নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মর্গের লাশের ব্লগে স্বাগত।

মর্গের লাশ

জীবন যেখানে শেষ, আমার সেখানে শুরু ।

মর্গের লাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোরের দশদিন আর গেরস্থের একদিন।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৪

ছোট বেলা থেকেই ফাকিবাজ ছাত্র হিসেবে আমার একটা আলাদা সুখ্যাতি (কুখ্যাতি ও বলতে পারেন :D) রয়েছে বন্ধু মহলে। স্কুল পালানোর ক্ষেত্রে আমি ছিলাম সবার সেরা। ক্লাস এইট এর পর থেকে প্রতিদিন ই প্রায় লেইজার পিরিয়ড এর পর ব্যাগ নিয়ে পিছনের গেট দিয়ে দিতাম ছুট। কে আর পায় আমাকে। পালিয়ে যেতাম কোন ভিডিও গেমস এর দোকানে। টিফিনের টাকা দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেমস খেলতাম। তারপর ঘড়ি দেখে ঠিক স্কুল ছুটির টাইমে বাসার দিকে রওনা হতাম। বাসায় ফিরে যেতাম আম্মুর কাছে সেই নিতান্তই ভোলা ভালা ছেলেটি হয়ে। আম্মুও ভাবত আহারে ছেলেটা আমার কত কষ্ট করে ৬ ঘণ্টা ক্লাস করে আসল। মানে আম্মুও খুস আমিও খুস।



তো একবার এর স্কুল পালানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার। ক্লাস নাইন এর ঘটনা। তখন স্কুল পালাতে পালাতে আর ধরা না পরতে পরতে আমার একটু বেশীই সাহস হয়ে গিয়েছিল।সেদিন তৃতীয় পিরিয়ডে ছিল বায়োলজি ক্লাস। বোরিং ক্লাস করতে ইচ্ছা হচ্ছিল না। তাই দ্বিতীয় পিরিয়ডের পর সেদিন ব্যাগ নিয়ে চুপি চুপি ক্লাস থেকে বের হলাম।



ও আর একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, আমাদের স্কুল ড্রেসের একটা বিশেষত্ব ছিল। তা হল স্কুল ড্রেসে সাদা প্যান্ট শার্ট এর সাথে টুপি ও ছিল। হিন্দু রা টুপি পরত না। তো আমি সেদিন বের হবার সময় টুপিটা পকেটে ঢুকিয়ে বের হলাম। সাথে ছিল তন্ময় (আমার স্কুল পালানোর সার্বক্ষনিক পার্টনার) , আমি আর ও তখন পা টিপে টিপে তিন তলা থেকে নামছিলাম। একবার এক সিঁড়ি নামি আর নিচের দিকে তাকাই যে কোন স্যার আসল কিনা। যাই হোক সফল ভাবে ঠিক যখন ই আমরা নিচতলায় নেমে আসলাম ঠিক তখনি সামনে পড়ল আমাদের স্কুল এর সবচেয়ে কড়া ড্রিল এর টিচার কামরুল স্যার , হাতে মোটা ব্যাত নিয়ে আমাদের দিকে তাক করে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাও। স্যার কে দেখা মাত্রই হৃদ স্পন্দন তখন ১৩০ এর কাছাকাছি। ঘামছিলাম অনেক। কি বলব ভাবতে ভাবতে হঠাত মুখ ফসকে কিভাবে যেন বেরিয়ে আসল , স্যার হিন্দু ক্লাসে এ যাই। ( আমাদের হিন্দু ধর্মের ক্লাস আলাদা হত)

নিজের উপস্থিত বুদ্ধি দেখে নিজেই বিস্মিত হই। স্যার বললেন আচ্ছা ঠিক আছে যাও , এবং এই বলে চলে গেলেন। আমরা তো তখন হাফ ছেরে বাচলাম। তন্ময় বলল ওহ দোস্ত তুই বাচাইলিরে। আজ নাহলে খবর ছিল। আমি বললাম কপাল টা ভাল যে টুপি টা পকেটে নিছিলাম। আমরা তারপর এক দৌড়ে সাইকেল এর গ্যারেজ এর দিকে চলে গেলাম।





গিয়ে যা দেখলাম তা দেখে মাথাটা তখন আগুন সমান গরম হয়ে গেল। কে যেন আমার সাইকেলের সাথে তার সাইকেলের লক মেরে রেখেছে। আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। ওদিকে তন্ময় ওর সাইকেল নিয়ে আগেই চম্পট। মনে মনে তন্ময় কে গালি দিতে লাগলাম শালা স্বার্থপর বন্ধুকে একা রেখে চলে গেলি।

কি করব কি করব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ির কাছে চলে গেলাম। তখন তৃতীয় পিরিয়ড শুরু হয়ে গেছে। তাই কোন টিচার ও বারান্দায় ছিলনা । আমি সিঁড়ি বেয়ে অনায়াসে তিন তালায় চলে গেলাম।

