![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।
মুক্তিযুদ্ধের কিছু ধারণা কিছু তথ্য কিছু বিতর্ক
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
সারা পৃথিবীতে লিবারেশন ওয়ার ইংরেজীতে ব্যবহার করা হয়। এর বাংলা করতে গিয়ে আমাদের দেশে সাধারণত ২টি টার্ম ব্যবহার করা হয়। ১. মুক্তিযুদ্ধ। ২. স্বাধীনতাযুদ্ধ, হিন্দি ও উর্দূতে অবশ্য আযাদী শব্দটি ব্যবহার করা হয়। লিবারেশন মানে স্বাধীনতা বা মুক্তি, আযাদী মানেও তাই। যখনি এটাকে আমরা একটা টার্ম এর স্থলে নাউন হিসেবে ব্যবহার করবো মানে বিষয়টাকে একটা নাম দেবো তখন কিন্তু আমাদের যেকোন একটা বেছে নিতে হবে। এর বাইরে একে যে কেউ যেকোনো বিশেষনে ব্যবহার করতে পারেন।
কিন্তু আমাদের এখানে শব্দের ব্যবহারেও বর্নবাদ আছে। মানে এখানে ভাষাগত ব্যাপারেও রয়েছে রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে একে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ বলে মুক্তিযুদ্ধ আর বিএনপি বলে স্বাধীনতাযুদ্ধ। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এটাকে মুক্তিযুদ্ধ বলা হয়েছে আর যোদ্ধাদের বলা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা তাই একে মুক্তিযুদ্ধ বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
মুক্তিযুদ্ধ শব্দটা আমরা আক্ষরিক অর্থে বিশ্লেষণ করলে হয়তো বলা হবে ১৯৭১ সালে আমরা আসলে মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছি। মূল স্বাধীনতাতো পেয়েছি ১৯৪৭ সালে যখন ব্রিটিশ থেকে দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু এখানে আক্ষরিক বিশ্লেষনের হেতু নেই। কারণ প্রথমত যাহা মুক্তিযুদ্ধ তাহাই স্বাধীনতাযুদ্ধ। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ই মার্চের ভাষণে কিন্তু পরিষ্কার বলে দিয়েছেন ‘‘ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’’। এছাড়া আমাদেও স্বাধীনতা ছাড়াও আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টাও ছিলো তাই এটা মুক্তিযুদ্ধ।
আবার এটা স্বাধীনতাযুদ্ধ, কারণ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হয় আমাদের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তান বলতে যা বোঝায় আমরা তার অংশ নয় এমনকি পাশ্ববর্তীও নয়। সূতরাং তৎকালীন পূর্ববাংলা পূর্বপাকিস্তান হওয়ার মাঝেই স্পষ্ট হয় যে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও বাঙালী বা বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে তাই এটা স্বাধীনতা যুদ্ধ। যদি সংযুক্ত পাকিস্তানের এই অংশের প্রাদেশিক সরকারে বাঙালীর নিয়ন্ত্রণ থাকতো অথবা স্বায়ত্বশাষন থাকতো তাহলেও ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতাকে বাঙালীর স্বাধীনতা বলার একটা ভিত্তি থাকতো।
১৯৪৭ -১৯৭০
মনে হয় বিতর্কই আমাদের নিয়তি। আজ যেমন আমরা অহেতুক বিতর্ক করি আমরা বাঙালী না বাংলাদেশী। এক্ষেত্রে আমার মত হলো আমরা দুটোই জাতীয়তার বাংলাদেশী হলেও ভাষাগত দিক থেকে আমরা বাঙালী। সেটাকে আমরা বাংলাভাষী বলে আড়াল করার চেষ্টা করলেও হাজার বছর ধরে আমরা বাঙালী বলেই পরিচিত।
সেরকম বিতর্ক ছিলো দেশ স্বাধীনের আগেও। আমরা বাঙালী না মুসলিম না বাঙালী মুসলমান এ নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা সেসময় প্রচলিত ছিলো। ১৯৪৭ সাল থেকেই বাংলা ও বাঙালি প্রশ্নে একটা বিভক্তি ছিল।
