![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ভাইরাল হুজুরের একটা ভিডিও ক্লিপ একজন ইনবক্সে পাঠালেন, যেখানে হুজুর জ্বালাময়ী কণ্ঠে বলছেন "আমার বৌ এমন করলে আমি সাথে সাথে তালাক দিয়ে দিতাম।"
জানিনা কন্টেক্স্ট কি। কিন্তু বিষয়টা বিরক্তিকর।
আপনি যদি সাধারণ মুসলিম হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জানা উচিত, আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম হালাল কাজ হচ্ছে "তালাক।"
সংসার ভাঙ্গা আল্লাহর খুবই অপছন্দ।
এদিকে আমরা জানি মিথ্যা বলা মহাপাপ। ইসলামে মিথ্যাবাদীকে তীব্রভাবে তিরস্কার করা হয়েছে। মিথ্যা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দানকারী জাহান্নামী। কিন্তু কেবল একটি ক্ষেত্রে আল্লাহ কারোর মিথ্যা বলাটাও পছন্দ করেন, এবং সেটি হচ্ছে যখন কেউ কারোর সম্পর্ক ঠিক করতে সেটা বলে থাকে।
যেমন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতেও ইচ্ছুক না। আপনি করলেন কি স্বামীর কাছে গিয়ে এমন কিছু বললেন, যাতে স্ত্রীর প্রতি ওর রাগটা হালকা হয়ে গেল, এবং স্ত্রীর কাছে গিয়ে এমন কিছু বললেন যাতে স্বামীর প্রতি ওর রাগটাও পড়ে গেল। তারপরে দুইজনের দেখা করিয়ে দিলেন। বাকিটা ওদেরকে করতে দেন, পুরা সিনেমা আপনার না দেখলেও চলবে। আপনি শুধু জেনে রাখুন, আপনার মালিক আপনার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন ইন শা আল্লাহ।
কিন্তু আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা করে ব্যাটাগুলি। এদের ভিতরে বেসিক ইসলামী জ্ঞান থাকেনা, যা শিখে সবই ওয়াজ শুনে শিখে। সমস্ত জীবন বেলেল্লাপনা করে বেড়াবে, এখানে ওখানে মুখ মারবে। তারপরে হঠাৎ করেই একদিন ওদের ভিতরে ইসলামী চেতনা জেগে উঠে। কথায় আছে না, "নয়া মোল্লা আল্লাহ আল্লাহ বেশি করে?" ঘটনা এখানেও তাই। পান থেকে চুন খসলেই বৌকে তালাক দিয়ে বসে। এগুলির মাথায় থাকে বৌ গেলে নতুন বিয়ে করা যাবে। এ আর এমন কি।
তবে বিদেশে একটা প্রবাদ আছে, "জুতা এবং বৌ, যত পুরানো হবে ততই কম্ফোর্টেবল হবে।"
এখানে কেউ কেউ বলে বসতে পারে, "নারী জাতিকে জুতার সাথে তুলনা করা হয়েছে! লেখক নারী বিদ্বেষী! লেখকের 'পাশি' চাই!"
এদের ধারণাই নাই দুনিয়া অনেক বিশাল এবং এক দেশের গালি অন্য দেশের বুলি। আমাদের দেশে জুতা ছুঁড়ে মারাকে অপমানজনক বিবেচনা করা হলেও বহু দেশে লোকে খুশি হলে জুতা ছুঁড়ে মারে। জুতা আমাদের পোশাকেরই একটি অংশ।
যাই হোক, বৌ তালাক দেয়া শেষে রিয়েলিটি টের পাওয়ার পরে শুরু হয় কান্নাকাটি।
আমরা যখন একসাথে দীর্ঘদিন একে অন্যের সাথে সংসার করি, তখন আমরা একে অন্যের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে যাই। হুট করে নতুন কারোর সাথে সংসার শুরু করলেই এই নির্ভরশীলতা আসে না। ব্যাপারটা কেবলই শারীরিক নির্ভরতা নয়, মানসিক নির্ভরতাও।
"হুজুর, রাগের মাথায় তালাক দিয়ে দিয়েছি! এখন ফিরায়ে নিব কিভাবে?"
