নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"মাঝে মাঝে শীতকেও অনুভব করতে হয়, না হলে শীতের পরের উষ্ণতা যে কতটা আরামদায়ক সেটা বোঝা যায় না।।\" \"দৃশ্যের বাইরেও এমন কিছু অদৃশ্য শক্তি থাকে যার জন্য একজন মানুষও অপরিচিত থেকে অতি আপন হতে পারে, হতে পারে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ।।\"

মায়ের ভালবাসা

বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া উচিত । মানুষের কষ্টকে নিজের ভেতর অনেক বেশি অনুভব করি । মা, মাটি, মাতৃভূমিকে অনেক বেশি ভালবাসি । নিয়মের বাইরে কোনকিছু না করে যার যার অবস্থান থেকে তার তার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করলেই আমাদের দেশ উন্নত হয়ে যাবে । Facebook: https://www.facebook.com/ah.cse.pu

মায়ের ভালবাসা › বিস্তারিত পোস্টঃ

"অভিশপ্ত জীবন"

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০



যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী আরিফা এখনো গোধূলীলগ্নে রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে দূর আকাশের দিকে ছলছল চোখে নিয়মিত তাকিয়ে থাকে । পরনের হলুদ রংয়ের শাড়িটার প্রায় অর্ধেক মাটির সংস্পর্শেই থেকে যায় । আরিফা একাকীত্ব মনে ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত হাঁটতে থাকে । বিগত একটা বছর তার জীবনে ঘটে গেছে কিছু বিস্ময়কর ঘটনা যা তার বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী।

তখন আরিফা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী । মায়ের সংসারের একমাত্র মেয়ে সে । বাবা অনেক আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে গেছেন । মা একমাত্র ব্যক্তি যার পেশা টিউশনি । টিউশনি করে যে টাকা পায় তা দিয়ে মা মেয়ের খাওয়া, পরা, বাসা ভাড়া এবং আরিফার পড়াশুনার খরচ চলে । আরিফা অবশ্যই ভাল ছাত্রী ,কেননা সে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী । মা যখন টিউশনিতে চলে যায় তখন থেকে সে একা হয়ে যায় এবং সে একাকী বাসায় থাকে যা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল । এভাবে একাকী জীবন আরিফার কখনও ভাল লাগত না । কিন্তু মায়ের কড়া শাসন এবং নজরদারি তাকে আটকা ঘরে থাকতে বাধ্য করেছে । এভাবে কেটে গেছে আরিফার জিবনের সতেরটি বছর । আরিফার প্রায়ই মনে হতো ও হয়ত রবিন্দ্রনাথের ফটিক চরিত্রে অভিনয় করছে মা জীবন্ত থাকা অবস্থায়ই ।

আরিফা এসবের মাঝ দিয়েই ভাল ফলাফলের সাথে এইচ এস সি পাশ করেছে এবং নিজেকে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে ভর্তি করেছে । এভাবে দুইটা বছরও সে পার করে ফেলেছে । আশেপাশের পরিবেশ এবং একাকী জীবন তাকে সব সময় কুড়ে কুড়ে খেতো । নিজের ভেতর সব সময় কি যেন শূন্য শূন্য মনে হত তার । একাকী জীবন তার আর ভাল লাগত না । তার সব সময় মনে হতো একজন সঙ্গী যদি সে খুজে পেত তাহলে নিজের ভেতর হয়ত শান্তি লাগত । এভাবেই কাটতে থাকে আরিফার দিন । নিয়মিত ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া এবং আবদ্ধ অবস্থায় ঘরে থাকা ।

এভাবে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার মাঝে আরিফার প্রায়ই তার দেখা হত পাশের বাসার জীবনের সঙ্গে । মাঝে মাঝে কথা ,কথা বলা থেকে ভাল লাগা এবং ভাল লাগা থেকেই ভালবাসা । এভাবে কিছুদিন প্রেম করতে থাকে জীবনের সঙ্গে । এ সময় আরিফার মা লক্ষ্য করতে থাকে যে কিছু দিন আরিফা দেরি করে বাসাই ফিরছে । সে আরও বুঝতে পারে যে আরিফা কেন জানি আগের থেকে বেশি আনন্দিত থাকে । মা এখন নজরদারি বেশি করে করছে আরিফার উপর । আরিফাকে সে অনেকগুলা খারাপকথাও বলেছে কেননা পাশের বাসার একটি ছেলের সাথে আরিফা মেলামেশা করছে এটা তার জানার বাইরে নয় ।

