নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব - ০২ :( :(

১৩ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০০

গল্পের পূর্বের অংশ পাবেন ১ম পর্বে -
জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব - ০১

হঠাৎ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম । ঘড়িতে যখন প্রায় ৩ টা বেজে ৪০ মিনিট, তখন পুলিশেরই একজন এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো । "আপনাকে স্যার ডাকছে, চলুন ।" হঠাৎ কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে আমি একটু অস্বস্তিতে ভুগছি । আর তাছাড়া বসে বসে ঘুমানোর অভ্যাস নেই বলেও হয়তো এই অস্বস্তিটা আসতে পারে । তবু ঘুম ঘুম অবস্থাতেই চোখ কচলাতে কচলাতে আমি শুধু এই কথাটি বললাম, একটু পানি হবে ? পুলিশের ঐ লোকটি মনে হয় ভালোই । আমার হ্যান্ডকাফ খুলে দিয়ে আমার হাতে একটি পানির জগ এনে দিলো । আমি চোখেমুখে পানি ছিটালাম আবার কিছুটা খেলামও । ঐ পুলিশটি এরপর আমাকে তার স্যারের কাছে নিয়ে গেলো । আমি স্যারের কাছে পৌঁছেই সরাসরি তার নেমপ্লেটের দিকে খেয়াল করলাম । জনাব বদরুল । লোকটির মুখ পানে লাল । সামনে ছোটখাট একটি পানবাটা । মনে হচ্ছে একটির পর আরেকটি পান খাওয়া অভ্যাস তার । "স্যার, আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে ?" আমি আর অপেক্ষা না করেই জিজ্ঞেস করে বসলাম । জনাব বদরুল এতক্ষণ কোন একটি ফাইলের দিকে মনোনিবেশ করে ছিলেন, আমার প্রশ্ন শুনে মুখ উঁচু করে আমার দিকে তাকালেন । কিছুক্ষণ আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলেন, এই সময়টুকুতে পান চিবানোর কথাও ভুলে গেছেন যেন । আমি আবারও বললাম, "স্যার, আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে ?", এই ভেবে যে উনি হয়তো শুনতে পাননি । লোকটির ভ্রূ ধীরে ধীরে কুঞ্চিত হলো । লোকটি এরপর রেগে গিয়ে বলে উঠলো, "কেন, এক রাত আমাদের সাথে থাকলে কি আপনার জাত যাবে ? আমরা কি মানুষ না আপনাদের কাছে ?" বুঝলাম, লোকটি ভিতরে ভিতরে অনেক ক্ষোভ পুষিয়ে রেখেছে । আমি আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলাম । একটু পর জনাব বদরুলের নির্দেশে আমাকে হাজতে নিয়ে যাওয়া হলো ।

হাজতে আমার প্রথম রাত্রি । জীবনে যে কতরকম অভিজ্ঞতা হলো, তবে এরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা, এই মুহূর্তে তা মনে করতে পারছি না । তবে সত্য হলো, জীবনে এরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো সহজে ভোলা সম্ভব না । হাজতে অবশ্য আমি একা না । দেখলাম আরও অনেকেই আছে । হাজতে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটি হচ্ছে, খাওয়া আর টয়লেটের জায়গা কাছাকাছি । ঐ গন্ধের মধ্যে বসেই খাওয়া, ঘুম সব । আমি ভাবছি আমাকে কেন গ্রেফতার করে আনা হয়েছে । আমি ভেবে কোন কূল কিনারা পাচ্ছি না । আবার মনের এক কোনায় এই ভাবনাও আসছে যে আমি হয়তো এই হাজত থেকে আর কোনদিন ছাড়া পাবো না । আর কোনদিন নূপুরের মায়াবী মুখটা দেখতে পাবো না । দুই ছেলে-মেয়ে আফনান আর জারিনকেও মিস করবো । হয়তো এখানেই আমার মৃত্যু হবে ।

