নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙ্গালের স্টেক ভক্ষণ

২১ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ২:৩২

বহু আগে ভূঁইয়া একাডেমিতে IELTS এর কোচিংয়ে আমার সাথে সিজার নামের এক বড় ভাই স্পোকেন ইংলিশ কোর্স করতেন। তিনি হোটেল ম্যানেজমেন্টের উপর পড়াশোনা করতেন। তিনি বলেছিলেন ফাইভ স্টার হোটেলে এক ধরনের মাংস বিক্রি হয় যা কাটার সময়ে মাংস থেকে রক্ত বেরোয়। রক্ত যদি না বেরোয়, তাহলে কাস্টমার রেগে যায়।
শুনে গা গুলিয়ে উঠলো। তবে সেই গা গুলানো খাবারের কথা তাঁর মুখ থেকেই প্রথম শুনিনি। আমার ছোটবেলার ঘনিষ্ট এক বন্ধুও একদিন স্কুলের ক্লাসের ফাঁকে কী প্রসঙ্গে যেন এমন রক্ত বের হওয়া মাংসের কথা বলেছিল। মস্তিষ্ক তখন স্মৃতির পুরানো ফাইল ঘাটাঘাটি করে সেই ঘটনা মনে করিয়ে দিল। খাবারের নাম "স্টেক।" এক ধরণের কাবাব। অ্যামেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিলাসী খাবারের একটি।
কয়েক বছরের মধ্যেই অ্যামেরিকায় চলে এলাম। তাও আবার টেক্সাসে, বারবিকিউ, স্টেক, রিব্স ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত অঞ্চল। একটি দোকানের নাম দেখলাম "টেক্সাস ল্যান্ড এন্ড ক্যাটেল।"
আমি ঢুকে পড়লাম সেই রেস্টুরেন্টের পার্কিং লটে। সবার দামি দামি গাড়ি পার্ক করা, আমি এসেছি আমার পুরানো টয়োটা ক্যামরি চড়ে। কাস্টমারের গাড়ি দেখেই বুঝা উচিৎ ছিল ওটা আমার মতন ফুল টাইম স্টুডেন্ট ও পার্ট টাইম জব করনেওয়ালাদের জন্য নয়। কিন্তু খিদা পেলে আমার মগজ কাজ করেনা। যতক্ষনে বুঝলাম ততক্ষনে আমি রেস্টুরেন্টে বিলাসী আসনে বসা, মেনু আমার হাতে। পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা পরিপাটি সাজে স্মার্ট ওয়েটার আমার সামনে দাঁড়ানো। মেনুতে একেকটা খাবারের দাম পঁচিশ তিরিশ ডলার। তখনকার পরিস্থিতিতে অনেক বেশি। কিন্তু সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কী ভয়?
অর্ডার দিলাম "টি বোন স্টেক প্লিজ।"
বিশ্বজুড়ে এই স্টেকের কদর অনেক।
সে জানতে চাইলো আমি কী রেয়ার, মিডিয়াম নাকি ওয়েলডান চাই।
আমার ব্রেন তাঁর এই প্রশ্ন প্রসেস করতে পারলো না। বেকুবের মতন তাকিয়ে থাকতে দেখে অভিজ্ঞ ওয়েটার বুঝিয়ে দিল রেয়ার হচ্ছে হাল্কা ভাজা, মিডিয়াম হচ্ছে হালকার মধ্যে ঝাপসা ভাজা, এবং ওয়েলডান মানে সিম্পলের উপর গর্জিয়াস ভাজা। আমি কী ধরনের স্টেক পছন্দ করবো?
তখন সিজার ভাই ও সামির কথা মনে পড়ে গেল। মাথার ভিতর তাঁরা চোখ মুখ বিকৃত করে বলছে, "কাটার সময়ে মাংস থেকে রক্ত বেরোয়। রক্ত! রক্ত! রঅঅঅঅক্ত!"
আমি তড়িঘড়ি করে বললাম "ওয়েল ডান!"
আমি তখন শিককাবাব শামি কাবাব খাওয়া পাবলিক। হালকা ভাজা মাংসতো কাঁচা লাগবেই।
লোকটা জানতে চাইলো আমি কী সাথে "মেশড পটেটো" খাবো, নাকি অন্য কিছু? জিজ্ঞেস করলাম "আর কী কী অপশন আছে?"
মেনুতে "সাইডস" সেকশন দেখিয়ে বললো ওখান থেকে বেছে নিতে। কিছুক্ষন চোখ নাড়াচাড়া করে বললাম, "না, আলু ভর্তাই দাও।"
অ্যামেরিকান আলু ভর্তা কিন্তু আমাদের দেশীয় আলুভর্তার মতন না। আমরা সরিষার তেল দেই, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ ইত্যাদি দেই। ওরা বাটার, ক্রিম, দুধ, রসুন আর লবন দিয়ে বানিয়ে ফেলে। স্বাদ ভিন্ন। মাংসের সাথে খেতে দারুন!
অবশেষে যে বস্তু আসলো, সেটা খেয়ে মানুষ এত পুলকিত হয় কেন সেটা বুঝলাম না। আমার কাছে খুব একটা আহামরি মনে হয়নি। সস দিয়ে বিরাটাকৃতির মাংসের টুকরা, আলুভর্তা আর সিদ্ধ সব্জি দিয়ে খেয়ে বেরিয়ে এলাম। মাংস খাওয়ায় আমার কখনই আফসোস হয়না, কেবল প্রচুর টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় মনটা খানিকটা খারাপ হলো।
এরপরে জানলাম স্টেক কখনই "ওয়েল ডান" করে খেতে নেই। তাতে মাংস শক্ত হয়ে যায়। বরং "রেয়ার" বা "মিডিয়াম রেয়ার" খেতে হয়। জ্বি, ঝলসানো পিঠের মাঝের মাংসটি অবশ্যই গোলাপি বর্ণের হতে হবে। কালো করে ফেললেই আর আসল স্বাদ পাবেন না। মাংস নরম থাকলে এর আসল স্বাদ টের পাওয়া যায়।