আরিফা জীবনের পরিচয় ভাল করে জানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি কারন একটাই তার একাকীত্বতা । মায়ের কথা মনে না রেখে কিছু দিন পর কাম্পাস থেকে ফেরার পথে জীবনের সাথে ঘুরতে চলে যায় আরিফা । যে সময় আরিফা বাসায় ফেরে তার থেকে দু ঘন্টা বেশি হয়ে যায় কিন্তু আরিফা বাসায় ফেরে না । সে দিন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল । সময় যত বাড়ছিল মায়ের চিন্তা ও বাড়ছিল । যে মেয়ে কোনদিন সন্ধার পরে বাসার বাইরে থাকে নি সে আজ রাত হয়ে যাচ্ছে তবুও বাসায় ফিরছে না, তার উপর আবার বৃষ্টি । দরজার সামনে মা অপেক্ষা করছে আর নানান চিন্তা তার মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে ।

ওনেকক্ষন পর ভিজতে ভিজতে দরজার সামনে হাজির আরিফা । মায়ের কোনকিছু আর বুঝতে বাকি রইল না । কোন কথা না বলে আরিফা ঘরে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুরু করে দিল আরিফার উপর ওকথ্য নির্যাতন । সব মুখবুঝে সহ্য করল আরিফা । পরদিন সকালেই কাউকে কিছু না বলে আরিফা জীবনকে বিয়ের প্রস্তাব জানাই । জীবনও তাতে সায় দেয় এবং দুজনে কাজী অফিস থেকে বিয়ে করে নেয় । জীবন থাকত তার বোনের বাসায় । বিয়ের পর জীবন তার বোনকে ফোন করে । বোনের পরামর্শ অনু্যায়ী আরিফা কে নিয়ে চলে যায় তার গ্রামের বাড়ি । সেখানে আরিফা জীবনের মা কয়েক ভাই এবং ভাবিদের দেখতে পায় ।

কিছুদিন ভালই কাঠছিল তাদের দাম্পত্য জীবন । কয়েকমাস পর আরিফা কোন কারণে আলমারি খুলতেই দেখতে পায় কিছু কাগজ, যেখান থেকে তার এটা জানতে বাকি থাকে না যে জীবন এস এস সি পাশও না । একথা জেনেও আরিফা কাউকে কিছু বলে না । আরিফা নিজের ভেতর কষ্ট পেতে থাকে কেননা সে জানত জীবন অনার্স পাশ । সাংসরিক জীবনের শুরুতেই পেল প্রথম ধাক্কা ।
এভাবে কিছুদিন যেতে থাকে আরিফা দেখতে পায় তার শাশুড়ী এবং ভাবিরা তার সঙ্গে আগের মতো ভাল ব্যাবহার করছে না এবং আরিফাকে দেখলেই তারা যেন কি বলাবলি শুরু করে দেয় । এসবের উদ্দেশ্য খুঁজতে গিয়ে আরিফা জানতে পারে যে জীবনের বর্তমান মা তার আসল মা নয়। তখন সে বুঝতে পারে জীবনের আপন বলতে পৃথিবীতে কেউ নেই । এটা তার ছিল আর একটা ধাক্কা ।

