নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেঘ ছুঁয়ে দেখো.........আমি বৃষ্টি হবো......

নাম ছিলনা স্বপ্ন গুলোর........প্রতিবিম্বিত অবয়ব তাড়িয়ে বেড়ায় নিজেকে।

মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন রেজা নাদিম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি বি এ করছি।অবসরে কিছু লিখার চেষ্টা, ভার্সিটি, পড়া , পড়ানো.........সব মিলিয়ে চলে যাচ্ছে মুহূর্ত গুলো।।

মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন রেজা নাদিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

US DEBT CRISIS 2012 – IS ONLY FOR AMERICA?

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:২৬

US DEBT CRISIS 2012 – IS ONLY FOR AMERICA?

পরিচয় করিয়ে দেই, এই হল আমাদের আঙ্কেল স্যাম (আমেরিকার সরকার)। তার খরচপাতি অনেক। প্রতিবছর চার ট্রিলিয়ন ডলারের মত। কিন্তু আঙ্কেলের ইনকাম বছরে মাত্র দুই ট্রিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এই ঘাটতি মেটানোর জন্য তিনি আমাদের মতই মানুষের কাছে ধার করেন। তার এই ধারের টাকার তিনি একটা লোভনীয় নাম দিয়েছেন – “বন্ড”। এই বন্ডগুলো ব্যাংক, বিনিয়োগকারী এমনকি বিদেশি সরকারও (যেমন চীন) কিনতে পারে। কিন্তু মানুষ কেন তার এই বন্ড কিনবে ? কারন এর সাথে তিনি এই বন্ডের ওপর প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের সুদ দেবেন।
প্যাঁচটা শুরু হয় এইখান থেকে। আঙ্কেলের কাছে টাকা নাই, কিন্তু প্রতি বছর বন্ডের জন্য সুদ গুনতে হচ্ছে। এখন কি হবে ? এর উত্তর আমরা সবাই জানি, কারন আমরা এই কাজটা সবসময় করি। কি করি ? এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে আরেক বন্ধুর ধার শোধ করি। আঙ্কেলও ঠিক একই কাজ করেন। তিনি তার পুরনো বন্ডের সুদের টাকা জোগাড় করার জন্য নতুন বন্ড ছাপান। মানে আবার নতুন করে ধার করেন। এই সব ধারের আর সুদের অঙ্ক দিনকে দিন বাড়তে থাকে। এই আকাজ করতে করতে আঙ্কেলের বর্তমান এই বন্ড বাবদ পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যাংক আর সরকারের কাছে সুদসহ মোট দেনা চৌদ্দ ট্রিলিয়ন ডলারের মত ! দেনার অঙ্কটা কত বড় যদি আন্দাজ করতে চান তাহলে বলি, আমেরিকার জি ডি পি চৌদ্দ ট্রিলিয়ন ডলার। তার মানে দাঁড়ায় এই ধার শোধ করতে হলে আঙ্কেল কে তার দেশ পুরোটা বিক্রি করতে হবে। বিশ্বাস হচ্ছে না ? গুগলে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন।

এই ধারের টাকার অঙ্কটা এতই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সুদের হিসাব মিটমাটের পর আঙ্কেলের হাতে দেশ চালানোর টাকা থাকে না। আঙ্কেল নতুন টাকা ধার করার লোক ও খুঁজে পাচ্ছেন না। সব শেয়ার বাজারে US বন্ডের দাম পড়ে যাচ্ছে। এখন উপায় ? উপায় আছে, বুদ্ধিজীবীরা সেগুলো নিয়ে অনেকদিন থেকেই চ্যাচাচ্ছেন। সেটা হল “Cut Spending and Increase Tax”। মানে খরচ কমাও আর ট্যাক্স বাড়াও। কিন্তু সামরিক খরচ কমালে আঙ্কেলের পেশি শক্তি কমাতে হবে এবং তিনি আর চিন-রাশিয়ার কাছে পাত্তা পাবেন না। যার ফলে উনার দুনিয়ার সব ব্যাপারে পোদ্দারি করা আর হবে না। আর অভ্যন্তরীণ ভর্তুকি কমালে উনার দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে। আর ট্যাক্স বাড়ালে ? সেটা শুধু উনার মানুষদের আরও গরিবই বানাবে, দেশে রিতিমত রায়ট লেগে যেতে পারে (উনার দেশের লোকগুলো আমাদের মত না, তারা ঘরে বন্দুক-পিস্তল রাখে)।
এমন পরিস্থিথিতে আঙ্কেল ওই দুই রাস্তার একটাতেও না গিয়ে একটা সহজ রাস্তা অবলম্বন করলেন টাকা বানানোর – উনি সত্যি সত্যি টাকা বানানো শুরু করলেন। উনি ফেডারেল রিসার্ভ কে টাকা ছাপানোর নির্দেশ দিলেন এবং সেই টাকা খরচ করা শুরু করলেন। কিন্তু এইখানে অর্থনীতির সেই ক্লাস এইট এ পড়া এক সুত্র ঝামেলা বাধিয়ে দেয় – কোন পণ্য বাজারে যত বেশি থাকবে, তার দাম ততই পড়ে যাবে। এই সূত্রটা আর সবকিছুর মত ডলারের জন্যও সত্যি। বাজারে ডলার যত বেশি, কোন জিনিস কিনতে ডলারও ততই বেশি লাগবে। এজন্যই যখনই আঙ্কেল তার টাকা বানানোর ম্যাজিক দেখান তখনই তেল, সোনা, খাদ্যশস্য এইগুলোর দাম একটা ছোট্ট লাফ দেয়। আসলে ওইগুলোর দামও বাড়েনি, সাপ্লাইও কমেনি; ডলারের দাম কমে গেছে। এই পরিস্থিতির একটা খটমটে নাম আছে অর্থনীতিতে – “মূল্যস্ফীতি” বা Inflation.