একদল মনে করতো: তারা শুধু পাকিস্তানি, তারা শুধু মুসলমান
অন্য একদল মনে করতেন :তারা শুধু বাঙালি,
কিছু মানুষ মনে করতেন তারা বাঙালী মুসলমান। এবং মধ্যবিত্ত বাঙালী মুসলিম শ্রেণী গত ১০০ বছর ধরে এদেশের পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে উঠেছে। এদের একটা অংশ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে যারা নীতি নৈতিকতা ছাড়তে পেরেছে। ফলে তারা দউ দিক থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেনী থেকে ছিটকে পড়েছে। কারণ বাঙালী মধ্যবিত্ত শ্রেনীর ৩টি কমন বৈশিস্ট্য হলো তারা শিক্ষিত ধর্মপ্রাণ ও নীতিবান।
এরমধ্যে অশিক্ষিত শ্রেনী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষিত করার মধ্য দিয়ে এই শ্রেনীতে প্রবেশ করেছে। ফলে মধ্যবিত্ত শেনী বিকশিত হয়েছে।
ড. শহীদুল্লাহ বলেছিলেন :আমরা বাঙালি মুসলমান। এই বিতর্ক ১৯৪৭-১৯৭০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
আমি বলি কি, যিনি নিজেকে শুধুই বাঙালী তিনি হিন্দু কি মুসলিম সে পরিচয় দিতে চান না। আমরা তাকে সেটা দিতে বলি কেন? তিনি একজন প্রান্তিক বাঙালীই হোন অসুবিধা কি? হয়তো রাষ্ট্রের তথ্যভান্ডারে তার সব পরিচয়ই থাকবে। ধর্ম, বর্ন, অঞ্চল, পেশা, শিক্ষা সব, কিন্তু জাতিগতভাবে পরিচিতি প্রকাশে ওতসব ধর্তব্য নয় হয়েতো।
আবার যিনি ভাবেন তিনি শুধু মুসলিম তাকে বাঙালী বানাতে অতো জোর খাটানোর দরকার কি?
তবুও ভারতে এবং বাংলাদেশে বাঙালী মুসলিম ও বাঙালী হিন্দু - বাঙালী হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে।। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রধানভাবে এগিয়ে নেয় পাকিস্তান আওয়ামী লীগ এবং তার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানীদের অত্যাচার নির্যাতনে তাদের কাছ থেকে নিজেদের আলাদা করার জন্য বাঙালী জাতিসত্তা আ্সল ভুমিকা রাখে।
মোজাফফর ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি (রুশপন্থীরা) সমাজতন্ত্রী হলেও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে লালন করতো।
ভাসানী ন্যাপও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করতো। এসব দল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। এটা বাঙালী জাতীয়তাবাদেও ফল। এজন্য আওয়ামীলীগ বলে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালী জাতির পিতা। যদিও এটা আক্ষরিক ও পারিভাষিক দুই অর্থে ভুল। যদি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এই উপাদী দেয়া হয় তাহলে তা হওয়া উচিত বাংলাদেশী জাতির পিতা। কারণ স্বাধীনতা যুদ্ধেও মাধ্যমে বাংলাদেশেী জাতিসত্তার জন্ম হয়েছে বাঙালী জাতিসত্তার নয়, বাঙালীতো হাজার বছরের পুরনো এক নৃগোষ্ঠি।
মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি
আগেই বলেছি আজকের বাঙালীর ঐক্যহীনতা বহু পুরনোরোগ। সেই গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধেও আমরা এক হতে পারিনি।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল:
১. পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কনভেনশন) : জেনারেল আইয়ুব খান [ফজলুল কাদের চৌধুরী],
২। পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) :মিয়া মমতাজ দৌলতানা [খাজা খয়েরউদ্দিন],
৩। পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইউম) : খান আব্দুল কাইউম খান [খান আবদুস সবুর খান]
