে। কী সেটা?
তানহা হেসে বলেছিল, "তুমি বাচ্চাদের কী শেখাবে? প্রেম কিভাবে করতে হয়? হিহিহি।"
শিশির বলেছিল, "তোমাদের কাছে আমার ভালই সুনাম আছে দেখছি! আমি তোমার স্টুডেন্টদের ম্যাথ শেখাবো। বেসিক কম্পিউটার অপারেটিং শিখাবো। আমার পুরানো ডেস্কটপ কম্পিউটার আমি তোমার স্কুলে দান করে দিলাম!"
তানহা স্বানন্দে রাজি হলো। সে কোন সমস্যা দেখলো না। শিশির সবসময়েই তাঁর সাথে টাংকি মারে এটা সত্য। সেটাকে পাত্তা না দিলেই হয়।
শিক্ষক হিসেবে শিশির অতি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে গেল। সে কম্পিউটার অপারেটিং শেখানোর ফাঁকে ফাঁকে গেমস খেলা শিখিয়ে দিল। বাচ্চারা এখন খুব মজাসে গেমস খেলে।
এছাড়া স্কুলের জন্য সে ক্রিকেট ব্যাট, ফুটবল এসব কিনে দিল। এখন সবাই রুমাল চুরি, কানামাছি বাদ দিয়ে ক্রিকেট ফুটবল খেলে। এসব খেলায় মজা আরও বেশি।
সে দেখালো তার ধৈর্য্য অসীম।
প্রায় প্রতিদিনই তানহাকে সে প্রেমের প্রস্তাব করে। দারুন রোমান্টিক রোমান্টিক উপায়ে। তানহা প্রতিবারই তাকে ফিরিয়ে দেয়।
একদিন বিকেলে তাঁর ফোনে মায়ের কল এলো।
সে ফোন ধরেই চমকে উঠলো। মা বললেন, "সর্বনাশ হয়ে গেছে!"
তানহা বুঝতে পারলো না সর্বনাশ বলতে কী বুঝাচ্ছে। মেয়ে মানুষের অনেক কিছুতেই 'সর্বনাশ' হয়। কেউ মারা যাওয়া থেকে শুরু করে ঘরের লবণ ফুরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সবকিছুই 'সর্বনাশের' আওতায় পড়ে।
"আমাকে খুলে বল কী হয়েছে!"
মা যা জানালো তা আসলেই সর্বনাশের। মরিয়ম নামের স্কুলের একটি বারো বছর বয়সী মেয়েকে শিশির রেপ করেছে।
তানহা বলল, "আমি এখনই আসছি।"
এনাটমির ক্লাস ছিল। তা না করে সে বাড়িতে ছুটে গেল। সেখানে ড্রয়িং রুমে মরিয়ম বিদ্ধস্ত অবস্থায় বসেছিল। তার মা বাবা তাকে ঘিরে আছেন।
বুয়া শ্রেণীর একজন মহিলা কিছুক্ষণ পরপর সুর করে কেঁদে উঠছেন। মরিয়মের মা হবেন হয়তো।
তানহাকে দেখে মরিয়ম হুহু করে কান্না শুরু করে দিল।
সে গিয়ে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরল। অনেক কষ্টে শান্ত করে বলল, “কী হয়েছে?”
কান্নার ফাঁকে ফাঁকে মরিয়ম যা জানালো তা হচ্ছে,
আজকে দুপুরে তাদের কম্পিউটার ক্লাস ছিল। মরিয়ম কিছু একটা ঠিক মত করতে পারছিল না। শিশির স্যার নাকি ক্লাস শেষে মরিয়মকে শাস্তি দেয়ার ছুতোয় আটকে রেখেছিল।
সব ছাত্র ছাত্রী চলে গেলে পরে সে তার মুখ চেপে ধরে।
যাবার সময়ে শিশির তার হাতে এক হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলেছে কাউকে কিছু না বলতে। যদি বলে, তাহলে তাকে খুন করে ফেলা হবে।
মরিয়ম সরাসরি তানহার মায়ের কাছে এসে সব খুলে বলে। তার মাই মরিয়মের মাকে বস্তি থেকে খবর দিয়ে আনান।
এখন বুঝতে পারছেন না কী করবেন।
তানহা বলল, "অবশ্যই আমরা পুলিশের কাছে যাব।"
মরিয়মের মা বললেন, "পুলিশের কাছে গিয়া কী হইবো? মাইয়ার ইজ্জততো আর ফিরত আইবো না। আমার মাইয়ারে কে বিয়া করবো?"
