নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের প্রত্যেকের মায়েরা হিরো। আর প্রতিটা স্পেশাল চাইল্ডের মায়েরা একেকজন সুপারহিরো।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৫৪

এদেশে হোম ডিপো নামে একটি দোকান আছে, নাট বল্টু থেকে শুরু করে বড় বড় মেশিন - সব পাওয়া যায়। মাঝে মাঝেই যেতে হয়।
গেলাম।
আমার পাশে এক বাবা এসেছেন তাঁর ছেলেকে নিয়ে। ছেলেটির বয়স আমার ছোটছেলের সমান হবে, বা আরেকটু কম। কিন্তু সে হুইল চেয়ারে বসা। ওর একটি পা কাটা। হয়তো কোন অসুখের কারনে কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। কিংবা হয়তো এভাবেই জন্মেছে।
আমার ছেলেরা ঐ বাচ্চার সাথে "রক-পেপার-সিজার" খেলতে শুরু করে দিল। তিন শিশুর খিলখিল হাসিতে পরিবেশটাই স্বর্গীয় হয়ে উঠলো।

মনটা এত খারাপ হলো সেদিন! আমরা শারীরিক সুস্থতাকে গ্রান্টেড হিসেবে নেই। আমরা বুঝতেই পারিনা লাখ লাখ কোটি টাকার বিনিময়েও মানুষ তাঁর হারানো অঙ্গ ফিরে পায় না।

আমাদের দেশেও শারীরিক প্রতিবন্ধীর অভাব নেই। কারোর হাত নেই, কারোর চোখ, কারোর বা অন্য কোন সমস্যা। এখানে একটা কথা বলি, গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন। আমরা যারা সাধারণভাবে জন্মেছি, আমরা দুই হাত, দুই পা, দুই চোখে অভ্যস্ত হয়েই বেড়ে উঠেছি। আমরা কিন্তু জানিনা চার পা, তিন চোখের সুবিধা/অসুবিধা। তেমনই, যখন কোন শিশুর কোন শারীরিক বিকলাঙ্গতা থাকে, এবং সে সেটা নিয়েই বেড়ে ওঠে, ও কিন্তু সেভাবেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। আমি ডান হাত ছাড়া লিখতে পারিনা। কেউ বাঁহাতি। অথচ আমাদের দেশেই এমন ঘটনা ঘটেছে যে পা দিয়ে লিখে লিখে এসএসসি এইচএসসি পাশ করে ফেলেছে। কারন ওর দুই হাতই নেই। কেউ কেউ মুখ দিয়ে লেখেন। প্রয়োজনই মানুষকে দিয়ে এমনকিছু করায় যা সাধারণ অবস্থায় কেউ কল্পনাই করেনা।

যাদের প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাঁরা কিন্তু তাঁদের জীবনকে গুছিয়ে আনেন, কিন্তু সমস্যা করি আমরা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা। আমরা আমাদের কথার বানে ওদের এমনভাবে বিদ্ধস্ত করি যে এরচেয়ে ওদের খুন করে ফেললেও ওরা এতটা কষ্ট পেত না।

প্রথমআলোর এক ভিডিওতে তেমনই এক মায়ের ঘটনা শুনেছিলাম। উনার ছেলেটা শারীরিক প্রতিবন্ধী, হাটঁতে পারেনা। পাঁচতলা বিল্ডিং মায়ের কোলে করে উঠতে হয়। এতে প্রতিবেশী মহিলা (নামের আগে "ভদ্র" শব্দটা ব্যবহার করবো না, মহিলা না বলে "বেটি" বলা উচিত) একদিন বলেন, "আপা! আপনি এত কষ্ট করছেন কেন? ও তো জীবনে কিছু করতে পারবে না।"
এই ছেলেটাই পরে শাহজালাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স পাশ করে বিদেশী কোম্পানিতে চাকরি করেছে।