প্যাঁচ এতটুকু পর্যন্ত থাকলে তাও হয়ত সামলানো যেত। কিন্তু আঙ্কেল এই ধার করে আসল ধরা খেয়েছেন একটু অন্য দিক থেকে। চীনের ব্যাপারটা সবাই জানে তাই তাকে নিয়েই বলি। চীন আঙ্কেলের বন্ডের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। সোজা বাংলায় চীন আঙ্কেল কে অনেক অনেক টাকা ধার দিয়েছে। ফলে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে চীনের পকেটে কোন টাকা নেই আর আঙ্কেলের পকেটে টাকা আর টাকা। মানে চীন গরিব দেশ আর আমেরিকা বড়লোক দেশ। এখন আমি যদি আপনাদের বলি ভাই, কোনটা নিবেন, আমেরিকার ডলার না চীনা ইয়ুয়ান ? আপনাকে পাগলে না কামড়ালে আপনি বড় লোক দেশের টাকা ফেলে গরিব দেশের টাকা নেবেন না। আর সেই ক্লাস এইট এর পড়া সুত্র – চাহিদা যত বেশি, মূল্য ও তত বেশি। ফলাফল ? এক ডলার দিয়ে অনেকগুলো ইয়ুয়ান কেনা যায়। চীনা কোম্পানিগুলো তাদের শ্রমিকদের ইয়ুয়ানে বেতন দেয়, ফলে তাদের জিনিসগুলো আমেরিকাতে এসে ডলারে অনেক সস্তা হয়ে যায়। চীনা পণ্য আমেরিকার বাজার দখল করে ফেলে। আমেরিকার কোম্পানি গুলো ভাবল তারা যদি তাদের ফ্যাক্টরি গুলো চীনে নিয়ে যায়, তাহলে তারাও চীনা ইয়ুয়ানে বেতন দিয়ে বিশাল লাভ করতে পারবে। ফলাফল ? দুনিয়ার সবকিছুর পিছনে, “Made in China” সিল। আর আঙ্কেলের দেশে কোন ফ্যাক্টরি নাই, অর্থাৎ সাধারন মানুষের চাকরি নাই। অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলে “Recession” বা মন্দা।

কেউ কেউ এই পর্যায়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন যে এত মূল্যস্ফীতির পরও কেন ইয়ুয়ানের দাম ডলারের থেকে এত কম থাকে ? উত্তর হচ্ছে চীনারা বড়ই চাল্লু। যেই আঙ্কেল ডলার ছাপায় সাথে সাথে তারা ইয়ুয়ান ছাপায়। ফলে যেই লাউ সেই কদুই থাকে। এটা নিয়ে আঙ্কেল নিয়মিত চীনাদের গালিগালাজ করেন। সি এন এন ফলাও করে দেখায় সেগুলো।
এখন আমেরিকাতে যারা বেকার হচ্ছে তারা ট্যাক্স দেওয়া বন্ধ করে উল্টো আঙ্কেলের কাছ থেকে বেকার ভাতা, চিকিৎসা ভাতা এইসব নেওয়া শুরু করে দিল। ফলে আঙ্কেলের আয় কমে গেল, খরচ আরও বেড়ে গেল। যারা চাকরি হারালো না তারা তাদের চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে কম বেতনে কাজ করতে রাজি হয়ে গেল। যখন আপনার টাকার মূল্য কমে যাচ্ছে এবং সেই সাথে আপনার ইনকামও কমে যাচ্ছে অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি আর মন্দা একই সাথে বিদ্যমান, সেই পরিস্থিতিকে অর্থনীতির ভাষায় বলে , “Stagflation” যার বাংলা আমার জানা নেই। এখন আঙ্কেলের অবস্থা জ্বলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ এর মত। তিনি এখন আর ভর্তুকি কমাতে বা ট্যাক্স বাড়াতে পারবেন না; তাতে মন্দা (Recession) বাড়বে। তিনি এখন টাকাও ছাপাতে পারবেন না; তাতে মূল্যস্ফীতি (Inflation) বাড়বে। তিনি আপাতত ধার করতে পারেন কিন্তু তাতে উনার দেউলিয়া হওয়ার সময় আরও কাছে এগিয়ে আসবে। তাই আজ হোক আর কালই হোক, সেই দিন আসবেই যেদিন আঙ্কেল স্যাম তার বন্ডের সুদ দিতে পারবেন না। অর্থাৎ তিনি দেউলিয়া হবেন। এই পরিস্থিতিকে এখন ভালো ভাষায় বলা হচ্ছে “US DEBT CRISIS” ।

