নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‌হানাহানি ছেড়ে দিন, কলম হাতে তুলে নিন

আলী আকবর ভুঁইয়া

লেখালেখি হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।

আলী আকবর ভুঁইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুমাল

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০৩



“বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুনা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ রকম আতরের গন্ধ হবে।”
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

আমার একটা রুমাল ছিল। সেই রুমালটিকে আমি অনেক ভালোবাসতাম। রুমালটিও আমাকে অনেক ভালোবাসত। রুমালটিকে আমি পকেটে পকেটে রাখতাম। একদিন সেই রুমালটি হারিয়ে গেল। বন্ধু বন্ধুকে এত ভালোবাসে না। স্বামী তার স্ত্রীকেও এত ভালোবাসে না - রুমালটি আমাকে যতটা ভালোবাসে। কারণ, সে আমার গায়ের ঘাম চুষে নেয়। মুখের ধুলিবালি পরিস্কার করে। সে সব সময় আমার সাথে সাথে থাকে। যখন যেখানে যাই রুমালটি আমার সাথে সাথে থাকে। কখনো তার অবস্থান হয় আমার পকেটের ভেতর আবার কখনোবা হাতের মুঠোয়। তাকে ছাড়া আমি যেন চলতেই পারি না। সে আর আমি যেন এক আত্মা এক প্রাণ হয়ে গেছি। সে আমার সাথে ঘোরাঘুরি করে, শাপিংমলে যায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অথবা পল্টন ময়দানে রাজনীতিকদের ফাঁকা গলাবাজি শুনতে যায়।

বলছিলাম আমাম প্রিয় হাত রুমালটির কথা। সাধারণত রুমালটিকে সব সময় সাথে রাখার চেষ্টা করি। অফিস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা পাবলিক লাইব্রেরীতে কোথাও ঘুরতে বের হলে সে আমার সাথে থাকে। তাকে ছাড়া আমার একদম চলে না। বন্ধু না হলেও চলে তবে রুমালটি ছাড়া আমার চলেই না। তার সাথে যেন আমার যুগ যুগের সম্পর্ক।

সেই রুমালটি একদিন হারিয়ে গেল। তখন আমার সেকি দুশ্চিন্তা। না জানি সে এখন কোথায় আছে। রুমালটির চিন্তায় সারারাত আমার ঘুম হলো না। একটু ঘুমানোর পর জেগি উঠলেই রুমালটির কথা মনে পড়ে যায়। ইস্ আমার প্রিয়তমা রুমালটি এখন কোথায় আছে কি করছে তা আমি কিচ্ছুই জানি না। সে কি আমাকে ছাড়া ভালো আছে নাকি কান্নাকাটি করছে। তার কান্নার আওয়াজ কি কারো কানে যাচ্ছে নাকি রাতের অন্ধকারে বাতাসের সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে।

আমি তখন নীলতে হাইস্কুলে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের উপর ছয় মাসের একটা কোর্স করতাম। সপ্তাহে দুইদিন (শুক্র-শনি) আমার কাশ হতো। শুক্রবার কাশশেষে রুমালটিকে ভুলে রেখে এসেছিলাম। বাসে উঠে পকেটে হাত দিয়ে দেখি রুমাল নেই। তখন মনে করেছিলাম রুমালটি হয়তো রাস্তায় পড়ে গেছে। ভেবেছিলাম রুমালটিকে আর খুঁজে পাব না। যথারীতি শনিবার কাশে গিয়ে রুমালটি খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে কোথায়ও পেলাম না। এমন সময় স্যার চলে আসাতে কাশ শুরু হয়ে গেছে।

আমি বসলাম প্রথম বেঞ্চে। প্রথম বেঞ্চে বসে এদিন ওদিন রুমালটি খুঁজতে লাগলাম। স্যারের লেকচারের দিকে আমার মন নেই। আমার চোখ একবার জানালার বাহিরে যায় তো এবার ভিতরে আসে। আমি জানালা দিয়ে বৈশাখের আকাশ দেখছি। পাখির সাথে ডানা মেলে আকাশে উড়ছি। অবুঝ এ মন শুধুই পরীদের কথা ভাবে। এভাবে একবার চোখ টেবিলের নিচে যায় তো একবার চেয়ারের তলে যায়। হঠাৎ টেবিলের নিচে আমার চোখ আঁটকে গেল। দেখলাম রুমালটি আমার দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। পিটপিট করে বিড়ালের মতো চেয়ে আছে। তার কালো শরীর সাদা হয়ে গেছে। শনিবার স্যার ডাস্টার আনতে ভুলে গেছে। তাই স্যার আমার রুমালটিকে ডাস্টার হিসেবে ব্যবহার করেছে। রুমালটির সে কি নাকানি চুবানি অবস্থা। দেখে আমার অসহ্য লাগছিল। চোখ দিয়ে কান্না বের হচ্ছিল। আমার স্বাদের রুমালের এ করুন দশা আমাকে এভাবে নিজ চোখে দেখতে হবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি কোনোদিন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২৭

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: রুমালের জন্য শুভ কামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.