নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
খালি গায়ে ধুতি পড়া গোল গোল ফ্রেমওয়ালা চশমা পরিহিত এক বিদেশফেরত ব্যারিস্টার কোন এক জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, "আপনারা ব্রিটিশদের তৈরী পোশাক পড়বেন না, ব্রিটিশ বস্তু ব্যবহার করবেন না, ওদের স্কুলে যাবেন না, ওদের চাকরিও করবেন না। আমি কথা দিচ্ছি, এমন করলে এক বছরের মধ্যে আমরা স্বাধীনতা পেয়ে যাব।"
গান্ধীজির এই পূর্ণ অসহযোগের পেছনের উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার। যেহেতু ব্রিটিশরা ভারতে এসেছিল মূলত ব্যবসা করতে, কাজেই ওদের যদি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, তবে ওরা ভারতকে "লস প্রজেক্ট" হিসেবে ঘোষণা করবে, এবং "দোকান বন্ধ" করে দেশে ফিরে যাবে।
অতি সরল ব্যবসায়িক নীতি। ফ্লাস্ক হাতে চা ফেরি করে বেড়ানো পিচ্চি থেকে শুরু করে মাইক্রোসফ্টের সিইও পর্যন্ত সবাই একই নীতি মেনে চলে।
উপমহাদেশের প্রথম "হরতাল" বোধয় ব্রিটিশ আমলেই হয়। যদি আমি ভুল হয়ে থাকি, কেউ সঠিক তথ্য দিলে উপকৃত হবো।
ব্রিটিশদের পর আমরা পাকিস্তানের অধীনে চলে যাই।
দেখা গেল আমাদের "পেয়ারের মুসলিম ভাইয়েরাও" আমাদের লুটেপুটে খাচ্ছেন। আমাদের সম্পদ নিয়ে নিজেদের দেশকে সাজাচ্ছেন।
ইসলামাবাদের রাস্তার পাশে ফোয়ারা তৈরী হয়েছে, করাচির বন্দর আরও সমৃদ্ধ করা হয়েছে এবং রাওয়ালপিন্ডির একদল হিংস্র জানোয়ারের পাতে তুলে দেয়া হয়েছে বড় বড় মাংসের চাকা! সবই আমাদের পাট ও চা বিক্রির টাকায়।
অথচ সারাবছর অমানুষিক পরিশ্রম করা আমার দেশের কৃষকদের গায়ের জামা খুললেই শরীরের চামড়ার উপর দিয়ে পাজরার সবকটা হাড্ডি ধমনী শিরাসহ অনায়াসে গুণে ফেলা যেত! অনাহারে, অপুষ্টিতে মৃত্যু ছিল অতি সাধারণ ঘটনা।
সমস্যাটা বুঝতে পারছেন?
এর প্রতিবাদেই হরতাল হয়েছে। এবং সেটাও যৌক্তিক হরতাল ছিল।
দেশ শাসন করছে বিদেশী সরকার, এমনিতেও যারা দেশের মানুষের টাকা নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছে। হরতালে আর্থিক ক্ষতি হলে তাদেরই হবে এবং তারাও এই দেশকে "লস প্রজেক্ট" ঘোষণা করে দোকান বন্ধ করে নিজের দেশে ফিরে যাবে।
যদিও ওরা ভালয় ভালয় যাবার লোক ছিল না। লাথি দিয়ে তাড়াতে হয়েছে। তবে আজকের লেখার উদ্দেশ্য সেই প্রসঙ্গ না। আজকের প্রসঙ্গ ভিন্ন।
তো একাত্তুরের পর, এই দেশে আর কোন বিদেশী সরকার ক্ষমতায় বসেনি। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, স্বৈরাচারী - যেই রাজগদিতে বসুক না কেন, এইবার হরতালে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণই আমার দেশের লোকেদেরই হয়েছে। একটা মুদির দোকান, একটা চায়ের রেস্টুরেন্ট, অথবা একজন রিকশাচালকের রিকশার চাকা একদিন না ঘুরলে যে ক্ষতি হয় সেটা শুধু তাঁরাই ভাল বুঝতে পারেন। ধানমন্ডি-গুলশান-বনানীর আলিশান ফ্ল্যাটে থাকা নেতারা কতটুকুই বা জানেন তাঁদের সম্পর্কে?
কেউ কী কখনও লক্ষ্য করেছেন, নির্দিষ্ট ভাড়া থেকে এক দুইটাকা কম দিলে একজন রিকশাওয়ালা কিভাবে ক্ষেপে উঠেন? আপনি লক্ষ্য করবেন কী? বাড়তি ভাড়া চাইলেই আপনি ঠাস করে একটা চড় দিয়ে বলেন, "চিনস আমারে? চিনস?"
