নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙ্গু পাব্লিকের আধুনিক মানসিকতার হতে আরও দুইশ বছর সময় লাগবে।

২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:৪১

আমার শ্বশুরবাড়ির মসজিদের ঘটনা।
মসজিদের ইমামের দুই দুইটা মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এটি শুধু গর্বেরই বিষয় না, এটি ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করার মতন বিষয়।
কিন্তু মসজিদ কমিটির মাথায় বসে আছে অশিক্ষিত, মূর্খ একটা অভদ্র লোক। যার কাজই হচ্ছে লোকজনের কাছে হজ্বের ফার্স্টক্লাস প্যাকেজ বিক্রি করে থার্ডক্লাস সার্ভিস দিয়ে মাল কামানো। ছাগল যেমন কাঁঠাল পাতা আর Adansonii Variegata ($৩৮,০০০ এ বিক্রি হয় পাতাবাহার টাইপের গাছ) এর পার্থক্য বুঝে না, তেমনই শিক্ষার গুরুত্বও এই ছাগলের মাথায় ঢুকে না। ওর নিজের ছেলেমেয়েরাও মূর্খ, তাই সামান্য ইমামের মেয়েদের এই সাফল্য মানতে পারেনি। সে নিজের ক্ষমতা দেখাতে ইমামের চাকরি খেয়ে ফেলল। ওর যুক্তি ছিল, মেয়েদের কাজ হচ্ছে বাড়িতে থাকা, ওরা কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করবে? এতে পর্দা নষ্ট হবে, জিনা ব্যাভিচার বাড়বে। এমন অশ্লীলতাকে যে ইমাম প্রশ্রয় দেয়, ওর পেছনে নামাজ আদায় হবে না।
সবাই বলল "ঠিক ঠিক!"
ইমামের চাকরি শেষ।
ইমামের অভিশাপের সাথে সাথে আমিও বদলোকটাকে অভিশাপ দেই! আল্লাহ যেন বেঁচে থাকতে থাকতেই ওর বিচার করেন।

ফেসবুকে দেখলাম, ঢাবির প্রফেসরও এমনই এক মন্তব্য করেছেন। যারা পর্দা করতে চায়, ওদের বাড়িতেই থাকা উচিত, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ ওদের জন্য নয়।
প্রথমত, শিক্ষা ও বস্ত্র দুইটাই মানুষের মৌলিক অধিকার। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতো মামুলি বাত, খোদ প্রধানমন্ত্রীও এতে কাউকে বাঁধা দেয়ার অধিকার রাখেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দান খয়রাতের প্রতিষ্ঠান না, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এখানে যে কেউ ইচ্ছা করলেই ভর্তি হতে পারেনা। যারা ভর্তি হয়, নিজেদের প্রমান করেই ভর্তি হয়। ওদের মেধা নিয়ে কারোর সন্দেহ থাকার প্রশ্নই উঠে না।
আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, পোশাকের স্বাধীনতা। আমেরিকায় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে "হিজাবি" টিচারের অধীনে আমি মাল্টিপল ক্লাস করেছি। আমার "ফাইনাইট ম্যাথ" প্রফেসর ছিলেন একজন হিজাবি, আমার হিউম্যানিটিজ প্রফেসর ছিলেন আরেক হিজাবি, আমার ফাইন্যান্স প্রফেসরও ছিলেন হিজাবি। এছাড়া কেমেস্ট্রি, কম্পিউটার সায়েন্স, ফিজিক্সেও বেশ কিছু লেকচারার ও প্রফেসর ছিলেন হিজাবি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হাফ প্যান্ট পরা মেয়ে যেমন ক্লাস করতো, তেমনই হিজাবি মেয়েরাও ক্লাস করেছে। ঘটনা শুধু এক বিশ্ববিদ্যালয়ের না, হার্ভার্ড, এমআইটি, ইয়েলেও আপনি হিজাবি ছাত্রছাত্রী, প্রফেসর পাবেন। আমাদের ফেসবুক গ্রূপ ক্যানভাসেরই সাবেক এডমিন হিজাবি, এবং সে হার্ভার্ড থেকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে।
শুধু হিজাবি নারীই না, শিখ পুরুষেরাও পাগড়ি বেঁধে ক্লাসে আসে। কেউ ওদের "টার্বান" মুখ ভর্তি দাড়ি ইত্যাদি নিয়ে কিছু বলার অধিকার রাখেনা। ইন্ডিয়ান বেশ কিছু হিন্দু ছেলে মেয়েদের চিনতাম যারা কপালে টিকা দিয়ে ক্লাসে আসতো। বিশেষ করে পরীক্ষার দিনেতো এইটা মাস্ট!
আমেরিকায়, টেক্সাসের মতন কনজার্ভেটিভ খ্রিষ্টানদের স্টেটে ওদের পোশাকে, ধর্মীয় রীতিতে কারোর কোনরকম চুলকানি উঠে না। আমাদের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসরের উঠে গেলেতো সমস্যা।
উল্টো বিদেশে প্রফেসরদের মানসিকতা কেমন হয় জানেন? তাঁরা আরও বেশি উৎসাহ দেন। কারন এই সমস্ত মেয়েদের মা-দাদি-নানীরা হয়তো আজীবন পর্দার আড়ালে থেকে আধুনিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই মেয়েরা সেই পরম্পরা ভেঙে এগিয়ে এসেছে। তাঁদের সাহায্যের প্রয়োজন। সেই সাহায্যের হাত এই সমস্ত উচ্চশিক্ষিত (স্বশিক্ষিত) প্রফেসররা না বাড়ালে কারা বাড়াবে? অন্ধ সমাজতো ওদের অন্ধকারেই রাখতে চায়। সুশিক্ষিত মানুষ কেন অন্ধদের প্রতিনিধিত্ব করবে?

