নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
লন্ডন ফেরত আমাদের গ্রামের এক ভদ্রলোক আমার দাদির সাথে দেখা করতে এসেছেন। ভদ্রলোক যৌবনে লন্ডনে গিয়ে ব্যবসা করে প্রচুর টাকা পয়সার মালিক হয়েছেন। কোটিপতি বললেও তাঁকে ছোট করা হবে। কয়েকদিনের জন্য দেশে এসেছিলেন। দাদী অ্যামেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন খবর শুনে দোয়া নিতে এসেছেন।
দাদী যথাযথ গম্ভীর চেহারায় ড্রয়িং রুমে (এখন যাকে সবাই লিভিং রুম বলে, একটা সময়ে আমরা তাকে ড্রয়িং রুম বলতাম) এসে বসলেন। ভদ্রলোক তেলতেলে মুখে দাদির সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন। চেয়ারে বসছেন না।
দাদী আমাকে বললেন একটা মোড়া এনে দিতে।
আমি চোখ কপালে তুলে ফেললাম। বলে কী! এত ধনী একজন মানুষ মোড়ায় বসবেন? যেখানে সবকটা সোফা খালি পড়ে আছে।
আমি মোড়া এনে দিলে পরে ভদ্রলোক মোড়ায় বসলেন। এবং মুখের তেল চকচকে ভাবের এতটুকু পরিবর্তন হলো না। যেন এটাই স্বাভাবিক।
ভদ্রলোক চলে যাবার পরে আমি দাদির কাছে তাঁর পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম। দাদী বললেন, কোন এক কালে যখন আমাদের জমিদারী ছিল, তখন তাঁর পূর্বপুরুষ এবং তিনি নিজেও আমাদের প্রজা ছিলেন। "চৌধুরী বাড়িতে" এসে তাঁদের চেয়ারে বসার নিয়ম কখনই ছিল না।
জমিদারী গিয়েছে সেই কবে, এখন ভদ্রলোকের বর্তমানে এত টাকা যে আমাদের মতন কয়েকটা চৌধুরীকে নিজের অফিসে কাজ দিতে পারবেন, তবুও সেই "সামাজিক প্রথা" আজও দূর হলোনা।
সেদিন কথা উঠেছিল "কাস্ট সিস্টেম" বা "বর্ণ প্রথা" নিয়ে।
প্রসঙ্গটা উঠলেই আমরা চোখ বন্ধ করে হিন্দুদের উপর দোষ চাপিয়ে দেই। কেউ ব্রাক্ষণ হিসেবে জন্ম নিলে তার লটারি লেগে যায়, আর যদি কেউ শুদ্র হিসেবে জন্মায়, তাইলেই খেল খতম। ইংরেজিতে চমৎকারভাবে একটি বাক্যের সাহায্যে এ অবস্থার সঠিক বর্ণনা করা যায়, কিন্তু অশ্লীল বলে এখানে উল্লেখ করলাম না।
হিন্দু সমাজে ব্রাক্ষণের সাথে কায়স্থের বিয়ে সম্ভব না। একজন ব্রাক্ষণ যুবক যতই ফটকাবাজ হয়ে থাকুক না কেন, তিনি সমাজের এলিট হিসেবেই পরিচিত হবেন।
একজন কায়স্থ যুবক কঠোর পরিশ্রম করে, নিজ যোগ্যতায় দেশের প্রধাণমন্ত্রীও যদি হয়ে যান, একজন টোল পন্ডিতের মেয়েকে বিয়ে করার যোগ্যতা তিনি এই জন্মে অন্তত অর্জন করতে পারবেন না।
আর শুদ্ররাতো সব জাতের কাছেই অস্পৃশ্য।
আরেকটি জাত আছে, ক্ষত্রিয়, এরা যোদ্ধা জাত। এদের অবস্থানও ব্রাক্ষণদের কাছাকাছি। বাংলাদেশে আমার সাথে কোন ক্ষত্রিয়ের দেখা হয়নি। হয়তো এরা সবাই ভারতেই থাকে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এই বর্ণ প্রথা কী ইসলাম ধর্মে আছে?
উত্তর হচ্ছে, ইসলামে বর্ণ প্রথা নেই, তবে মুসলমানদের মধ্যে অবশ্যই চালু আছে।
আমার দাদী, যিনি জীবনেও এক ওয়াক্ত নামাজ বাদ দেননি, তিনি "সাবেক প্রজার" সাথে যেই আচরণ করলেন, সেটাকে বর্ণবাদী বলবেন নাতো কী বলবেন?
