নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধ্রুবতারা

এম বি ফয়েজ

সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন করা কোন ব্লগারের কাম্য হওয়া উচিত নহে।

এম বি ফয়েজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“বড়োল্যাণ্ড নরমেধ যজ্ঞের নেপত্য কাহিনী” গোয়েন্দা-রিপোর্টঃ বাকসা নরসংহারের পেছনে এনডিএফবি; আর মন্ত্রী বলছেন প্রাক্তন বিএলটি!

০৯ ই মে, ২০১৪ রাত ২:৫৫

গোয়াহাটী ৮মে।। এম বি ফয়েজ।। হিংসার নির্দয় ছোবলে অর্ধ-শতাধিক নিরীহ সংখ্যালঘু মানুষের প্রান নিমেষে কেড়ে নেয়া অসমের বড়োল্যাণ্ড এলাকাধীন বাকসা জেলা নরসংহারের পেছনে বড়ো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এনডিএফবি-র সংবিজিত গোষ্ঠীর স্বঘোষিত উপ-সেনাধ্যক্ষ বিষ্ণু গোয়ারি ওরফে জি, বিদাই নর-সংহার চালিয়েছে বলে নিরাপত্তা বাহিনী প্রায় এক প্রকার নিশ্চিত। দুর্ধর্ষ এই জঙ্গির মাথার দাম ধার্য রয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা। হামলা চালানো তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাকসা জেলায় এখন পর্যন্ত পঁচিশ জন এই নর-সংহারে প্রাণ হারিয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, বিদাই নিজে এই হামলা চালিয়েছে। সে খুবই ডেঞ্জারাস, নির্মম এবং দুর্ধর্ষ। আমাদের সন্দেহ, হামলা চালানোর জন্য সে ভূটান থেকে নেমে এসেছে। দুই বন-কর্মীর সহায়তা নিয়েছে। এই দুই বন-কর্মী তার গাইড হিসেবে কাজ করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সন্দেহ ঘনীভূত হওয়ার অন্যতম কারন সে বাকসা জেলার রাস্তাঘাট সহ ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে ভালভাবে ওয়াকিবহাল। বাকসা জেলার লাবডাংগিগুড়ির ময়নামহাতা গ্রামের বাসিন্দা সে এবং চিরাং জেলার সীমান্ত ঘেষা ময়নামহাতা গ্রাম। সে এখানে হাইয়ার সেকেণ্ডারী অবধি পড়াশোনা করেছে। তার স্ত্রী নয়না গোয়ারি মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেছে। ভারতের এক ঘরোয়া এয়ারলাইন্সের এয়ার হোষ্টেস পদে রয়েছে নয়নার বোন। ঐ আধিকারিক আরও বলেন, নয়নার সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে বাকসা জেলার গোবর্ধনা থানার অন্তর্গত মইনাপথার থেকে নয়নাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ঐ সময় তার কাছ থেকে দুটি হ্যাণ্ড গ্রেনেড এবং দশটি এ কে ৪৭ রাইফেল জব্দ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, এনডিএফবি বাকসা নরসংহারে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। ২০০৮ সালের গোয়াহাটী ধারা বিস্ফোরন মামলার অন্যতম মূল অভিযুক্ত এই ‘বিদাই’। সে অনেকবার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরও হামলা চালিয়েছে। ২০১২ সালের জুলাই মাসে চিরাং জেলায় হামলা চালিয়ে সে সশস্ত্র সীমা বলের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমাণ্ডেন্ট ও আরও তিন জওয়ানকে হত্যা করে। এছাড়াও ২০১১ সালের মার্চ মাসে কোকড়াঝাড় থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর ভারত-ভূটান সীমান্তবর্তী উল্টোপানিতে হামলা চালায় এক বিএসএফ কনভয়ে। এতে ৮জন বিএসএফ জওয়ান নিহত এবং ১০জন জখম হন। এনডিএফবি সংবিজিত গোষ্ঠীর ১৫জন জঙ্গিকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরতে পারলে পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষনা করেছে অসম পুলিশ। এ বছরের প্রথম দিকে পুলিশ যে ১৫জনের মোষ্ট-ওয়ান্টেড জঙ্গির তালিকা প্রকাশ করেছে এরমধ্যে বিদাই-র নাম রয়েছে। ওই আধিকারিক আরোও বলেন, রঞ্জন দৈমারি যখন সংঘর্ষ বিরতি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তখন কিছু সময়ের জন্য বিদাই মূলস্রোতে ফিরে এসেছিল। পরে ফের সে সংবিজিত গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মেলায়। গতিকে, বাকসা নরসংহারের পেছনে তার হাত থাকাটা নিশ্চিত বলা চলে।