৪. পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) : নূরুল আমিন
৫. জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তান : মাওলানা আবু আলা মউদুদী , [প্রফেসর গোলাম আযম]
৪. নেজামে ইসলামী : মাওলানা ইসহাক
৫. কৃষক শ্রমিক পার্টি : এ এস এম সোলায়মান
৬. পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি : [আবদুল হকের নেতৃত্বাধীন। পাকিস্তানের পক্ষে দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করে। ভারতকেই প্রধান শত্রু মনে করতো]
৭. পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি : [মোহাম্মদ তোয়াহার নেতৃত্বাধীন।
৮। চাকমা রাজার নেতৃত্বে উপজাতিদের একটা অংশ
৯। সাম্প্রদায়িক মুসলমানদের একটা সাধারণ অংশ যারা কোনো দলের সাথে ছিলনা। তবে এরা পাকিস্তানকে সমর্থন করলেও কোনো রকম অপকর্মে তারা জড়িত ছিলন।
কারোমতে চীনপন্থি সমাজতন্ত্রীরা পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। কেউ আবার পাকিস্তান- ভারত দুই দেশকে সমান শত্রু মনে করতো।
মুসলিম লীগের লোকেরা সকল গ্রুপ থানায়-থানায় শান্তি কমিটি গঠন করে।
এবং কিছু জায়গায় স্বশস্ত্র বাহিনী গঠন করে থাকতে পারে। তবে পাকিস্তান সরকার ঘোষিত রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনীতে মুসলিমলীগ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা যোগ দেয়। তাদের সাথে চাকুরী ও সুযোগপ্রত্যাশী কিছু অন্যদলের নেতাকর্মীও যোগ দেয়। আওয়ামীলীগ কর্মীদের যোগ দেয়ার নজীরও আছে।
খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহবায়ক ১০ই এপ্রিল ১৯৭১: শান্তি কমিটি গঠন করা হয় এর মূলে ছিলো মুসলিম লীগ। আর রাজাকার বাহিনী গঠন পক্রিয়ায় জামায়াতের ভূমিকার কথা বলা হয়ে থাকে। পরে গঠিত হয় আলবদর বাহিনী।
আজকের বিতর্ক
আজো বিতর্ক আর বিভক্তির বেড়াজাল থেকে বের হতে পারেনি। বাঙালী প্রজন্ম। কে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এই বিতর্ক এখন আমাদের চেতনাকে বিভ্রান্ত করার রাজনৈতিক হাতিয়ারে পারিণত হয়েছে।
১. যদি বঙ্গবন্ধু প্রথম ঘোষণা দিয়ে থাকেন তো সেটা মেনে নিতে কিসের এত সমস্যা? দ্বিতীয় ঘোষণাটা জিয়াউর রহমান দিলেও দ্বিতীয়টার একটা গুরুত্ব রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা স্বীকার করেন যে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার পরই সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়।
২. যদি জিয়াউর রহমান প্রথম ঘোষণাটা দিয়ে থাকেন তাহলে সেটা মানতে অসুবিধা কোথায়। এতবড় একটা দু:সাহস দেখানোর মতো একজন বাঙালী অফিসার ছিলেন এটাইতো অনেক বড়ো ব্যাপার। আর দ্বিতীয় ঘোষণাটা যদি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কোনো এক আওয়ামীলীগ নেতা দিয়ে থাকেন তাহলে সেটার গুরুত্বতো কোনো অংশে কম নয়। জিয়াউর রহমান সহ সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং পুরো কমান্ডতো বঙ্গবন্ধুকে নেতা মেনে নিয়েই যুদ্ধ করেছে।
জিয়াউর রহমানের ঘোষনার কারণেই। বাঙালী পুলিশ ইপিআর এবং বাঙালী সেনারা এক পথ নির্দেশনা পেয়েছে। শুধু তাই নয়। পাকিস্তানে থাকা বাঙালী সেনা ও অফিসারগণ যারা পালিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে তারা সাহস পেয়েছে সেটা কিন্তু জিয়ার ঘোষান থেকে। কেউ মানুক না মানুক এটাই সত্য। কারণ একজন সামরিক অফিসারের ঘোষনা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তারা ধরে নিয়েছে সামরিক বাহিনীর বাঙালী অফিসারেরা সংগঠিত হয়ে গেছে। আমাদের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে আর দোটানার সুযোগ নেই। এজন্যে এই ঘোষনার বিশেষ এবং আলাদা গুরুত্ব সবসময় থাকবে।
