নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাউল এবং ফাউল

২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৭

৭৫ এর অগাস্টে শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার সহ হত্যা করা হয়।
এখন ঘটনাটাকে আপনি দুইভাবে বর্ণনা করতে পারেন। আপনি বলতে পারেন খুনিরা উনার বুকে গুলি করে উনার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।
কিংবা বলবেন, "বাংলার সূর্য সন্তানেরা বঙ্গবল্টুর গোয়ায় বাঁশ হান্দাইয়া বুকে গুলি ভইরা মাইরালছে। হেহেহে।"

দুই বর্ণনাতেই একই ঘটনাই বলা হয়েছে। কিন্তু প্রথম বর্ণনায় আপনি যদি আওয়ামীবিদ্বেষীও হন, তারপরেও আপনি এর বিরোধিতা করতে পারবেন না।
আর দ্বিতীয় বর্ণনায়, আপনি আওয়ামীবিদ্বেষী হলে মজা পাবেন, কারন ঘটনাটা হয়তো আপনি এইভাবেই বলতে চাইছিলেন, কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে বলতে পারেননি। এদিকে আওয়ামলীগের সমর্থকেরা ভীষণ মর্মাহত হবে।
যদি ওরা ক্ষমতায় থাকে, যেমনটা গত ষোল বছর ছিল, তাহলে ওরা নিশ্চিত করবে আপনি আপনার "অপকর্মের" "উপযুক্ত" শাস্তি পেয়ে যান। আমরা বিগত সরকারের আমলে এটা দেখেছিও।
এনি ওয়েজ। এই পয়েন্ট পর্যন্ত ক্লিয়ার? তাহলে মূল ঘটনায় আসি।

সম্প্রতি এক বাউল আল্লাহর নামে অতি ফাউল কথা বলে জেলে গেছে।
সে বলেছে সে আল্লাহর কথার "গোয়া-মাথা" কিছুই পায় না।
যতদূর জানি, গোয়া শব্দটা "পাছা" শব্দের চলিত রূপ। আমরা ভদ্রসমাজ একে পশ্চাৎদেশ/নিতম্ব ইত্যাদি বলি। ছোটলোকেরা বলে পুটকি, গোয়া ইত্যাদি।
ধরলাম লোকটা ছোটলোক। এত ভাবনাচিন্তার বুদ্ধি/শিক্ষা ইত্যাদি তার নাই। ধরলাম সে নাস্তিক, ঈশ্বরে ওর বিশ্বাস নেই, এবং আল্লাহকে মান্যও করেনা।
সে বলে চললো, আল্লাহর কথার ঠিক নাই, তিনি একেক জায়গায় একেক কথা বলেন।
বাউল উদাহরণও দিয়েছে। আল্লাহ নাকি বলেছেন "প্রথম সৃষ্টি "এশ্ক।" (জানিনা এই তথ্য কই পেয়েছে।)
প্রথম সৃষ্টি "নূর।" (এটিও কোথায় পেয়েছে জানিনা।)
প্রথম সৃষ্টি "আরশ।"
প্রথম সৃষ্টি "রূহ।"
এক মুখে চাইরটা কয়া লাইছে। আল্লাহ এক মুখে এত কথা কয়, আল্লাহর মুখ কয়টা? ঐটা মুখ না "....।"

লোকটার তথ্যগত ভুলভাল ইত্যাদি নিয়ে তর্কে বিতর্কে যাচ্ছিনা। এটি ইসলামের ক্লাস না, লোকটাও ইসলামের পন্ডিত না।
আমার কথা হচ্ছে, এই একই কথাই আপনি ভদ্রভাবেও বলতে পারেন। ঐ যে উপরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বর্ণনা দিলাম, ঘটনা এখানেও একই। আপনি যখন ইচ্ছাকৃতভাবে অসভ্য অশালীন শব্দ বাছাই করবেন, তখন প্রতিক্রিয়া আসবেই। আপনি উপরের বর্ণনায় রেগে যাবেন, আর নিচের ঘটনায় সুশীল হয়ে যাবেন, তাহলেতো সমস্যা অন্য জায়গায়।
আমাদের জাতিগত সমস্যা এটাই যে আমরা প্রতিপক্ষকে অসম্মানের বেলায় অতি নিচে নামতেও দ্বিধা করিনা, কিন্তু নিজের বেলায় হঠাৎ সুশীলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে যাই।