একদল লোক দাবি করবে, পর্দাও করবে আবার বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়বে - এ কেমন কথা? উনারা অতি জ্ঞানী লোকসমাজ, আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে ধরে না যে পোশাকের সাথে পড়াশোনার দ্বন্দ্বটা ঠিক কোথায়? আমি ন্যাংটা হয়ে গেলেই মেধাবী হয়ে যাব? শার্ট প্যান্ট পরা আর শাড়ি পরা নারী বিজ্ঞানীদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই - এই পয়েন্ট প্রমানে গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে চন্দ্রযানের নারী বিজ্ঞানীদের ছবি ভাইরাল হয়েছে। তাহলে হিজাব পরলেই কারোর মেধা নষ্ট হয়ে যাবে? ওরা কি মনে করে যে হিজাব ছাতার মতন জ্ঞানবৃষ্টি থেকে মস্তিষ্ককে প্রটেক্ট করে? Sounds stupid? তাহলেই বুঝেন কতটা স্টুপিডের মতন কথাবার্তা! ইরানেই কয়টা নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট, ডাক্তার, প্রফেসর হিজাবি জানেন?

কেউ যদি পোশাকের সাথে পড়ালেখা ও মেধার দ্বন্দ্ব আমাকে বুঝাতে পারেন, একটু বুঝায়ে দেন। আর যে জিনিস বুঝানোর ক্ষমতা রাখেন না, সেটা না বলাই কি উত্তম না?

এই প্রফেসরের নামে আরেকটা ঘটনা পড়লাম। ও নাকি কবে দুইটা পর্দানশীন নারী ছাত্রীকে উনার ডিপার্টমেন্টের টয়লেট মোবারক ব্যবহার করতে দেন নাই। এই সমস্ত টক্সিক লোকজন কিভাবে শিক্ষকতা করে? এদের কাছ থেকে লোকজন কি শিখে?

হ্যা, আমাদের সমাজে যাবতীয় বদমায়েশি ধর্মীয় লেবাসের নিচেই ঘটে। আমাদের সমাজ বলতে আমি গোটা উপমহাদেশীয় সমাজই বলছি। ইন্ডিয়াতে যেমন বহু খুন বা ধর্ষণের মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি পুলিশের চোখে ধুলা দিতে সাধু সেজে সাধুদের সমাজে মিশে যায়, তেমনই আমাদের দেশেও পতিতারা, মাদক ব্যবসায়ীরা, ঘুষখোরেরা কিংবা পরীক্ষায় নকলকারীরা দাড়ি ও বোরখাকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করতেই পারে যে পর্দার আড়ালে কে পরীক্ষা দিচ্ছে, সেটা যেহেতু আমরা ধরতে পারিনা, কাজেই এতে নকলের সুযোগ বাড়ে। ভ্যালিড সমস্যা।
তবে এর সমাধানটাও খুবই সহজ। নারীদের সামনে যেহেতু পর্দার আবশ্যকতা নেই, কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী কোন কর্মী ওদের আইডেন্টিটি যাচাই বাছাই করবে। নারী কর্মীকে প্রফেসরই হতে হবে, গাদাগাদা সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, এমনও কোন শর্ত না। পিওন লেভেলের কোন কর্মীই কাজটা করে দিতে পারে।
আর যদি কেউ আইডি কার্ডে ছবি তোলা নিষিদ্ধের জন্য হাউকাউ করে, যেমনটা কিছুদিন আগেই একদল করেছিল, তখন বলতেই হবে "তুমিতো বইন থাপ্পড় খাওয়ার মতন ফাইজলামি শুরু করে দিলা!"
আইডি কার্ডে ছবি তোলা পর্দার খেলাপ হতে যাবে কোন দুঃখে? আপনি কি সেটা বিলবোর্ডে ঝুলাবেন? টিভিতে প্রচার করবেন? লোকজন পাসপোর্টে ছবি তুলে হজ্ব, ওমরায় যাচ্ছে না? আইডিতেই তোমার সমস্যা কেন? তারমানে হয় তোমার মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি কিছুই নেই, নিজেই জানোনা ধর্ম কি, কোথায় কোথায় কি বলা হয়েছে। আর নাহলে তোমার নিয়ত হচ্ছে তোমার জায়গায় তোমার মামাতো বোন বোরখা পরে এসে পরীক্ষা দিয়ে যাবে।
এখন কেউ যদি এই স্পেসিফিক ঘটনাকে নারীর জেনারেল পর্দা করার সাথে গুলিয়ে ফেলে তাহলেও বলবো, "প্রিয় ভাই ও বোন, পড়ালেখা করো, নিজের ব্রেনকে আরেকটু প্রসারিত করো। মূর্খের জীবন আর কতদিন যাপন করবা? টায়ার্ড হও না?"

