![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদিতে দার্শনিকরা সবকিছু নিয়ে মাথা ঘামাতেন, সব বিষয়েই তারা পারদর্শী ছিলেন। হকিং -এর মতে, গত কয়েক শতকে বিজ্ঞানের এত বেশি উন্নতি হয়েছে যে, দার্শনিকদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না দর্শন ও বিজ্ঞান- দু'য়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া। ফলে, সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন উপজাতি যাদের নাম তিনি দিয়েছেন, "বিজ্ঞানের দার্শনিক"। এরা অধিকাংশই হলেন (হকিং-এর মতে) বিফলকাম পদার্থবিদ যারা পদার্থবিজ্ঞান আর দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করে আজো রিলেটিভিটি এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে তর্ক করে চলছেন। মূল সমস্যা আসলে কোথায়?
সমস্যা হল, হকিং প্রকৃতিবিজ্ঞানের ছাত্র। প্রকৃতিবিজ্ঞানে মানুষ অবজার্ভারের স্থানে বসে মহাবিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করে তত্ত্ব দাঁড় করায়। কিন্তু খোদ "মানুষ" নিজে তখন প্রকৃতিবিজ্ঞানের বিষয় নয়। ওখানেই আসে দর্শন; সে মানুষকে, মানুষের সৃষ্ট সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদিকে বুঝতে, ব্যাখ্যা করতে, সুনির্দিষ্ট বা সংজ্ঞায়িত করতে সাহায্য করে। এ কারণেই দর্শন বিজ্ঞানের ওপরে নজর রাখার সাহস রাখে। হকিংকেও তাই বিজ্ঞানের মশালবাহী হয়েও শেষপর্যন্ত ডক্টর অব ফিলোসফি নামক তকমাই গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু হকিং -এর দু:সাহস আরো বেশি। তিনি তার প্রকৃতিবিজ্ঞান দিয়েই ব্যাখ্যা করতে চান "মানুষ"-কে। মানুষের ব্রেইনের একশো মিলিয়ান বিলিয়ান বিলিয়ান কণাকে নিউটনিয়ান গতিবিদ্যায় ফেলে তিনি সম্ভব হলে মানুষের পরবর্তী আচরণও ব্যাখ্যা করে ফেলতে চান। যদিও হকিং ভালো করেই জানেন, এত বিশাল সংখ্যক কণিকার হিসেব সম্ভব নয়। এ স্থলে ব্যর্থ হয়ে, তিনি আবার আশা রাখেন, মৌলিক চারটি বলের একীভূত রূপ গ্রান্ড ইউনিফায়েড থিওরি আবিষ্কার হলে হয়তো মানুষকেও ব্যাখ্যা করে যাবে। প্রকৃতিবিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বে হকিং সম্পূর্ণ বুঁদ, তাই মানুষ হয়তো তার কাছে জৈবসত্তা ব্যতিত আর কিছুই নয়...হকিং-কে বোঝা যায় তখনই যখন তিনি পদার্থের মাইক্রোলেভেলের আচরণ থেকে আবিষ্কৃত থিওরিগুলো মানুষের পর্যবেক্ষণ করা ম্যাক্রোলেভেলের মহাবিশ্বের ওপর চাপিয়ে দেন (যেমন : মহাবিশ্বের ইতিহাস অসংখ্য থাকতে পারে, যার একটিতে আমরা বসবাস করছি, এমন একটি ইতিহাসও আছে যে ইতিহাসে হিটলার পরাজিত হননি; আমাদের সৌভাগ্য বা যাই হোক- আমরা সেই ইতিহাসে বসবাস করি যেখানে মিত্রপক্ষ জয়ী হয়েছে)।
হকিং অবশ্য বলেন, যে কাল্পনিক কাল একটি গাণিতিক ব্যাপার, অথচ উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ভুলে যান কোয়ান্টাম মেকানিক্স কিংবা পার্টিকলের একাধিক ইতিহাস- এগুলোর সবই আসলে পদার্থের ক্ষুদ্রতর স্তরের পরীক্ষালব্ধ আচরণ থেকে প্রাপ্ত প্রকৃতিবিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণজাত থিওরি। এগুলোকে ম্যাক্রোলেভেলে মানুষের পর্যবেক্ষণলব্ধ (আরো শুদ্ধভাবে বললে, ইন্দ্রিয়লব্ধ) প্রকৃতি কিংবা মহাবিশ্বের ওপর চাপানো একধরনের শঠতাপূর্ণ দার্শনিক চাতুর্য।
©somewhere in net ltd.