নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০

আউলাঝাউলা পাগল

নিজেরে নিজেই চিনবার পারিনা,মাইনষে আর কি চিনব?

আউলাঝাউলা পাগল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাইকো-রোমান্টিক গল্পঃ রিভেঞ্জ 2 - ডেথ ইন দি ডোর

০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:০৯





দরজার কলিং বেল বেজে উঠল। চোখ মুছতে মুছতে দরজার দিকে এগিয়ে গেল আইরিন। দরজা খুলে একভদ্রলোককে একতোড়া গোলাপ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। লোকটি ধূসর রঙের কমপ্লিট স্যুট পরে আছেন, মাথায় ব্যাক ব্রাশ করে চুল ঝুটি বাঁধা, মুখ ক্লিন সেভ করা,চোখে সানগ্লাস।লোকটাকে আইরিন চিনতে পারল। ওর হাসবেন্ড নাবিল এর বস। এখন আর হয়ত নাবিলকে হাসবেন্ড বলা যাবে না। এক্স-হাসবেন্ড বলতে হবে। কারণ একটু আগেই নাবিল ওকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে। ওইটা পড়েই আইরিন কান্না করছিল,সাথে একটা ডিভিডি ক্যাসেটও ছিল। ওইটা দেখে আইরিনের আত্বহত্যা করতে ইচ্ছা করছিল।
- হ্যাপি এনেভারসারি
ভদ্রলোকের কথায় হুস ফিরল আইরিনের, উনার যেই কয়টা ছবি আইরিন দেখেছে সবগুলা ছবিতেই ভদ্রলোক সানগ্লাস পরে ছিলেন।
- এনেভারসারি! কিসের এনেভারসারি?
ভদ্রলোক সানগ্লাস খুলে বলল
- আজ আমাদের ১৫তম ভালবাসা দিবস
এই চোখ দুটাকে আইরিন কখনও ভুলতে পারবে না, এই ব্যাক্তি আর কেউ না, অমি, যার সাথে ওর তিন বছরের রিলেশন ছিল, শুধু বাবার দিকে তাকিয়ে ও ওদের সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে নাবিলকে বিয়ে করেছে ১২ বছর আগে। ওদের বিয়ে অনুষ্ঠানে অমি এসেছিল। এসে শুধু এক লাইন কথা বলে চলে গিয়েছিল।
“আমি আবার ফিরে আসব, মৃত্যু হয়ে ফিরে এসে তোমার দরজায় দাঁড়াব।“
এর পর আর অনেক চেষ্টা করেও কেউ অমিকে খুজে পায় নি কেউ, যেন হাওয়ায় মিলেয়ে গেছে।
আইরিন জমে কাঠ হয়ে গেছে, আসলেই ওর দরজায় আজ ও সাক্ষাৎ মৃত্যুকে দেখতে পাচ্ছে।
- আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
- অ...অ...অবশ্যই
-------------------------------------------------------------------------------------------
অফিসের কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না, মাত্র দুই মাস আগে নতুন এসিস্টেন্ট ম্যানেজার হিসাবে জয়েন করা নাবিল সাহেব কোন যোগ্যতায় সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন এত গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিঙে। যেখানে কোম্পানির মালিক স্বয়ং মিঃ মল্লিক যাওয়ার কথা। তিনি কোন এক অজানা কারনে মিটিঙে যাচ্ছেন না। অফিসে এত যোগ্য লোক থাকার মিঃ মল্লিক পাঠাচ্ছেন নাবিল সাহেবকে। গত দুই মাসে তিনি আহামরি এমন কোন পারফরমেন্স দেখান নাই যে মিঃ মল্লিক ওই কারনেই তাকে এই মিটিঙে পাঠাবে। তাছাড়া এই সফরে তার সহকারী হিসাবে যাচ্ছেন এডমিন এক্সিকিউটিভ মারিয়া। এই মেয়েটা একটা চলমান আইটেম বম্ব।যে কেউ একবার দেখলে দ্বিতীয়বার তাকাতে বাধ্য। বয়স ২৫/২৬ হবে। এখনও অবিবাহিত। যেমন সুন্দরী তেমন বুদ্ধিমতী।
নাবিল সাহেব এবং মারিয়া শুধু এই দুইজন যাচ্ছেন সুইজারল্যান্ড,তাই সবাই আফসোস করছে, যদি নাবিল সাহেবের জায়গায় তারা যেতে পারতেন।
