নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
গত কয়েকদিন ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হতে দেখেছি ঢাকার এক মাংস বিক্রেতাকে।
যেখানে অন্যান্যরা ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করে, সে ঘোষণা দিয়ে ৫৯৫ টাকায় বিক্রি করেছে।
ফলে মাইল খানেক দীর্ঘ ছিল ক্রেতার লাইন। প্রতিদিন কোটি টাকার মাংস বিক্রি করেছে।
তারপরে দশ দিন পরে সে মাংসের কেজি একশো টাকা বাড়াতে "বাধ্য" হয়েছে।
এদিকে ওর দেখাদেখি আরও কয়েকজন মাংস বিক্রেতা একইভাবে মাংস বিক্রি শুরু করেছে।
রমজান মাসে বাংলাদেশে আমরা এমন ঘটনা দেখে অভ্যস্ত না। এদের দেখাদেখি সব ব্যবসায়ীরা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে দেশটা একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতো।
তা খলিল মিয়ার ঘটনায় দুইরকম মানুষের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম গ্রূপ ওর এই উদ্যোগে মহাখুশি। ওর কারণেই অনেকের বাড়িতে গরুর মাংস গেছে। সাড়ে সাতশো টাকা কেজিতে মাংস কেনা ওদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।
আরেক গ্রূপ পাওয়া গেছে ছিদ্রান্বেষী। একদম প্রথম দিন থেকেই শুরু করেছে বয়ান, "মাংস কম চর্বি বেশি।" "মাংস কই? সবইতো হাড্ডি।" "মাথার মাংস, পাছার মাংস, বগলের মাংস সব মিশায়ে দেয়। 'কোয়ালিটিফুল' না!"
অন্যান্য মাংস ব্যবসায়ীর পাশাপাশি কিছু সাংবাদিক, কিছু ফেসবুকারও ওর পেছনে লেগেছে। ও নাকি বাটপার, ও ঠগ, আধমরা গরু ধরিয়ে দিচ্ছে, মানুষের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই সমস্ত মানুষদের থেকে আমি নিজে দূরে থাকি, আপনারাও দূরত্ব বজায় রাখবেন। সত্য মিথ্যার মিশ্রনে ওরা এমনভাবে খিচুড়ি পাকায় যে, যে কারোর বিরুদ্ধে ওরা আপনার মনকে বিষিয়ে তুলতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ওরা ভয়ংকর।
আপনাদের সবার জ্ঞাতার্থে, আমেরিকাতেও গরুর মাংসের দাম সরকার সেট করে দেয়না। কিছু দোকানে দুই আড়াই ডলার পাউন্ডে যেমন বিক্রি করে, কিছু দোকানে মাংসের দাম পাউন্ডে পঞ্চাশ ডলারেরও বেশি পড়ে। কেউ দশ ডলারের স্টেক কেনে তো কেউ দুইশ-পাঁচশো ডলারের।
কারনটা হচ্ছে মাংসের কোয়ালিটি, টেস্ট, গরুর জাত, লালন পালন পদ্ধতি ইত্যাদি। সাধারণ ফার্মে লালিত বুড়া বাতিল গরুর দাম কম পড়বেই। রান্না করতে গিয়ে দেখবেন দাঁত ভেঙে যাচ্ছে তবু মাংস সিদ্ধ হচ্ছে না। রবারের মতন শক্ত।
ফার্মে লালিত কিন্তু উন্নত জাতের গরুর মাংসের দাম দেখবেন একটু বেশি পড়বে। আবার খোলা ময়দানে ঘাস খেয়ে বেড়ে ওঠা গরুর দাম আরও বেশি পড়ে। জাপান থেকে ইম্পোর্ট করে আনা ওয়েগুর দামতো আকাশচুম্বী।
ইহুদিদের কোশার মাংস একটু দাম বেশি হয়। কারন "ইহুদি তরিকায়" সেটাকে বড় করতে হয়। ইহুদি খামারির ইহুদি রাখাল দ্বারা পোষা গরু ইহুদি নিয়ম মেনে বড় হচ্ছে কিনা, সেটা সার্টিফাই করতে ইহুদি হুজুর গিয়ে পর্যবেক্ষন করেন। আল্লাহর অশেষ রহমত, মুসলিমদের হালাল মাংসের ক্ষেত্রে এত অ্যাকশন নাই, মুসলিম/খ্রিষ্টান/ইহুদি কসাই দ্বারা "বিসমিল্লাহ" বলে জবাই দিলেই "হালাল।" তারপরেও হালাল মাংসের দাম রেগুলার মাংসের চেয়ে একটু বেশি হয়ে থাকে।
এখানে গরুর শরীরের সব মাংসের দামও আলাদা। টি-বোন স্টেক কাট এক দাম, নিউইয়র্ক স্ট্রিপ কাট এক দাম, ব্রিস্কিটের দাম এক, সার্লিওনের দাম আরেক। আর মাথাতো ওরা ফেলেই দেয়। ও আচ্ছা, জিহবা কিনতে পাওয়া যায়।
কাজেই, খলিল যদি মাংস মিক্স করে, বা একটু বুড়া গরুও দেয়, তাহলেও ওকে বাটপার বলার কিছু নেই। এইটাই এক্সপেক্টেড হওয়া উচিত।
ও সবার সামনেই নিজের গরু জবাই দিচ্ছে। যদি আসলেই বুড়া বাতিল গরু হয়ে থাকে, সেটা ক্রেতারা দেখছেই। ফেসবুকে বসে যদি কেউ জ্বিন চালানের মাধ্যমে সব তথ্য পেয়ে থাকেন, তাহলে ভিন্ন কথা।
তাছাড়া খলিল যদি তথাকথিত বুড়া গরুর মাংস না বিক্রি করতো, তাহলে এই একই মাংসই পাবলিক সাড়ে সাতশো টাকা দিয়ে মার্কেট থেকে কিনতো। যদি ধরে নেই খলিল চোর, তাহলে আমরা সবাই জানি অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ডাকাত!
