![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহাবিশ্বের সাধারণ একজন নাগরিক
চাকরীর প্রথম বেতন পেলাম। সবাইকে কিছু না কিছু দেয়া দরকার। কিন্তু আমি কারও জন্যে কোনকিছু কিনতে সাহস করলাম না। এটা এ কারণে যে, আমার কেনাকাটা কখনও কারও পছন্দ হয় না। ছোটবেলায় মা মাঝে মাঝে বাজারে পাঠাতেন। কিন্তু কখনও মাকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি।বেগুন কিনলে তাতে হয় পোঁকা, ঢেরস বা লাউ কিনলে হয় বতি, মাছ কিনলে হয় পঁচা। আমি অবশ্য সবকিছু কেনার আগে মায়ের পই পই করে বলে দেয়া পদ্ধতিতে সবই পরীক্ষা করে দেখতাম, যেমন ঢেরসের মাথার দিকটা ভেঙ্গে দেখা- সহজে তা ভেঙ্গে যায় কিনা, লাউ-এ নখ বসিয়ে দেখা বা মাছের কানকো উল্টিয়ে ফুলকা দেখা- তা লাল টকটকে কিনা ইত্যাদি। কিন্তু তারপরেও কেন যে এমন হত তা আজও এক বিষ্ময়। যাহোক ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হল, মা আমাকে দিয়ে বাজার করানো বাদই দিলেন।
মনে মনে ঠিক করলাম ছোট বোনটাকে টাকা দিয়ে দেব ও সবার পছন্দ মত জিনিষ কিনে দেবে। সুতরাং কেবলমাত্র মিষ্টি কেনার কথা ভাবলাম। যে ভাবা সেই কাজ, বনফুল থেকে কেজি পাঁচেক মিষ্টি নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম।
রিক্সায় যাচ্ছি হঠাৎ মনে পড়ল মেঝভাবীর বাচ্চাটার কথা। সবে হাঁটতে পারে। আমাকে দেখলেই গুড়ি গুড়ি পায়ে চলে আসে। সুতরাং নিদেন পক্ষে তার জন্যে কিছু নেবার কথা ভাবলাম। একটা পুতুল নিলে কেমন হয়? তড়িঘড়ি করে রাস্তার পাশে রিক্সা থামিয়ে একটা পুতুল নিয়ে নিলাম। পুতুলটা ট্রান্সপারেন্ট পলিথিনের প্যাকেটে ছিল।
বাসায় পৌঁছুলাম। ছোটবোনের হাতে মিষ্টি ও পুতুলটা দিলাম। পুতুলটা কার জন্যে এটা বলার প্রযোজন নেই। কারণ আমাদের বাসায় ঐ একটাই ক্ষুদ্র মানুষ রয়েছে।
হাতমুখ ধুয়ে আমি নাস্তা সেরে চা খেতে খেতে টিভি দেখছি। এমন সময় দোতলায় চিৎকার চেঁচামেচি শুনলাম। ভাবীর গলা, কিন্তু কিছু বুঝতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পর ছোটবোনটা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল।
আমি বললাম: ঘটনা কি?
সে বলল: ভাইয়া, তুমি একটা 'দেড় ব্যাটারী ডল' এনেছো কেন টুম্পামনির জন্যে?
আমি বললাম: পুতলটা ব্যাটারী চালিত? তা তো দেখিনি!
ও বলল: ব্যাটারী চালিত না ছাই, ওটা দেড় ব্যাটারী, কানি।
আমি বললাম: মানে?
সে বলল: মানে তার একটা চোখ নেই। ভাবী পুতুলটা ছুঁড়ে ফেলেছে। তুমি ওটা পাল্টিয়ে নিয়ে এস।
আমি বললাম: শোন, পুতুলটার যা দাম, পাল্টিয়ে আনতে রিক্সাভাড়া তার চেয়ে বেশী যাবে। তারচেয়ে তুই কালকে ওর জন্যে আরেকটা ভাল পুতুল কিনে এনে দিস।
ভাবীকে বোঝাতে উপরে গেলাম। আমাকে দেখে ভাবী মুখ ফিরিয়ে নিল। আমি বললাম: ভাবী পুতুলটা কানা বলে তুমি নাকি রাগ করেছ? মানুষ কানা হয় না? আর এতো পুতুল।
ঘরের কোন থেকে পুতুলটা তুলে নিয়ে ভাল করে দেখলাম। নিজের উপরই রাগ হচ্ছিল। যাইহোক ভাবীকে বললাম: আমার মনে হচ্ছে এপুতুলটা কানি না, এটাকে এভাবেই তৈরী করা হয়েছে। আর দ্যাখো, এক চোখের কারণে এটাতে একটা অদ্ভূত লুক এসেছে।
পুতুলটা আমি ভাবীর হাতে দিলাম। ভাবী পুতুলটা নিয়ে একপাশে রেখে দিল। তারপর মাথা নীচু করে কাঁদতে শুরু করে দিল। আমি অবাক। ভাবী কি ছিচকাঁদুনে? কিন্তু আমি তো কখনও ভাবীকে কাঁদতে দেখিনি।
ভাবীর কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল। কত ভাল একটা মেয়ে, অথচ তার সব থেকেও কেউ নেই। হিন্দু পরিবারের মেয়ে, বাড়ী থেকে পালিয়ে গিয়ে মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করাতে সে তার মা,বাবা, ভাই-বোন, শ্বশুর-শাশুড়ী, ননদ দেবর সবাইকে হারিয়েছে। এখন তার আপনজন বলতে আমরাই।