তানহা ঝাঁঝালো স্বরে বলল, "রাস্তার পাগলা কুত্তা যদি আপনাকে কামড়ে দেয়, তাহলে কী আপনার ইজ্জত চলে যায়? তাহলে রেপ করলে কেন ভিকটিমের ইজ্জত যাবে? ইজ্জত কী এতই সস্তা? বরং ঐ হারামজাদার ইজ্জত যাওয়া উচিৎ! আমরা পাগলা কুত্তাকে মারার ব্যবস্থা নিব।"
তানহার চেহারায়, গলার স্বরে কিছু একটা ছিল, বাসার অন্যান্য কেউ আর কোন কথা বাড়ালো না।
প্রথম ধাক্কা এলো থানায়। জেনারেল ডায়েরি করানোরও আগে।
থানার এস.আই খালেদ রশিদ অভিযোগ শুনে বললেন, "রেপড হয়েছে? কিভাবে হয়েছে?"
তানহা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল, “what do you mean by ‘কিভাবে হয়েছে?’ আপনাকে বিস্তারিত বলতে হবে নাকি?”
এস.আই তাঁর দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, "কিভাবে রেপড হয়েছে সেটা না বললে আমি কী ছাতার মাথার ভিত্তিতে কেস সাজাব?"
মরিয়ম 'বিস্তারিত' বর্ণনা দিল।
এরপর তিনি বললেন, "শরীরে রেপের চিহ্ন আছে? দেখানতো।"
তানহা ক্ষেপে উঠলো, "what the fuck is this? আপনাকে কেন দেখাতে হবে? কোন মহিলা পুলিশ নেই?"
এস.আইও ক্ষেপে গেলেন।
"আপনি বেরিয়ে যান। আপনি আমাদেরকে আমাদের মত কাজ করতে দিচ্ছেন না। আপনি যান। Get out!"
তানহা বলল, "আমি থাকবো।"
"যেদিন আপনি রেপড হবেন, সেদিন আইসেন, এখন যান।"
পুলিশের সাথে থানায় ঝামেলা করলে থানায় থাকা যায়না। তানহাকে থানা থেকে বের করে দেয়া হলো।
এরপরের ঘটনাগুলো অত্যন্ত সংক্ষেপে বলে ফেলা যাক।
শিশিরের বাবার পরিচয় শুনে মরিয়ম এবং তার মাকে প্রথমে এস.আই বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে এইসব কেস ফেস করে কোন লাভ নেই। এদেশে টাকার জোরে সবকিছু হয়। ছেলের কিছুই হবেনা। মাঝে দিয়ে শুধু শুধু তার বদনাম হবে। বরং একে চেপে যাওয়াটাই উত্তম। যারা জানে, তাদের যেন অনুরোধ করা হয় ঘটনা প্রকাশ না করতে। তিনি ছেলের বাবাকে চাপ দিয়ে হাজার খানেক টাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। এতেই মেয়ের জীবন সুখে সুখে পার হয়ে যাবার কথা।
প্রথম ধাক্কায় পুলিশ মামলা নিতেই অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। তানহা হইচই করেও কিছু করতে পারেনি। পরে মানবাধিকার সংগঠনের চাপে পড়ে পুলিশ মামলা নেয়।
শিশিরের সাথে যখন তানহার কথা হয়, তখন শিশির এক ফাঁকে বলে, "ঐ মাগীটা সব বলে দিয়েছে? শালী! Listen girl, ঐ মেয়েটার ভাগ্য ভাল যে আমি তার সাথে কিছুক্ষণ শুয়েছি। এখন এটাকে এত বিগ ডিল বানাবার চেষ্টা করোনা। ওকে দরকার হলে আরও কিছু টাকা আমি দিয়ে দিব - let's close the deal right now!"