আমাদের উপমহাদেশীদের এই আলগা আল্লাদি কথাবার্তা বলার স্বভাবটাই আমি দুই চোখে দেখতে পারিনা। তোর কাছে জানতে চেয়েছে এই ছেলে কিছু হতে পারবে কি পারবে না? তুই এর খরচ বহন করিস? তুই একে কোলে তুলে যাতায়াত করিস? তাহলে তোর পরামর্শ তোর কাছেই রাখ।

আমার বৌ প্রিম্যাচুর্ড বেবি ছিল। গর্ভে ছয়মাস থাকতেই একদিন আমার শ্বাশুড়ীকে হসপিটাল যেতে হয়। ডাক্তার জানায় উনার মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। এবর্ট করতে হবে।
আমার শ্বাশুড়ি কান্নাকাটি করে বলতে থাকেন, তাঁর মনে হচ্ছে তাঁর বাচ্চা বেঁচে আছে। ওরা যেন আরেকটু চেষ্টা করেন।
ডাক্তার বলেই দিয়েছেন যে বাচ্চা শেষ। মায়ের বাড়তি আবেগকে তেমন পাত্তা দিতে রাজি না।
তবু পরিচিত ডাক্তার বলেই শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন। এবং মিরাকেল! আমার বৌ জ্যান্ত বেরিয়ে আসলো।
তা ছয় মাসের প্রিম্যাচুর্ড বেবি কেমন হতে পারে সেটা সাধারণ মানুষ ধারণাও করতে পারবে না। বিড়ালের বাচ্চার সাইজের হবে। ওদের সার্ভাইভ করার চান্স খুবই কম থাকে। অর্গানগুলো তখনও ঠিক মতন গ্রোই করে না।
ডাক্তাররা জানিয়ে দিলেন, এ বাচ্চা বাঁচবে না।
আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি জীবন এদিক সেদিক করে দিলেন উনাদের বাচ্চাকে বাঁচাবার জন্য। ভিটামিন দিতে রোদের মধ্যে ফেলে রাখা হতো। চামড়া পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছিল। দিনরাত বাচ্চাকে নিয়ে ব্যস্ত। ডাক্তার থেকে শুরু করে আত্মীয়, প্রতিবেশী ও স্বজনেরা, প্রত্যেকে বলে দিলেন, "শুধু শুধুই কষ্ট করছেন। এ শিশু বাঁচবে না।"
চিৎকার দিয়ে ওদের ধমকাতে ইচ্ছা করে, "তোরা কি আল্লাহ? তোরা কিভাবে জানিস?"
কিন্তু ভদ্রপল্লীতে থাকার সমস্যা হচ্ছে, মনের কষ্ট ব্যক্ত করা যায় না। বরং বুক ফেটে মরে যাও।

কিছু অধ্যবসায় আর পরিশ্রম আল্লাহকেও নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে উদ্বুদ্ধ করে। মিরাকেল আমাদের জীবনেই ঘটে।
সেদিনের সেই "মিসক্যারেজড হয়ে যাওয়া" ও পরে প্রিম্যাচুর্ড জন্মানো মেয়েটা আজকে দুই সন্তানের মা। ভাগ্যিস! নাহলে আমি কাকে না কাকে বিয়ে করতাম কে জানে!

সেদিনের সেই ডাক্তারই নিজের বৌকে নিয়ে যতবার আমার শ্বশুরবাড়িতে আসতেন, আমার বৌকে ডেকে এনে বলতেন, "তুমি আজকে তোমার মায়ের চেষ্টার কারণেই বেঁচে আছো। আমরা নিজেদের চোখে মিরাকেল দেখেছি!"