এখন আসি দ্বিতীয় পয়েন্টে। এই পয়েন্টটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখেন, তাহলে বলবেন, হ্যা, যে কাজটা করেছে, সে অন্যায় করেছে। কাজটা ঠিক হয়নি।
সে বাউল, নাকি ক্রিকেটার, নাকি রাজনীতিবিদ নাকি কলেজের প্রফেসর, সেটা এখানে ইস্যু হবে কেন? মূল বিষয় "বক্তব্য।" বাকিগুলো কেন গণ্য হবে?
কিন্তু আমাদের দেশে এত সহজে ঝামেলা মিটলেতো আমরা বাংলাদেশী হতাম না।
বাউলরা সহজেই বলতে পারতো, "উনি ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন। এর সাথে আমাদের সম্প্রদায়ের কোন সম্পৃক্ততা নেই।"
ফেসবুকে কিছু আহাম্মক দাবি করে বসলো লোকটা কোন অন্যায়ই করে নাই। বাউলদের ভাষা আধ্যাত্মিক, সেটা বুঝার ক্ষমতা সাধারণের নাই। এই বেকুবগুলি যদি "গোয়া" কোন অর্থে আধ্যাত্মিক শব্দ, সেটা ব্যাখ্যা করতো তাহলে আমি একটু ধন্য হতাম।
এই মূর্খগুলি কিছু না বুঝেই দাবি করছে "বাউলরা আমাদের সংস্কৃতির ধারক বাহক। এটি বাংলার সংস্কৃতি ধ্বংসের পায়তারা।"
তাদেরকে একটু ব্যাখ্যা করতে বলেনতো "আল্লাহর কথার গোয়া-মাথা কিছুই বুঝিনা" টাইপ অশ্লীল কথাবার্তা কবে থেকে বাংলার সংস্কৃতির অঙ্গ হলো?
কিছু বেকুব কাজী নজরুলকে এই কাতারে নামিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছে। এই মূর্খগুলি জীবনেও নজরুল রচনাবলী খুলে পড়েছে? আমারতো মনে হয়না।
আমি কেন এদেরকে বেকুব, মূর্খ, গাধা ইত্যাদি বলছি জানেন? একটা ঘরের একটি অতি নির্দিষ্ট জায়গায় কেউ হাগু করেছে। সেটা পরিষ্কার না করে এরা পুরো ঘরময় ছড়িয়ে দিচ্ছে। স্পেসিফিক নিন্দনীয় ঘটনাটার মাঝে এরা বাংলাদেশের বাউল সম্প্রদায়, সঙ্গীত ও সংস্কৃতি ইত্যাদি টেনে এনেছে।

আর অন্যদিকে তৌহিদী জনতা (আমার মতে এগুলার নাম পাল্টে রাখা উচিত "মূর্খ জনতা") "ইসলামের উপর আক্রমন হয়েছে" বলে বাউলদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এরাও গু ছিটাছিটিতে ওস্তাদ। অপরাধ করেছে এক লোক, ওকে এরেস্টও করা হয়েছে। তোরা ওদের সম্প্রদায়ের উপর মারামারি কামড়াকামড়ি করবি কেন?
"ইসলামে গান বাজনা হারাম" বলে রাস্তায় নেমে মারধর শুরু করেছে। ফেসবুকে প্রচার করছে। ইসলামে সঙ্গীতের চেয়েও অনেক বড় বড় হারাম কিছু আছে। নাম্বার ওয়ান ক্যাটাগরিতে পড়ে ফেৎনা ফ্যাসাদ তৈরী করা, সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরী করা, মারামারি কামড়াকামড়ি, মজলুমের উপর জুলুম করা ইত্যাদি সবই অতি উচ্চ পর্যায়ের হারাম। একের অপরাধে অপরকে শাস্তি দেয়া হারাম-এ-আকবার! ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে প্রয়োজনে মজলুম হয়ে মরে যাও, সেটাও ভাল, তবু জালিম হয়ো না।
কিন্তু এই সহজ কথা বুঝবে, এই মূর্খগুলির কি সেই জ্ঞান বুদ্ধি আছে?
মাঝে গিয়ে গোটা দেশে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরী করে গোটা বিশ্বের কাছে হাস্যকর বানিয়ে ফেলেছে।
একটা কাজও সুন্দরভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে করার ক্ষমতা আমাদের নাই। ভুলগুলো শুধরে সুসভ্য হবো, সেই চেষ্টাটাও নেই।

এই ঘটনায় আমার নিজস্ব মন্তব্য?
অবশ্যই লোকটা ফাউল কথা বলেছে। ওর শাস্তি প্রাপ্য। বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত জাতীয় কোন আইন আছে কিনা জানা নেই। সেই অনুযায়ী ওর শাস্তি হোক। যদি সে অনুশোচনা করে, ক্ষমা চায়, তাহলেও সেইটা হোক।
কিন্তু একই সাথে, ও বাউল বলে ওর সম্প্রদায়ের উপর আক্রমন, ওদের আস্তানা ভাংচুর ইত্যাদি কেমন জাহেলিপনা? যারা এসব করছে, ওদের বিরুদ্ধে vandalism এর অভিযোগে মামলা হোক। ক্ষতিপূরণ দিক, জরিমানা দিক, জেল হাজতের ব্যবস্থা হোক।
বাউলরা ওদের মতন জীবন যাপন করবে, সেটা ওদের ব্যপার। ওরা গান করলো, নাচলো নাকি নামাজ পড়লো, কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। আমাকে আমার নামাজ, আমার রোজা, আমার ঈমান, আমার যাকাত, হজ্জ্ব এবং সবচেয়ে বড় কথা, আমার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে। এই কৃতকর্মের মধ্যে কাকে মারলাম, কেন মারলাম, পেটালাম, সে কি দোষী নাকি নির্দোষ ছিল, ওর দোষ আমার কাছে দালীলিকভাবে প্রমাণিত ছিল কিনা ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ২:০১

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর সময়যোগী পোস্ট। আপনার সাথে একমত পোষণ করলাম। একজনের জন্য পুরো গোষ্ঠির উপর হামলা এটাও অপরাধ। এমন হওয়া উচিত নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.