শিশির গ্রেফতার হয়, জামিনে মুক্তিও পায়। বহাল তবিয়তে গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে। যেন কিছুই হয়নি।
এইদিকে তানহা প্রতিদিন মামলা তুলে নেয়ার এবং মরিয়ম মৃত্যুর হুমকি পেতে থাকে। পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ কোন অ্যাকশনই নেয় না।
এস.আই. খালেদ রশিদ মুখ বাঁকিয়ে বলেন, "কেন ঝামেলা বাড়াচ্ছেন শুধু শুধু? বস্তির মেয়ে আজকে না হয় কালকে পরপুরুষের সাথে শোবেই। এটাই তার নিয়তি। আমি পুলিশে চাকরি করি, আমি এইসব প্রতিদিন দেখি। বরং আমার সাজেশন শুনেন, হাজার খানেক টাকায় ঝামেলা মিটিয়ে ফেলুন। সবাই তাইলে খুশি থাকবে। আর যদি মেয়েটাকে সত্যি সত্যিই কেউ মেরে ফেলে, তাহলে কিন্তু আবার আমাকে দোষ দিতে পারবেন না।"
এ অবস্থায় তানহা মেয়েটিকে বস্তি থেকে উঠিয়ে এনে নিজের বাড়িতে রাখে।
কোর্টে কেস উঠে। শিশিরের পক্ষ্যে আইনি লড়াই লড়বেন বারিস্টার খন্দকার জাকির হোসেন। বিপক্ষের উকিল সেই তুলনায় কিছুই না। তানহার বাবা তাঁর সীমিত আয়ে এরচেয়ে ভাল উকিল নিয়োগ দিতে পারেননি।
খন্দকার জাকির হোসেনের ওকালতির স্টাইলটা ভীষণ আগ্রাসী। আইনি যুক্তি-তর্ক, মার-প্যাচ ছাড়াও তাঁর আরেকটি লক্ষ্য থাকে বিপক্ষের আসামী বা ফরিয়াদির মরাল ভেঙ্গে দেয়া।
এক্ষেত্রে তিনি যেমন করলেন।
আদালতে সবার সামনে মরিয়মের সেদিনের কাপড় চোপড় রেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কী নিজের কাপড় সনাক্ত করতে পারছেন?"
মরিয়ম মৃদু কন্ঠে বলল, "জ্বী।"
জাকির হোসেন নাটকীয় ভঙ্গিতে কাপড়ের দিকে এগিয়ে যান। হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করেন। তারপর বলেন, "ব্রা কোথায়?"
মরিয়মের উকিল উঠে দাঁড়ালেন, "অবজেকশন ইয়র অনার! আমার মক্কেলকে অবান্তর প্রশ্ন করা হচ্ছে।"
জাকির হোসেন সাথে সাথেই বললেন, " আমার বিজ্ঞ প্রতিপক্ষ বোধয় জানেন না যে, খন্দকার জাকির হোসেন কখনই অবান্তর প্রশ্ন করে মহামান্য আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করেন না।"
"অবজেকশন ওভাররুল্ড।"
মহামান্য আদালতও জানতে চায় 'ব্রা' কোথায়।
মরিয়ম বলল, "আমি ঐদিন বেরা পরিনাই।"
খন্দকার জাকির হোসেন দুই হাতে আলতো করে পেন্টি তুলে ধরে বললেন, "আপনি নিশ্চিত আপনি সেদিন এই প্যান্টি পড়েছিলেন?"
"অবজেকশন মিলর্ড!"
"অবজেকশন ওভাররুল্ড।"
দর্শকদের মধ্যে মৃদু হাসির রোল উঠলো। মেয়েদের ব্রা পেন্টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। চরম বিনোদন!
মরিয়ম লজ্জায় নীল হয়ে বলল, "জ্বী।"
খন্দকার জাকির হোসেন বললেন, "কিন্তু প্যান্টির কোথাও আমি ছেড়া চিহ্ন দেখছি না। জোর করে প্যানটি ছেড়া হলে অবশ্যই কোথাও না কোথাও চিহ্ন পাওয়া যেতই। এমন নয়তো যে প্যান্টি ইচ্ছাকৃতভাবেই খোলা হয়েছিল? টগবগে একজন যুবক দেখে, যিনি কিনা সুদর্শন এবং ধনী, আপনি আপনার যৌবন সামলাতে পারেননি। ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তার উপর! আর একজন যুবতী মেয়ে যদি স্বেচ্ছায় এক যুবকের সাথে শুতে চায়, তবে কেবল দুই ধরণের পুরুষই তাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে - মহাপুরুষ, অথবা নপুংশক! আমার মক্কেল আর যাই হোক, নপুংশক নন।"
দর্শক সারিতে হাসির রোল উঠলো। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো শিশিরও মুচকি মুচকি হাসলো। মরিয়ম অপমানে একদম আড়ষ্ট হয়ে গেল।
খন্দকার জাকির হোসেন বললেন, "আগুন যদি মোমের কাছে যায়, তবে মোমতো গলবেই। ব্রা না পড়ে এক নারী এক টগবগে তরুণের সামনে এসেছে, স্বেচ্ছায় পেন্টি খুলেছে, এই অবস্থায় একজন অলী আল্লাহর নিয়্যতও নড়বড়ে হয়ে যাবে মিলর্ড, আমার মক্কেলতো কেবল একজন সাধারণ মানুষ!”