আরেকটা উদাহরণ দেই। আমার বোনের জন্য একবার এক ছেলের বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। লসএঞ্জেলেসে থাকেন। নিজের বাড়ি আছে। ভাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। দেখতেও সুন্দর। এমন এক ছেলের সাথে বাংলাদেশের যে কোন বাবা মা নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চাইবেন।
কিন্তু ছেলে রিজেক্টেড হয়ে গেল। কেন? কারন ছেলের দাদার বাবা, আমার দাদার বাবার (গ্রেট গ্র্যান্ডফাদার) ঘোড়ার দেখাশোনা করতেন। ছেলের বাবা সময় মত অ্যামেরিকা এসে টাকা পয়সা কামিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করে ফেলেছেন। কিন্তু অবশ্যই 'চৌধুরী বাড়ির' মেয়েকে বিয়ে করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি।
একটা বিষয়ে আমিও আমার পূর্বপুরুষদের সাথে একমত, বিয়ের সময়ে অবশ্যই ভাল পরিবারের খোঁজ খবর নেয়া উচিৎ। একটি ছেলে যদি দেখে তার বাবা তার মাকে মারধর করে, এবং তার মা অতি স্বাভাবিকভাবেই মার হজম করেন, তবে নব্বই শতাংশ সুযোগ রয়েছে, এই ছেলে কথায় কথায় তার বউকে পেটাবে।
একটি মেয়ে যদি দেখে তার মায়ের এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার আছে, এবং সে এটাকে 'পাপ' হিসেবে গন্য করেনা, তবে অতি অবশ্যই এই মেয়েরও সুযোগ রয়েছে বিয়ের পর পরকিয়া সম্পর্কে গড়ে তুলার।
আবার একটি ছেলে যদি এমন এক পরিবেশে বড় হয়ে থাকে, যেখানে মাগরিবের আযান শেষ হবার আগে পরিবারের সবাইকে ঘরে উপস্থিত থাকতেই হবে - সেই ছেলের 'বদ' হবার সুযোগ তুলনামূলকভাবে একটু কম।
নামের আগে সৈয়দ, দেওয়ান বা নামের পিছনে চৌধুরী, খন্দকারের সাথে এর কোন সম্পর্ক থাকা ঠিক নয়।
আমার দাদারা তাঁদের এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে ফেলেছিলেন একজন 'কমজাত নারীকে' বিয়ে করার দোষে। সেই মহিলা তাঁদের বাড়ির চাকরের মেয়ে ছিল - এইটাই দোষ।
আমাদের ধর্ম ইসলাম, যা আমাদের শিখায় মানুষকে তাঁর কর্মের বিনিময়ে বিচার করতে, আমরা কী তা করি?
ইসলাম শিক্ষা দেয় আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ), আমরা হিসাব করি কে আমাদের গ্রেট গ্র্যান্ডফাদারের চাকর ছিল!
আমার অনেক আত্মীয় আছেন, দেশে থাকতে যারা জীবনে কিছুই করতে পারেননি। লন্ডনে যাবার পরেও কিছু করেননা, কারন, চৌধুরীর ছেলে হয়ে রেস্টুরেন্টে কাজ করবেন? অসম্ভব!
বউ সারাদিন বাইরে বাইরে কাজ করে সংসারের খরচ যোগান, স্বামীরা ঘরে থেকে টিভি দেখেন, আর বাচ্চা সামলান। এতে "চৌধুরী" বাড়ির সম্মান খুউব অক্ষুন্ন থাকে।
মজার ব্যপার হলো, তাঁদের স্ত্রীদের এতে কোনই কমপ্লেইন নেই। চৌধুরী বাড়ির বউ হতে পেরেই যেন তাঁদের জীবন ধন্য হয়ে গেছে!
সিলেটে এই কারনেই বুঝিবা এখন সবার নামের পিছনেই "চৌধুরী" টাইটেল দেখা যায়। হাজী মোহাম্মদ মখলু মিয়ার পুত্রের নাম রাখা হয় "মোতালেব হুসেন চৌধুরী।" সবাই নাম দিয়েই জাতে উঠতে আগ্রহী, কাম দিয়ে নয়।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৩
কলমের কালি শেষ বলেছেন: ভাল বলেছেন ।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১১
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: খুব ভালো একটা প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছেন। সভ্যতার আধুনিকায়ন হয়েছে কিন্তু আমাদের মন মানসিকতার আধুনিকায়ন সব ক্ষেত্রে এখনো হয়ে উঠে নাই। আমার ব্লগবাড়ির স্লোগান হল, 'মানুষের বিচার্য হোক মনুষ্যত্ব ও মানবতা, কোন ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ কিংবা লিঙ্গ নয়'। আপনার পোস্ট পড়ে আমার স্লোগানটারই অনুরণন অনুভব করলাম। মানুষের উপরে আসলেই কোন সত্য নাই। জাত, ধর্ম, বংশ, ধন-সম্পদ সবই বিফলে যাবে, যদি মানুষকে মানুষ হিসাবে আমরা গণ্য না করি। এই কারণেই,
১। সাঁইজি বলছেন—
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ পাবি।’
২। সাধক জালাল বলেছেন—
‘মানুষ থুইয়া খোদা ভজ, এ মন্ত্রণা কে দিয়াছে
মানুষ ভজ কোরান খোঁজ, পাতায় পাতায় সাক্ষী আছে।’
৩। চন্ডিদাস বলছেন—
‘সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই’
৪। আর নজরুল বলছেন—
‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!’
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৫
নতুন বলেছেন: সবাই নাম দিয়েই জাতে উঠতে আগ্রহী, কাম দিয়ে নয়।