যে হুজুরের কথায় আপনি বৌ তালাক দিলেন, তিনি কিন্তু নিজের লাইফ ঠিকই এঞ্জয় করছেন।
এই ভাইরাল হুজুরের কথাই ধরেন।
উনারই আদরের ছোটবিবি উনাকে পাব্লিক্লি বেইজ্জত করে ছেড়েছেন। তারপরেও এই হুজুরই অনলাইনে আহ্লাদিত হয়ে নিজের বৌকে নিয়ে পোস্ট করেছেন "ওয়াল্লাহি ("আল্লাহর কসমকে" আজকাল "ওয়াল্লাহি" বলে) আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।"
প্রেম এতটাই সুগভীর যে এই মহিলা যদি হজরত হোসেনকেও হত্যা করতেন, তাহলেও নাকি সোয়ামি হিসেবে তিনি উনাকে মাফ করে দিতেন!
দোষের কিছু না। স্বামী স্ত্রীতে ঝগড়া হবে, মনোমালিন্য হবে - হতেই হবে। আমাদের নবীজিরই (সঃ) স্ত্রীদের সাথে মনোমালিন্যের ঘটনা আমরা পাই। কিন্তু এর অর্থ এই না যে আপনি হুট করে তালাক দিয়ে দিবেন।
এই লোকটা কিন্তু ওয়াজে ঠিক উল্টোটাই করেছে। এবং ওর কথাটাই উদ্বুদ্ধ হয়ে কয়জন পুরুষের মাথায় নিজের বৌকে তালাক দেয়ার চিন্তা ঘুরছে কে হিসাব করবে?
বহু আগে একবার একজন বাংলাদেশী ভাই আমাকে ইনবক্সে প্রশ্ন করেছিলেন। উনার ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে উনি আজীবন মডার্ন ছিলেন। হঠাৎ করেই উনার ভিতরে ইসলামী চেতনা জেগে উঠেছে। উনি দাড়ি টুপি বেশ ধারণ করে পুরাই সুন্নতি হয়ে গেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। কুরআন পড়েন। নবীজির (সঃ) জীবনী পড়েন। মুগ্ধ হন।
সমস্যা হচ্ছে, উনার বৌয়ের উনার লেভেলে ঈমান আসেনি। তিনি আমাদের দেশের আর সব সাধারণ মহিলার মতোই সাধারণ শালীন পোশাক পরেন (উগ্র, শরীর দেখানো বা অতি টাইট ড্রেস না)।
আমি মহিলাকে চিনি, স্বভাব চরিত্রের দিক দিয়ে মহিলা খুবই ভাল একজন নারী। বড় কোন পাপে (জেনাহ, নেশা, গীবত, মিথ্যাচার ইত্যাদি) আমি উনাকে কখনও পাইনি। প্র্যাকটিসিং মুসলিম, আর মানুষের উপকারের বেলায় নিজের ১৫০% দিয়ে দেন।
এই এক মহিলার হাত ধরেই কতজনের জীবন পাল্টেছে তার হিসাব নেই।
সুখী পরিবার। স্বামীর একটাই কমপ্লেন, বৌ বোরখা/হিজাব পরে না।
এখন উনাকে লোকজন বুঝাচ্ছে উনি নাকি জাহান্নামে যাচ্ছেন, কারন উনি "দাইয়ুস" হয়ে গেছেন। রসুলাল্লাহর (সঃ) সুস্পষ্ট হাদিস আছে।
প্রথম কথা, "দাইয়ুস" শব্দের মানেই গাধাগর্ধবগুলি জানেনা। দাইয়ুস মানে হচ্ছে যে লোক নিজের স্ত্রী, বোন ও কন্যা সহ পরিবারের অন্যান্য নারীদের জেনাহ ব্যাভিচার ইত্যাদি জাতীয় অশ্লীল কাজ করতে দেখেও চুপ থাকে বা বাধা দেয়না সে। সমাজে কি দাইয়ুস নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু ঢালাওভাবে সবাই দাইয়ুস? প্রশ্নই উঠে না। যেকোন বিজ্ঞ আলেমের সাথে কথা বলে দেখেন, জানবেন এটি অতি উচ্চপর্যায়ের একটি গালি। আর এই গোবর মস্তিষ্কের জিনিয়াসগুলি সাধারণ পোশাকের নারীদের স্বামীদেরও দাইয়ুস বলে গালাগালি করে নিজের "নেকীর পাল্লা" ভারী করছে।
এদিকে উনার বৌকে এই বিষয়ে কিছু বললে বৌ বলেন উনার যদি মন চায়, উনি পর্দা করবেন। জোর করলে উল্টো ক্ষতি হবে।
ওনার "কাছের লোকেরা" এই ভাইকে বেহেস্তে নেয়ার জন্য কানের পাশে অনবরত বলে যাচ্ছে "দাইয়ুস ব্যক্তি জাহান্নামী! বেহেস্তে যেতে চাইলে এই বৌকে ত্যাগ করো!"
