নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"মরুর পাখি\" এর দ্বিতীয় ব্লগ \"জুলকার নাঈন\"। \"মরুর পাখি\" -ই- \"জুলকার নাঈন\"।

মোঃ জুলকার নাঈন

ভাল আছি ভাল থেকো- আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ। [email protected]

মোঃ জুলকার নাঈন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রসুনের ভেতর ইমানের গল্প

০১ লা নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৪

পরহেজগার রহিমা বেগম তার সপ্তম শ্রেনীতে পড়া একমাত্র ছেলেকে নিয়ে রংপুরের কুকরুলে বসবাস করেন। কর্মসু্ত্রে ওনার স্বামী গত পাঁচ বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেষা গ্রাম নরেন্দ্রপুরে থাকেন। আজ শুক্রবার, সকালের নাস্তা শেষে মোড়ের বাজার থেকে ছেলেটাকে দিয়ে আধা কেজি গুরুর মাংস এবং বুটের ডাল আনিয়েছেন। এখন প্রায় দুপুর বারোটা বেজে পচিশ মিনিট। রান্না প্রায় শেষ, বুটের ডালের সাথে গরুর মাংস রান্নার ঘ্রান বাড়ির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। ছেলেটার ক্ষুধা যেন কয়েকগুন বেড়ে গেছে, খুশিতে নাচতে নাচতে গোসলে গেল। গোসল সেরে আসতেই রহিমা বেগম স্ত্রী-করা গরম পান্জাবী ছেলের গায়ে পরিয়ে দিলেন, পান্জাবীর হাতাগুলি কবজির উপর পর্যন্ত গুটিয়ে দিলেন, দু-চোখে সুরমা এবং কনুইয়ে আর কানের পেছনে আতর লাগিয়ে দিলেন। টুপির মাঝখানে জোরেসোরে একটা ফুঁ দিয়ে, ছেলের মাথায় পরিয়ে দিলেন। সবশেষে মুখে বিড়বিড় করে কি যেন একটা সুরা পড়েই ছেলের বুকে ফুঁ দিয়ে হাতে দশ টাকার নোট ধরিয়ে দিলেন মসজিদের দান বাক্সে ফেলার জন্য। আট বছর বয়স থেকে প্রতি শুক্রবার ছেলেটা কুকরুল গলাকাটা মোড়ের পাশদিয়ে হেঁটে হেঁটে বায়তুল হুদা জামে মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। এদিকে রহিমা বেগম গোসল শেষে হাতে একগ্লাস পানি নিয়ে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে বসলেন। প্রতি শুক্রবার নিয়ম করে নামাজ শেষে দোয়া দরুদ পড়ে এই গ্লাসে ফুঁ দিয়ে নিজে খান এবং ছেলেটাকেও খাওয়ান। আজ নামাজ শেষে তাসবিহ এবং দোয়া দরুদ পড়ার সময় হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল। রহিমা বিবির বড় ভাই নেফাত আলী কল দিয়েছেন। বছরে একবারও কল দেয় না, আজ কি মনে করে! ভাইজান- আস্সালামু আলাইকুম, নেফাত আলী সালামের উত্তর না দিয়ে হড়হড় করে বলল, বইন তুই এলায় বাড়িত চলি আয় হামার মায়ের জান যায়-যায় করোচে। তুই আসি মাওক আর দেখপ্যার পারিস কি না পারিস!
এর ভেতরই ছেলেটা ঘরে ঢুকে টুপিটা খুলেই সোজা ডাইনিং টেবিলে চলে গেছে। এক্ষুনি মা খেতে দিবে। এদিকে রহিমা বেগম, মোর মাও গেল রে বলে হাউমাউ করতে করতে একটা ব্যাগে দুই একটা কাপড় গুঁজে পোটলা বানালেন। হঠাৎ রহিমা বেগম রান্না ঘরে যেয়ে এককোনে রাখা প্লাস্টিকের ডালায় কি যেন খুঁজছেন। নাহ, সব রসুন আজ তরকারীতে দিয়েছেন। ক্ষুধার্ত ছেলেটা কিছু বোঝার আগেই, ওর হাত খপ করে ধরে রহিমা বেগম তার বাপের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা দিলেন। সন্ধ্যার আগেই পৌছাতে হবে। বাপের বাড়ি যাওয়ার পথে কালির মোড়ের বড় বটগাছটা পড়বে। বাড়ির গলিতে ছফিয়াকে দেখে রহিমা বেগম বললেন, আল্লাহ বাঁচাইছে, ভাবি একটা রসুন দেনতো। ছফিয়া বেগম দৌড় দিয়ে একটা রসুনের কোয়া আর একটা শুকনা লঙ্কা নিয়ে আসলো। ছেলেটার হাতে পোটলাটা দিয়ে খুব তাড়াহুড়োর ভেতর পরম যত্ন সহকারে শাড়ির আঁছলের এক মাথায় রসুনের কোয়া আর অন্য মাথায় শুকনা লঙ্কাটি বেঁধে নিলেন। দোয়া পড়ে ফুঁ দেয়া পানির গ্লাসটা জায়নামাজের পাশেই পড়ে রইল।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



আপনি গল্পে, ছেলেকে অভুক্ত রাখলেন কেন?

০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০০

মোঃ জুলকার নাঈন বলেছেন: মৃত্যু পথযাত্রি মাকে দেখার জন্য হাতে সময় ছিল কম, সন্ধার আগেই কালীর মোড় পার হওয়ার একটা চাপ ছিল, তার উপর বাসায় রসুন ছিল না। তাই...

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো গল্প।

০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০১

মোঃ জুলকার নাঈন বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.