নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ফেসবুকে তামাশা দেখছি।
এর আগে নিজের অভিজ্ঞতা একটু বলি।
আমার স্কুল জীবন কেটেছে প্রাইভেটে পড়াশোনা করা। চিটাগংয়ে লিটল জুয়েলস, সিলেটের আনন্দনিকেতন ও ব্লুবার্ড, বাংলা বা ইংলিশ মিডিয়াম কোনটাতেই কোনরকমের পলিটিক্স ছিল না।
এইচএসসির জন্য ভর্তি হলাম এমসি কলেজে। “প্রাচ্যের কেমব্রিজ" হিসেবে সিলেট অঞ্চলে বেশ নাম ডাক আছে। আমার দাদাও ছিলেন এই কলেজের ছাত্র। তাছাড়া সিলেট বিভাগের ক্রিম ছাত্রদের বাছাই করে এই কলেজে ভর্তি করানো হয়। এছাড়া অন্যান্য অনেক কলেজের শিক্ষকের মোট বয়স হয়তো তত থাকতো না যতটা এমসি কলেজের একেকজন প্রফেসরের শুধু শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাই থাকতো। সিলেটে এমসি কলেজের ব্র্যান্ড ভ্যালুই আলাদা।
কাজেই আব্বু ভর্তি করালেন এমসি কলেজে।
এবং সকাল বিকাল রাত আমার কান ভরা হতো যেন সব ধরনের রাজনৈতিক দলকে এড়িয়ে চলি।
স্টুডেন্ট পলিটিক্স নিয়ে আমাদের পরিবারে অভিজ্ঞতা বেশ খারাপ।
আমার আব্বুর বেস্ট ফ্রেন্ড/রুমমেট বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে স্টুডেন্ট পলিটিক্স করতেন। দেশের জন্য অনেক স্বপ্ন দেখতেন। রক্ষী বাহিনী উনাকে গায়েব করে ফেলে। এখন পর্যন্ত উনার কোন খবর নেই।
এরশাদ আমলে, বিএনপি আমলে, আওয়ামীলীগ আমলে আমাদের আত্মীয়দের মধ্যে, পাড়া মহল্লার মধ্যে বহু পরিচিত ছাত্রকে দেখেছি স্টুডেন্ট পলিটিক্সের বলি হতে। কারোর পায়ের রগ কাটা হতো, কারোর গলা জবাই করা হতো, কাউকে বুলেট দিয়ে ঝাঁজরা করা হতো। কেউ মেধাবী ছিল, কেউ সাধারণ ছিল, কিন্তু সবাই মানুষ ছিল।
তাই স্টুডেন্ট পলিটিক্স আমাদের পরিবারের কাছে বিভীষিকার নাম।
এমসি কলেজে গেলাম। ভর্তি ফর্ম তখনও কেনা হয়নি, এর আগেই বিভিন্ন দল থেকে আমাদের বন্ধুদের কাছে এসে দাওয়াত শুরু হয়ে গেল। কি আল্লাদি সব কথাবার্তা! অমুক দলে যোগ দিলে দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল হবে। তমুক দলে যোগ দিলে দেশের সেবা হবে। কোন দলে যোগ দিলেই পড়াশোনার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না।
আমরা রং তামাশা দেখে বড় হওয়া পাবলিক। সবার সাথেই মিশেছি, কিন্তু কারোর দলেই যোগ দেই নাই। কারন সবারই যে ভিতর ফাঁকা ছিল, সেটা বুঝার মতন বুদ্ধি মাথায় ছিল।
ক্লাস চলতো, দেখি বাইরে মিছিল বেরিয়েছে। মিছিল থেকে এক বড় ভাই ক্লাসে এলেন, অতি আদবের সাথে স্যারকে সালাম দিলেন। তারপর নাম ধরে আমার ক্লাসের কয়েকটা ছেলেকে ডেকে নিয়ে গেলেন। ছাগলগুলি এখন ক্লাস বাদ দিয়ে “আমার ভাই তোমার ভাই" করবে। স্যার একটা টু শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করলেন না।
অথচ এই ভাইয়েরাই বলেছিলেন “পড়াশোনার কোন সমস্যা হবে না।”
কয়েক মাস আগেই যখন স্কুলে পড়তাম, সেখানে কোন স্টুডেন্ট আমার কোন টিচারের ক্লাসে ঢুকে এমন গুন্ডামি করলে থাবড়ায়ে হারামজাদার ৩২টা দাঁত খুলে বাপকে ডেকে টিসি ধরিয়ে দিত নিশ্চিত।