আমাদের প্রত্যেকের মায়েরা হিরো। আর প্রতিটা স্পেশাল চাইল্ডের মায়েরা একেকজন সুপারহিরো।

উনারা উনাদের জীবন নিংড়ে দেন নিজেদের সন্তানের জন্য। আমার আপনার কাছে কিন্তু তাঁরা কোন সাহায্য চাইছেন না। শুধু একটাই অনুরোধ তাঁরা করেন, সেটা হচ্ছে আমাদের মুখটা যেন আমরা বন্ধ রাখি। প্রশংসা না করতে পারি, তাঁদের কিচ্ছু যায় আসেনা, তবু এমন একটা শব্দও যেন না বলি যাতে তাঁদের মন থেকে অভিশাপ বর্ষিত হয়। যারা সাধারণ শিশুর বাবা মা, তাঁরা যেন তাঁদের বাচ্চাদের একটু ভদ্রতা শিক্ষা দেয়, কিভাবে শারীরিক বা মানসিকভাবে দুর্বল সহপাঠীদের প্রতি সহমর্মী হতে হয়।
স্কুলে ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়াটাই জীবনের সবচেয়ে বড় সাকসেস না। দুনিয়াটাই এমন যে অনেক সাধারণ ব্যাকবেঞ্চারও কোটি কোটি টাকার পাহাড়ের নিচে পড়ে থাকে, আবার অনেক স্কুল/বোর্ড টপারও নানান বাহ্যিক কারনে ঝরে যায়। যা ম্যাটার করে, তা হচ্ছে মনুষত্ববোধ। আপনি মানুষ হিসেবে কেমন, সেটাই লোকে মনে রাখে।

নিজের সন্তানের প্রতিবন্ধকতায় কিছু বাবা মাকে ডিপ্রেস্ড হতে দেখি। উনারা বুঝেন না যে উনাদের দিকেই এই শিশুরা তাকিয়ে থাকে। ওরা যদি দেখে ওদের কারনে ওদের বাবা মা ডিপ্রেশনে আছে, সেটা ওদের জন্যই বাড়তি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। আপনারা আপনাদের সন্তানের জন্য ঢাল হন। পুরা দুনিয়া ওদের বিপক্ষে থাকে, আপনারা ওদের শক্তি না দিলে কে দিবে? প্রতিদিন নিয়ম করে ওদের মনে করিয়ে দিন যে ওরাই পারবে। ওরা মোটেই ভিন্ন কিছু নয়, হাত পা ছাড়াও মানুষ বেঁচে থাকে, ওদেরও সমস্যা হবেনা। ওরা যেন ওদের কাজে মনোযোগী হয়। স্টিফেন হকিং সমস্ত জীবন হুইল চেয়ারেই কাটিয়ে দিয়েছে। ইলন মাস্ক অটিজম নিয়েও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, টেসলা ও স্পেস এক্সের সিইও। এইসব শুভাকাঙ্খীদের কথায় ওরা যেন ডিপ্রেসড না হয়।

কেউ কেউ বলেন, "স্রষ্টার এমন কেমন বিচার? একটি শিশুকে কেন তিনি বিকলাঙ্গ করে জন্ম দেন?"
সেই শিশুদেরই বাবা মায়েদের সাথে কখনও কথা বলেছেন? একবার ওদের যদি অপশন দেয়া হয় "সুযোগ পেলে তুমি এই বাচ্চারই বাবা/মা হবা?"
প্রত্যেকে বলবেন, "একবার না, যদি হাজারবারও অপশন দেয়া হয়, তবু আমি এই সন্তানেরই মা/বাবা হবো।"

আমি যদি ভুল বলে থাকি, কমেন্টে বলতে পারেন।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:০২

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: বেশ ভালোকিছু পয়েন্ট নিয়ে বলেছেন...
চমৎকার লাগলো লেখাটা...

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:২৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:২১

ধুলো মেঘ বলেছেন: মা কেবল সুপার হিরো নয়, আরো বেশি কিছু। মা হল বিশাল একটা জগত। সে জগতের বিশালতা সন্তান ছাড়া আর কেউই টের পায়না।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা ঠিকঠাক ছিলো। কিন্তু ধর্ম/ঈশ্বর এনে লেখাটা লজিকহীণ হয়ে গেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.