নির্ধারিত দিনের ফ্লাইটে তারা সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে উড়াল দিল। একটা ফোর স্টার হোটেলে দুইজনের জন্য আলাদা আলাদা দুইটা রুম বুকিং দেয়া আছে। কিন্তু হোটেলে যেয়ে জানতে পারল হোটেল কর্তৃপক্ষের ভুলের কারনে তাঁদের নামে এন্ট্রি করা রুম অন্য দুইজনের জন্য বরাদ্ধ হয়ে গেছে।তারা অতি তারাতারি এই সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে।আপাতত তাঁদের জন্য ডাবল বেডের একটা রুমের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। মারিয়া নাবিল সাহেব কে অনুরোধ করল যে তারা দুইজনেই তো লং জার্নিতে টায়ার্ড, তাই নাবিল সাহেব যেন মারিয়ার সাথে এসে ওই রুমেই বিশ্রাম নেয়, মারিয়ার সমস্যা হবে না। অগাত্য নাবিল সাহেব তাই করলেন।হোটেল কর্তৃপক্ষ ওই দিন তাদেরকে নতুন কোন রুম ব্যাবস্থা করে দিতে পারে নাই। শহরটিতে একটা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হচ্ছে তাই আগামি ৩-৪ দিন কোন রুম খালি থাকবে না।
কোন উপায় না দেখে নাবিল সাহেব এবং মারিয়া একি রুমেই আলাদা আলাদা বেডে থাকতে লাগল। সুইজারল্যান্ডের এক কোম্পানির সাথে মল্লিক গ্রুপ নতুন একটা চুক্তি করছে, মিটিং গুলো প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত হয়। এরই ভিতর কাগজ যাচাই বাছাই আর আন্যান্য কাজ। ফলে দুইটার পর থেকেই নাবিল সাহেব আর মারিয়া একসাথে ঘুরাঘুরি আর খাওয়া দাওয়া করে দিন কাটান। ২/৩ দিনের ভিতর তারা দুইজনেই অনেক ফ্রি হয়ে গেল, অবশ্য এই ফ্রি হওয়ায় মারিয়ার ভূমিকাই প্রধান ছিল।
৫ম দিন নাবিল সাহেব আলাদা রুম পেলেন, আবশ্য আর মাত্র দুই দিন পরই তারা বাংলাদেশ ফিরে যাচ্ছেন।
সুইজারল্যান্ড এ শেষ দিন ডিনারে পর মারিয়া নাবিল সাহেবের রুমে গেল।
- নাবিল সাহেব আমরাতো কালই বাংলাদেশ চলে যাচ্ছি, আসুন আজ রাতটা আমরা উপভোগ করি
- উপভোগ করি মানে? কিভাবে? এই কয়দিন তো অনেক ঘুরাঘুরি করলাম, কম উপভোগ তো করিনি
- আসলে আমি এই উপভোগ এর কথা বলিনি, আমি বলছিলাম আমি সারা রাত আপনার সাথে কাটাতে চাইছি,আমি এই কয়দিনে আপনার উপর দুর্বল হয়ে গেছি
কথাটা বলেই মারিয়া নাবিল সাহেবের হাত ধরে ফেলল। নাবিল সাহেব হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে বললঃ
- দেখুন মিস মারিয়া এটা সম্ভব না,আমি বিবাহিত,আপনার আমার বয়সের অনেক পার্থক্য
- আপনি আমার অনেক বড় এতে আমার কোন সমস্যা নেই, তাছাড়া আমি আপনার সাথে শুধু আজ রাতেটা কাটাতে চাচ্ছি না, আমি আপনাকে বিয়েও করতে চাচ্ছি। আর আপনি যে স্ত্রীর কথা বলছেন সে কি গত বার বছরে আপনাকে কোন সন্তান দিতে পেরেছে? শুনেছেন আপনি কোন বাবা ডাক? আপনি আমাকে বলেছেন সমস্যা আপনার স্ত্রীর। আমি আপানার ঘর সন্তানে ভরে দিব।
কথাটা বলতে বলতেই মারিয়া ঝাপিয়ে পরল নাবিল সাহেবের উপর।
এইরকম মেয়েকে অগ্রায্য করার ক্ষমতা নাবিল সাহেবের মত সাধারণ মানুষের নেই।
------------------------------------------------------------------------------------------
চার মাস আগেঃ
মিঃ মল্লিক আজ নিজে ইন্টারভিউ নিচ্ছেন “এডমিন এক্সিকিউটিভ” পোষ্টের। কিন্তু উনি সচারাচর ইন্টারভিউ নেন না। মিঃ মল্লিকের অফিস কামরাটা বিশাল। তবে উনি যতক্ষন রুমে থাকেন ততক্ষণ শুধু রুমটি প্রানবন্ত থাকে।
মারিয়া শারমিন নামে এক যুবতী এসেছে ইন্টারভিউ দিতে।কালো ব্লেজারের নিচে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট।অসম্ভব রূপবতী,যৌবন যেন তার শরীর থেকে ঠিকরে পরছে।অফিসে ঢুকা মাত্রই যে দেখেছে তার মাথা ঘুরে গেছে।
মারিয়া এখন বসে আছে আছে মিঃ মল্লিকের সামনে।মারিয়ার রিসিউম খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন মিঃ মল্লিক।