এরপরে স্টেকের নেশা হয়ে গেল। এখানে ওখানে যেখানেই যাই, ফ্যান্সি রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ডাইনার পর্যন্ত, দামে পোষালে স্টেক অর্ডার দেই।
স্টুডেন্ট অবস্থায় আমরা প্রায় প্রতিদিন বাফে রেস্টুরেন্টে খেতাম। যেহেতু দিনে একবেলাই পেট পুড়ে খেতাম, (বাকিটা সময় হালকা নাস্তা) তাই ভালভাবেই খেতে বাফেতে হানা দেয়া।
একটা আমেরিকান রেস্টুরেন্ট আছে যারা সারাদিন বাফে সার্ভ করতো। সকালে ব্রেকফাস্টের জন্য এক দাম, দুপুরে লাঞ্চের জন্য এক দাম, এবং রাতের ডিনারের জন্য আলাদা দাম। আমরা ক্লাস শেষে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে সেখানে দলবল মিলে ঢুকে যেতাম। লাঞ্চের দাম নিত তখন। চারটা থেকে তাঁদের ডিনার সার্ভ শুরু হয়। আমেরিকানরা বিকাল চারটা পাঁচটার মধ্যেই ডিনার সেড়ে ফেলে। তা আমরা লাঞ্চের টাকায় ডিনার খেয়ে আসতাম। আনলিমিটেড স্টেক আর ব্রিসকেট সার্ভ করতো তখন।
তারপরে টাকা পয়সা হবার পরে ব্রাজিলিয়ান স্টেক হাউজে ভিড় করতাম খুব। অত্যন্ত বিলাসী রেস্টুরেন্ট, দাম একদম গলাকাটা। কিন্তু কেউ যদি বলে পৃথিবীর সেরা স্টেক কারা বানায়? আমি উত্তর দিব ব্রাজিলিয়ানরা।
আহা! সেই দিনগুলি!

বাড়িতে বহুবার স্টেক বানাবার চেষ্টা করেছি। বন্ধুবান্ধবরাও বারবিকিউ করলেই স্টেক বানাই। তবে আমরা বানাই আমাদের দেশি স্টাইলে। শিক কাবাবের মশলা দিয়ে স্টেক বানাবার চেষ্টা করি। বা আরও অন্যান্য বাড়তি মশলা দিয়ে। যেকারনে আমাদেরটা কখনই আসল স্টেকের মতন হয়না।
স্টেকের রেসিপি অত্যন্ত সহজ ও সাধারণ। এটাই এর সৌন্দর্য্য। শুধু লবন আর গুঁড়ামরিচ। ব্রাজিলিয়ান স্টেকের উপাদান হচ্ছে রক সল্ট। আর কিছু না। আমেরিকান স্টেকে লবন মরিচের সাথে রোজমেরি, বাটার ও গার্লিক দিতে পারেন। এবং গ্রীলে বারবিকিউ করলে চেষ্টা করবেন "মাস্কিট" কাঠে বা মাস্কিট ফ্লেভারের কয়লায় করতে। এতে গন্ধটা সুন্দর আসে। এর বেশি মশলা দিলে সেটা আর স্টেক থাকেনা, কাবাব হয়ে যায়। স্টেকের মজা হচ্ছে মাংসের স্বাদে। আমরা মাংসের স্বাদ নষ্ট করে ফেলি বাড়তি মশলা যোগ করে।

