![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
১. সেদিন শুনি এক বাংলাদেশী ছেলের সুডেন্ট ভিসা বাতিল হয়েছে কারন সে স্টুডেন্ট ভিসা পেয়েই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানতে চেয়েছিল আমেরিকায় গিয়ে ওকে যেহেতু রেস্টুরেন্টে বা গ্যাস স্টেশনে কাজ করতে হবে, তাই কোন বড় ভাই আছেন কিনা যে ওকে এইসব চাকরি পেতে সাহায্য করবেন।
বেচারার মাথাতেই ছিল না যে আমেরিকায় স্টুডেন্ট হিসেবে আসলে লিগ্যালি ওর ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করার কথা না। এইসব কাজ গোপনে করতে হয়। কর্তৃপক্ষ ভাল করেই জানে, ওরা শুধু না দেখার ভান করে। কিন্তু এমন বলদামি করলেতো ওদেরও বাধ্য হয়ে অ্যাকশন নিতেই হবে। সেটাই করেছে।
২. সেদিন আমার এক আপু জানালো, ওদের স্টেটে একটা বাংলাদেশী স্টুডেন্টের ভিসা বাতিল করে ঘাড় ধরে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, কারন ও নাকি গ্যাস স্টেশনে (যেখানে ও চাকরি করে) randomly এক অচেনা ব্লন্ড সুন্দরীকে জোর করে চুমু খাবার চেষ্টা করছিল। আসলে সে পর্ন দেখে এতদিন শিখেছে আমেরিকা ফ্রি সেক্সের দেশ। কাজেই ও একটু ফ্রি সার্ভিস নিতে গিয়েছিল।
মাঝে দিয়ে ওর পরিবার পথে বসে গেছে। জায়গা জমি বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিল লেখাপড়া করে শিক্ষিত হতে। পোলা লেখাপড়া না করে ইমরান হাশমি বা উদিত নারায়নের মতন "চুম্বন দেব" হতে চেয়েছিল। কি আর করার।
৩. ইদানিং দেখছি "গেরামের কাজিন হঠাৎ বিদেশে আইসা পড়ছে" টাইপ লোকজন ধুমায়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, মানে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হবার ধান্দা করছেন। যা তা ভিডিও পোস্ট করে।
"গাইজ! এইটা আমার বাড়ি। এখানেই আমি থাকি। এ বাড়ির ভাড়া বাংলাদেশী টাকায় মাসে এক লাখ টাকা। বেশি বেশি করে লাইক আর শেয়ার করে ছড়িয়ে দিবেন।"
"গাইজ! এইটা আমাদের রাস্তা আর আমরা এইভাবে রাস্তা "করস" করি। লাইক দিয়ে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।"
আচ্ছা, এরা "গাইজ" "গাইজ" করে কেন? "এস্মার্ট" হতে হলে কি সারাক্ষন গাইজ গাইজ বলতে হয়?
সমস্যা এটাতেও ছিল না। ভুলভাল কথাবার্তা বলে অন্যকে বিপদে ফেলে এরা। যেমন সেদিন একটা ভিডিও এলো আমার ফিডে, যার শিরোনাম "আমেরিকার হাসপাতাল এত খারাপ জানলে কখনই আসতাম না।"
আমি ভাবলাম আহারে, বেচারার সাথে নিশ্চই কোন অন্যায় হয়েছে। দেখি সাহায্য করতে পারি কিনা।
ভিডিও খুলে দেখি ঘটনা পুরাই উল্টা। ওর সদ্যজাত বাচ্চাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনদিন আলাদা করে রেখেছে, এই সময়ে কাউকে বাচ্চা কোলে নিতে দেয়নাই। তাই "আমেরিকান হাসপাতাল খারাপ হয়ে গেছে।"
