নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াজেদ বিপ্লব

আমরা মৃত্যুর আগে কি বুঝিতে চাই আর!

ওয়াজেদ বিপ্লব › বিস্তারিত পোস্টঃ

মার্কস

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২০

দর্শনের ইতিহাস বোঝার জন্য ইয়স্তেন গার্ডেনারের "Sophie's World" খুবই জনপ্রিয়, যদিও বইটা পাশ্চাত্য লেখকদের স্বভাবজাত দোষে দুষ্ট- তাঁরা যখন দর্শনের ইতিহাস লেখে তখন তা হয় তাঁদের দর্শনের ইতিহাস, প্রাচ্য সেখানে উপেক্ষিত। যা হোক, গার্ডেনারের অপবিশ্লেষণে মার্কসের করুন দশা দেখে এতই খারাপ লাগলো এ বিষয়ে নোট টুকে রাখছি। (দেখুন- Marx : A spectre is haunting Europe) একটি সমাজের রাজনৈতিক এবং আর্দশগত সমস্ত ধরনের সম্পর্কের বিমূর্ত রূপরেখা ঠিক করে সেই সমাজের উৎপাদনের ধরন- এতটুকু পর্যন্ত বোঝাতে গার্ডেনার উদাহরণ দিয়েছেন, আগেকার যুগে কৃষক সমাজে মেয়ের বিয়ে বাপ-মা এমনি এমনি ঠিক করতো না। অর্থনৈতিক শাসন যার হাতে সেই ঠিক করে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্বান্তগুলো।

পরিবারে আদিমকালে পিতৃদেবই শাসক। ফলে মেয়ের বিয়ের সাথে জড়িত ছিল খামারের পরবর্তী মালিকানা লাভের প্রশ্ন। কিন্তু বর্তমান যুগে মেয়েরা স্বাধীন, এমনকি সোফিও ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে পেরে বলে উঠে, তার বাবা-মা তার বিয়ের পাত্র ঠিক করবে এটা তার পক্ষে মানা অসম্ভব। প্রত্যুত্তরে নক্স বলে, কারণটা হল সোফি এ যুগের সন্তান।

অর্থনৈতিক ভিত্তিই সমাজের মূল, ওটিই নির্ধারণ করে কে কিভাবে ভাবনা-চিন্তা করবে, কে কতটুকু সিদ্বান্ত নিতে পারবে, কার কতটুকু শাসনক্ষমতা থাকবে, ন্যায়-অন্যায় বলতে অধীন মানুষ কী বুঝবে...লক্ষ্যণীয় বর্তমান যুগে সোফির বাবা-মা যদি সোফির বিয়ে ঠিক করে তবে ওটি সোফির দৃষ্টিতে অন্যায় শাসন; কারণ সে অর্থনৈতিকভাবে বাবা-মার অধীন নয় পশ্চিমা সমাজে (এইখানে পশ্চিমের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের মতন অর্থনৈতিকভাবে পরাধীন বদ্ধ কূপমুন্ডক সমাজের কথা বলা হয়নি; মধ্যবিত্ত পরিবারে যেখানে ক্ষমতার কেন্দ্র পিতার হাতে থাকে)।

গার্ডেনার দেখিয়েছেন যে আদিম সমাজের মতন বাবা-মার অর্থনৈতিক আধিপত্য মেয়েদের 'পরে বর্তমানে আগের মতন নেই। ফলে মেয়েরাও তাদের নিজস্ব সিদ্বান্ত নিজেরাই নিতে পারছে। এমনকি মার্কসের "মানুষ"-কে গার্ডেনার কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছেন তার স্বাক্ষর পাই বিশ বছর ধরে ক্যান্ডি ফ্যাক্টরিতে চাকুরিরত সোফির চাচীর নিজের কাজের উপর ঘৃণার কথা শুনে... যখন নক্স বলে যে তিনি যদি তার "শ্রম"কে ঘৃণা করেন, তবে তিনি নিজেকেই ঘৃণা করেন। অথচ পাঠক একটু পরেই হতাশায় ভেঙ্গে পড়বেন যখন দেখবেন পুরনো ভুল নিজেই করেছেন গার্ডেনার মার্কসের অপব্যাখ্যা দিয়ে। গল্পের নায়ক আলবার্টো নক্সের জবানিতেই মার্কসের সময়কালীন ইউরোপীয় শ্রমিকদের অবর্ণনীয় বর্ণনা, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদির ধুয়া তুলে গার্ডেনার মার্কসকে বানিয়ে দেন মানুষের দু:খ-কষ্টে উদ্বেলিত এক মানবতাবাদী দার্শনিক।

“We're talking about Marx, and we must therefore take our point of departure in the social
conditions during the middle of the last century. So the answer must be a resounding yes. The
worker could have a 12-hour working day in a freezing cold production hall. The pay was often
so poor that children and expectant mothers also had to work. This led to unspeakable social conditions. In many places, part of the wages was paid out in the form of cheap liquor, and women were obliged to supplement their earnings by prostitution. Their customers were the respected citizenry of the town. In short, in the precise situation that should have been the honorable hallmark of mankind, namely work, the worker was turned into a beast of burden.”