ব্যাপারটা এই পর্যন্ত থাকলেও আঙ্কেল কে সালাম ঠুকে আমেরিকা মুর্দাবাদ বলে খিচুরি খেয়ে ঘুম দিতাম। কিন্তু আমাদের জন্য ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে এই লোভের উটের পিঠে চড়া বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ঠিক আঙ্কেল স্যামের মত অন্যান্য দেশের সরকার, ব্যাংক আর প্রতিষ্ঠানগুলোরও নিজেদের খুব বেশি টাকা নেই। আছে খালি দেনা পাওনার হিসাবওয়ালা একটা ছক যাকে তারা বলে ব্যালেন্স শিট। যেগুলো তৈরি করে কিছু ওভার স্মার্ট হিসাবরক্ষক যাদের অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান এমনকি মূল্যবোধও শেখানো হয় না। পুরো পৃথিবীর বড় বড় ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান এমনকি অন্য দেশের সরকারও তাদের কেনা আঙ্কেলের বন্ডের সুদের টাকার উপর নির্ভর করে একে অন্যের কাছে টাকা ধার করে বসে আছে। যদি এই ধারচক্রের একটি কাঠি কাত হয়ে পড়ে তাহলে লাইন ধরে একের পর এক সবাই পড়বে।এখন যদি আঙ্কেল দেউলিয়া হয়, সে আর বছর শেষে ব্যাংক প্রতিষ্ঠান আর অন্য দেশের সরকারকে টাকা দিতে পারবে না। ফলে প্রতিষ্ঠানরা তাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না। ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে, তারা আর লোণ দিতে পারবে না; এমনকি গ্রাহকদের জমানো টাকাও না । অন্যদেশের সরকারও হটাত করে এত টাকা জোগাড় করতে পারবে না ফলে ভর্তুকি সহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ থাকবে না। ফলে তাদের দেশের অর্থনীতিতেও মন্দা দেখা দেবে। আঙ্কেলের টাকায় চলা (রেমিটেন্স আর সাহায্য) আমাদের মত দেশগুলো ও ভাতে মারা যাবে ।

সবমিলিয়ে যা হবে তাকে বলা হয় “Global Economic Collapse”। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটা কোনদিন হয়নি। তাই কেউ জানে না এটা আসলেই ঘটলে তার ফলাফল কত খারাপ হবে, কতদিন এটা থাকবে আর কিভাবেই বা এর থেকে বের হওয়া যাবে। তাসের ঘর তৈরি হয়ে গেছে, তাকে না ভেঙ্গে নামিয়ে আনা অনেক দুঃসাধ্য যদি না হয় অসম্ভব। আমাদের এখন কি করা উচিৎ সেটা বলার মত অর্থনীতির জ্ঞান আমার নেই।


(লিখাটা কে লিখেছিল বলতে পারি না। শ্রদ্ধেয় রঞ্জন স্যার (Faculty Member, Dept. of AIS, University of Dhaka) খুব সম্ভবত থার্ড ইয়ারে ক্লাস এ এই ডকুমেন্ট টা পড়িয়েছিলেন। অনেক প্রাঞ্জল উপস্থাপন তাই কষ্ট হলেও ইমেজ টা কে হাতে লিখে প্রকাশ করলাম.........যদি কারও উপকার হয়, এই আশায় )

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:১২

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: সাধারন উপস্থাপনা। খুউব ভালো লাগল।
অসংখ্য ধন্যবাদ পোষ্টটি দেয়ার জন্য।
প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.