নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলছে চলবে

হাসান কালবৈশাখী

আমি দুর্বার, আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার। আমি কালবৈশাখীর ঝড়! আমার ফেসবুকইডি www.facebook.com/norwstorm

হাসান কালবৈশাখী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের মহান একুশ যে ভাবে হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৪

আমাদের মহান একুশ যে ভাবে হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

গত শতাব্দীতে বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ।
এরপর অনেককিছু বেদনা ও প্রাপ্তির ভেতর আরেকটি ছোট অতচ অতি গুরুত্ত্বপুর্ন অর্জন ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, এটিও একটি অন্যতম বিশাল অর্জন।





২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে’ পরিণত করার ভাবনা প্রথমে আসে কানাডার ভাংকুভারে প্রবাসী বাঙালি জনাব রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালামের মাথায়। বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য বাঙালিরা প্রাণ দিয়েছে, কাজেই তাদের এই অবদানের সম্মানার্থে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে যেন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করা হয়, এ ব্যাপারে তারা ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে চিঠি লেখেন। ইতিমধ্যে প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেছে। এরপর জাতিসংঘ থেকে দিকনির্দেশনা পেয়ে তারা বিষয়টি প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দফতরে প্রেরণ করেন।
সেখান থেকে তাদের ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে জানানো হলো, ‘তোমাদের বিষয়টি খুবই ইন্টারেস্টিং, ইউনেস্কো এ ধরনের প্রস্তাব পেলে তা আলোচনা করে থাকে। বিষয়টি অক্টোবরে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় ইউনেস্কো সম্মেলনে তুলতে হবে এবং তা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে হলে চলবে না, কোন এক বা একাধিক জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক অফিসিয়াল ভাবে উত্থাপন করতে হবে। এরপর রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম বিষয়টি সবিস্তারে ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠান। এদিকে হাতে সময় ছিল খুবই কম। কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনেস্কো সদর দফতরে এ প্রস্তাব পাঠানোর শেষ তারিখ ছিল ১০ সেপ্টেম্বর।

শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে ভুল করেন নি, তিনি তখনি তৎকালিন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আনেন। তখন দেশটি মাত্র ক্রিকেট টেষ্ট স্ট্যাটাস পেয়ে ব্যাপক উজ্জিবিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে সময় নষ্ট না করে ত্বরিত সিদ্ধান্ত দেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতা সংরক্ষণ’ সম্পর্কিত ইউনেস্কোর নীতিমালার আলোকে ইউনেস্কোর ৩০ তম সাধারণ সম্মেলনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করার সকল প্রয়জনিয় ব্যাবস্থা করা হয়।
প্রস্তাবটি প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতরে নেয়া হয়। এরপর ২৬ অক্টোবর। ইউনেস্কো সচিবালয়ে এ প্রস্তাব নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে ফান্ডিং/বাজেটের কথা বিবেচনা করে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। মহাপরিচালকের মতামত এই প্রস্তাবটিকে রীতিমতো অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়।
এমন হতাশাজনক পরিস্থিতিতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভের শেষ আশা জাগিয়ে তোলে ইউনেস্কোর অধিবেশনে প্রধানন্ত্রীর পাঠানো যোগদানকারী শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্যে একটি বড়সর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। কূটনৈতিক প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও বিচক্ষণতা এ ব্যাপারে মূল্যবান অবদান রাখে। ইউনেস্কোর ডেপুটি মহাসচিব কলিন পাওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে বুঝিয়ে বলেন যে, আমাদের প্রস্তাবে যে বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে তা হলো, পৃথিবীর বুক থেকে দ্রুত বিলীয়মান মাতৃভাষাগুলোকে রক্ষা করা এবং তা টিকিয়ে রাখার লক্ষে বৃহত্তর সচেতনতা গড়ে তোলা। এরপর ইউনেসকো মহাপরিচালক বাংলাদেশের প্রস্তাবটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একজিকিউটিভ বোর্ডে প্রেরণের সুপারিশ করেন।

পুর্ব অনুরোধে পাকিস্তানসহ সার্ক এবং প্রতিবেশী অন্যন্ন ২৮ টি সদস্যরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রস্তাবকে লিখিতভাবে সমর্থন জানায়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, প্রস্তাবটি যদি একবার পরিক্ষা-নিরিক্ষার জন্য একজিকিউটিভ বোর্ডে প্রেরণ করা হতো তাহলে আর কোনো দিন তা আলোর মুখ দেখত বলে মনে হয় না। ইউনেস্কোর টেকনিক্যাল কমিটি কমিশন-২এ বাংলাদেশের প্রস্তাবটি পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী উত্থাপিত হয় ১২ নভেম্বর।

কারো কোনো আপত্তি না থাকায় সভাপতি তিনবার হাতুড়ি পিটিয়ে প্রস্তাবটি গৃহীত হলো বলে ঘোষণা দিলেন। হাততালিতে মুখরিত হলো সম্মেলন কক্ষ। এরপরের ঘটনা গতানগতিক। কমিশন-২-এ পাস হওয়া প্রস্তাবটি ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সাধারণ সম্মেলনে রুটিন বিষয় হিসেবেই গৃহীত হয়। ৪ জানুয়ারি ২০০০ তারিখে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক কাইচিরো মাটসুরা এক চিঠিতে ইউনেস্কোর সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি তখন থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানান।

ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু মাতৃভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকেই স্বীকৃতি দেয়নি, অমর একুশের শহীদদের আত্নদান থেকে উৎসারিত স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনকেও মর্যাদা দিয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের পৃথিবীর বুকে মহিমান্বিত করেছে। বিশ্বের ১৯০টি দেশে এখন প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে।

লেখক - কালবৈশাখী

তথ্য সংগ্রহ –
ভোরের কাগজ ১৯৯৯-২০০১
সাপ্তাহিক ২০০০

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ বিষয়টি সেয়ারের জন্য

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৬

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ধন্যবাদ আপু।
আপনার মত বড় মানের গল্প-সাহিত্য লেখকের মন্তব্য সব সময় আমাদের মত সাধারন ব্লগারদের উৎসাহ যোগাবে।

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:০৯

জাফরুল মবীন বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যমূলক পোস্টটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই হাসান কালবৈশাখী।

শুভকামনা জানবেন।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩২

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ধন্যবাদ জাফরুল মবীন ভাই।
আপনার মত গুনি লেখকের মন্তব্য পেয়ে খুব ভাল লাগছে।

আর কুটিলা লিপি সম্মদ্ধে আপনার পোষ্টে আমার কৌতুহল মিটানোর জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনেক সময় নিয়ে খুটিনাটি বিস্তারিত ভাবে বিষয়টি বর্ননা করেছেন। খুবই উপকৃত হলাম। যা উইকি ঘেটেও পাইনি। ভাল থাকবেন ভাই।

৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:০০

আহসানের ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ +++

৫| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:২৯

গেম চেঞ্জার বলেছেন: পাকিস্তানসহ সার্ক এবং প্রতিবেশী অন্যন্ন ২৮ টি সদস্যরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রস্তাবকে লিখিতভাবে সমর্থন জানায়।

যাইহোক এই একটা ভাল কাজ তারা করেছে বলা যায়।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

এই দেশগুলো তাৎক্ষনিক সমর্থন না জানালে এই প্রস্তাব আর আলোর মুখ দেখতো না।

৬| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩০

শের শায়রী বলেছেন: ভাষার মাসে এই পোষ্ট গুলোকে সামনে আনা দরকার, অনেকেই এই সব জানে না। ধন্যবাদ হাসান ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.