![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বড় ফুপু বাসায় আসার সাথে সাথে তানির পেটের ব্যাথা কমে গেলো। মা রাগারাগি করায় নিজেকে সুস্থ বলে দাবি করলো সে। প্রমান করতে ফুপুর আনা পিঠা আর ক্ষীরের হাড়ি অর্ধেক সাবাড় করে ফেলে। মা রাগ করে। কিন্তু ফুপু থাকাতে মা তানির টিকিটাও স্পর্শ করতে পারবে না।
বড় ফুপু তানির জন্য লাল ফিতা, লাল জামা আর অনেক অনেক পিঠা নিয়ে এসেছে। দুপুরে যখন বাবা খেতে এলো তখন তানি নতুন জামা আর লাল ফিতা দিয়ে টান টান করে চুল বেধে বাবার সামনে গেল। তানি বাবা কে অসম্ভব পছন্দ করে। কিন্তু ভয় পায় তার থেকেও বেশি।
- এইটা কুন জামা পরিছ?
রাগত স্বরে হুঙ্কার দেয় বাবা।
- বড় ফুপু আনিছে আব্বা আমার জন্যি।
ভয়ে ভয়ে বলে তানি।
- যাও বদলাই আসো। এই রকম কটকটা জামা পরি আমার কাছত আসিবে না।
তানি মাথা নাড়ে। তার চখে পানি চলে আসল। তার বাবা টা এরকম কেন সে বুঝে পায় না। প্রতিদিন রাতে কাজ থেকে ফিরে তার মা কে ধরে ধরে পেটায়। সেদিন মাকে এমন ভাবে মারল যে মায়ের পায়ে কালো কালো দাগ হয়ে গেলো। তানি আর তার দুই ভাই দরজার আড়ালে দাড়িয়ে দেখে। কেউ সামনে যেতে সাহস করে না। কারন কেউ গেলে বাবা তাদেরকেও পেটাতে থাকে। কি এক অশুরি শক্তি ভর করে যেন তখন বাবার মাঝে। তানি ছোট বলে বাবা হয়তো তাকে কখনই মারেনি কিন্তু তার বড় ভাই তারিক আর রাকিব বহুবার মার খেয়েছে। তাই তাদের কারো সাহস হয় না।
তানি বিকালে মাঠে খেলতে যায়। বউচি। যথারীতি তানি আর জান্নাতের মাঝে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। আজকের ঝগড়ার বিষয় বস্তু হোল কে বউচি হবে। এটা নিয়ে প্রায় যখন মারামারি করার যোগার তখন তাদের বাকি খেলার সাথিরা তাদের দুই দলে ভাগ করে দিল। খেলা জমে উঠল। জান্নাতের দল যখন জিতে যাচ্ছিলো তখন পাশের গ্রামের খালেদা একটা ঝগড়া বাধিয়ে ফেললো। খেলা ভঙ্গ। যে যে যার যার পথে চলে গেল। তানি আর জান্নাত একটা আম গাছে উঠে পা ঝুলিয়ে বসে কার্ডিগানের পকেট থেকে একটা করে পেয়ারা বের করে খেতে থাকে।
- আইজকা কি পড়াইল রে?
তানি জিজ্ঞেস করে।
- কাইলকার পড়াই।
- অ। চল কড়াইবিল যাই। মাছ মারা দেখি।
- চল। কিন্তু ফুপা পাছত (পরে) কিছু কহিবেনায় তো তোক?
- না না। জানা পাবেনায়। আন্ধার হয়ার আগত আশিমো।
- আইচ্ছা চল জাই।
কিছুক্ষণ পর দেখাগেল, কড়াইবিলের কাঁদা মাটিতে দুটি ছোট মেয়ে অন্যদের সাথে হুটপুঁটি করে মাছ ধরছে। তারা যে তানি আর জান্নাত তা তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই। সারা গায়ে কাঁদায় মাখা মাখি। গায়ের কার্ডিগান শোভা পাচ্ছে গাছের ডালে।
আঃ আঃ করে চিৎকার দিয়ে জান্নাত কাঁদার মাঝে লাফাতে থাকে। সবাই ভয় পেয়ে যায়।
- কি হইছে? কি হইছে?
সবাই জিজ্ঞেস করে। কিন্তু তানি লাফাতে থাকে আর চিৎকার করতে থাকে। সবাই আবার জিজ্ঞেস করে। তখন সে উত্তর দেয়ে।
- সাপ সাপ! মুই হাত দি একটা সাপ ধরিছু। আঃ আঃ!!!!
জান্নাতের এই কথা শুনে সবাই লাফিয়ে কাঁদা থেকে ডাঙ্গায় উঠেপড়ে। তানির কৌতূহল বেশি। বড় ফুপুর কাছে শুনেছে সাপ শিতের সময় ঘুমায়। তাই সে ঘুমন্ত সাপ দেখার জন্য কাঁদা হাতড়াতে থাকে। হাতে একটা কিছু লাগলো। তানি চেপে ধরার চেষ্টা করল কিন্তু তানির ছোট হাত থেকে সেই বস্তু পিছলে গেলো। সবাই তাকে উঠে আসতে বলছে। কিন্তু তানি ঘুমন্ত সাপ না দেখে কিছুতেই ফিরবে না। আবার সে ধরল। এবার নখ দিয়ে আর দুই হাত লাগিয়ে সেই সাপের মতো বস্তুটাকে টেনে কাঁদা থেকে বের করে আনে। সবাই বিস্ময়ের একটা শব্দ করে। মস্ত বড় একটা বাইন মাছ। সাপের মতই কিলবিল করছে। গা মুচড়ে তানির হাত থেকে ছুটার চেষ্টা করছে। তানি কাছে নিয়ে দেখার চেষ্টা করে এটা কি? সবাই বাইন মাছের কথা বলছে দেখে সে বুঝতে পারে এটা সাপ না বাইন মাছ। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল যে সে অসাধ্য সাধন করেছে। মুখে এক গাল হাসি ফুটিয়ে মাছটা তার কার্ডিগানে পেঁচিয়ে বাড়ির পথ ধরল। মাছটা বেশ ভারি। প্রায় দের কেজির মতো ওজন হবে। তানির ছোটো শরীর বইতে পারছে না। তাই জান্নাত আর তানি দফায় দফায় বইছে।
তাদের বাড়ি থেকে কড়াইবিল প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। তানি ভয়ে ভয়ে বাড়িতে ঢুকল। আজ তার কপালে দুঃখ আছে।
©somewhere in net ltd.