এই ফ্যাক্ট জেনে নিন, আমেরিকায় কোন হসপিটাল আপনাকে বিনা কারনে একটা ঘন্টাও বেশি রাখবে না। কারন ওদেরকে বিল নিয়ে ইন্সুরেন্স কোম্পানির সাথে দেনদরবার করতে হয়, শুধু শুধু এডমিট করলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি ওদেরকে টাকা দেয়না। হসপিটালের বিল কি পরিমান আসে সে সম্পর্কে হালকা ধারণা দেই। আমার বাচ্চাদের জন্ম হয়েছে সি সেকশনে। প্রতিবার হসপিটালে গিয়েছি, যেদিন বাচ্চা হবে সেদিন, এবং পরের দিনই বাচ্চা সহ মাকে রিলিজ করে দিয়েছে। বিল এসেছে পঞ্চাশ হাজার ডলারের বেশি। পঞ্চাশ হাজার ডলার অনেক পরিবারের বার্ষিক ইনকামও না। মাত্র দুইদিনের বিল। আমাকে ইন্সুরেন্স ডিডাকটিবল হিসেবে ছয় হাজার দিতে হয়েছে, আর বাকিটা ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে আদায় করতে হয়েছে। ইন্সুরেন্স কোম্পানি নানান প্যাঁচ খুঁজে। কেন এত বিল এলো। কি করেছে যে এত বিল এলো। এইটা না করলে কি হতো না? ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাহলে বুঝে নিন, কেন হসপিটাল আপনাকে শুধু শুধু তিনদিন হসপিটালে বসে বসে খাওয়াবে? যে ভ্লগার সে নিউইয়র্কে "গরিব" হিসেবে সিটির ইন্সুরেন্স পায়, মানে ওর পকেট থেকে একটা পয়সাও দিতে হয়না। পুরোটাই ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে আদায় করা হয়। তাই শুধু শুধু এতদিন হসপিটালে কাউকে রাখার প্রশ্নই উঠে না।
তিনদিন রাখার মূল কারন ছিল নিশ্চিত থাকুন, বাচ্চাটার জটিল কোন রোগ ছিল, যে কারনে ওকে ওভাবে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করতে হয়েছে। এই মূর্খ উল্টা ওদেরই বিরুদ্ধে একটা ভিডিও পোস্ট করে ফেলল। এবং তারচেয়েও বড় সমস্যা, এই মূর্খের ভিডিও দেখে আরও কিছু মূর্খ নিজের বৌকে হসপিটালে নিতে টালবাহানা করবে, এবং এর ফলে হয়তো দুয়েকটা মা বা শিশুর মৃত্যু ঘটবে।
এরাই দেশে ডাক্তার ভুল চিকিৎসা করেছে, কসাই ডাক্তার ইত্যাদি হট্টগোল করে ডাক্তারকে মারধর করে, হসপিটাল ভাংচুর করে।
৪. এমনই আরও কিছু বাংলাদেশী পোস্ট করে বেড়াচ্ছে আমেরিকায় এসে কিভাবে ভিজিটর ভিসা পাল্টে এসাইলাম নিতে হয়। মানে সাধারণ মানুষের গাধামীর সীমা যেখানে গিয়ে শেষ হয়, এদের শুরুটা তারও বহু সামনে থেকে। ইদানিং দামি ব্র্যান্ডের দুই নম্বরি চাইনিজ মাল যেভাবে ফলাও করে বিক্রি করছে, তেমনিভাবে ফলাও করে এসাইলাম ভিসা বা দুইনম্বরি পথগুলি খুললাম খুল্লা ফেসবুকে শেয়ার করছে এরা। এদের কি মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি নেই? মাথায় কি ভরা থাকে? এরা কি মনে করে আমেরিকান ইমিগ্রেশনের লোকজন কলা খেয়ে গাছে ঝুলে বেড়ানো পাবলিক? এইসব ওদের নজরে আসলে সাধারণ বাংলাদেশিদেরও ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
৫. শেষটা করি হাস্যকর ঘটনার মাধ্যমে।
তবে তার আগে আরেকটি ঘটনা বলি।
প্লেনে বা বাংলাদেশ এম্বেসিতে, ঠিক মনে নাই কোথায়, আমি একটা ফরম ফিলাপ করছিলাম। আমার পাশে একজন বাংলাদেশী যুবক, যাকে দেখেই বুঝতে পারছিলাম যে সে জানেই না কিভাবে কোন ফরম পূরণ করতে হয়। আমাকে বলে দিতে হচ্ছিল এখানে আপনার নামের প্রথমাংশ লিখুন, এখানে মধ্যমাংশ, এখানে বংশ।
লোকটা জিজ্ঞেস করলো "আমার নামের প্রথমাংশ কি?"
"আমি কিভাবে বলবো? আপনি আপনার নিজের নাম জানেন না?"
"জ্বি, আমার নাম রকিব। রকিব লিখি?"
"রকিব কি?"
"শুধু রকিব।"
"রকিব উদ্দিন, আহমদ, মোহাম্মদ, খান কিছু নাই?"
"না, এটা আমার ডাক নাম। পুরা নাম মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান।"
"ভাল, তাহলে মোহাম্মদ হবে আপনার প্রথমাংশ।"
"কিন্তু ভাই নামের শুরুতে এ.কে.এ আছে।"
"সেটা কি?"
