নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ঈশ্বরের স্রষ্টা কে?"

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:৩৫

আপনার হাতে একটা স্মার্টফোন আছে। আপনি চাইলেই রিল/ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে/ইউটিউবে প্রচার করতে পারেন। কন্টেন্ট ভাল হলে আপনি বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হয়ে যাবেন। কন্টেন্ট অতিরিক্ত খারাপ হলেও ভাইরাল হবেন। মাঝামাঝি কিছু হলে পাত্তা পাবেন না।

তা অনেকেই ইসলামিক ভিডিও তৈরী করেন। আশা করি উনারা নেক নিয়তেই করেন, ভাইরাল হওয়ার ধান্দায় ভিডিও করেন না।
তবে এই সমস্ত ভিডিও/কন্টেন্ট বানাতে গেলে আমার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে পড়াশোনা করে তারপরে বানানো উচিত। শুধু মুখস্ত বিদ্যার কথা বলছি না, পড়াশোনা বলতে আমি বুঝাই যা পড়লেন, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করলেন, আত্মস্থ করলেন, সেটাকে। কম পড়েন, কিন্তু যা পড়েছেন সেটা যেন ভিতরে থাকে। যাতে প্রয়োজনে বের করে আনতে পারেন।

উদাহরণ দেই।
জাকির নায়েকের দৌলতে আমাদের অঞ্চলে ধর্মীয় "ডিবেট" অতি জনপ্রিয় একটি কন্টেন্ট। সবাই খুব আগ্রহের সঙ্গে বসেন, আস্তিকদের আশা এই থাকে যে ডিবেট শেষে প্রশ্নকারী অমুসলিম ব্যক্তিটি ইসলাম কবুল করবেন।
আর নাস্তিক লোকটিকে যতই ডিবেট গুলিয়ে খাওয়ান, কিছুতেই কিছু হবেনা।
আমার মতে, এই ডিবেট করতে এলেও আপনাকে যথেষ্ট প্রিপেয়ার্ড হয়েই নামতে হবে। আপনি সহজ প্রশ্নের জবাব দিতে যদি অপারগ হন, তাহলে কিভাবে চলবে?

দুইটা সহজ উদাহরণ দেই।
১. একটা রিলে দেখলাম দুই ভদ্রলোক তুমুল আলোচনা শুরু করেছেন কুরআনের একটি আয়াত নিয়ে, যেখানে আমাদের রাব্বুল আলামিন বলছেন, “আর আমি প্রত্যেক বস্তুই সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়—যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।”
সূরা আয-যারিয়াতের (৫১) ৪৯তম আয়াত। পৃথিবীখ্যাত আয়াত। অনেক পন্ডিত নিজের পান্ডিত্য ফলাতে এই আয়াত ব্যবহার করে প্রমানের চেষ্টা করে যে আল্লাহ ভুল তথ্য দিয়েছেন। কারন, আমরা জানি যে পৃথিবীতে কিছু প্রাণী আছে যেগুলি একলিঙ্গের অধিকারী। আবার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু আছে যেগুলোর কোন লিঙ্গই নাই।
এখানে যদি ডিবেটকারী মুসলিম আমতা আমতা করতে থাকেন, তাহলেতো সমস্যা।
উপায়?
যে আয়াতটি ব্যবহার করা সেখানেই কিন্তু উত্তর আছে। আয়াতটির আরবি হচ্ছে وَمِن كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
এখানে "কুল্লি" শব্দটি লক্ষ্য করেছেন? এটাকেই দূর্বল ট্রান্সলেশনে লেখা হয় "প্রত্যেক" - আসলে কিন্তু তা না। (দুর্বল ট্রান্সলেশনের আরেকটা প্রাইম উদাহরণ হচ্ছে "আউলিয়া"কে লেখা হয় "বন্ধু" - "তোমরা অমুসলিমদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না" যা নিয়ে মূর্খরা বিরাট ক্যাঁচাল লাগায়)
মোটামুটি কাছাকাছি আয়াত আছে সূরা ইয়াসিনের ৩৬ নম্বর আয়াতেও, যেখানে আল্লাহ বলছেন ".....যা তারা জানে না, তার "প্রত্যেককে" জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন।" এবং সেখানেও "কুল্লা" শব্দটি আছে। (কুল্লা/কুল্লু/কুল্লি একই)

এখন আমরা কুরআনেরই আরেকটি আয়াত যদি দেখি, আল আহক্কাফের ২৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন "তার পালনকর্তার আদেশে সে "সব কিছুকে" ধ্বংস করে দেবে। অতঃপর তারা ভোর বেলায় এমন হয়ে গেল যে, তাদের বসতিগুলো ছাড়া কিছুই দৃষ্টিগোচর হল না। আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে এমনিভাবে শাস্তি দিয়ে থাকি।"
এখানেও আরবি "কুল্লু" শব্দটি আছে, যেখানে দুর্বল ট্রান্সলেটর বলেছেন "সবকিছু/প্রত্যেক" - কিন্তু আয়াতের বর্ণনাতেই আমরা পাচ্ছি "ব্যাপক" ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলেও "প্রত্যেক বস্তুই" (গোটা দুনিয়া) ধ্বংস হয়ে যায়নি।
তাই এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, আরবিতে শব্দটির "ব্যাপক/বেশিরভাগ" ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
মানে দাঁড়ায় "আল্লাহ বেশিরভাগ প্রাণীই (সংখ্যাগরিষ্ঠ) জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারি।"
বুঝাতে পেরেছি?

