![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ড. আমিনুল ইসলাম
সংবাদপত্রের শক্তি ও প্রভাব যে অপরিসীম, এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। আর সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি কর্মীর দায়িত্বও গুরুতর। কী ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হলো, কোন্ সংবাদ কেমন শিরোনাম পেল, তাতেও সংবাদপত্রের নৈতিক মান এবং সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রায়শই দেখা যায় কোনো প্রতিষ্ঠানের সুকৃতি বা কৃতিত্বের সংবাদ যে গুরুত্ব পায়, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পায় অনাকাঙিক্ষত দুঃসংবাদ। তাতে করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়, ক্ষতিকর হয় সেই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও ভাবমূর্তি। যেমন ধরা যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে পত্র-পত্রিকায় এখানকার সন্ত্রাস, খুন, ছিনতাই, দলাদলি, হানাহানি তথা ছাত্ররাজনীতি সম্বন্ধে এত গ্লানিকর সংবাদ ফলাও করে প্রকাশিত হয়ে আসছে যে, এর ফলে জনমনে দেশের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে (অবশ্য এক্ষেত্রে দেশের অন্য কোনো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিক্রম নয়)। সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ ধারণা। মনে পড়ে আশির দশকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত এই প্রতিষ্টানটিকে একবার বিদ্রƒপ করে অভিহিত করা হয়েছিল, “ডাকাতের গ্রাম” হিসেবে। শিক্ষকদের দল রং ও রাজনীতি নিয়েও প্রকাশিত হয়ে চলেছে কত না মুখরোচক খবর। এসব খবরের অধিকাংশ সত্য হলেও, এগুলোর মাধ্যমে যে সামগ্রিক নেতিবাচক ধারণা পাওয়া যায়, তার যথার্থতা সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখা গণমাধ্যমের মহান দায়িত্বের অন্তর্গত।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার এই যে, ইদানীং, বিশেষত ৯০-এর গণ-আন্দোলনের পর থেকে এদেশে নতুন নতুন সংবাদপত্রের আবির্ভাব ঘটেছে, সংবাদ পরিবেশনে অভিনবত্ব ও বৈচিত্র্য এসেছে এবং সাংবাদিকতার মানও বহুলাংশে উন্নীত হয়েছে। কিছু কিছু পত্রিকা প্রকাশনার পেছনে সাংবাদিকতার মহৎ আদর্শ নেই, এবং এরা নামসর্বস্ব-এই মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ পত্রিকার গতিপ্রকৃতিতে ক্রমিক অগ্রগতি ও উৎকর্ষের লক্ষণ বিদ্যমান। বিশেষ আশা ও আনন্দের ব্যাপার এই যে, এর আগে আমরা যেখানে পেতাম কেবল নিউজপেপার, সেখানে এখন একই সঙ্গে পাচ্ছি নিউজ ও পেপার। সংবাদপত্র এখন কেবল চলমান দুনিয়ার কিছু তথ্য পরিবেশন আর সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয় প্রকাশনার মধ্যেই সীমিত নয়। সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষাদীক্ষা, খেলাধুলা, আমোদ-প্রমোদ প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও সংবাদপত্রে আজ স্থান পায় মুক্তচিন্তাসম্বলিত নিয়মিত কলাম, স্বাধীন মতামত ও নিবন্ধমালা। তাতে করে সংবাদপত্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তৈরি হয়ে চলেছে নতুন নতুন লেখক, সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের গদ্য সাহিত্য, গণশিক্ষার বাহন হিসেবে বিস্তৃত হচ্ছে সংবাদপত্রের পরিসর। বিশেষত লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, ইদানীং সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশের ক্রমবর্ধমান সুযোগ পাচ্ছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনাময় তরুণ মেধাবী ছাত্ররা। এ সুবাদে তারা একই সঙ্গে করছে পড়াশোনা, পাচ্ছে সাংবাদিকতা চর্চার সুযোগ এবং উপার্জনও করছে পড়াশোনার খরচ চালাবার প্রয়োজনীয় অর্থ। বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার বিকাশের পথে এ এক শুভ লক্ষণ সন্দেহ নেই।
গণশিক্ষা বিস্তার ও জনমত গঠনে সংবাদপত্রের অপরিসীম যে গুরুত্ব রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একই সঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অন্যায় অবিচারের প্রতিকার বিধানেও সংবাদপত্রের ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সংবাদপত্রের এ গুরুত্বের কথা বিবেচনা করেই বলা হয় : ''It is the people's parliament always in session.’ কথাটার ব্যবহার রূপক অর্থে হলেও এর বাস্তব তাৎপর্য অনস্বীকার্য। সংবাদপত্রের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অশুভ শক্তির প্রভাবে যখনই সমাজে অন্যায় অবিচার নেমে আসে, বিচারের বাণী যখনই কাঁদে নীরবে-নিভৃতে, তখনই সংবাদপত্র এগিয়ে আসে ন্যায়-সুবিচারের আপসহীন দাবি নিয়ে। দুর্নীতি ও দুঃশাসনে দেশের আপামর জনসাধারণ যখন নিষ্পেষিত, স্বাধীন মতামত প্রকাশের সব দুয়ার-জানালা যখন রুদ্ধ, তখন সংবাদপত্র ও নির্ভীক সাংবাদিকরাই ভরসা। মহৎপ্রাণ সাংবাদিকরাই জনগণের সুহৃদ, দার্শনিক ও দিশারি।
[লেখক : অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]
লিংকঃ
Click This Link
©somewhere in net ltd.