- মিস মারিয়া, আপনি এখন দেশের টপ একটা ইভেন্ট ফার্মে এক্সিকিউটিভ হিসাবে আছেন,রাইট?
- ইয়েস স্যার
- ওই অর্গানাইজেশনে আপনার রেস্পন্সিবিলিটি কি কি?
- ক্লায়েন্টদের সাথে ডিল করা, আমি বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ক্লায়েন্টদেরকে কনভেন্স করে আমার ফার্মকে বিভিন্ন প্রোগ্রাম এনে দেই
- ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আমি একটা এগ্রেসিভ প্রশ্ন করতে পারি
- অফকোর্স স্যার
- গুড। আমি যতটুকু জানি আপনারা ক্লায়েন্টদের কে কনভেন্স করার জন্য তাদের সাথে বিছানায় পর্যন্ত যান?
- ইয়েস স্যার, এখন কি এই জবটা পাওয়ার জন্য আপনার সাথেও বিছানায় যেতে হবে?
- অফকোর্স নট। তবে আমাদেরও কিছু ফরেন ক্লায়েন্ট থাকে, তাদের ডিল করা অনেক টাফ, তবে আশা করি আপনার কাছে ইজি হবে। তাছাড়া মাঝে মাঝে কিছু স্পেশাল ক্লায়েন্টও থাকে।আপনাকে আমি ডাবল সেলারি দিব, সাথে হোম রেন্ট ও অন্যান্য বেনিফিট। চিন্তা করে দেখুন, পোস্টটা আফিশিয়াল, আপনি একটা মর্যাদাপুর্ণ পজিশন পাচ্ছেন,সাথে হাই সেলারি, তবে আমার কথামত এসাইনমেন্ট গুলা কমপ্লিট করতে হবে, রাজি?
- হোয়াই নট? হু উইল লিভ দিস ড্রিম অপুরচুনেটি!
- ইউ আর নট অনলি বিউটিফুল, আলসো ট্যালেন্ট
- থ্যাংক উ স্যার।
মিস মারিয়া এপয়েন্ট পাওয়ার এক মাসের মাথায় নাবিল সাহেবকে অন্য একটা কোম্পানি থেকে এক কথায় উরিয়ে এনে এসিস্টেন্ট ম্যনেজার হিসাবে মিঃ মল্লিক এই অফিসে নিয়োগ দিলেন।
---------------------------------------------------------------------------------------
নিজের সোফায় বসে আইরিন আবার চোখ মুছল।
অমি কথা বলা শুরু করলঃ
- মিঃ নাবিল তাহলে তোমাকে তালাক দিল? যাকে বিয়ে করার জন্য তুমি তিন বছরের রিলেশন ছিন্ন করলা সে তোমাকে এই প্রতিদান দিল!
- হু, যাকে বিয়ে করেছে সে আপনার অফিসের এমপ্লয়ী
আইরিন এখনও অমির সামনে সহজ হতে পারছে না, তাই আপনি আপনি করে কথা বলছে।
- গ্রেট, ডিভিডিটা তাহলে দেখেছ, আমার কষ্ট সার্থক হল
- মানে?
- মানে? একজন নতুন ব্যাক্তিকে একজন সুন্দরী যুবতীর সাথে এত রোমান্টিক একটা দেশে মিটিঙে পাঠালাম তার কোন উদ্দেশ্য থাকবে না?
- তার মানে সব আপনার সাজানো!
- এতক্ষণে উকিল সাহেবার মাথা খুলছে, একজন উকিল হিসাবে তুমি এখন আমার নামে মামলাও করতে পার।
- প্লান টা কত আগের?
- বলতে পার ১৫ বছর আগের
- এত পুরানো ক্ষোভ পুষে রেখেছেন?