আরেকটা হাস্যকর পয়েন্টের কথা বলি। মজা পাবেন।
২. নাস্তিকদের সবচেয়ে সহজ প্রশ্ন হচ্ছে, "তোমরা বলছো আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। মানলাম, কিন্তু উনাকে কে সৃষ্টি করেছেন?"
ব্যস, ডিবেটকারী প্যাঁচে পড়ে যান। তিনি মুখস্ত উত্তর দেন, "এইসব চিন্তা করতে নিষেধ করা হয়েছে। হাদিসে/তাফসীরে আছে....." বা এই জাতীয় কিছু।
আমার কথা হচ্ছে আগে দেখতে হবে কুরআনে আল্লাহ কি বলেছেন সেটা। আল্লাহ স্বয়ং নিজের বর্ণনা দিয়ে আস্ত সূরা নাজেল করে ফেলেছেন, আর আপনি কোথাকার কোন মাওলানা কি বলেছে সেটা হাতড়ে বেড়াচ্ছেন?
ঘটনা হচ্ছে, কুরাইশরা একদিন নবীর (সঃ) কাছে এসে জানতে চাইলো "তোমার আল্লাহ কে? কার পুত্র? কার বাপ? পুরুষ নাকি নারী? দেখতে কেমন?" ইত্যাদি ইত্যাদি। ওরা নিজেদের বুদ্ধিতে যা সম্ভব তাই প্রশ্ন করলো।
তখনকার যুগে ওরা সেভাবেই এন্টিটির পূজা করতো। ওদের প্রতিটা দেবতাই কারোর না কারোর পিতা, নাহয় পুত্র। কাজেই ওরা নবীর (সঃ) কাছে এসে জানতে চাইলো, তোমার বলা ঈশ্বরের পরিচয় কি?

আল্লাহ উত্তর দিলেন সূরা ইখলাসের মাধ্যমে, যা অতি সহজ, অতি ছোট এবং আমরা মোটামুটি প্রতিটা ওয়াক্তের নামাজেই এটি পড়ি। উত্তরটা তিনি এমনভাবে দিলেন যে কেয়ামত পর্যন্ত সবপ্রশ্নের জবাব এতেই থাকে।
তিনি বললেন "বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি, এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।"
শেষ আয়াতটি খেয়াল করুন, "আহাদ" শব্দের বর্ণনা করা হয়েছে "সমতুল্য" যা আমাদের বাঙালি ব্রেন প্রসেস করবে উনার "সম মর্যাদার কেউ নেই।" কিন্তু "সমতুল্য" মানেই হচ্ছে তাঁকে যে তুলনা করবেন, এমন কোন কিছুই নেই। আপনি যাই চিন্তা করুন না কেন, কোন কিছুর সাথেই তাঁর তুলনা করতে পারবেন না। কারন আপনি যা চিন্তা করছেন, সবই "সৃষ্টি", এবং তিনি "স্রষ্টা।"
খেয়াল করেছেন? সূরা ইখলাসের মতন অতি সহজ, কমন একটি সূরাতে আছে এই তথ্য, অথচ মুখস্ত বিদ্যা ও চিন্তাভাবনার প্র্যাক্টিসের অভাবে জবাব দিতে হিমশিম খান।
বিগব্যাঙের মাধ্যমে সময়ের সৃষ্টি হলো, সময়ের আগে কি ছিল সেটা ফিজিক্স বহুবছর ধরেই খোঁজার চেষ্টা করছে। ইসলাম ধর্মমতে এই সময়ের স্রষ্টাই আল্লাহ। যখন কিছু ছিল না, এমনকি শূন্যেরও অস্তিত্ব ছিল না, তিনি ছিলেন এবং যখন আবার কিছুই থাকবে না, তখনও তিনিই থাকবেন। তিনি "একক" "অদ্বিতীয়" তাঁর "সমতুল্য" কিছুই নেই।

এনিওয়েজ।
আমার কথা হচ্ছে অমুক মাওলানা তমুক কিতাবে কি বলেছেন সেটা খুঁজে বের করে মুখস্ত কোট করার স্টাইলে পড়াশোনা না করে কি পড়েছেন, সেটা নিয়ে ভাবুন। ভাবতে থাকুন। তখন এইসব প্রশ্নের উত্তর আপনাতেই নিজের সামনে চলে আসবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.