আশেপাশের লোকগুলোর চোখের দিকে তাকানো যায় না । সবার চোখেমুখে এক ধরনের আতংক । একজনের সাথে কথা বলে বুঝলাম, লোকটিকে ধরে আনা হয়েছে ছিনতাই এর কথা বলে । অথচ লোকটি নাকি ছিনতাই-এর ঐ ঘটনার সময় নিজের বাসায় ঘুমাচ্ছিল । সন্দেহবশত ধরে আনা হয়েছে আরও চারদিন আগে । বাসার লোকজন প্রতিদিন ধরনা দিলেও মোটা অংকের টাকা চাওয়া হয়েছে ঘুষ হিসেবে । সেই টাকা জোগাড় করতে বিলম্বিত হচ্ছে বলেই লোকটি এখনও হাজতেই আছে । আমার ক্ষেত্রেও কি এমন কিছু হবে ? নূপুর বেশি চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পরবে না তো ? এত রাতে আবার সালামকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বসবে না তো ? বাচ্চাগুলোকে দেখবে কে ? আমার চিন্তাগুলো ক্রমশ বাড়ছে । চিন্তা বাড়ার সাথে সাথে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ক্রমশ চিন চিন করে ব্যাথা শুরু হয়েছে । মনে হলো, প্রেশার বাড়ছে ।

আমি হাজতের শিক ধরে এক কোণার দিকে বসে ছিলাম । হাজতে কেউ কারও বন্ধু হয় না । তবে শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেই থাকে । যদি আপনার কোন আত্মীয় এক প্যাকেট সিগারেট ধরিয়ে দিতে পারে আপনার আশেপাশের হাজতিদের, তাহলে তো আর কোন কথাই নেই... আপনি তখন তাদের কাছে বস । আপনার আদেশ তাদের ক্ষেত্রে শিরোধার্য । আপনার হাত-পা টিপে দেবে তারা । আপনার মাথাও টিপে দেবে আর হাত দিয়ে ডলে শরীর মালিশ করা তো আছেই । আমি বসে বসে দেখছিলাম এমন একজনকে তিন-চারজন ঘিরে সেবা করছে । পাশে বসা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, "ঐ লোকটি কে ?" সে উত্তর করলো, "আপনি তাকে চেনেন না ? ধুর, মিয়া, আপনি তো তাইলে এই শহরে থাকেনই না !!! ও হইলো কালা মজিদ । প্রতি মাসের দুই-তিনদিন হাজতে এসে হাজতবাসীদের খোঁজখবর নিয়ে যায় । শহরে বিরাট ত্রাস ওর । আমি তো এমনও শুনেছি, মাসে একটা মার্ডার না করলে নাকি ওর ভাব আসে না......" । আমি আর ভাব আনার তালে থাকলাম না । এই কথা শুনে আরও জড়সড় হয়ে বসলাম । কালা মজিদ মনে হয় আমার পাশে বসে থাকা লোকটির মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে পেয়েছে আর আমাকেও খেয়াল করেছে । কালা মজিদ আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কি কেস ? ছিনতাই ? নাকি মার্ডার ? নাকি দুই নম্বরি ? কোনটা ?" আমি একটু ভয়ে ভয়েই উত্তর করলাম, "একটাও না । আমার মনে হয় এরা ভুল করেছে । আমাকে অন্য কারও সাথে গুলিয়ে ফেলেছে ।" কালা মজিদ মনে হয় আমার উত্তরে খুশি হলো না । আবার বেশ রাগও হয়েছে । রাগের ব্যাপারটা আমি বুঝলাম, এর পরপরই তার কথা শুনে । "ভুল করে মানে ? ঐ মিয়া, মশকরা করেন ? এখানে কেউ কাউকে ভুল করে আনে নাকি ? জলদি জলদি হাছা কথা কইয়া ফালান । নাইলে কিন্তু হাছা কথা বলানোর অনেক উপায় আমার জানা আছে ।" কালা মজিদের মুখে এই কথা শুনে আমি ঢোক গিললাম । ভালো বিপদে পড়েছি, মনে হচ্ছে ।

(বাকিটা আগামী পর্বে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পড়ছি । পরে কী হয় জানার অপেক্ষায়!

১৪ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:২১

মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: ধন্যবাদ কষ্ট করে গল্পটি পড়ে যাওয়ার জন্য । ৩য় পর্বের লিংকঃ জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব - ০৩

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.