যদিও জিয়াউর রহমানের ঘোষণা শুনেছে বলে অনেক মানুষের মুখ থেকে শুনেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো নেতার কোনো ঘোষণা কোনো রেডিও বা অন্যকোনো মাধ্যমে শুনেছেন বলে এরকম কোনো প্রত্যক্ষশ্রোতা পাইনি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আওয়ামী লীগের দাবী মিথ্যা। কিন্তু তাদের কার্য়কলাপ এবং ঘটনার পটভূমিতে তাদের দাবীকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। হয়তো আমরা একে অপরকে স্বীকৃতি দিতে পারিনি বলে সবাই সবাইকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছি।
বঙ্গন্ধুর এই ঘোষনা কিন্তু বাংলার কৃষক শ্রমিক জনতাকে জাগিয়ে তুলেছে। সেটা সরাসরি হোক কিংবা জিয়ার মুখে শেখ মুজিবের নাম শুনে হোক। বাংলার মানুষ তার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছে। তিনি উপস্থিত না থেকেও নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন। এই যোগ্যতা কিন্তু শুধু তারই রয়েছে। যদিও তাজ উদ্দীন সাহেবের মেয়ের লেখা সাম্প্রতিক বইতে ঠিক সে সময়ে তিনি যুদ্ধ চেয়েছেন কিনা এই বিষয়ে পরিষ্কার করা হয়নি। বা প্রশ্ন তোলা আছে। কিন্তু তা সত্বেও আরো দুটি কারণে তিনি অবিসংবাদিত নেতা। এক। তিনি আসল ফ্যাক্টর বলেই পাকিস্তান সরকার তার সাথে আলোচনা করতে চেয়েছে এবং তাকে গ্রেফ্তার করেছে। দুই: সকল মুক্তিযোদ্ধাই তাকে অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য আমার মতো মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের যদি কোনো সমস্যা থাকে তারা এই দুটি দিক লক্ষ করতে পারেন।
তারপরেই স্থান কিন্তু তাজ উদ্দীন আহমদ এর। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর যদি এই নেতাও জীবিত থাকতেন তাহলে দেশের চিত্র আরেক রকম হতো। আমরা অন্য এক বাংলাদেশ পেতাম। সেটা হয়তো জিয়াউর রহমানের নবগঠিত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের চেয়ে আরো সুন্দর ও ্ঋদ্ধ হতো। এটা আমার ধারণা। এটা কস্টি পাথরে যাচাই করা নয়। এটা ভুল হলে দেশের কোনো ক্ষতি হবেনা। তাই কেউ একমত হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন।
আর আজকের দলে দলে বিভক্তি আর দলাদলির শেকড় সেখানেই প্রোথিত বলে সহজে যেমন ঐক্যের সূর বাজবেনা তেমনি এই খুন গুম এর রাজণীতি হরতাল জালাও পোড়াও থেকেও কিংবা নাস্তিকতার নষ্ট থাবা অথবা জঙ্গিবাদের হিংস্র থাবা কোনোটা থেকেই আমাদের মুক্তি নেই।
কিন্তু আমরা এসব থেকে মুক্ত হতে পারি। প্রতিটি নাগরিক ভিন্ন ভিন্নভাবে আমরা যদি শপথ নেই। হিংস্রতা, মিথ্যা ভাষণ, দূর্নীতি, হত্যা, সন্ত্রাস, রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধন এসবের মধ্যে আমি নেই। তখন এই ভিন্ন ভিন্ন মানুষের অভিন্ন চেতনাই আবার নতুন দিনের সন্ধান দিতে পারে।
ধারণা: নিজস্ব
তথ্য: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সম্পাদিত ও অন্যান্য সুত্র থেকে।
বিতর্ক: সমসাময়িক
২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৯