আমি তাড়াতাড়ি বললাম: ভাবী কেঁদো না, আমি বরং আর একটা পুতুল নিয়ে আসছি।
ভাবী বলল: তোমার পুতুলের জন্যে কাঁদছিনে, কাঁদছি আমার কপালের কারণে। তোমার ভাই চাইছিলো ছেলে হোক, হয়েছে মেয়ে। ওর জন্যে ওর বাবাও কোনদিন কিছু কিনে দেয়নি। ওর যা কিছু তা আমার আর তোমার বোনের দেয়া। তুমি তার চাচ্চু, প্রথম যে জিনিষটা কিনে দিলে- তা হল কানি। ওর কপালটা আমার মত খারাপ ভেবেই কান্না আসছে।
ভাবীর এ কথা শুনে আমি ঐ রাতেই বেরিয়ে পড়লাম। আমার ভাতিজীর কপাল খারাপ-এ হতেই পারে না। আমার তিন বৎসরের ভাতিজীর জন্যে সারা ঢাকা চষে আমি আমার বেতনের পুরো ৪০ হাজার টাকার জিনিষপত্র কিনলাম। যত্ন নিয়ে দেখেশুনে, তারপর আত্মতৃপ্তি নিয়ে ধীরে সুস্থ্যে বাসার দিকে রওনা হলাম।
ভাবীর হাতে আমি ও আমার ছোটবোন সবকিছু তুলে দিলাম। সে এতসব জিনিষপত্র দেখে ভীষণ খুশী। তার একমাত্র মেয়ের জন্যে প্রথম কেউ উপহার দিচ্ছে, খুশী হবারই কথা। আমি বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম, মনটা ফুরফুরে আমার। আমি ষ্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি ভাবী বলছে: তানি, তোমার জন্যে তোমার ভাইয়া কি এনেছে?
তানি বলছে: আমার জন্যে আর কি আনবে, টুম্পা মামনির জন্যে কেনাকাটা করতে করতেই নাকি সব টাকা শেষ হয়ে গেছে।
একথা শুনে ভাবী হাঁউ-মাঁউ করে কাঁদতে শুরু করেদিল। আমি জানি তার এ কান্না খুশীর। আমি ভাবীর কথা ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে লাগলাম। বেচারী।
সমাপ্ত।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৭
চ।ন্দু বলেছেন: আমি আসলে লেখক নই। তাই গুছিয়ে লিখতে পারিনে , যা লিখেছি তা সত্য ঘটনা।
২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৫
অসামাজিক সাব্বির বলেছেন: শেষটা তো লেখলেন না ।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৬
চ।ন্দু বলেছেন: শেষটা আরকি, সবটাকা শেষ করেছি বলে ছোট বোনটা মন খারাপ করেছিল। ওহ বলিনি, আমার কোন নিজের বড় ভাই নেই। ভাবী আমাদের ভাড়াটিয়া।
৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৮
রিওমারে বলেছেন: ওহ বলিনি, আমার কোন নিজের বড় ভাই নেই। ভাবী আমাদের ভাড়াটিয়া।
কি ভায়া ব্যাপার কি ? কেমন জানি মনে হইতেছে ।।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২০
চ।ন্দু বলেছেন: না, তেমন কিছু না। ভাবী আমার দূর সম্পর্কের চাচাত ভাই। আমাদের বাসায় থেকেই সে পড়াশুনো করেছে। তারপর বিয়ে করে আমাদের বাসায়ই ভাড়াটিয়া হিসেবে রয়েছে। সে আমাদের পারিবারিক একজনই বলতে গেলে। আমার বাবা আবার তার কথা ছাড়া কারও কোন কথা শোনেন না।
ভাবী নিতান্ত নিরীহ গোছের মেয়ে। তার সাথে আমাদের বাসার সকলেরই খুব খাতির। কেবল আমার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয় খুব কম। তবে যাই ভাবী রান্না করে আমার জন্যে ডাইনিং টেবিলে তা থাকে। নি:সন্দেহে সে আমাকে পছন্দ করে ভাইয়ের মত।
৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১০
অস্থির ভদ্রলোক বলেছেন: ভালা হৈচে
পৈরা মজা পেলুম
৫| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩০
দুরন্ত-পথিক বলেছেন: খুব ভাললাগলো
৬| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫৩
শূন্য পথিক বলেছেন: ভালো ভালো!
৭| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪০
মায়াবী ছায়া বলেছেন: ভাল মানুষ,,,,,,
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৫
লুকার বলেছেন: ওয়াও! সত্যি নাকি?