![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘটনা ঘটার জন্য কোন পুর্ব নির্ধারিত শিডিউল ঠিক করতে হয় না। ঘটনা ঘটে তার নিজস্ব গতিতে, আমরা শুধু ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকি মাত্র।
রমজান মাসের ঘটনা ঢাকাস্থ এলাকার ভাই-ব্রাদারের সাথে ইফতার করলাম পল্টনের চায়না বিস্ট্রো রেস্টুরেন্টে। ইফতার শেষে পল্টন থেকে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য পায়ে হাঁটা শুরু করলাম। সাথে গাজি ভাই ছিলেন।
দুই ভাই গল্প করছি আর হাঁটছি। আমরা তখন সোহরওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে হেঁটে চলছি। হঠাত একটি প্রাইভেটকার এসে সামনে ভিড়লো। সোডিয়াম লাইটের আবছা আলোয় দেখলাম সামনের সিটের একজন পিছে উপুড় হয়ে আছে আর পেছনের সিটের আরেকজন তাকে ধরে আছে। দেখে বুঝলাম কোন ক্রাইম চলছে। গাজী ভাইকে একটু দাঁড়াতে বললাম। উনি বললেন, "চলো তো! ঝামেলা করার কী দরকার"। তখন আমার চিন্তার উদয় হলো, আমি এই বাংলার একজন নিরীহ বাঙ্গালী মাত্র। আমার মশাই চুপ করে থাকাই ভালো।
তারপর একদিন, কারোয়ানবাজার যাইতে বাসের অপেক্ষায় রোদে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে চামড়া পুরে তামাটে বর্ণ ধারন করেছে অনেক আগেই, এখন ঘামে শরীরের সাথে শার্ট লেপ্টে আছে! ভাগ্যিস আমি পুরুষ! এই ভাবে একটা মেয়ে দাড়িয়ে থাকলে কতজনের দৃষ্টি দ্বারা যে ধর্ষনের শিকার হতো তা বলা মুস্কিল।
ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থায় কোনমতে ঠেলেঠুলে "লোকাল বাস" নামক এই আজিব যন্ত্রটায় সাওয়ার হলাম। ঢাকা শহরের জ্যাম সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নাই, সেই জ্যামে বসে বসে নানান ফ্লেবারের ঘাম শুকছি! শ্রমিকের ঘাম, মালিকের ঘাম, দুর্বলের ঘাম, সবলের ঘাম, সুন্দরী ললনার ঘাম। নানান জাতের নানান বর্নের ঘামের গন্ধ।
আশ্চর্যের বিষয় হলো নিজ নিজ প্রয়োজনে আজ আমরা সবাই একই বাহনের সাওয়ারী। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। স্বার্থ ইজ বিগ ফ্যক্টর ইন এ্যা হিউম্যান লাইফ। এইটার সহিহ ইংলিশটা যেন কি? পাশে বসা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করবো কিনা ভাবছি। না থাক। শেষমেশ লজ্জিত হতে হবে আবার। লজ্জাটাকে আমরা ভীষণ ভয় পাই। লজ্জা পাব বলে আমরা সর্বদাই মুর্খ রয়ে যাচ্ছি। নতুন কিছু শিখতে যে ইচ্ছে করেই কিছুটা বোকা সাজতে হয় সেটা মনে হয় আমরা ভুলে গেছি। আমরা সবাই এখন চালাক। আমরা সবাই জ্ঞানী। মহা জ্ঞানী।
কন্ট্রাকটর ভাড়া নিতে আসলো। আমার গন্তব্যের জন্য নির্ধারিত ভাড়া ৫টাকা। মানিব্যাগ থেকে একটা মলিন ১০ টাকার নোট এগিয়ে দিলাম। তার চেয়েও মলিন ও প্রায় মুমুর্ষ একটা পাচঁ টাকার নোট ফেরত পাওয়া মাত্র ওইটা মানিব্যাগে চালান করে দিলাম। পাশে বসা সেই ধনীর দুলাল অথবা আলাল পাচঁ টাকার একটি নোট এগিয়ে দিল কন্ট্রাকটর ছেলেটার দিকে, মামা কই যাইবেন? - ফার্মগেইট, ছেলেটার জবাব পেয়ে কন্ট্রাকটর "ভোদাই হয়া গেলাম" টাইপের চেহারা নিয়া তাকিয়ে আছে !! কিছুক্ষন পরে সে বলল
: মামা ভাড়া তো ১৫ট্যাকা
:স্টুডেন্ট হাফ ভাড়া জানস না?
: আপনে ১০ টেকা দেন, ৫ টেকা দিলে পোষায় না মামা
:৫ টাকা দিছি, নিলে রাখ না রাখলে ফেরত দে, তর ভাড়া দিব না
: ভাড়া দিবেন না ক্যান?? বাসে কি মাগনা চড়বেন নাকি?
চটাশশশ!! কিভাবে কি হল বুঝলাম না ধনীর সেই দুলাল একটা চড় বসিয়ে দিল কন্ট্রাকটর ছেলেটার গালে। ছেলেটা আবার ভোদাই হয়ে গেল। ততক্ষনে আশেপাশের যাত্রীরা ছেলেটির পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি উপস্থাপন করতে শুরু করলো। কন্ট্রাকটরের চেয়ে সেই ধনীর দুলালের পক্ষেই লোকজনের সাপোর্ট বেশী। স্টুডেন্ট মানুষ (!) ভাড়া যা দিসে তা নিয়াই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আমি বুঝলাম না ১২/১৪ বছর বয়সী ওই কন্ট্রাকটর ছেলেটার দোষ কোথায়, কেন সে বিনা দোষে মার খেয়েও কোন বিচার পাচ্ছে না? ৮টাকা দিয়ে একটা বেনসন খেতে আমার এটুও গায়ে লাগে না, কিন্তু ১০টাকা বাস ভাড়া দিতে গেলে আমি এখনও স্টুডেন্ট হয়ে যাই। অবশেষে আমি মুখ খুললাম, "মামা যাও যা হবার হইসে, মন খারাপ কইরো না, কত লোকেই তো বিনা ভাড়ায় বাসে ওঠে, ব্যাপার না, যাও ভাড়া কাটো।" প্রতুত্যুরে যা শুনলাম সেটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
"আমাগো পক্ষে তো কেউই কিছু কইবেন না, আমরা তো রাস্তার কুত্তার চেয়েও অধম!! যেই দিন থিকা এই গাড়ীর লাইনে কাম নিছি সেই দিন থিকা আমাগো নাম মানুষের কাতার থিকা উইঠা গেসে, এহন আমরা কুত্তা বিলাই"
চুপ করে ছেলেটার কথাগুলো শুনলাম, কি করার আমি তো ব্যার্থ। তাই মলিন পাচঁ টাকার নোট টা ছেলেটার হাতে দিয়ে বাস থেকে নেমে সামনের দিকে হাটা ধরলাম। আমি আমার ব্যার্থতার প্রামাণ রাখতে চাইনা। আমার চোখ বন্ধ, আমি বধির। আমার কথা বলা নিষেধ। আমি মানুষ, লোক দেখানো ভাল মানুষ।
©somewhere in net ltd.