তারপর তিনি মরিয়মের দিকে তেড়ে এসে বললেন, “এই মেয়ে ইচ্ছেকৃতভাবেই আমার মক্কেলের সাথে সহবাস করেছে। এবং এখন কিছু টাকার লোভে এই ধরনের মিথ্যা বানোয়াট কথাবার্তা বলছে।"
এরপর তিনি একের পর এক সাক্ষী হাজির করতে লাগলেন।
কেউ সাক্ষ্য দিলেন শিশিরের মতন ভাল ছেলে আর দুইটি হয়না।
কেউ কেউ সাক্ষ্য দিলেন মরিয়মের চরিত্রে সমস্যা আছে। মরিয়ম নাকি তাদের দিকে প্রায়ই ইশারা ইঙ্গিত করতো।
এস.আই খালেদ রশিদও সাক্ষ্য দিয়ে গেলেন প্রাথমিকভাবে তিনিও কোন ধর্ষণের আলামত পাননি।
ডাক্তারি রিপোর্টে এলো মেয়ের যৌনাঙ্গের আশেপাশে কোনই আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তার মানে মেয়ে কোন বাঁধাই দেয়নি।
এছাড়াও খন্দকার জাকির হোসেন মরিয়মকে শরীরের কাপড় সরিয়ে শরীরের দাগ দেখাতে বাধ্য করলেন। এবং তারপর নিজেই সেসব দাগে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন যে এ দাগ যথেষ্ট প্রমাণ নয়।
আদালত শিশিরকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করলো।
লজ্জায় অপমানে মরিয়ম শুধু কাঁদতেই পারলো। তানহা শোকে পাথর হয়ে গেল।
তাদের পক্ষ্যের উকিল বললেন, "আপনারা কোন চিন্তা করবেন না। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। ন্যায় বিচার আদায় করেই ছাড়বো।"
কিন্তু ততক্ষণে বোঝা হয়ে গেছে তাঁর দৌড় কতটুকু। সত্যের চেয়ে মিথ্যার জোর এখানে অনেক বেশি। আদালত আসলেই অন্ধ হয়ে থাকে।
এস.আই. খালেদ রশিদ এসে এক ফাঁকে টিপ্পনি কাটেন, "বলেছিলাম সময় মত পয়সা নিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে নিন। এখন আমও গেল, ছালাও গেল!"
এর কিছুদিন পর মরিয়মকে বস্তির পাশের একটা গাছের ডালে ওরনা প্যাচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
ওরনা! নারীর 'ইজ্জত' রক্ষাকারী পোশাক!
পুলিশ একে আত্মহত্যা হিসেবেই নথিভুক্ত করে।
তানহার মনে ঘুরতে থাকে, মেয়েটি আত্মহত্যা করেনি। ওকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এবং এই খুনে তিনজন মানুষ দায়ী।
এস.আই খালেদ রশিদ। বারিস্টার খন্দকার জাকির হোসেন। এবং রেপিস্ট শিশির আহমেদ।
কয়েক বছর ধরে তানহা তাদের তিনজনকে শাস্তি দেয়ার ব্যপারে পরিকল্পনা করেছে।
খুনের শাস্তি একটাই, মৃত্যুদন্ড। এবং তিনজনকেই একসাথে শাস্তি দিতে হবে। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই। যাতে তারা সাবধান হবার সুযোগটাও না পায়।
তাই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সে নিজের পরিচয় গোপন রেখে শিশিরের সাথে ফোনে প্রেম শুরু করে। 'বিগহার্ট লাভার বয়' সহজেই ফাঁদে পা দেয়। এবং তার সাথে গোপনে দেখা করার জন্য আশুলিয়ায় চলে আসে।
সেখানে আগে থেকেই তার জন্য অপেক্ষা করছিল তানহার ভাড়া করা ছয়জন মাস্তান। তারা তাকে ক্লোরোফর্ম শুকিয়ে অজ্ঞান করে সাভারের এই বাড়িতে এনে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখে পেমেন্ট নিয়ে চলে গেছে।
এখন সবকিছু তানহার হাতে।
"কেমন লাগছে শিশির?"
শিশির কিছু বলতে পারেনা। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
"মরিয়মের কথা মনে পড়ে? কিভাবে একটি সুন্দর মেয়ের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছিলে তুমি?"