“That infuriates me!”

It infuriated Marx too. And while it was happening, the children of the bourgeoisie played the
violin in warm, spacious living rooms after a refreshing bath. Or they sat at the piano while waiting for their four-course dinner. The violin and the piano could have served just as well as a diversion after a long horseback ride.”

“Ugh! How unjust!”

“Marx would have agreed."

ছি! গার্ডেনার! এ কী করলেন আপনি? (বল্ড করা অংশ দেখুন) কী স্থূল ব্যাখ্যা মার্কসের...ভাবতেই অবাক লাগছে যে আপনি দর্শনের শিক্ষক। ন্যায়-নীতি-নৈতিকতা-আদর্শ এইসবের কোন স্থান নাই মার্কসের চিন্তায়। মানুষের দু:খ-কষ্টে চিন্তিত হবারও কোন কারণ নাই মার্কসের চিন্তার সাথে পরিচিত হয়ে। তবে কেন গার্ডেনার এত বড় ভুলটি করলেন? সম্ভবত তিনি মার্কস সম্বন্ধে কিছু চটি বই পড়েছেন অথবা সংক্ষিপ্ত ইন্টারপ্রিটেশন যা পড়েছেন তাই পুঁজি করে চ্যাপ্টারটি লিখেছেন। মার্কসের মূল রচনা না পড়ে এই সব হাবিজাবি লেখার অধিকার তাকে কেউ দেয়নি। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থাকে মার্কস অন্যায় মনে করতেন- এই ভুঁয়া মিথ্যা বক্তব্য রেখে বড় অন্যায় করেছেন তিনি। তার এ অন্যায়ের কারণে মার্কস সম্বন্ধে ভুল ধারনা নিয়ে বসে থাকবে যারা গার্ডেনারের দর্শন পড়ছেন। পৃথিবীর দু:খ-কষ্ট, মানুষের উপর অর্থনৈতিক নিপীড়ন- এসব মোটেও মার্কসবাদ নয়। মার্কসের কমুনিজমের সাথে মানুষের দু:খ-কষ্ট, শোষণ-নিপীড়ন ইত্যাদির কোন সম্পর্ক নাই। মার্কসের কমুনিজম সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস।

ক্যাপিটালের নৈর্ব্যক্তিক মার্কসকে মানবতাবাদী মার্কস বানানোর ভুল থেকে বের হয়ে আসতে হবে সবাইকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


ফরাসী বিপ্লবের পর, ইউরোপের মানুষ পরস্পরকে সাহায্য করবে বলে মনে হচ্ছিল; কিন্তু অর্থনীতি তার নিয়মে মানুষের শ্রমকে পণ্যে পরিণত করেছিল।

মার্কস শ্রমকে মানবতার উন্নয়নের জন্য, সুখ শান্তির নিয়ামক হিসেবে দেখেন, সেটাকে কেন্দ্রে রেখে তিনি নতুন অর্থনীতির কথা বলেছেন, যা আসলেই মানবিক।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮

ওয়াজেদ বিপ্লব বলেছেন: মানুষের সভ্যতার বিকাশের ইতিহাসকে মার্কস অর্থনৈতিক আধিপত্যের দৃষ্টিকোন থেকে দেখিয়ে যেভাবে পুঁজিবাদকে বিশ্লেষণ করেছেন এবং পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার মধ্যকার পরস্পরবিরোধী স্বরূপ উন্মোচন করেছেন সেটাকে (পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থাকে) অনেকে অন্যায় বলে ট্যাগ করে- যা ঠিক না। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা মানেই শ্রমিক শোষিত হবে; পুঁজি ফুলে-ফেঁপে উঠবে। পুঁজি ক্রমাগত ফুলে-ফেঁপে উঠার মধ্যে দিয়েই একমাত্র সে টিকে থাকতে পারে, ক্যাপিটালিজমের মূলসূত্র এটাই। আর পুঁজি যত ফুলে-ফেঁপে উঠবে, সে অনুপাতে বাড়বে শোষিত শ্রমিকের সংখ্যা। পুঁজিবাদ এই শোষিত, ক্রমশ বর্ধিষ্ণু শ্রমিকদের নিয়ে মাথা ঘামায় না। মার্কস তাই দেখেন যে, ক্যাপিটালিজমও কোন চিরস্থায়ী সমাজব্যবস্থা নয়, এও একসময় ধ্বসে পড়তে বাধ্য। মার্কস মানবিক, আপনার সাথে একমত; তবে মার্কসের দর্শন মানবতাবাদের উপর নির্ভরশীল নন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.