একজন মুদির দোকানদারের সাথে কিছু নিয়ে দামদর করতে গেলেই বুঝতে পারবেন প্রতিটা পাই পয়সা তাঁদের কাছে সাত রাজার ধনের সমান। ভাবছেন ওরা খুব কঞ্জুস? জ্বি না। এই এক দুই টাকাতেই তাঁদের সংসার চালাতে হয়। আপনার কাছে হয়তো দুই চার টাকার তেমন কোন মূল্য নেই, তাঁদের কাছে এটাই হয়তো একবেলার খাবার!
বিশ্বাস হয়না? কখনও কাউকে চায়ের কাপে বনরুটি ডুবিয়ে খেতে দেখেননি? জ্বী, ওটাই তাঁদের ফাইভ ষ্টার রেস্টুরেন্টের ডেলিশাস লাঞ্চ!
এসি গাড়িতে চড়ে বেড়ানো নেতাদের চোখে এইসব পড়েনা।
তারা একদল চামচা দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে ভারী গলায় ঘোষণা দেন, "আগামীকাল....আগামীকাল...." "হরতাল! হরতাল!!"
এবং তাদের অন্ধ সমর্থকেরা ফালাফালি শুরু করে দেন। রাজপথ দখলে নেন যেন হরতাল কার্যকর হয়। সরকারী দলের সমর্থকেরাও পুলিশের সহায়তায় রাজপথে নামেন। জ্বিনা, জনগণের চিন্তায় নয়, সেই চিন্তা তাদের কখনই আসেনা। বিরোধীদলের কর্মসূচি যেন কার্যকর না হয়, সেটাই মূল উদ্দেশ্য।
ফলাফল হয় মারামারি, ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও! কিছু লাশও রাস্তায় পড়ে থাকে। পুরাই হিট শো!
দুই নেত্রীই ক্ষমতায় থাকার সময়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বিরোধী দলে গেলে হরতাল করবেন না। দুই নেত্রীই তাঁদের কথা রাখেননি। আমি আশাও করিনি তাঁরা রাখবেন। তাই আশাভঙ্গ হয়নি।
নিঃসন্দেহে হরতাল গণতন্ত্রের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক হাতিয়ার। কিন্তু যেই হাতিয়ারে দেশের ক্ষতি হয়, সেই হাতিয়ারের বারবার ব্যবহার কেন? অ্যামেরিকার চেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ আর কোথায় আছে? (আমি ফেয়ার ডেমোক্রেসির কথা বলছি, ভারত-বাংলাদেশে খুব একটা পার্থক্য নেই)
এই অ্যামেরিকায় আমি গত আট বছরে একদিনও হরতাল হতে দেখিনি।
আমার চাচা তিরিশ বছর আগে এসেছেন, তিনিও দেখেননি।
তার মানে কী এদের নেতাদের কোন সমস্যা আছে? সমস্যাতো অবশ্যই আছে। এরা ব্যক্তি স্বার্থের আগে দেশের স্বার্থকে নিয়ে চিন্তা করে। এবং এখানকার জনগণ যখন দেখে কোন একজন নেতা উল্টাপাল্টা কাজ করছেন, এরে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে। অন্ধ সমর্থন এদেরও আছে, তবে আমাদের দেশের আহাম্মকদের চেয়ে সিগনিফিক্যান্টলি কম!
আহাম্মক বলায় কেউ কী মাইন্ড করলেন নাকি আবার?
ভাই, যদি আপনি আপনার নেত্রীর প্রেমে অন্ধ হয়ে লাগাতার অবরোধকে সমর্থন করেন, পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মানুষ মারাকে সমর্থন করেন, নিজের দলের লোকের শেয়ার বাজারে জোচ্চুরিকে জায়েজ করতে উল্টা বিনিয়োগকারীদের উপর দায় চাপান অথবা হাস্যকর নির্বাচনকে "অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে" রব তুলে মিষ্টি বিতরণ করেন - তবে আপনার অতিসত্বর আই.কিউ ডেভেলপমেন্ট ক্লাস শুরু করা উচিৎ। এতে যদি একটু হলেও বুদ্ধি খুলে!