আমি এক পা দুপা করে সাবধানতার সাথে এগুতে লাগলাম ক্লাসের উদ্দেশে। যেই না ক্লাসের জানালার কাছে গেলাম ওমনি মোজাম্মেল স্যার দেখে (বায়লজির টিচার) ডাক দিলেন, এই ছেলে কোথায় গিয়েছিলে। আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। স্যার আমার হাতের ব্যাগ দেখে আর আমার চেহারার অবস্থা দেখেই পুরোপুরি সিউর হলেন যে স্কুল পালাচ্ছিলাম। তারপর যা হয় আরকি। আমার পশ্চাৎদেশ মুহূর্তের মধ্যে লাল হয়ে গেল। আজও সেই কথা মনে হলে গা শিউরে ওঠে :(( :(( , শুধু মেরেই ক্ষান্ত হলেন না আমার কাছ থেকে আমার বাবার নম্বর নিলেন এবং বললেন ছুটির পরে হেড স্যার এর রুমে যেতে।



যতক্ষন ক্লাসে ছিলাম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলাম যেন আব্বুর নম্বর টা বন্ধ থাকে। আল্লাহ আমার সেই প্রার্থনা শুনলেন না। ছুটির আগে আগে স্কুলের দপ্তরি কামাল ভাই এসে আমাকে নিয়ে গেলেন হেড স্যার এর রুমে। তখন ভদ্র ছেলের মত মাথায় টুপি পরেছিলাম।হেড স্যারের রুমে ঢুকলাম দুরু দুরু বুক নিয়ে । ঢোকার আগেই দেখলাম বাবা ভিতরে বসা। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, আজ কপালে আসলেই শনি আছে। বাসায় গিয়েও পেদানি খেতে হবে।



কিন্তু কপাল টা যে সেদিন এত বেশি খারাপ ছিল তা বুঝতে পারিনি।বিপদ যখন আসে তখন সব দিক থেকেই আসে গিয়ে। দেখি স্যারের রুমে সেই কামরুল স্যার বসা। সে তো আমাকে দেখে অবাক। বললেন এই ছেলে তুমি না আজ সকালে বললে তুমি হিন্দু। তোমার মাথায় টুপি কেন।



স্যার এর রুমে বসে বাবার গালমন্দ শুনলাম টানা পনের মিনিট। কামরুল স্যার এর পা ধরে মাফ চাইতে বলল বাবা। কি আর করার , যা বলল তাই ই করলাম :((:(( পরে বাবার সাথে চোরের মত বেরিয়ে এলাম । সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয় হচ্ছে ভিতরে এতক্ষন ধরে চলা আমার সাজা পাবার দৃশ্য দেখছিল ক্লাস ৫ এর এক ছোট ভাই। মান ইজ্জত সেদিন সবই গেল। বাসায় মায়ের পেদানি তো এখন ও বাকি আছে।



পরদিন থেকে টানা সাত দিন নিয়মিত ক্লাস করলাম। স্কুল পালানোর ভূত একেবারে মাথা থেকে নেমে গেছিল। কিন্তু কুকুরের লেজ কি কখনও সোজা হয়? সাত দিন পর আবার যেই সেই।



আজ এত বছর পার হয়ে গেল কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনা ভুলতে পারিনি। আজও ইচ্ছে করে সেই আগের মত স্কুল পালাতে। সেই ভিডিও গেমস এর দোকানে গিয়ে ভিডিও গেমস খেলতে। এখন ল্যাপটপে কল অফ ডিউটি , ফার ক্রাই এত নামি দামি গেমস খেলি। কিন্তু ওই বয়সের সেই মোস্তফা, কিং অফ ফাইটার খেলার স্বাদ টা আর পাইনা।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪৩

ঢাকাবাসী বলেছেন: স্মৃতি চারণ ভাল লাগল।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২২

মর্গের লাশ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৩

নিউজ২৪ বলেছেন: ভাল লাগলো। হারানো সময়গুলোকে খুব মিস করি আমিও।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৩

মর্গের লাশ বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫

আপেক্ষিক বলেছেন: চাপাবাজি ভালো লাগলো :P :P

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০২

মর্গের লাশ বলেছেন: এখানে চাপাবাজির কি পেলেন আপেক্ষিক ভাই। আপনি তো পুরো ঘটনা জানেন ই ।

৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৪

উৎকৃষ্টতম বন্ধু বলেছেন: বাহ ভালই লিখেছেন তো। সুন্দর।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৪

মর্গের লাশ বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৬

ইনকগনিটো বলেছেন: ভালো লাগলো স্মৃতিচারণ

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫০

মর্গের লাশ বলেছেন: চিনতে পারছেন ভাই?? 6th sense here :D ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.