ডিসেপশন পয়েন্ট : ড্যান ব্রাউনের সাহিত্যিক মেধা

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫১

দা ডা ভিঞ্চি কোড দিয়ে ড্যান ব্রাউনের সাথে প্রথম আমাদের পরিচয়। ব্যাপারটা একটু ধোঁয়াটে ছিলো তখন অনেকের কাছে যে ড্যান ব্রাউন আসলে কি লিখেছেন ভিঞ্চি কোডে যা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড়! সুতরাং বইটা পড়তেই হবে এ ছিলো ঘটনা, আর যাদের নিকট বইয়ের ভার নেয়া সম্ভব ছিলো না তাদের জন্য কাজ সহজ করে দিলো টম হ্যাংকসের মুভি। তারপর একেকজন একেক রকমের একটা বুঝ পেলেন ভিঞ্চি কোড থেকে, এবং ড্যান ব্রাউন তার বইতে "বর্ণিত সব কিছু সত্য"- দাবি করলেও ভিঞ্চি কোড শেষপর্যন্ত বিতর্কিত। আর বিতর্ক থেকেই তার জনপ্রিয়তা। ভিঞ্চি কোডের আগে, ভিঞ্চি কোডের প্রি-কুয়েল হিসেবে অ্যাঞ্জেল অ্যান্ড ডেমনস এইবার সবার নজরে আসলো। তারপর লস্ট সিম্বল। আর এখন, শেষপর্যন্ত ইনফার্নো। তবে যে ব্যাপারটি খেয়াল করার মতন, তা হল লেখক ড্যান ব্রাউনের কোন ধরনের সাহিত্যিক মেধা এ পর্যন্ত বইগুলোতে দেখা যায় না। বরং রবার্ট ল্যাংডনকে নিয়ে লেখা তার প্রতিটি বই-ই চটকদার বাক্যে ভর্তি। ঘন ঘন আশ্চর্যবোধক আর ইটালিক, বোল্ড করা শব্দাবলী তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

তাহলে ড্যান ব্রাউন আসলে কি লিখেছেন? এর চেয়ে প্রশ্নটি এভাবে করা যায়, ড্যান ব্রাউন আসলে কি বলতে চেয়েছেন? সহজকথায়- ড্যান ব্রাউন তার আবিষ্কৃত থিওরিগুলো (যেগুলোর সত্যতা বিতর্কিত) -কে দুর্দান্তভাবে গল্পের রূপ দিয়ে প্রকাশ করেছেন। ইলুমিনাতি, ফ্রি-ম্যাসন, নাইট-টেম্পলার, মেরি ম্যাগদালিন- এইগুলা সবই বিতর্কিত ইতিহাস; ইতিহাস আর ছদ্ম-ইতিহাসের মিশেলে ব্রাউন থ্রিলার আবহে তার কাহিনী শোনান আমাদের। তবে ব্রাউনের এসব কৌশল সম্ভবত জনপ্রিয়তা আর খ্যাতির মোহ থেকে উদ্ভূত। এ কথা বলছি কারণ একজন খাটি নিখাদ মেধার সম্ভাবনাময় ড্যান ব্রাউনকে পাওয়া যায় তার ডিসেপশন পয়েন্টে- যেইটা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি।

এ পর্যন্ত ব্রাউনের প্রকাশিত ছ'টি বইয়ের মধ্যে একমাত্র ডিসেপশন পয়েন্টই, আগের পাঁচটি বইয়ের আবর্জনামুক্ত। প্রচন্ড শক্তিশালী এ বইয়ের প্রতিটি চরিত্র। বাক্যের বুনোট পাঠকের ইন্টেলেকচুয়াল চাহিদাকে তৃপ্ত করে- কোন সন্দেহ নেই। ঘটনার বিস্তৃত বর্ণনায় অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায় ডিসেপশন পয়েন্টে। আর এজন্যই সম্ভবত ব্রাউন ডিসেপশন পয়েন্টের সব সম্ভাবনা থাকার পরেও জনপ্রিয়তা পাননি এ বইয়ে।

০ টি +০/-০