পরিস্থিতি বুঝাতে "বন্দুক" একটা চমৎকার উদাহরণ হতে পারে।
নিঃসন্দেহে বন্দুক একটি কার্যকরী অস্ত্র। আপনি আত্মরক্ষায় এর ব্যবহার করছেন, নাকি কারও সম্পদ লুটতে - সেটার উপরই ভাল মন্দ নির্ভর করছে।
তেমনি আমাদের নেতানেত্রীদেরও হরতালের ব্যবহারে সাবধান হওয়া উচিৎ। যাচ্ছেতাই ব্যবহার করলে এর ক্ষতিই হয় বেশি।
তাঁরা দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিত্ব। তাঁদের প্রতিটা সিদ্ধান্তের উপর আমাদের জীবনের গতিপ্রকৃতি নির্ভর করে। মানুষের ক্ষতি হয় এমন সিদ্ধান্ত তাঁরা কেন নেন?
সরকারের বিরোধিতা করতে হবে? ডাক হরতাল!
হরতালকে কার্যকর করতে হবে? পোড়াও গাড়ি!
অতি দ্রুত গাড়ি পুড়াতে হবে? পেট্রোল বোমা!
পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারীকে থামাতে হবে? চালাও বুলেট!
ভয়েস মেইল সার্ভিস বন্ধ করতে হবে? নিষিদ্ধ করো ভাইবার, Whatsapp! এর আগে বিডিআর বিদ্রোহের সময়ে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ রোধে নিষিদ্ধ হয়েছিল ইউটিউব। একবার নিষিদ্ধ হয়েছিল ফেসবুক!
এসব সিদ্ধান্তে আলটিমেট ক্ষতি কাদের হচ্ছে? বঙ্গদেশীয় জনতার! বিদেশী সরকারের নয় যে তারা "লস প্রজেক্ট" ঘোষণা করে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যাবেন।
এইসব সমাধানতো ক্লাস ওয়ান টুর বাচ্চার মাথা থেকেও বেরোয়। তাহলে আপনাদের এইসব মহাগুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়ার যুক্তি কী?
আপনারা কী একটু মাথা খাটিয়ে ভাল কোন সমাধান বের করতে পারেন না?
কিছুদিন আগে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের একটা ভিডিও ক্লিপ দেখেছিলাম।
তিনি এক সভায় মতিয়া চৌধুরীর পাশে বসেই সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, "আপনাদের মধ্যে কারা কারা বিদ্যমান দুই প্রধাণ রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেন, অথবা সমর্থন করেন? দেখি হাত তোলেন!"
দেখা গেল পাঁচ ভাগ মানুষও হাত তোলেননি।
চিত্রনায়ক তখন বললেন, "আমি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে খুবই হতাস ছিলাম, কিন্তু এখন আমি ভীষণ আশাবাদী! আমার বিশ্বাস ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে।"
দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম সফল নায়কের মতন আমিও আশাবাদী।
টিভি ইন্টারনেটের যুগে দেশের মানুষ ধীরে ধীরে শিক্ষিত হচ্ছে।
শিক্ষিত মানে "অ-তে ঐ অজগর আসছে তেড়ে, আ-তে আমটি আমি খাব পেড়ে" বা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে এ প্লাস পাওয়া শিক্ষিতের কথা বলছি না। সুশিক্ষায় শিক্ষিত লোকেদের কথা বলছি। যারা ভাল মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারেন। এখন চুপ করে থাকলেও একটা সময়ে যারা গলায় আওয়াজ তুলতে শুরু করবেন। একটা সময়ে দেশে পরিবর্তন আসবে। আসতেই হবে।
সেই শুভদিনের অপেক্ষায়.....
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:০৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ!
২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০০
নতুন বলেছেন: একে বারে মনের কথা গুলি বলেছেন ভাই...
নামে সবাই দেশপ্রেমিক...ধামিক`...
মানুষ পোড়ে.... গাড়ী পোড়ে... শিশুরা পুড়ে মরে...
কিন্তু আমাদের দেশের কিছু অন্ধ তবুও দলের পক্ষে চামচামী করে...
আমি জনগন.>>>
প্রধানমন্ত্রীকে বলার অধিকার আছে..যে আপনার সিদ্ধান্ত ভুল....
নেতাকে বলার অধিকার আছে... যে গাড়ীতে আগুন দিতে পারবোনা...
ব্লগে কোন নাস্তিক কি লিখেছিলো তার প্রতিবাদে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নামে...
কিন্তু মানুষ পোড়ার চেয়ে ভাইবার বন্ধের প্রতিবাদ জোড়ালো...
আমাদের সুশিক্ষা দরকার... তবেই জনগনের ক্ষমতা নেতারা টের পাবে ... এবং তারা মানুষ হবে..
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:০৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আশা করতে পারি, আশা করতেতো দোষ নেই।
৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:০৯
নিলু বলেছেন: লিখে যান
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সাথে থাকলে অবশ্যই লিখে যাব।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৩৪
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আর কিছু না বলে ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম।। ধন্যবাদ।।