আস্তে আস্তে আরিফা দেখতে পায় যে ওই বাড়িতে সে একজন ঘৃনার পাত্রী হয়ে দাড়িয়েছে । আরিফা দেখতে পায় জীবন প্রায়ই রাত করে ফেরে । এখন সে আর আগের মত আরিফাকে ভালবাসে না । এভাবে কিছু দিন পার হওয়ার পর আরিফা দেখতে পায় জীবন সন্ধার সময় কয়েকটা লোক নিয়ে বাড়িতে ফেরে । আরিফা জানতে চাইলে জীবন বলে ওরা তার বন্ধু । আরিফা আর ও লক্ষ্য করে যখন জীবন ওদের নিয়ে বাসায় ঢোকে তখন আরিফাকে রুম থেকে বের করে দেয়া হয় । এরকম চলতে থাকে । সব কিছুর পরও আরিফা জীবনকে প্রচণ্ড ভালবাসত কারন জীবনই ছিল তার বাঁচার একমাত্র অবলম্বন ।
আরিফা জীবনের কাছে জানতে চাই ওদের নিয়ে সন্ধাই রুমে ঢুকে একসাথে কি করে । জীবন কোনভাবেই বলে না । কোন একদিন ওরা রুম থেকে বের হওয়ার পর আরিফা খুঁজতে থাকে ওরা কি করেছে । আরিফা খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পায় সাদা সাদা কাগজে কিছু পদার্থ লেগে আছে । আরিফা বুঝতে পারে এগুলো নেশাজাত পদার্থ । আরিফা জীবনের মাকে সব খুলে বলে । কিন্তু জীবনের মা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয় না ।

আরিফা দেখতে পায় জীবন প্রায়ই মাতাল অবস্থায় বাড়ি ফেরে । আরিফার প্রত্যেকটি স্বপ্ন এভাবে ভেঙ্গে যেতে থাকে । জীবন এভাবেই চলতে থাকে ,সে প্রতিটা দিনই নেশা করে । কিছুদিন পর এক সন্ধাই জীবন আগের মতই মাতাল অবস্থায় বাড়ি ফেরে ,আরিফা তাকে ঘরে ঢুকিয়ে শুইয়ে দেয় । রাত কিছুটা গভীর হলে জীবনের মোবাইলে একটা কল আসে । জীবন কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায় । আরিফা তাকে আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু জীবন তার কত্থা না শুনে চলে যেতে থাকে । এসময় আরিফা তার শাশুড়িকে জানায় ,তার শাশুড়ি জীবনকে আটকানোর কোন চেষ্টা করে না । বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় জীবন ।

পর দিন সকাল গড়িয়ে দুফুর হয়ে যায় জীবন আর ফিরে আসে না । আরিফা আশেপাশে খোজ নেয় কিন্তু জীবনের কোন সন্ধান সে পাই না । তিন দিন যাওয়ার পরও জীবন বাড়ী ফেরে নি । পরদিন কোন একটি ডাস্টবিনে একটি লাশ পড়ে আছে এরকমই খবর শুনতে পায় আরিফা । সেখানে ছুটে যায় আরিফা দেখতে পারে সেটা জীবনের লাশ । লাশের গা থেকে গন্ধ বের হচ্ছে । যে কেউ দেখে চিনতে পারবে না যে এটা জীবনের লাশ । আরিফা জীবনের মাথাটাকে কোলের ভেতর নিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে । তার কান্নায় আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে যেতে থাকে । সে ভাবতে থাকে পৃথিবী থেকে আজ সে সব হারিয়ে ফেলেছে । সব কিছু বিসর্জন দিয়ে যে আরিফা চলে এসেছিল জীবনের সাথে সেই আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল । কি নিয়ে বাঁচবে আরিফা । এভাবে জিবন্ত কবর হয়ে গেল একটা ভালবাসার , যে ভালবাসার টানে নিজের মাকে ফেলে রেখে চলে এসেছিল আরিফা ।

আবার নতুন করে ক্লাস-এ আসা শুরু করেছে আরিফা, তবে হাজারো মানুষের ভিড়ে এখনও জীবনকেই খুজে চলেছে ও । এজন্যই হয়ত দূর আকাশপানে ওইভাবে চেয়ে থাকে ।
--হয়ত জীবন্ত মেধাবী আরিফার জীবন্ত এই মেধা কোন একদিন কাজে লাগবে দেশের তরে .......।।


১৫'জুন-২০১৫
মোঃ আলমগীর হোসেন
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০৩

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ভাল লাগলো আপনার আরিফা ও জীবনের কাহিনী

০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫৫

মায়ের ভালবাসা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ....।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.