| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-তুই আজকেও এখানে বসেছিস?
-তোমার সমস্যা হচ্ছে?
ছেলেটা আরেকটু
চেপে গিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস
করলো।রাগে আমি বাকরুদ্ধ হলাম।স্যার
ক্লাসে থাকায় সিনক্রিয়েট করতে পারলাম না
ছেলেটার নাম শাহজালাল।মানুষ
যে কতোটা কালো আর
বিশ্রী হতে পারে সেটা শাহজালালকে না দেখলে
পারতাম না।ডান হাতের
পুরোটা জুড়ে বিদঘুটে একটা তিল বসে আছে!
সারাটা বছর ফুলহাতা শার্ট পড়ে তিলটাকে ঢাকার
বৃথা চেষ্টায় লিপ্ত হয় শাহজালাল।সেদিন যখন বললাম,
"কি রে জালাইল্যা! শার্টের
হাতা টানাটানি না করে নিজের
হাতটা কেটে দিলেই পারিস"
ওইদিন আমার পাশ থেকে উঠে গিয়ে লাস্ট
বেঞ্চে বসে গিয়েছিল ছেলেটা আজও
বোধহয় সেই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে
-জালাল, তুই কি আমার পাশ
থেকে উঠবি?
-ভাই, সেকেন্ড বেঞ্চ থেকে বোর্ড
ভালো দেখা যায়।এজন্যই শুধু এখানে বসেছি
আমিতো তোমাকে বিরক্ত করছি না!!
-আমি বিরক্ত হচ্ছি! লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে বয় আর
কালা মাইনষের এতো পড়াশোনা কিসের?
শাহজালাল তখন থেকে লাস্ট বেঞ্চে বসেই ক্লাস
করতো।লাস্ট বেঞ্চের ছেলে যে প্রথম
হতে পারে, সেটা শাহজালালকে না দেখলে বিশ্বাস
করতাম না।ক্লাসের সবাই যখন কোরাস
করে কালো ছেলেটাকে উপহাস
করতাম।তখন শাহজালাল কোনো এক
বইয়ের ফাঁকে মুখ গুঁজে দিতো।একদিন সব
ঘেন্না উপেক্ষা করে ওর মাথাটা তুলে দিয়েছিলাম
আমি।ভেজা ফিজিক্স বইটা এখনো আমার
চোখে ভাসে আর
কান্নারত বিশ্রী সেই মুখটা ভিজায়
আমার চোখ।
সেবার ফাইনাল পরীক্ষায় উচ্চতর
গণিতের দিন বেশ কয়েকটা অংক বলে দিয়েছিল
জিসানকে।জিসান সেদিন বলেছিলো
- অপু, শাহজালালকে এভাবে অপমান
করাটা বোধ হয় ঠিক না।
আমি হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম জিসানকে
কিন্তু সেদিন যখন ক্লাসে মারামারি করে মাথা ফাটালাম
এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন
মিটেছিলো কালো চামড়ার শাহজালালের শরীর
থেকে।আমি তখন উপলব্ধি করেছিলাম,
কালোদেরও ভালো একটা মন আছে
ওরাও মানুষ
এরপর গেলো অনেকদিন।অতিরিক্ত
লজ্জা শাহজালালের সাথে কথা বলা থেকে বিরত
রেখেছিল আমাকে।
ক্লাস টেনের শেষ ক্লাসের দিন
লজ্জা ভাঙলো আমার।আরো ভাঙলো সাদা চামড়ার
অহংকার!! শেষ পিরিয়ডে খুব
হৈ হল্লা হচ্ছিলো।হঠাৎ স্যারের
ঘোষণা এবং মাইক
হাতে দাঁড়ানো ছেলেটাকে দেখে চুপচাপ
হয়ে গেলো সবাই।শাহজালালের কন্ঠে আবেগ
ঝরছিলো
".....আমি কালো দেখে তোমরা সবাই
আমাকে ঘৃণা করো
অথচ দেখো,
আমি ইচ্ছা করে কালো হইনি
আল্লাহ
আমাকে বানিয়েছেন।আল্লাহর
সৃষ্টিকে ঘৃণা করা কি উচিত?
আমি মাঝেমধ্যে খুব হীনমন্যতায়
ভুগতাম।কিন্তু তোমরাই
আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিলা উপহাসের
আড়ালে! এজন্য তোমাদের অসংখ্য ধন্যবাদ.....
মানুষ মানুষের কাছে কি চায় জানো? একটু ভালোবাসা
কিন্তু
তোমরা মানুষের মধ্যেই জটিল
একটা দেয়াল গড়ে তুলেছো।এপারের
ভালোবাসা ওপারে যাবে না!! এমন একটা ব্যাপার কিন্তু
দেখো, আমরা সবাই-ই মানুষ আমাদের সবার
দেহে বইছে লাল রক্ত।তোমরা বিশ্বাস করো না?
আমার রক্ত যে লাল? আচ্ছা দেখি তাহলে,
কালোদের রক্ত লাল কিনা! "
এটুকু বলেই শাহজালাল ছোট্ট
একটা ব্লেড বের করলো পকেট থেকে
সেকেন্ড বেঞ্চ থেকে আমি স্পষ্ট
দেখতে পাচ্ছিলাম ব্লেডটা।স্যার
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও
আমি উঠে এলাম বেঞ্চ থেকে
-নাটক করস? তোর রক্ত লাল
এইটা হাত কেঁটে দেখাতে হবে?
আচ্ছা ...তাইলে আমার হাত কাট।তুই
না আমাকে রক্ত দিছিলি? কাট...আমারটা কাট
কালো বর্ণের ঝাপসা শাহজালাল
ব্লেডটা ফেলে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো
হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো পুরো ক্লাস।
সবাই যেন কোরাস
করে জানিয়ে দিচ্ছে পুরো পৃথিবীকে ....
"কালোরাও মানুষওদের রক্তও টকটকে লাল"
©somewhere in net ltd.