নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ুন

আমি একজন সাধারণ মানুস।তাই বেশী কিছু লিখবো না।

মেসি০০৭০০৭

আমি একজন স্টুডেন্ট তাই ভালো কিছু করতে চাই।

মেসি০০৭০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪

গত ২৪ জুলাই জাতিসংঘ শান্তিরা মিশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও শান্তিরা মিশনের দায়িত্বে থাকা হার্ভে ল্যাডসাউ দেখা করতে গেলে তাকে ওই আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ শান্তিরা মিশনে সবচেয়ে বড় সৈন্য সরবরাহকারী রাষ্ট্র। এ জন্য ওই পদপে নেওয়া হলে শান্তিরা মিশনে মাঠপর্যায় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয় নিবিড় হবে। তাছাড়া জাতিসংঘ মিশন থেকে ফেরা বাংলাদেশি কর্মকর্তারাও মাঠপর্যায়ের চাহিদাগুলোর বিষয়ে ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরা মিশনে বাংলাদেশ শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষ শান্তিরী সততা, শৃঙ্খলা ও সাহস নিয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। শান্তিরা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সৈন্যদের প্রশিণে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট ট্রেইনিং’ (বিপসট) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গোত্রে-গোত্রে সংঘাত নিরসন, যুদ্ধাঞ্চলে মানবিক সাহায্য-সামগ্রীর কনভয় এবং জাতিসংঘ শরণার্থী শিবিরে আক্রান্তদের উদ্ধারে শান্তিরী বাহিনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা এসব কর্মযজ্ঞে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। এক্ষেত্রে এ দেশের সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্ব বেশি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এক গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের সেই অবদান এ দেশের জনগণের কাছে একটি বহুল পরিচিত ঘটনা। ১৯৭১ সালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সম্মিলিত হয়েছিল জনতার সঙ্গে। ওই ঐতিহাসিক সম্পর্ক অর্থাৎ জনতা ও সশস্ত্রবাহিনীর পারস্পরিক সুসম্পর্ক আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি উদ্দীপক বিভাব। জাতির প্রয়োজনে অর্পণ করা কঠিন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্রবাহিনীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অনন্য। দেশের প্রতিরার জন্য প্রশিণ আর জনগণের জন্য ভালবাসা- এ দুটি বিষয় কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। অনুরূপভাবে বর্তমান বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী একটি পরিচিত ও আস্থার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্যোগময় পরিবেশে শান্তি স্থাপন করে অপরিচিত দেশের অচেনা মানুষের ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘ সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ও সপ্তম অধ্যায়ে শান্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংঘর্ষে লিপ্ত দুপক্ষের সম্মতি ও মতৈক্যের ওপর ভিত্তি করে শুরু হয়। শান্তিরক্ষা বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো কর্তৃক অনুমোদিত একটি শান্তিচুক্তি বা শান্তি-ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৫৪টিতে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৮৫ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন। শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সদস্যসংখ্যা ৮ হাজার ৯৩৬। তা বিশ্বে সর্বোচ্চ। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান শান্তি মিশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে এ দেশের সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্য জাতিসংঘের পতাকাতলে একত্র হন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শান্তি মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয় নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা মিশন এলাকায় বিবদমান দলকে নিরস্ত্রীকরণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা প্রদান, সড়ক ও জনপথ এবং স্থাপনা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। কঙ্গো, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা/রুয়ান্ডা, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর প্রভৃতি স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল নাম। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর ৯৬ সদস্য শহীদ হয়েছেন এবং পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন ১৪ জন। অন্যদিকে ২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আয় হয়েছে ১১ হাজার ৪৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। স্মরণীয়, বর্তমান সরকারের আমলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০১৩ সালে ১৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। শান্তি মিশন থেকে আয় এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কারণ বিশ্বে সব প্রান্তের দুর্গত, নিপীড়িত ও নিরীহ মানুষের সেবায় এ শান্তিরক্ষীদের হাত সর্বদা প্রসারিত। সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও তারা আর্তমানবতার সেবা করে চলেছে। শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়।’ বিশ্বের বিরোধপূর্ণ স্থানে জাতিসংঘের ডাকে শান্তি স্থাপন করা- এ জন্য আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর জরুরি দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হচ্ছে। জাতিসংঘকে শান্তি স্থাপনে সহায়তা দেওয়া এবং পাশাপাশি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রার জন্য আমাদের সুশিতি, পেশাদার সশস্ত্রবাহিনী থাকাটি অন্যতম শর্ত। আজকের পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিন বাহিনীর ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনার আধুনিকায়ন করে যেতে হচ্ছে। কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিচিত্র রকম আবহাওয়ায় আমাদের সশস্ত্রবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরা মিশনে অংশগ্রহণ করছে। হাইতি থেকে পূর্ব তিমুর, লেবানন থেকে কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় তাদের পদচারণা। বসনিয়ার তীব্র শীত, সাহারা মরুভূমির দুঃসহনীয় গরম ও পূর্ব এশিয়ার কান্তিকর আর্দ্রতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে রাত-দিনের দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে চলেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী। বিশ্ব মানবতা প্রতিষ্ঠায় আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীর রয়েছে অসামান্য অবদান। কারণ ভিন্ন দেশে ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী রয়েছে। রয়েছে বিচিত্র রাজনৈতিক মতাদর্শ। এসব সামাজিক ভেদাভেদ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য পেছনে ফেলে সবাইকে নিয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত করছেন শান্তিরক্ষীরা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় ২০০ আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন নিয়ে তাদের অপারেশন পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ ওসমান ও মধুমতি লেবানন এবং ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় সর্বদা টহলের কাজে মোতায়েন রয়েছে। মিশন এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ নদীপথগুলোয়ও তাদের সতর্ক প্রহরা দেখা যায়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী বিআর-১৩০ এয়ারক্রাফট, এমআই-১৭ ও বেল হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কঙ্গো ও আইভরি কোস্টে জরুরি সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন, উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ তৎপরতায় দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ পুলিশের অনেক সদস্য মিশন এলাকার স্থানীয় প্রশাসনকে দাঙ্গা দমনে সহায়তা দিচ্ছে। বিশ্বের বিশৃঙ্খল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে শান্তি স্থাপনে সাফল্য অর্জন করাও বাংলাদেশ মিশনের শান্তি প্রকল্পের অন্যতম কাজ। শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশি নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ সশস্ত্রবাহিনীর ইতিহাসে একটি মাইলফলক। শান্তিরা মিশনের দায়িত্বে থাকা হার্ভে ল্যাডসাউ এ দেশের নারী শান্তিরক্ষীদের অবদানের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। মূলত ২ দশকের বেশি জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ উৎসাহব্যঞ্জক। শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা মোতায়েনের সংখ্যার বিচারেও অনেক দিন ধরে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে আমাদের দেশ। এই ধারা অব্যাহত রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমুন্নতি বিধানের জন্য সশস্ত্রবাহিনীর বিশ্ব শান্তি স্থাপনের ভূমিকাকে মূল্যায়ন করা দরকার। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও শান্তিরা মিশনের দায়িত্বে থাকা হার্ভে ল্যাডসাউয়ের বাংলাদেশ সফর ওই কথাই স্মরণ করিয়ে দিল আরও একবার।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.