প্রাইভেট ও পাবলিকের এই পার্থক্য তখন চোখে পড়ে।
আমার বহু ক্লাসমেট জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ে তখন। ওদের কলেজও পলিটিক্সমুক্ত। স্যাররা মিলিটারি কায়দায় পেটায়। মার খেয়ে অতি গর্ধব ছাত্রও দেখি দুর্দান্ত ভাল ছাত্র হয়ে গেছে। আর আমরা “ক্রিমরা” তখন গায়ে ফু দিয়ে বেড়াই।
অবশ্য পার্টির পোলাপানদের সুবিধা ছিল অনেক। পার্টির কাজে ব্যস্ত থাকায় এসাইনমেন্ট করা হয়নি। কোন সমস্যা নাই। হলের কোন “ভালমানুষ” খুঁজে বের করো, ওকে একটু রিকোয়েস্ট করলেই সে নিজের এসাইনমেন্ট করুক আর না করুক, আপনারটা করে দিবে। ও যে আপনার কোমরে গোজা চাকু দেখে ফেলেছে। ক্যান্টিনে সিঙ্গারা খেয়ে দাম দিলে দেন না দিলে নাই, কুচ পরোয়া নেহি। বেয়াদব ম্যানেজার বিল ধরিয়ে দিলে পার্টির পোলাপান নিয়ে ভাংচুর করলেই আক্কেল ঠিকানায় চলে আসে।
কোন সুন্দরীকে পছন্দ হয়েছে। ঐ মেয়ে কোন সাধারণ ছেলের দিকে তাকিয়ে হেসেছে, পার্টির পোলাপান নিয়ে সেই ছেলেকে আচ্ছামতন পেটানো হতো, মার খেয়ে সে বেচারা নিজের আপন বউকেও এখনও বোনের দৃষ্টিতে দেখে।
তা ৱ্যাগিং খুবই সাধারণ ঘটনা। সাধারণ ছাত্রদের মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত করে দিতে ৱ্যাগিং করা হতো। মারধর খাওয়া দুর্বল মানসিকতার ছাত্ররা কাউকে বলতেও পারতো না। জলে থাকতে হবে, কুমিরের নামে কার কাছে বিচার দিবে?
দুইদিন পরপর অমুক তমুক ছাত্র খুন হতো, কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যেত। খুনগুলো এমসি কলেজেই যে হতো, তাও না। মদনমোহনের ছাত্র খুন হলেও সিলেটের সব কলেজ বন্ধ। প্রতিবেশী সরকারি কলেজের ছাত্র মরলেও একই অবস্থা। অনেক সময়ে সিলেটের বাইরের ঘটনাতেও কলেজ বন্ধ হয়ে যেত।
আচ্ছা, ইউনিভার্সিটিগুলোয় যে নিয়মিতই ধর্ষণের খবর আসে, কয়টায় কোন ছাত্রনেতা জড়িত থাকে আর কয়টায় সাধারণ ছাত্র? খোঁজ নেন। সাধারণ ছাত্র একটাও পাবেন না। ওরা পড়াশোনা করতে যায়, বন্ধু বানাতে যায়, প্রেম ভালবাসা করতে যায়। ওদের দ্বারা ধর্ষণ হওয়া পসিবল না।
বুয়েটে স্টুডেন্ট পলিটিক্স বন্ধ হয়েছিল আবরারের হত্যার পরপর। আবরারকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। এমন না যে ওর আগে কোন ছাত্রকে কখনই পেটানো হয়নি। বুয়েটে ট্র্যাডিশনালি এই ঘটনা ঘটে এসেছে। সেই সময়েই বহু ছাত্র নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে পোস্ট করেছিল। স্টুডেন্টদের উপর নৃশংসতা চালানো বহু জানোয়ার দুনিয়ার বহু প্রান্তে বহাল তবিয়তে আছে। ওদের কোন বিচার হয়নি।
এদিকে সেসব অত্যাচারিত ছেলেগুলো আজও মানসিক ট্রমা থেকে বেরুতে পারেনি। সম্ভব হয়না।
পার্থক্য হচ্ছে ওরা বেঁচে গিয়েছিল আর আবরার মরেছে।
আবরারের ভাইও ভর্তি হয়েছে বুয়েটে। ওকেও কি মারা হবে? পলিটিক্সতো ফিরছে। কি মনে হয়?