- বাধ্য হয়ে পুষে রেখেছি, তোমার বিয়ে হবার পর আমি সবার থেকে নিজেকে আড়াল করে নেই। তারপর থেকে তিনবছর কয়েক জায়গায় চাকরি করে ভাগ্যের উন্নতি করতে পারলাম না,রাগের বশে স্মাগ্লিং এ জরিয়ে গেলাম। তখন দুহাতে অনেক টাকা। এক বছরের মাথায় পুলিশের হাতে আটক হলাম। এতে আরো ভাল হল। জেলে অনেকের সাথে সম্পর্ক হল, তারপর জামিনে বের হলাম। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয় নি, অফুরন্ত টাকা আর সম্পদ আসতে থাকল। আর গত চার বছর ধরে কালো টাকা সাদা করছি, এখন আমি গ্রুপ অফ কোম্পানির মালিক।আর এখন সুযোগের সৎ ব্যবহার করলাম।
- বিয়ে করেছেন কাকে?
- না বিয়ে করিনি, তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসানো সম্ভব না
- যাকে এত ভালবাসেন তার উপর এত বড় প্রতিশোধ নিলেন!
- যাকে যত বেশী ভালবাসা যায়,তাকে তত বেশী ঘৃণা করাও যায়
- এবার আপনি আসতে পারেন
- ১৫ বছর পর তোমার সাথে কথা বলে, ইনফ্যাক্ট তোমাকে কষ্ট দিয়ে অনেক ভাল লাগল
--------------------------------------------------------------------------------------
মিঃ মল্লিক নিজের অফিস রুমে বসে বসে পেপারে নিউজ পরছে-
“মহিলা উকিল প্রাক্তন স্বামীকে নিজ বাসায় দাওয়াত খাওয়াতে এনে বিষ প্রয়োগে হত্যা, পরে ফ্যানের সাথে গলায় কাপড় পেচিয়ে নিজের আত্বহত্যা।মহিলা মৃত্যুর আগে নিজ হাতে একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছেন, নোটটিতে উল্লেখ আছে যে, মিঃ মল্লিক নামে এক ব্যাক্তি তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী।”
মিঃ মল্লিক হাসছেন, জোরে জোরে হাসছেন, নিজের অফিস কাঁপিয়ে হাসছেন।
------সমাপ্ত------

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:২৪

শায়মা বলেছেন: মহিলা উকিলটাই নাম্বার ওয়ান বোকা!:(

০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪৯

আউলাঝাউলা পাগল বলেছেন: আপু, মহিলা উকিল চালাক বলেই সুইসাইড নোটে মিঃ মল্লিকের নাম লিখছেন। কারণ সুইসাইডকারী যদি সুইসাইড নোটে কাউকে দায়ী করেন তাহলে ওই ব্যাক্তিকে আইনের আওতায় হয়। সুইসাইড করার জন্য উৎসাহ অথবা প্ররচনা দেওয়ার জন্য ওই ব্যাক্তির ফাঁসি,যাবৎজীবন কারাদণ্ড অথবা যে কোন মেয়াদে কারাদণ্ড হতে পারে।

২| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:৫৮

শায়মা বলেছেন: তাই বলে নিজে মরবে??? ওকে নিয়েই মরতো!!!!!

১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:২৩

আউলাঝাউলা পাগল বলেছেন: ভিলেন মরে গেলে কি রিভেঞ্জ পূর্ণ হত!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.