নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় ওয়েব ডেভেলপার - ফুল টাইম। এখনো একাডেমিক পড়া-শোনা কোন রকমে চালু আছে, সেই হিসাবে ইস্টুডেন্ট। পছন্দ করি ঘুরতে, পড়তে, শিখতে ও শিখাতে।

ডেস্পারেট ওয়ারিয়র

ওয়েব ডেভেলপার

ডেস্পারেট ওয়ারিয়র › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরকীয়ার বলি - ১

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১১

এটি একটি সত্য ঘটনা। এটা প্রায় ৩ বছর আগে ঘটে আমাদের পাশের এলাকায়। আমার যতটুকু মনে আছে বর্ণনা করছি।

পরিবারে আছে বাবা-মা আর তিন ভাই-বোন। বোনটি ছোট। আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল তবে পরিবারের শিক্ষা-দীক্ষার দৌড় অল্প। বড় ছেলে পারিবারিক ব্যবসা দেখা-শোনা করছে। বড় ভাই বিয়ের আগে ঠিক করে রাখে বোনের বিয়ে না দিয়ে বিয়ে করবেনা। তাই যথা সময়ে ভাল পাত্র দেখে বোনকে পাত্রের হাতে সম্প্রদান করা হয়। বোনের বিয়ে দেয়ার বছর খানেক পরে বড় ভাই অনন্যা সুন্দরী এক মেয়ে বিয়ে করে আনে। চন্দ্রের মত উজ্জ্বল গৃহবধু পেয়ে বাবা-মা খুশী সাথে ছোট ভাইও খুশী এমন একটা সুন্দরী ভাবী পেয়ে। ঘটনার শুরু এখান থেকে।

বিয়ের পরে বড় ভাই ব্যবসার দিকে আগের থেকে বেশি মনোযোগী হয়ে গেল। কাজের সূত্রে তাকে বাইরেও বেশি থাকা লাগে। বিয়ের আগে যদিও কিছুটা সংসারে অমনোযোগী ছিল বিয়ের পরে পুরোদস্তর সংসারী হয়ে উঠল। আর এমন সুন্দরী বৌ যার ঘরে আছে সে পুরুষের সংসারের দিকে মনোযোগী হওয়াটাই স্বাভাবিক।

ভাবী যখন রান্নার জন্য পাকঘরে বসে দেবর তখন বিভিন্ন ছুতোয় রান্না ঘরে যাওয়া-আসা করে। ভাবীকে তার মনে ধরে, দেবরের অনেক ইচ্ছে ভাবীর কাছে প্রিয় হওয়া।
- ভাবী, তোমার কোন চাচাত বোন নাই?
- আছে, কিন্ত তাতে তোমার কি?
- না, মানে যদি তোমার মত সুন্দরী তোমার কোন বোন থাকত তাহলে ভাইয়ার মত আমিও একটা বিয়ে করে নিয়ে আসতাম। তোমরা দুই বোনে গল্প-গুজব করে দিন পার করে দিতে পারতে।
- ইশশ, থাকলেও তোমাকে দিব নাকি? তোমার মত অকম্মাকে মেয়ে দিবে কোন ব্যাটায়?
- ভাবী, আমাকে খোটা দিওনা। তোমার খোটা দেওয়া আমার মনে জিদ বাড়ায়ে দেয়।
- যদি জিদ থেকে থাকে তাহলে নিজে কিছু করে দেখাও। বুদ্ধি থাকলে হাত বাড়ালেই অনেক কিছু পাওয়া যায়।

ভাবীর মুচকি হাসিতে দেবরের মনে বিভ্রান্তি দেখা দিল। দেবর ভেবে পাচ্ছেনা ভাবী হাত বাড়ানো দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছে। এভাবে দিন যেতে লাগল আর বড় ভাইয়ের ব্যস্ততা আরো বেড়ে গেল। ব্যবসার প্রয়োজন ও সম্প্রসারণের জন্য তাকে দীর্ঘদিন বাড়ীর বাইরে থাকতে হয়। মাঝে-মাঝে ৩/৪ মাসও দেশের বাইরে থাকতে হয়।