স্টুডেন্ট পলিটিক্স নিয়ে যখন আলাপ হচ্ছে, তখন দেখলাম ফেসবুকে যতজন বুয়েট এলামনাই বন্ধুবান্ধব আছেন, এরা মোটামুটি সবাই স্টুডেন্ট পলিটিক্সের বিরুদ্ধে মত দিচ্ছেন।
আত্মীয়, কাজিনদের মধ্যে যারা আছেন, তাঁরাও ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে। এমনকি স্টুডেন্ট পলিটিক্স করা এমনও কয়েকজন আছেন যারা বলেছেন স্টুডেন্ট পলিটিক্স বন্ধ হওয়া উচিত। তাঁরা জানেন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ে অন্যের খেলার পুতুল হয়ে তাঁরা কি ভুলটা করেছেন।
কিন্তু যারা বুয়েটে পড়ে নাই, ধরেন হাজি মইনু মিয়া মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ বা জরিনা বিবি মহাবিদ্যালয়ের কোন পোলা, ওর আগ্রহের শেষ নাই। বুয়েটে কেন ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন, এ নিয়ে আস্ত কিতাব রচনা করে ফেলেছে।
আরও হাস্যকর কথাবার্তাও ইথারজগতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেমন “বুয়েটে কোন সাধারন ছাত্র নাই। সবাই জামাতে ইসলামী, হিজবুল তাহরির, জেএমবি, তালেবান, লষ্করে তৈয়েবা (নামও জানিনা, তবে যা যা জঙ্গি সংগঠন আছে বাংলাদেশে, সব)” লেখক আবার চ্যালেঞ্জও দিয়েছেন - যেন সরেজমিন গিয়ে দেখে আসা হয়।
প্রথমে ভেবেছি কোন সিরিয়াস পোস্ট। পরে দেখি তারিখটা এপ্রিলের ১, লেখকের সেন্স অফ হিউমার আছে বলতেই হয়। নাহলে এমন মূর্খের মতন কথা কেউ বলে? লেখকের জ্ঞাতি গুষ্ঠিতে কেউ বুয়েট মাড়ালেওতো এই আজগুবি কেচ্ছা শুনাতে আসতো না।
সবচেয়ে হাস্যকর যুক্তি হচ্ছে, “ছাত্র রাজনীতি না করলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে!”
আমাদের দেশতো নেতা পয়দা করার কারখানা। প্রতিবছর আমাদের ইউনিভার্সিটি-কলেজ থেকে ব্যাচে ব্যাচে মেন্ডেলা, রুজভেল্ট, কেনেডি, লিংকন, ফ্র্যাঙ্কলিন, ওয়াশিংটন এক্সপোর্ট হচ্ছে! স্টুডেন্ট পলিটিক্স বন্ধ হয়ে গেলে এই সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাবে, গোটা বিশ্ব নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে, মানবজাতি দিকভ্রান্ত নৌকার মতন ভেসে যাবে।
গোটা বিশ্বের সব ইউনিভার্সিটির মূল লক্ষ্য থাকে পড়াশোনা ও গবেষণা। এই নিয়েই একটা আরেকটার সাথে কম্পিট করে শেষ হয়ে যায়। “ওরা এই বছর নোবেল পেয়ে গেছে, আমাদের আগামী বছর পেতেই হবে!”
আর আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিরোনাম হয় কিসে? শিক্ষক অমুকের থিসিস মেরে দিয়েছে, যৌন হয়রানি করেছে, ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছে, ছাত্রী ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছে, ভিসিকে বরণ করতে কিছু কর্মচারী হেরোইঞ্চি মার্কা নৃত্য পরিবেশন করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
খুবই লজ্জা লাগে দেখতে যে এত এত মেধাবী মাথাওয়ালা স্টুডেন্ট, গুণী শিক্ষক থাকার পরেও বিশ্বের সেরা সেরা ৫০০ ইউনিভার্সিটির তালিকায় আমাদের ইউনিভার্সিটিগুলিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ এই ছাত্র ও শিক্ষকরাই বিদেশে গিয়ে ফাটিয়ে ফেলছেন।
কবি কি বলতে চায়, ছাত্র রাজনীতি চালু হলে এই গন্ডগোলটা কেটে যাবে?
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:২৬
কামাল১৮ বলেছেন: রাজনীতি করার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: মৌলিক অধিকারতো বটেই, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে চর্চা করুক, ক্যাম্পাসে গুন্ডামিকে মৌলিক অধিকার বলেনা।
৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৩৬
অধীতি বলেছেন: ছাত্ররাজনীতি এখন একটা ক্ষমতা স্থায়ী করণের হাতিয়ার।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: এটাই মূল সমস্যা। সবকিছুর মূল হচ্ছে এই ক্ষমতা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৯
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লেজুড় ভিত্তিক দলীয় সংকীর্ণ রাজনীতি চিরতরে উচ্ছেদ করা হোক ।
নিষিদ্ধ করা হোক ।
এখানে কেবলই জ্ঞান চর্চা হবে ।
রাজনীতি চর্চা করার জন্য অন্য জায়গায় আছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিধিবদ্ধভাবে কেবলমাত্র ছাত্র কাউন্সিল থাকতে পারে ।
বাকিগুলো সবই অসভ্যতা।