অন্যদিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুন গগৈ মন্ত্রী-সভার অন্যতম সদস্য তথা সীমান্ত উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ছিদ্দেক আহমেদ বড়োভুমিতে নারকীয় হত্যালীলার পেছনে কংগ্রেসের শরিক দল বিপিএফের হাত থাকার কথা বার বার বলে আসছেন। বড়োল্যাণ্ডে কোনও অবৈধ অস্ত্র নেই বলে বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা মহিলারী দাবি করার পর গত ৭ই মে ছিদ্দেক বলেছেন, বিটিএডি-তে বনকর্মী হিসেবে কাজ করা প্রাক্তন বিএলটি ক্যাডারদের কাছে থাকা বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করেই নিরীহ সংখ্যালঘু লোকদের হত্যা করা হয়েছে। আর এর প্রমানও মিলেছে অনেক জায়গায়। স্থানীয় বাসিন্দারাই তাদের অনেককে শনাক্ত করেছেন। এছাড়া, ঘটনাস্থলে জনৈক বনকর্মীর সরকারী ফটো-আই-ডি-কার্ড সহ ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্টের নামে বরাব্দকৃত বন্দুকের গুলির খালি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে কয়েকজন বনকর্মীকে গ্রেপ্তারও করেছে। আর ব্যাগ থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ার ভয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ফরেষ্ট রেঞ্জার (যার পরিচালনায় গোটা অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে) মিঃ ব্রহ্মকে রাতারাতি পুলিশি হেফাজত থেকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মাত্র কয়েকদিন আগে রাজ্যের অন্য কোন একটি ফরেষ্ট রেঞ্জ থেকে রেঞ্জার পদে পদোন্নতি দিয়ে কার স্বার্থে অকাল-কুশমাণ্ডু মিঃ ব্রহ্মকে বিটিএডি-তে স্থানান্তর করা হ’ল? এ প্রশ্নের জবাব মেলা ভার! আর ঐ রেঞ্জার বরাব্দকৃত বন্দুকের গুলির হিসাব মিলিয়ে দিতে পারবেন? অবশ্যই............না! কারন বড়োল্যাণ্ডের নরসংহারে ফরেষ্টের গুলি-ই………….! বলা বাহুল্য, গত ২২শে এপ্রিল বিটিএডিতে এক নির্বাচনী প্রচারে বিপিএফ দলের এম পি পদপ্রার্থী মিঃ চন্দন ব্রহ্ম প্রকাশ্যে ঘোষনা করেন যে, তিনি যদি এবারের নির্বাচনে জয়ী হ’তে না পারেন তবে বিটিএডি-তে ভূমিকম্প অনুভূত হবে। তারপর, বিটিএডি-তে নির্বাচনের পর বিপিএফ দলের বিধায়িকা প্রমিলা রানী ব্রহ্ম অপর এক জনসভায় উস্কানি-মুলক ভাষন দান কালে বলেন, “এবার মুসলিমরা আমাদেরকে ভোট দেয়নি।“ এর থেকেই প্রমানিত এই গোটা হিংসার পেছনে বিপিএফ-ই জড়িত। বিপিএফ-এর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনে ছিদ্দেক আহমেদ বলেছেন, বিপিএফ নেতৃত্বের তর্জনী আঙ্গুল হেলনে বিটিএডির বনকর্মীরা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামে গিয়ে নির্বিচারে এলোপাতারি গুলি বর্ষন করেছে। গত বৃহস্পতিবার (৩মে, ২০১৪) রাত থেকে বিটিএডিতে যে রক্তের হোলি খেলা হয়েছে তা সম্পূর্ন নির্বাচনোত্তর হিংসা; এতে অন্য কোনও কারন নেই। ঘটনার পরই বড়োভূমিতে গিয়ে চোখের সামনে তিনি দেখে এসেছেন হিংসার দাবানল। ফিরে এসেই বিপিএফের সঙ্গে মিত্রতা ভঙ্গের পাশাপাশি প্রমিলা রানী ব্রহ্মকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছিলেন। তবে ছিদ্দেকের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুন গগৈ। তবে গতকাল (৭মে, ২০১৪) মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং বড়োভূমিতে পা দিয়ে নিজেও শুনে এসেছেন, বিপিএফের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ক্ষোভের কথা। তাই বিটিএডিতে দাঁড়িয়েই বলেছেন, হিংসার সঙ্গে বিপিএফ জড়িত থাকার প্রমান মিললে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সম্পর্ক শেষ করে দেবেন। আর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত জনৈক বন-কর্মীর ফটো-আই-ডি-কার্ডটিও মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন স্থানীয় জনসাধারন।



গগৈ মন্ত্রীসভার অপর এক হেভি-ওয়েট পার্সোন্যালিটি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড০ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সহিত বিপিএফের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার কথা বলেছেন। তিনি দিল্লীতে দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিটিএডি-তে ১৬মে-র পর আরোও ভয়ানক হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে বিপিএফের সঙ্গে মিত্রতার কথাটি পরোক্ষ ভাবে পূনর্বিবেচনা করার মত পোষন করেন। তাঁর মতে, বড়োল্যাণ্ডে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন অত্যন্ত জরুরী; যার জন্য পঞ্চায়েত নির্বাচন করা অনিবার্য্য। কিন্তু হাগ্রামা মহিলারী পঞ্চায়েত নির্বাচন না করে নিজের দলের মধ্য থেকে কিছু লোক বেচে নিয়ে স্ব-ঘোষিত গ্রাম-পঞ্চায়েত গঠন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরোও বলেন, কংগ্রেসকে আগে ঠিক করতে হবে, “বড়োল্যাণ্ড থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে, কি না! পরে মিত্রতার প্রশ্ন। অর্থাৎ ড০ শর্মা ইঙ্গিতে এটাই বুঝাতে চান যে, হাগ্রামা মহিলারী যেহেতু বিটিএডির সর্ব-কর্ত্রিত্বময় অধিশ্বর, গতিকে তাঁর অজান্তে সেখানে বনকর্মীদের নরসংহার—এ কথাটি কোন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ কোন কিছুতেই মেনে নিতে পারে না।



এম বি ফয়েজ।

গোয়াহাটী, অসম, ভারত।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.