এ নিয়ে উনাদের সংসারে ভীষণ টানা পোড়েন চলছে।
ভাই পড়েছেন তীব্র মানসিক যন্ত্রনায়!
উনি আমার পয়েন্ট অফ ভিউ জানতে চান।
প্রথমত, বৌ জাহান্নামী হলে আপনিও জাহান্নামী, এমন অদ্ভুত দাবি কোত্থেকে আসছে? হযরত লুতের (আঃ) বৌ জাহান্নামী ছিলেন, আর হজরত লুত (আঃ) একজন নবী। বা মহিয়সী রমণী হজরত আসিয়ার স্বামী ছিল ফেরাউন, কুরআন শরীফ অনুযায়ী মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভিলেন। এই ব্যাপারে ঐ জ্ঞানীদের বিজ্ঞ মতামত কি?
আর সবচেয়ে বড় কথাতো এইটাই যে কুরআনে আল্লাহ বলে দিয়েছেন রোজ হাশরে কেউ কারোর পাপের বোঝা বহন করবে না।
আমার একটাই পরামর্শ, সংসার ভাঙবেন না।
পার্টনার যদি মারধর করে বা এমন কিছু করে যেটা ক্ষমার অযোগ্য, তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু অন্যের কথায় ইনফ্লুয়েন্সড হয়ে ঘরে অশান্তি টেনে আনবেন না।
আপনার পার্টনার নিকাবী না? হিজাবি না? এক হাত লম্বা দাড়ি রাখে নাই? হয়তো ওর এমন অনেক বহু গুন আছে যেটা হিজাব নিকাবের চেয়েও বেশি। এই যে ভাইরাল হুজুর এত সুন্নতি পোশাক পরে, এত ঈমান আমলের কথা বলে। উনার বৌয়ের দেয়া তথ্য মতেই উনি অন্যান্য মহিলার সাথে প্রেম করেন। এদিকে আপনার ভোলাভালা স্বামী হয়তো সাধারণ ঈমানদার, কিন্তু আপনার প্রতিই লয়াল। কোনটা ভাল?
আল্লাহর হিসাব আল্লাহ রাখবেন, আপনি দেখবেন আপনার প্রতি, আপনার বাচ্চাকাচ্চার প্রতি সে কেমন। আপনি দোয়া করবেন যেন ওর ঈমান তাজা হয়। আপনি আপনার দিক থেকে চেষ্টা করে যাবেন। "ঈমান"তো জোর জবরদস্তির কিছু না।
আপনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটা দেই, বাকিটা নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে বের করুন। ইসলামী শরীয়ায় মুসলিম পুরুষ আহলে কিতাব বা ইহুদি/খ্রিষ্টান বিয়ে করতে পারবে। ওদের মুসলিম হওয়া জরুরি না। আমাদের নবীজি (সঃ) জীবিতাবস্থায় হজরত মারিয়া কিবতিয়া মুসলিম হননি, তিনি কপ্টিক (কিবতিয়া মানেই কপ্টিক) খ্রিষ্টান ছিলেন। আমাদের নবীজির (সঃ) ঔরসে তাঁর একটি সন্তানও হয়েছিল যে জন্মের পরে বাঁচেনি।
যদিও হজরত উমর (রাঃ) উৎসাহ দিতেন মুসলিম নারীদের বিয়ে করতে কারন আমাদের মুসলিম নারীরা তাহলে অবিবাহিতা থেকে যাবেন।
সেদিক বিবেচনায়, আপনার বৌতো মুসলমান, নাকি? বলেন "আলহামদুলিল্লাহ!"
হুজুরের কথায় বৌকে তালাক দিয়ে নেকাবি কাউকে ঘরে নিয়ে আসতেই পারেন। তারপরে দেখবেন "আগেই ভাল ছিলেন।"
তখন?
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:৫০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি তোয়াহা হুজুরের কথা বলেছেন যার বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই । তবে দাইয়ুস নিয়ে যেভাবে সরলভাবে লিখলেন বিষয়টা এত সরল বলে মনে হয় না ।