নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী। শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার এবং নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার জন্য কাজ করি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে কৌতূহলী।

মাঈনউদ্দিন মইনুল

মুখোশই সত্য!

মাঈনউদ্দিন মইনুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

২০১২ নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ও কিছু বিশ্লেষণ

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৫৬

বলুন তো, কোন দেশের নোবেল প্রাইজ বিজয়ী এখন জেলের ভাত খাচ্ছেন এবং স্ত্রী গৃহবন্দী? উত্তর হলো চীন। কোন্ দেশের নোবেল বিজয়ী স্বদেশ থেকে বিতাড়িত? উত্তর হলো চীন। কোন্ দেশের নোবেল প্রাইজ বিজয়ী দেশের শত্রু হিসেবে বিবেচিত? উত্তর হলো চীন। চীনা বংশোদ্ভূত তিন ব্যক্তি নোবেল প্রাইজ পেয়েও কোন্ দেশ তা স্বীকার করে না? উত্তর হলো চীন। এসবই হলো ২০১১ এবং এর পূর্ব পর্যন্ত চীনের নোবেল প্রাইজের খবর। ২০১২ সাল সম্পূর্ণ উল্টো। সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়ে চীনের সরকারসহ সমগ্র দেশ উত্তেজনায় উন্মক্ত। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন কিষাণের ছেলে মো ইয়ান, যার আসল নাম গুয়ান মোয়ে।



সবাই বিস্মিত, এমন কি পুরস্কার বিজয়ী মো ইয়ান নিজেও। “আমি উল্লাসিত এবং আতংকিতও। এ প্রাইজের তেমন তাৎপর্য আছে বলে আমার মনে হয় না, যেহেতু স্বীকৃতি পাবার মতো আরও প্রতিভাবান লেখক চীনে আছেন।” বললেন মো ইয়ান কারণ, ইতিমধ্যেই পশ্চিমে এ পুরস্কার নিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে। চীনে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল টাইম্স’ এর সম্পাদক তো বলেই দিলেন: “তার মানে বুঝতে হবে, চীন ক্রমে শক্তিশালী হচ্ছে।” পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বললেন, “এ পুরস্কার হলো চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও উন্নয়নের অনিবার্য সুফল।” দেখুন উত্তেজনার নমুনা। তো পূর্বের নোবেল প্রাইজগুলো কিসের সুফল ছিলো?



রাষ্ট্রীয় সকল প্রচার মাধ্যমে পূর্বের সকল নোবেল বিজয়ীকে সযত্নে উপেক্ষা করা হচ্ছিল। নোবেল প্রাইজ বিজয়ের তিক্ত ইতিহাসকে ধামাচাপা দেয়ার সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হলো: “মো ইয়ান কি চীনের প্রথম নোবেল বিজয়ী হতে পারে?”



এবার শুনাচ্ছি ২০১১ সাল পর্যন্ত চীনের নোবেল প্রাইজ অবজ্ঞা করার কাহিনী। ১৯৮৯ সালে ধর্মীয় গুরু দালাই লামা অর্জন করেন শান্তিতে নোবেল প্রাইজ। তিব্বতের স্বাধীনতা সংগ্রামে দালাই লামা নেতৃত্ব দেয়ায় সেটাকে চীনা সরকার স্বীকৃতি দেয় নি। এ হলো চীনের প্রথম নোবেল প্রাইজ বিজয়ের কথা।



চীন বংশোদ্ভূত গাও জিংজিয়ান ২০০০ সালে সাহিত্যে প্রথম নোবেল প্রাইজ লাভ করেন। কিন্তু হায় তিনি তখন ফ্রান্সের ইমিগ্রান্ট! তার ‘সউল মাউন্টেন’ নামের উপন্যাসটিতে চীনের কনিউনিস্ট সরকারের বিভিন্ন কার্যকলাপের সমালোচনা করা হয়। সুতরাং সেটা ব্যান করো! তাই হলো।



সবশেষ ২০১১ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার, যা দেওয়া হলো চীনের মানবাধিকার কর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বী লেখা লিউ জিয়াবাওকে। আর যায় কই, তাকে চিহ্নিত করা হলো রাষ্ট্রীয় শত্রু হিসেবে। এবার বুঝেন তার গন্তব্য কোথায় হবে?



এভাবে চীন জাতীয়ভাবে দু’বার নোবেল পেলেও, কমিউনিস্ট সরকারের বিরোধী হবার কারণে তাদের কেউই স্বীকৃতি পান নি। ২০০০ সালের নোবেল বিজয়ী ফ্রান্সের অভিবাসী হবার কারণে তাকে এমনিতেই হিসেব থেকে বাইরে রাখা হলো।

তাহলে স্বীকৃতি পেলেন কে? মো ইয়ান, ২০১২ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। মো ইয়ান-এর বর্তমান পরিচিতি কী? চীনা লেখক সংগঠনের সহ-সভাপতি এবং ধারণা করা হয় যে তিনি ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্যও। তিনি চীনা জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির সাহিত্য বিষয়ের ডীনও।



মো ইয়ানের প্রতিভা নিয়ে আপাতত কিছুই বলছি না, বলছি নোবেল প্রাইজের রাজনীতিকরণ নিয়ে। পত্রিকা প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, নোবেল প্রাইজের বিজয়ী নির্বাচনের আগে ও পরে হয় অনেক রাজনীতি, অথবা রাজায় রাজায় পীরিতি। দালাইলামা আর লিউ জিয়াবাওকে নোবেল প্রাইজ দিয়ে যেভাবে ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছিল হালের পরাশক্তি চীনকে, সেই অবস্থার দ্রুত প্রশমনের জন্য দরকার হয়ে পড়েছিলো আরেকটি নোবেল প্রাইজের। নিজেদের অগ্রগতি ও রাষ্ট্রীয় নীতিতে সমর্থন পাবার জন্য, এ নোবেল প্রাইজ পেতে চীনা সরকারও বিগত কয়েক বছর ধরে মরিয়া ছিলো।