স্টেকের জন্য মাংস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোন জাতের গরু, তার শরীরের কোন অংশের মাংস, সেটা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। একই গরুর টি-বোন (মেরুদণ্ডের) সারলয়েন (পিঠের পেছনের দিকের) বা রিব (পাঁজর) অঞ্চলের স্টেকে স্বাদের পার্থক্য হয়ে থাকে। গরুর জাতভেদেও স্বাদের পার্থক্য আকাশ পাতাল হয়ে থাকে। "জাপানিজ কোবি" "angus" বা এই জাতীয় গরুর স্টেকে এক ধরনের স্বাদ, আবার সাধারণ জাতের গরুর বীফে স্টেকের স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে থাকে। এক জাতের গরুর মাংস মুখে পড়তেই মাখনের মতন গলে যাবে, আবার আরেক জাতের গোমাংস হবে রবারের মতন শক্ত। একটা রেস্টুরেন্ট চিনি, যারা অত্যন্ত দামি স্টেক বিক্রি করে। কেন জানেন? তারা গরুর বংশের নবম আদি পুরুষ পর্যন্ত হিসেব রাখে। প্রতিটা গরু হ্যান্ড পিকড, অতি যত্নের সাথে লালন পালন হয়ে থাকে।
কিছু জাতের গরু আছে যাদের জীবনেও ঘাস ছাড়া অন্য কিছু খেতে দেয়া হয়না। কিছু গরুকে বিয়ার খাওয়ানো হয়, শরীর মাসাজ করা হয়, টেলিভিশন দেখানো হয়, মিউজিক শুনিয়ে চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়। এতে মাংস ভাল আসে। এগুলোর তুলনা ফার্মে কেমিক্যাল খাইয়ে বড় করা গরুর সাথে করা একদমই অন্যায়।
স্টেকের জন্য সবচেয়ে জরুরি উপাদান হচ্ছে মাংসের পড়তে পড়তে চর্বি থাকতে হবে। নাহলে সেটা দিয়ে কাবাব বানানোই ভাল।

আমার মাকে নিয়ে একবার অতি বিখ্যাত স্টেক হাউজে গিয়েছিলাম। আম্মুর চেহারা দেখেই বুঝেছিলাম তাঁর ভাল লাগেনি। জিজ্ঞেস করতে বললেন, "একটু আদা দিলে ভাল হতো। ওরা একদম আদা দেয় নাই।"
কুইন সিনেমার একটি দৃশ্য মনে পরে গেল। কাঙ্গনা ইতালিয়ান খাবার খেতে গিয়েছে। খাবার খেতে গিয়ে তাঁর পছন্দ হয়নি। সে গোলমরিচ উজাড় করে ঢালতে শুরু করে। শেফ এসে জিজ্ঞেস করে, "তোমার আর কিছু লাগবে?"
কঙ্গনা বলে, "সস।"
"সস? আর?"
"রসুন আর আদা।"
"আর?"
"শুকনা মরিচ আর লেবু। একটু লেবু চেপে দিলে ভাল হতো। আর একটু লবন হলেও ভাল হতো। এতে লবন কম হয়েছে।"
লোকটা খেপে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমরা ইন্ডিয়ানরা সবকিছুতে এত মশলা ঢালো কেন? সবকিছুতে মরিচ! এইটা ইতালিয়ান ফুড, তোমাদের চিকেন টিকিটাক্কা মাসালা না।"
আম্মুকে আর কিছু বুঝাতে গেলাম না।
পরেরবার আমার ভাই নিয়ে গেল আরেক রেস্টুরেন্টে। "বৃসকেট" খাওয়াতে। আম্মু পুরাটা খেতে না পেরে খাবারটা বাসায় নিয়ে আসলো। তারপরে নিজের ইচ্ছেমতন মশলা ব্যবহার করে কষিয়ে সেটা আমাদের পরিবেশন করে বললেন, "মজা হয়েছে না?"
আমরা খেতে গিয়ে দেখি ঝুরা মাংসের স্বাদ হয়েছে। কোরবানির মাংস ভুনা একটু পুরানো হলে আবারও মশলা টশলা দিয়ে ঝুরাঝুরা করে রান্না করলে যে স্বাদ হয়, এটা সেই রেসিপি। আম্মু
অতি নিপুণতার সাথে অতি বিখ্যাত বৃসকেটকে ঝুরা মাংস বানিয়ে ফেলেছে।
জবাবে বললাম, "হ্যা, খুবই মজা হয়েছে।"

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৪:৩৬

বিষন্ন পথিক বলেছেন: টেকশাষ গিয়ে এসটেক খাইতে মন্চায়

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: এরকম খাবার আমি কোনো দিনও খাবো না। নো নেভার।

৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১২:২৩

নতুন বলেছেন: স্টেক মজার জিনিস.... অনেকেই প্রেমে পড়ে যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.