"আবুল কালাম আজাদ।"
"তাহলে AKA মোহাম্মদ লিখেন।"
"কিন্তু ভাই, নামটা "আকামোহাম্মদ" হয়ে যাবেতো।"
"মাঝে ডট দিবেন, হবে না।"
"বংশের ওখানে কি লিখবো, "চৌধুরী" লিখি?"
"আপনি কি চৌধুরী?"
"না।"
"তাহলে চৌধুরী লিখবেন কেন?"
"আপনি যে লিখেছেন?"
"আমি চৌধুরী তাই লিখেছি। আপনি "রহমান" লিখেন।"
মনে হলো কথাটা উনি বিশ্বাস করেন নাই। স্কুলে পরীক্ষায় কোন হারামজাদা টাইপ বন্ধু যেমন ইচ্ছা করেই অন্য বন্ধুকে ভুল উত্তর লিখতে বলে মার্ক্স্ কমিয়ে দিত, ও আমাকে সেইরকম কোন "বন্ধু" মনে করছে।
মনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ফরম পূরণ করতে লাগলেন। তারপরে একটা জায়গায় এসে জানতে চাইলেন "এখানে কি লিখবো?"
মনে নেই ঠিক কি ছিল, কিন্তু ওটা ওনার জন্য এপ্লিকেবল ছিল না। তাই বললাম, "NA লিখুন।"
দেখি উনি বাংলায় ন আকার না লিখলেন। আমি বললাম, "NA লিখতে বলেছি, না লিখলেন কেন?"
"বাংলায় লিখলে দোষ কোথায়?"
এই হঠাৎ জন্ম নেয়া ভাষা সৈনিককে কিভাবে বুঝাই NA আর না এক না? বললাম "কিছুই লেখার দরকার নেই। ব্ল্যাংক রেখে দিন।"
তিনি প্রশ্ন করলেন, "শুধু শুধু খালি রাখবো কেন? কিছু একটা লিখে দেই।"
"কিছুই যদি লেখার না থাকে, তাহলে কেন শুধু শুধু লিখবেন?"
"কিছুই যদি না লিখি, তাহলে কেমন কেমন লাগে! যে ফরম দেখবে, সে কি মনে করবে?"
এই ছিল ঘটনা। এখন আরেক ঘটনার সাথে কিভাবে মিলে সেটাই বলি।
সেদিন জানলাম, এক মহিলা তাঁর বাবা মায়ের ইমিগ্রেশনের জন্য এপ্লাই করেছিলেন। এম্বেসী তাঁদের ডেকেছে এবং বলেছে "আপনারাতো ২০০২ সালেই মারা গেছেন।"
বাপ মা তো আঁতকে উঠলেন। ঘটনা কি? আমরা মারা গেছি, অথচ আমরাই খবর পেলাম না? মরে গেলে এখানে আসলাম কিভাবে?
ভিসা অফিসার তখন তাঁদের এপ্লিকেশন কাগজ দেখিয়ে বললেন "এই যে দেখেন, ফর্মের Date of death এ তারিখ বসানো আছে।"
এখন সেই বাবা মা কে প্রমান করতে হবে যে তাঁরা জীবিত।
আমাদের দেশের কিছু মানুষ form fill up এর সময়ে এই বোকামিটা করে। যেহেতু শূন্যস্থান আছে, তাই কিছু একটা লিখে একে পূরণ করতেই হবে। নাহলে যদি পরীক্ষায় মার্ক্স্ কাটে? তাই যা মনে আসে তাই লিখে দেয়। লাগলে লাগলো, না লাগলে নাই!
এখানেও নিশ্চই ঘটনা একই ঘটেছে। ফর্ম পূরণের সময়ে মৃত্যু তারিখের শূন্যস্থান ছাড়তে ইচ্ছা করেনাই।
মাঝে দিয়ে বাবা মা আপসেট! আমেরিকান এম্বেসির সাদা চামড়ার মহিলা যেহেতু বলছেন তাঁরা মৃত, তাই নিশ্চই তাঁরা মৃত। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু মৃত্যু হলে তাঁদের নিশ্চই কুলখানি হয়েছে। তাঁদের নিজেদের কুলখানি! অথচ তাঁদেরকেই কেউ দাওয়াত দিল না!
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১:০৬
কামাল১৮ বলেছেন: অনেকের জন্য দরকারী পোষ্ট।