প্রবালরক বলেছেন: উদার মনোভাব প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ। সহমত প্রকাশ করে বলছি যে অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই আমাদের এরকম উদার মনোভাব ধারন ও প্রকাশ করা অব্যাহত রাখা দরকার। পারস্পরিক বিরোধী মতামত পাশাপাশি অবস্থানের কোন একটা উপায় নির্ধারন করে নিতে হবে। বিশাল বৈষম্যের উৎপাদন সম্পর্ক, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ-র প্রভাব, বৃহৎশক্তির নিয়ন্ত্রন প্রচেষ্টা সর্বোপরি কায়েমী স্বার্থ ব্যাপারটাকে খুব বেশী জটিল করে ফেলেছে।
শুধু রাজাকার-জামাত প্রসঙ্গে মন্তব্য করি-
উদ্ধৃতি ১:
ভাষা আন্দোলন খ্যাত ও চীনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদুতের দায়ীত্ব পালনকারী কমরুদ্দীন আহমদ বলেন-
(ক) দেশে তখন দুর্ভিাবস্থা বিরাজ করছিল। সরকার দুর্ভিক্ষের সুযোগ নিয়ে ঘোষণা করল, যারা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেবে, তাদের দৈনিক নগদ তিন টাকা ও তিন সের চাউল দেয়া হবে। এর ফলে বেশ কিছুসংখ্যক লোক, যারা এতদিন পশ্চিমা সেনার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত দিন কাটাচ্ছিল, তাদের এক অংশ ওই বাহিনীতে যোগ দান করল।
(খ) এতদিন পাক সেনার ভয়ে গ্রাম-গ্রামান্তরে যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিল, আত্মরক্ষার একটি মোক্ষম সুযোগ হিসেবে তারা রাজাকারের দলে যোগ দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
(গ) এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী জোর করে মানুষের সম্পত্তি দখল করা এবং পৈতৃক আমলের শত্রুতার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ গ্রহণের জন্যও এ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল
-(কমরুদ্দীন আহমদ, ‘স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর’, ঢাকা : নওরোজ কিতাবিস্তান, ১৯৮২)
উদ্ধৃতি ২:
আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড: আবু সাইয়ীদ লিখেছেন-
‘বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত প্রমাণাদি হতে এ কথা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, রাজাকার-রাজাকারই; তবে সব রাজাকার এক মাপের ছিল না। প্রাথমিকভাবে রাজাকার বাহিনীতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের যুবক অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়
(ক) যারা নিজেদের ইসলাম ও পাকিস্তান রক্ষা করার লক্ষ্যে পাক সামরিক বাহিনীকে সহায়তা, বাঙালি হত্যা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করাকে কর্তব্য মনে করেছিল। তারা পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ বা মুসলিম জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিল;
(খ) যারা হিন্দু সম্পত্তি দখল, লুট, ব্যক্তিগত গ্রামীণ রেষারেষিতে প্রাধান্য বিস্তার ও প্রতিশোধ গ্রহণ এবং নানা অপকর্ম করার সুযোগ গ্রহণ করেছিল।
(গ) আর গ্রামের হাজার হাজার বেকার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত যুবক যাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের জন্য দেশ ছেড়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না তাদের বেশির ভাগ পেটের তাড়নায় কর্মসংস্থানের জন্য এবং একই সাথে ভয় ভীতি এবং প্রলুব্ধ হয়ে রাজাকার বাহিনীতে নাম লেখাতে বাধ্য হয়।
রাজাকার বাহিনী সুশৃঙ্খল বাহিনী ছিল না। বরং এদের পাকবাহিনী দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। বেশির ভাগই হয়েছে বলির পাঁঠা। তাদের সামনে রেখেই পাকবাহিনী সর্বত্র অগ্রসর হয়েছে।’