শিশির আবারও কিছু বলতে চায়। মুখ দিয়ে কেবল 'গো গো' শব্দ বেরোয়।
"টাকার জোরে সেদিন বেঁচে গিয়েছিলে। আরও কয়টা মেয়ের সর্বনাশ করেছো সেটা তুমিই জানো। তাই আমি তোমার শাস্তির ব্যবস্থা করছি।"
শিশির এবারে আর্তনাদ করে উঠে। বারবার বলতে চায়, "আমাকে মেরো না! প্লিজ আমাকে মেরো না!"
তানহা ছুরি রেখে তার সামনে এসে প্যান্টের বোতাম খুলতে থাকে। শিশির বুঝতে পারেনা কী ঘটতে চলেছে।
তানহা একটানে প্যান্ট খুলে শিশিরকে উলঙ্গ করে দেয়। নিজের পুরুষাঙ্গ ঢাকার জন্য শিশির দুই পা পেঁচিয়ে বসতে চায়। কিন্তু তার দুই পা যে শক্ত করে চেয়ারের সাথে বাঁধা!
তানহা সার্জিকাল গ্লাভস পড়তে পড়তে হিসহিসিয়ে বলতে থাকে, "সব নষ্টের গোড়া তোর এই “…..।” তোর কাছে তোর প্রাণের চেয়েও প্রিয় তোর এই অঙ্গ। আমি যদি তোকে এখন মেরে ফেলি, তাহলে তোর জন্য খুব কম শাস্তি হয়ে যাবে। বরং তোর দুইটা বিচি কেটে ফেলে দিলে তুই বেশি কষ্ট পাবি! কী বলিস?"
শিশির তীব্র বেগে মাথা নাড়তে থাকে। এছাড়া বাঁধা দেবার আর কোন উপায়ই তার নেই।
তানহা ছুরি চালাবার আগে আগে বলল, "আমি কালকে বিদেশে চলে যাচ্ছি। যাবার আগে তোর পরিবারকে তোর খোজ দিয়ে যাব। তারা এসে তোকে উদ্ধার করবে। ভয় পাস না, তুই মরবিনা। অপারেশন শেষ করে আমি তোর রক্ত ঝরা বন্ধ করে দিব। এন্টিসেপটিক দিয়ে দেব। আমি চাইনা তুই ঝট করে মরে যাস। তুই যত বেশিদিন বাঁচবি, ততই মরিয়মের প্রতি ন্যায় করা হবে।"
মহা আতংকে শিশির চোখ বন্ধ করলো। সে কিছু দেখতে চায়না।
“এনেস্থেশিয়া দিতে ইচ্ছা করছে না। আমি চাই যন্ত্রণাটা তুই ঠিক ঠাক মত ভোগ করিস।”
তাঁদের মেডিক্যাল কলেজের সার্জারির প্রফেসর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শাহ একবার বলেছিলেন, "সার্জারী করার সময়ে যদি কখনও নার্ভাস ফীল কর, তাহলে যার যার ঈশ্বরের নাম নিয়ে সার্জারী শুরু করো। এতে সোয়াব হোক কি না হোক, মনটা খুব শান্ত থাকে।"
তানহা "বিসমিল্লাহ!" বলে ছুরি চালালো।
https://www.facebook.com/groups/canvasbd/
২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:১০
নিরব জ্ঞানী বলেছেন:
||||
|||||
/-/-/-/-|||||||||||||||||
/-/-/-/-|||||||||||||||
/-/-/-/-|||||||||||||
/-/-/-/-|||||||||||
/-/-/-
৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:১১
নিরব জ্ঞানী বলেছেন:
"লাইক"
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৩৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কঠিন ন্যায় বিচার!!
অন্ধ আইন, স্বৈরিচারী শাসন, টাকায় বিকানো প্রশাসন আর তোষামুদে সুশীল সমাজে কি এভাবেই ন্যায় পেতে হয়!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
++++
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৩৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
৫| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৩
ইয়াশফিশামসইকবাল বলেছেন: পুরাই ইনডিয়ান মুভি
৬| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:০৬
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: বরাবরের মতই ভালো লিখেছেন ভ্রাতা ।
শুভেচ্ছা
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৩৯
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই!
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৯
নিরব জ্ঞানী বলেছেন: ||||
|||||
/-/-/-/-|||||||||||||||||
/-/-/-/-|||||||||||||||
/-/-/-/-|||||||||||||
/-/-/-/-|||||||||||
/-/-/-