| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিনের পর দিন ভূতের শোকে কাতর হতে লাগল নিশাত। সে নাওয়া-খাওয়া এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছে। ভূতের জন্য এমন শোক পালন করার নজির আর নেই। এরকম লোক পৃথিবীতে বোধহয় একজনই আছে যার নামÑ নিশাত। তার শরীর মন ক্রমশ দুর্বল হতে লাগল। মাথা ভর্তি উসকু খুসকু চুলে চেহারার মধ্যে রুèতার একটা ছাপ ফুটে উঠেছে। বন্ধুরা বলছে, আরো ধ্যাত বোকা, ভূতের জন্য কেউ এমন শোক পালন করে নাকি। তুই কি গাধা নাকি বাঁনর যে কিছুই বুঝিস না। নিশাত বলল, আরে তোরা যে যাই বলিস ভাইÑ আমার বোবা ভূতকে চাই। আমি কিছুতেই যে বোবা ভূতটিকে ভুলতে পারছি না। সে আমার অনেক সুখ-দুঃখের সাথী। তাকে ছাড়া আমি এখন কিভাবে থাকি। এভাবে ক্রমাগত বকেই চলছে নিশাত। বকার পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মা-বাবা নিশাতকে নিয়ে বিরাট টেনশনে পড়ে গেলেন। নিশাত তাদের একমাত্র ছেলে। কিভাবে যে কি হয়ে গেল। কিভাবে তাকে বোবা ভূতটি পেয়ে গেল তা বলতে পারব না। সে জন্য একটু পিছনের দিকে যেতে হবে।
সে বছর বন্যায় চারদিক ডুবে গেল। কি গ্রাম কি গঞ্জ সবই পানিতে তলিয়ে গেল। গোয়ালের গুরু খোয়াড়ের হাস মুরগি সবই ভেসে গেল পানিতে। দশদিন পর জোয়ারের পানি নামা শুরু হয়েছে। বন্যার পানির সাথে প্রচুর মাছ উঠেছে চরের জমিতে। সে মাছ মানুষের পুকুরে আটকা পড়েছে। যারা জমিতে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের ভাগ্যে শনির দশা নেমে এসেছে। কারণ, তারা এখন বিভিন্ন জমির আইলে গৃহস্থের ফাতানো জালে আটকা পড়তেছে। আমাবশ্যার এক রাতে নিশাত তার বাবার সাথে গেল মাছ ধরতে। বাবা তাকে উঁচু একটা ঢিবির উপর দাঁড় করিয়ে একটু দূরে গেল জাল মারতে। যাওয়ার সময় নিশাতের হাতে বড় একটা কুপি দিয়ে গেল। চারিদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। তার মধ্যে নিশাত কুপি হাতে ঢিবির উপর দাঁড়িয়ে আছে। কুপির আলো থাকায় ছেলের জন্য তেমন টেনশন হলো না। কারণ, আগুনকে ভূতেরা ভয় পায়। আগুন থাকলে খারাপ জিন ভূত মানুষের কাছে ঘেঁষতে পারে না। এদিকে বাতাস শুরু হয়েছে। বাতাসের সাথে কুপিটির আগুন নিভে গেল। কুপি নিভে যাওয়ায় নিশাত একটু ভয় পেল। নিশাতের বাম হাতে ছিল মাছ রাখার ঢুলা। কুপি নিভার সাথে সাথে একটা মেছো ভূত নিশাতের কাছে এল। বলল, মাছ খাব... মাছ দে...একথা বলেই মেছো ভূতটি নিশাতের হাত থেকে মাছের ঢুলাটি নিয়ে গেল। নিশাত বাবা বলে ডাক দিল। নিশাতের বাবা ঢিবির কাছে এসে ছেলেকে বেহুশ অবস্থায় দেখতে পেল। নিশাতকে পাছাকোলা করে বাড়িতে নিয়ে গেল। নিশাতের এ অবস্থায় দেখে নিশাতের মা মনোয়ারা বেগম কান্নাকাটি শুরু করল। সেই থেকে নিশাত মেছো ভূতের জন্য পাগল পারা হয়ে বকাবকি শুরু করল। 
©somewhere in net ltd.