-(আবু সাইয়্যিদ, ‘সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিত ও গোলাম আযম’, ঢাকা : মুক্তি প্রকাশনী, ১৯৯২)।
যে দু'জনের উদ্ধৃতি এখানে উল্লেখ করা হল তারা দু'জন সম্পুর্ন ভিন্ন আদর্শের মানুষ। তারপরেও তাদের মতের এমন মিল তাৎপর্য বহন করে।
রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের শর্ত ছিল : পঞ্চম শ্রেণী পাস, বয়স অন্তত ১৮ বছর ও শারীরিক সুস্থতা। এর ফলে আগস্ট ১৯৭১ মাস থেকে রাজাকার বাহিনীতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নানা প্রেক্ষাপটের মানুষেরা যোগ দেন - ধর্ম, রাজনীতি নির্বিশেষে।
রাজাকার-দালাল অভিযোগে আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে জামায়াত-ছাত্রসঙ্ঘ পরিচয়ে খুবই নগণ্য সংখ্যক ব্যক্তি আটক হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আটক ব্যক্তিদের প্রায় সবাই কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ মানুষ। তারা প্রধানত জীবিকার প্রয়োজনে বা খেয়েদেয়ে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এবং নিরাপত্তাগত বিবেচনায় রাজাকার বাহিনীর সদস্য হয়েছিল। বেতনভাতার এই বাহিনীতে জামায়াত-ছাত্রসঙ্ঘের বেশীরভাগ নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা আর থাকেনি। কারন বিভ্রান্তি কাটিয়ে তারাও ততদিনে উপলব্ধি করে যে পাকিস্তান বাহিনীর সাথে ইসলামের বা ধর্মের সম্পর্ক এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে ইসলামের বা ইসলাম ধর্মের বিরোধীতার বিষয় সম্পুর্ন অপ্রাসঙ্গিক। চলমান মুক্তিযুদ্ধ শোষন-বঞ্চনা থেকে মুক্তির সংগ্রাম। ন্যায় ও সাম্যতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
তবে জামায়াতের দলীয় ঘোষনা-বক্তৃতা-বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানী মিলিটারী জান্তার প্রতি সমর্থন থাকত। এবং নগন্য সংখ্যক কিছু লোকের সাথে মিলে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কর্মকান্ডে তৎপর থাকত।
একারনেই বাংলাদেশের নাটক-উপন্যাস-সিনেমায় এমন একটি ধারণা উপস্থাপিত হয়েছে, যাতে মনে হতো দাড়ি-টুপিওয়ালা, মাওলানা-মুন্শী এবং ইসলামপন্থী-ধার্মিক ব্যক্তিমাত্রই এক-একজন রাজাকার-দালাল। এমন অসৎ মতলবী প্রচারনা তরুন প্রজন্মকে দারুনভাবে প্রভাবিত আর বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়।
প্রবাসী সরকারের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে ইন্দিরা গান্ধী সহযোগীতার বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে "ধর্মনিরপেক্ষতা" যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেয়। ইন্দিরা গান্ধী একথা ভারতীয় পার্লামেন্টে জানিয়েছিল। এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে "ধর্মনিরপেক্ষতা"র প্রবেশ ঘটে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রান জনগনকে চাতুর্যের সাথে সংবিধানের মুখোমুখী দাঁড়া করিয়ে দেয়া হয়। তার ফলাফল আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার ঘোষনায় যে তিন আদর্শের কথা উচ্চারিত হয় -
১। সাম্য
২। সামাজিক ন্যায়বিচার
৩। মানবিক মর্যাদা
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫
ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ভালো লিখেছেন