এনিওয়েজ।
শিক্ষিত, অশিক্ষিত, প্রগতিশীল, পর্দানশীন এবং এমনই আরও অনেকের পোস্ট পড়ে পড়ে যা বুঝলাম, তা হচ্ছে, বাঙ্গু পাব্লিকের আধুনিক মানসিকতার হতে আরও দুইশ বছর সময় লাগবে।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: যার ভালো লাগবে হিজাব পড়বে, যার ভালো লাগে না পড়বে না। অতি তুচ্ছ বিষয় লোকজন হাউকাউ বাঁধিয়ে দেয়।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৩:৪৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সেটাইতো কথা।

২| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৩:১৪

কামাল১৮ বলেছেন: হিজাব সুধু পোশাক না একটা মানসিকতা।হিন্দুরা কি হিজাব পরে নাকি মুসলমানরা পৈতা পরে।পরে না।এটা মানসিকতার বিষয়।আধুনিক মানুষ আধুনিক পোশাক পরবে।পোশাকপরতে হবে আবহাওয়া ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে।
এখানে শীতে কেই হাফ পেন্ট পরে না গরমে বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে হাফ পেন্ট পরে।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৩:৪৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমিতো গরমের সময়েও হাফ প্যান্ট পরি না, এতে কার কি অসুবিধা হয়?

৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ ভোর ৬:৫৩

নাহল তরকারি বলেছেন: কে কোন পোষাক পড়বে সেটা তার ব্যাক্তিগত বিষয়। কোন মেয়ে/মহিলা ছেলেদের কু-দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য বোরকা পড়তেই পারে। এটা নিয়ে তো কোন চিল্লাপাল্লা করার কারন দেখি না।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৩:৪৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সেটাই কথা।

৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ৮:৫৩

রানার ব্লগ বলেছেন: আমিও সেই বদমাইশ কে অভিশাপ দিলাম ও যেনো পৃথিবীতেই দোযোখে জ্বলে।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৩:৪৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমিন!

৫| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:০০

ধুলো মেঘ বলেছেন: ফ্রান্স আগেই হিজাব নিষিদ্ধ করেছিল - এখন মেয়েদের বোরখা পরাও নিষিদ্ধ করে আইন পাশ করল। বাহানা হিসেব বলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করা যাবেনা। কিন্তু এই আইন নাকি আবার ক্যাথলিক খ্রিস্টান এবং শিখদের ক্ষেত্রে শিথিল আছে।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৩:৫০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: তাইলেই বুঝেন আসল চুলকানি কোথায়।

৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:০২

অধীতি বলেছেন: পোষাকের এই বাড়াবাড়ি বিষয়টা খুবই জঘন্য। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগুলাও ইদানিং খুবই বেয়ারা হইছে। এর কারণ পর্যাপ্ত গবেষণার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারা।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৩:৫০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: অযোগ্য লোক নিয়োগ দিলে এইটাই হয়।

৭| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৭

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আমাদের দেশে যে সকল মেয়েরা একটু বেশি শিক্ষিত অথবা চাকরিজীবী তাদের নিয়ে ভয়ঙ্কর কুৎসা রটানো হয়। ঈঙ্গিত খুবই স্পষ্ট মেয়েরা হচ্ছে ঘরে থাকার প্রাণী লেখাপড়া, চাকরি এসব মেয়েদর জন্য নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.