আমার ধারণা, খলিলের নিয়ত ভাল ছিল, কিন্তু ব্যবসার টেকনিক্যাল বিষয় বুঝতে না পারায় ধরা খেয়ে গেছে।
বিদেশেও রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম কমানো হয়, বিক্রেতা লাভ করেন ভলিউমে বিক্রির মাধ্যমে। খলিলেরও ভলিউমেই বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু সে যে হিসাবটা করেনি, তা হচ্ছে, পুরো একটা মাস ওর ভেন্ডররা ওর কাছে এক রেটে গরু সাপ্লাই দিয়ে যাবে কিনা। এইটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ধরা যাক আপনি আমার থেকে ৪ টাকা হালি দরে ডিম কিনে ১২ টাকা ধরে বিক্রি করেন। আপনার লাভ কিন্তু ৮ টাকা না। এই ৮ টাকার মধ্যেই আপনার হিসাব থাকে আপনার দোকান ভাড়া, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি খরচ, কর্মচারীর বেতন, ডিম পরিবহনে যাতায়াত ভাড়া, সংরক্ষণের খরচ, পরবর্তী এক হালি ডিম কেনার জন্য আলাদা করে রাখা ৪ টাকা ইত্যাদি ইত্যাদি সবকিছু।
দেখা গেল সব হিসাব নিকাশ শেষে আপনি বুঝলেন ডিম্ যদি ১০ টাকা হালিতে বিক্রি করা যায়, তাহলে আপনার লাভ মাত্র পঞ্চাশ পয়সা হবে, কিন্তু সেটা ভলিউমে বিক্রি করে পোষাতে পারবেন। মানে আগে যে লোক মাত্র এক হালি ডিম কিনতো, সে এখন সস্তায় পেয়ে চার হালি কিনবে। যে কিনতে পারতো না, সেও এক হালি কিনবে।
কিন্তু মাঝপথে যদি আমি ডিমের দাম চার থেকে ছয় করে ফেলি, তখন আপনার সব হিসাবে গন্ডগোল হয়ে যাবে। তখন আপনি বাধ্য হবেন ১২ টাকায় ফেরত যেতে।
বুঝাতে পেরেছি?
এই কারনে আপনি বুদ্ধিমান হলে আগে হাজার হাজার হালি ডিম কিনে মজুত করবেন, তারপরে দাম কমিয়ে বিক্রি করবেন। এর ফলে মাঝপথে হোলসেল মার্কেটে যদি ডিমের দাম একশো টাকা হালিও হয়ে যায়, তবু আপনার কিচ্ছু যাবে আসবে না।
বিদেশে যারা রমজানের সেল দেন, উনারা আগে থেকেই ভেন্ডরের থেকে মাল কিনে গোডাউন ভরে ফেলেন। তারপরে হিসাব নিকাশ করে দাম কমিয়ে বিক্রি করেন।
খলিল মিয়া এখানেই বড় ভুল করেছেন। ওনার উচিত ছিল আগেই ১০০-২০০ গরু কিনে তারপরে ঘোষণা দেয়া "আগামী রমজান মাস আমি ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রি করবো।"
ধরে নিচ্ছি ওর ১০০ গরু রাখার জায়গা নেই। ৪-৫টা গরু কিনে রাখতে পারে।
তাহলে সেক্ষেত্রে সে একটা প্রতিদিনের জন্য একটা ক্যাপ সেট করে দিতে পারতো।
"কেউই ৩ কেজির বেশি মাংস নিতে পারবে না এবং একশো কাস্টমার পর্যন্ত বিক্রি হবে। বাকিরা পরে আসবেন।" - এমন হতে পারে কেবল একটি স্ট্র্যাটিজি।
এনিওয়েজ। খলিল মিয়া জানে কিভাবে ও ওর ব্যবসা চালাবে। ও প্র্যাক্টিক্যালি সেখানে আছে। বহু বছর ধরে ব্যবসা করছে। আমি দূর দেশে থেকে ফেসবুকে আধাকাছরা বুঝে বেশিরভাগই না জেনে ওকে পরামর্শ দেয়ার অধিকার রাখিনা। সেটা মূর্খামি।
আমার মেজাজ খারাপ হয় ওকে যারা গালাগাল করছে, ওদের উপর। এরা কাউকে একটা ভাল কাজ করতে দেখলেই দুই হাত গুটায়ে পথে নেমে আসে ছিদ্রান্বেষণ করতে। লোকটাকে নিচে না নামানো পর্যন্ত ওরা দম নিতে পারেনা। বুঝে পাই না, এতে কার কি লাভ হয়!
©somewhere in net ltd.