নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী। শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার এবং নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার জন্য কাজ করি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে কৌতূহলী।

মাঈনউদ্দিন মইনুল

মুখোশই সত্য!

মাঈনউদ্দিন মইনুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর্মসংস্থান ব্যবসায় - একটি অনাবিষ্কৃত শোষণ ব্যবস্থা

২৭ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩



"শহিদুল সাহেবের সাথে এতগুলো বছর অতিক্রম করে আমি আমার ক্যারিয়ারটাকে শেষ করে দিয়েছি। সারাটি জীবন ম্যানেজারই থেকে গেলাম। অথচ বিএ পাশ করার পর একাজটি পেয়ে আমি কত খুশি হয়েছিলাম। তখন দয়া করেই তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর শহিদুল সাহেব আমাকে ম্যানেজারের কাজটি দিলেন। চিঠিলেখা, কারখানার সাথে প্রডাকশন ফলো-আপ করা, হিসাব করা, বিদেশি ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করা ইত্যাদি কাজে আমি দারুণ মজা পেতাম। এমএ’টা করারও আর প্রয়োজন বোধ করলাম না। ১৯৯৮ সালে আমার বেতন ছিলো ৬০০০ টাকা। বছর গড়ালেই কাজ বাড়তো, কিন্তু বেতন বাড়তো না। অনুযোগ করলেই বলা হতো, ‘তোমার তো কোন অভিজ্ঞতা ছিলো না। এখানে কাজ শিখার যে সুযোগ পেয়েছো, সেটারও তো একটু মূল্য আছে। কাজ শিখো, বেতন তুমি পাবে।’ সেই সেই সময় আর এলো না আজ ২০১৩ সালেও আমার বেতন মাত্র ২০,০০০ টাকা। এদিকে সংসারের সদস্য বেড়ে ৬জনে দাঁড়িয়েছে। মেয়ের স্কুলের বেতন ও প্রাইভেটের পড়ানোর খরচ।



“শহিদুল সাহেব এখন একই প্রতিষ্ঠানসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। অথচ আমি ম্যানেজারেই রয়ে গেলাম! আজ ভাবছি, কী ভুলই না করেছিলাম, তার আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে! কত চাকরির প্রস্তাব দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে প্রত্যাখ্যান করলাম, তার হিসেব নেই। আজ আমিও প্রতারিত, সে সাথে আমার স্ত্রী-সন্তানকেও প্রতারনার ভুক্তভোগী বানালাম।”



----------------------------------------------------------------

গল্পটির সব বলা হয় নি। দরকারও নেই, কারণ এরকম গল্পের অভাব নেই আমাদের সমাজে। যা হোক, তরুণ ভাইবোনদেরকে আমি আগে বলতাম, যাচাই-বাছাই না করে প্রথমে যে কোন একটি কাজে ঢুকে পরতে। তাতে বেকারত্বও কাটবে, আবার অন্য একটি চাকরির জন্য যোগাযোগ করার খরচও জুটবে। বেকারকে কেউ চাকরি দিতে চায় না। এক সময় দেশের নতুন পাশ-করা গ্রাজুয়েটরা চাকরি বলতে শুধুই সরকারি চাকরিকেই মনে করতো। তাই, পাশ করেই একটি সরকারি চাকুরির জন্য আদা-জল খেয়ে লেগে যেতো আর পায়ের জুতা ক্ষয় করতো।



কিন্তু এখন ভিন্ন কথা। সময় পাল্টেছে, প্রতিযোগিতা বেড়েছে কর্মস্থলে। যোগ্যলোকের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে চাকরির সংস্থানও। করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে ব্যাংক-বীমা, আধা-সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-পযুক্তির কল্যাণে নানাবিধ কাজের একটি বিশাল দরজা উন্মুক্ত হয়েছে। প্রাইভেটাইজেশনের কারনেও ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েছে সংখ্যাতীত ভাবে। ফলে চাকুরির খাতও বেড়েছে, সংখ্যাও বেড়েছে।



যোগ্য ব্যক্তিকে এখন আর বসে থাকতে হয় না। চাকুরির একটা ব্যবস্থা হয়েই যায়। চাকুরির রকম, স্থান, মান ইত্যাদি আপনার পছন্দ না হতে পারে, কিন্তু চাকুরি আছে বাজারে।



এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, দেখে-বেছে চাকুরি গ্রহণ করা এবং অধিকতর ভালো সুযোগ পেলে বর্তমান চাকুরির মায়া ত্যাগ করাই হলো উত্তম। কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ আছে, বেতনও ভালো, কিন্তু পদোন্নতি বা যোগ্যতা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। চাকুরি করেই যদি খেতে হয়, তবে পেশাদারি আচরণ নিতেই হবে, এবং নিজের ক্যারিয়ার ডিভেলপমেন্ট-এর বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।



কর্মসংস্থান আর ‘সুযোগ দেবার’ নামে নব-আবিষ্কৃত শোষণ ব্যবস্থাটি হলো, কম বেতনে এবং কম সুযোগে কোন প্রতিশ্রুতিশীল কর্মীকে ধরে রাখা। তাকে এমনভাবে সম্মোহন করা, যাতে সে অন্য চাকুরির সন্ধান না করে। পাঁচ-দশ বছর যাবার পর তার কর্মশক্তি যখন একটি কাজেই আটকে যায়, তখন প্রতিষ্ঠান তাকে আর আটকায় না। কিন্তু তখন তার আর কিছুই করার থাকে না।



তাই এখন সেই পরামর্শ আর আমি নতুন প্রজন্মকে দিই না। তাদেরকে একটিই কথা বলতে চাই: আপনি যে কাজ বা যে পেশা নিতে চান, সেই পেশার সাথে সম্পৃক্ত কাজেই যুক্ত হোন - বেতন না থাকলেও সেটি আপনাকে ক্যারিয়ান গঠনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অগত্যা কোন অড জবে আটকে গেলে, যত দ্রুত সম্ভব ওখান থেকে বের হয়ে আসুন। অনুসন্ধান করুন নিজের যোগ্যতা-ভিত্তিক কাজের।



Do What You Love and

Love What You Do!




মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫

রাজীব বলেছেন: ঠিক"++++++++=

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: রাজীব ভাই, ‘প্লাসের জন্য’ আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ :)

২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ ভোর ৫:২৮

আরজু পনি বলেছেন:

কিন্তু আমরা সবাই কি নিজেদের পছন্দের এরয়িাতে চাকুরী করতে পাচ্ছি না কি পছন্দের এরিয়াতে চাকুরী হচ্ছে ?


তবে আপনার পরামর্শগুলো মেনে নেবার মতো।

++++++++++++++++

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:০০

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: “কিন্তু আমরা সবাই কি নিজেদের পছন্দের এরয়িাতে চাকুরী করতে পাচ্ছি না কি পছন্দের এরিয়াতে চাকুরী হচ্ছে ?”

-হুম এটি ঠিক যে, আমার একাডেমিক শিক্ষা মোতাবেক চাকরি আমরা পাচ্ছি না। যদিও ভালো ছাত্রছাত্রীদের বেলায় এ অসামঞ্জস্যতাটি অনেক কম।

-আমি বলছিলাম ‘কম বেতন এবং কম সুযোগের’ চাকরিগুলোতে বেশিদিন আটকে না থাকার কথা। বেকারত্ব বা ‘অনভিজ্ঞতার’ সুযোগ নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ক্রীতদাসের মতো খাটিয়ে যাচ্ছে, এরকম দৃষ্টান্ত আমাদের চোখের সামনে কম নয়। সেখানে নিজের বিষয়ে চাকরি পেলেই কি?

-আপনার সুতীক্ষ্ণ মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ, আরজুপনি :)

৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্টটা পুরনো হলেও এখনো প্রাসঙ্গিক। সুযোগ দেয়ার নাম করে অন্তহীন শোষণের এ প্রক্রিয়ার অবসান হোক!
বৎসরান্তে প্রত্যেকেরই উচিত, বসের সাথে সাথে নিজেও নিজের একটা এসিআর লিখে নিজের যোগ্যতা ও দুর্বলতার দিক গুলো চিহ্নিত করা। এতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। অনুপযুক্ত পেশায় ঢুকে গেলে, যত দ্রুত সম্ভব, তার থেকে একটা ক্লীন ব্রেক নিয়ে বেরিয়ে আসা উচিত।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:১৮

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:


অনেক ধন্যবাদ, প্রিয় লেখক খায়রুল আহসান। আপনার প্রতিটি মন্তব্য লেখকের জন্য প্রেরণা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.