১৯৮৯ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দালাই লামা।





২০০০ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী গাও জিংজিয়ান।





২০১১ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লিউ জিয়াবাও।





২০১২ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মো ইয়ান।





রেড সরগাম-খ্যাত মো ইয়ানের উত্থান ও তার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সাহিত্য নিয়ে পরবর্তী কোন পোস্টে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।





**তথ্যসূত্র:

ক) জেফরি কিংক্লি’র ওয়ার্ল্ড লিটারেচার ইন রিভিউ, খ) বিবিসি ও উইকিপিডিয়া, গ) চীনা ও বাংলা পত্রিকা এবং ঘ) ব্যক্তিগত অনুসন্ধান।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:০২

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: ‘সাধারণ’ ব্লগার হিসেবে অনুমোদন পাবার পর এটি আমার প্রথম পোস্ট। সকল সম্মানীত ব্লগারদের সহযোগিতা ও সাহচর্য কামনা করছি। সকলকে শুভেচ্ছা!

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১০

ঢাকাবাসী বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন, আর সামুর ব্লগিং জগতে স্বাগতম।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩৬

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: ঢাকাবাসীকে ধন্যবাদ আমাকে স্বাগত জানাবার জন্য।

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১৪

সবুজ মহান বলেছেন: শুভ ব্লগিং ।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩৬

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: ধন্যবাদ সবুজ মহান! আপনাকেও শুভেচ্ছা!

৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩৮

আমিনুর রহমান বলেছেন: শুভ ব্লগিং

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৫৪

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই আমিনুর রহমানকে!

৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩৮

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ১ম প্লাস নেন ++++++++

ভালো পোস্ট :)

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০৭

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: নিলাম আপনার প্রথম প্লাস।
অনেক ধন্যবাদ, অপূর্ণকে! :)

৬| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: ‘সাধারণ’ ব্লগার হিসেবে অনুমোদন পাবার পর এটি আমার প্রথম পোস্ট। সকল সম্মানীত ব্লগারদের সহযোগিতা ও সাহচর্য কামনা করছি। -- চমৎকার একটা লেখা দিয়ে আপনার ব্লগিং যাত্রা শুরু হয়েছিলো। এতদিন পরে আর আপনাকে নতুন করে সুস্বাগতম জানানোর প্রয়োজন নেই, তবে ব্লগে যে আপনি স্বচ্ছন্দে বিচরণ করে চলেছেন, তা আপনার লেখা এবং পাঠকের মন্তব্যগুলো বলে দেয়।
ছোট্ট লেখাটি দিয়ে বেশ একটা ইন্টারেস্টিং বিষয়ের উপরে আলোকপাত করে গেলেন। নোবেল প্রাইজ অবশ্যই বিশ্ব রাজনীতির একটা সূচক মাত্র, এটা দিয়ে প্রকৃত শ্রেষ্ঠতম অবদানকে স্বীকৃ্তি দেয়া হয়, এরকমটি ভাবার উপায় নেই। বিশেষ করে বিশ্ব শান্তির জন্য যাদেরকে এ পুরস্কার দেয়া হয়, তাদের ব্যাপারে ব্যাপক বিতর্কের অবকাশ রয়ে যায়, হয়তো কিছু ব্যতিক্রম বাদে।
চীনের কনিউনিস্ট সরকারের বিভিন্ন কার্যকলাপের সমালোচনা করা হয়। সুতরাং সেটা ব্যান করো! তাই হলো। -- চীনা বংশোদ্ভূত গাও জিংজিয়ান এর ২০০০ সালে সাহিত্যে প্রথম নোবেল প্রাইজ লাভ করার পেছনেও হয়তো বিশ্ব পরাশক্তির অন্য রকমের হিসেব নিকেশ ছিলো। আর তা তার স্বদেশ (মাতৃদেশ) কর্তৃক ব্যান (নিষেধাজ্ঞাধীন) করার কারণনও বোধগম্য।
দালাইলামা আর লিউ জিয়াবাওকে নোবেল প্রাইজ দিয়ে যেভাবে ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছিল হালের পরাশক্তি চীনকে, সেই অবস্থার দ্রুত প্রশমনের জন্য দরকার হয়ে পড়েছিলো আরেকটি নোবেল প্রাইজের। নিজেদের অগ্রগতি ও রাষ্ট্রীয় নীতিতে সমর্থন পাবার জন্য, এ নোবেল প্রাইজ পেতে চীনা সরকারও বিগত কয়েক বছর ধরে মরিয়া ছিলো। -- আপনার এই শেষের বাক্য দুটো নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তির হিসেব নিকেশ অনেকটা সহজ করে দেয়।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৯

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: পুরাতন লেখায় আপনার পদচারণা আমাকে পুরাতন বিষয় নিয়ে আবার ভাবিয়ে তুলছে :)

সব প্রাইজ নিয়েই রাজনীতি আছে। নোবেল নিয়ে একটু বেশি হয়, কারণ বনেদি এবং অভিজাত।

আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোই আমার সাথে মিলে গেলো!

অনেক কৃতজ্ঞতা :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.