ভাবী যখন নিজ মনে সংসারের কাজ করতে থাকে দেবর তখন উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে থাকে। চোখা-চুখি হলে দু'জনের দৃষ্টি নিচে নামায়ে নেয়। মাঝে-মাঝে হালকা হাসি বিনিময় হয়। ভাবী বুঝে তার প্রতি দেবরের নজরে কামনার আগুন আছে। সে কিছু একটা চায়। ভাবী মুখ টিপে হাসে। সে হাসি ২৪ বছর বয়স্ক দেবরের মনে উত্থাল-পাতাল ঢেউ খেলিয়ে দিয়ে যায়। এভাবে কেটে যায় ১ বছরেরও বেশি সময়।

দেবর ভাবতে থাকে কি করে ভাবীকে আরো কাছে পাওয়া যায়। ভাবীর সাথে হাসি বিনিময়, দুষ্ট-মিষ্টি কথা বিনিময়ের মাধ্যমে দেবর নিশ্চিত হয় সে হাতে বাড়ালে ভাবী তার হাত ফিরিয়ে দিবেনা। সে আরো আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠে। আরো কাছে পাওয়ার জন্য তার মনের বাসনা তীব্র হয়। সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ যেমন দূর থেকে এসে তীরে এসে আছড়ে পড়ে তার শক্তি নিবৃত্ত করে সেও তেমনভাবে তার কামনা নিবৃত্ত করতে চায়।

এদিকে স্বামী বিদেশে থাকায় দীর্ঘ সময় পতি বিরহে কাতর বধু দেবরের সাথে হাসি-ঠাট্টার ছলে নিজের বিরহের আগুনে কিঞ্চিৎ জল সিঞ্চন করতে থাকে। কিন্ত যার দরকার তীব্র ঝড় তার এক পশলা বৃষ্টিতে কি হবে? দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মিটে? বিরহে কাতর মন মরা বধু নতুন বৃষ্টিতে ভিজতে চায়, নতুন বৃষ্টির পানিতে ভিজে নিজের কাতর মনকে তরতাজা করতে চায়। বিরহের আগুন বড়ই নিদারুণ, কিন্ত সে আগুনে যদি জল সিঞ্চনের জন্য কেউ থাকে তাহলে সেটা আনন্দই দেয়।



দেবর-ভাবীর প্রেম যখন তুঙ্গে তখন বাবা-মা ও পাড়া-প্রতিবেশীর নজরে পড়তে লাগল। প্রতিবেশীরা এটা নিয়ে কানা-ঘুষা করতে লাগল। ভাবীর যেসব জায়া-ননদ ছিল তারা ঠাট্টার হাসিতে আর আর বাকা কথায় বুঝিয়ে দিল তোমরা ডুবে ডুবে জল খেলে কি হবে, আমরা কিন্ত ঠিকি বুঝতে পারছি। দেবর-ভাবী তাদের কথা হেসে উড়িয়ে দিত, নিজেরা যে সৎ সেটা বোঝানোর জন্য মিথ্যে প্রতিজ্ঞা করত। কিন্ত চোরের মনে সব সময় পুলিশ থাকে। তারা যত বড় অভিনেতা হোকনা কেন দোষী ব্যক্তিকে তার দোষ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে কিছুইতে চোখের চাহনিতে তারা নিজেদের দোষ লুকাতে পারেনা। একটা খুনী যতই পরিকল্পনা করুক না কেন যে যখন তার দোষ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে তখন সে তার চোখ ও মুখের ভাব স্বাভাবিক রাখবে। কিন্ত সে পারবেনা। মানুষের ব্রেইনের কোষগুলাই মনে হয় এভাবেই তৈরী করা, নিজের অতীত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বা বলা হলে সাথে সাথে কোষগুলা সজাগ হয়ে উঠে, তার একটা আভা পড়ে মুখের উপর।

এই খবর যখন বড় ভাই জানতে পারল তখন তিনি ত্বরিত ছোট ভাইকে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি নিজের অনুপস্থিতিতে নিজের ভাইয়ের ও স্ত্রী'র মধ্যে যে কিছু একটা হচ্ছে এটার অনুমান করলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তার নিজের স্ত্রী থেকে সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ের আঞ্জাম শুরু হয়ে গেল। এই বিয়েতে তার ছোট ভাই ও স্ত্রী নীরব রইলো। বলা যায় তাদের বিয়েতে কোন সম্মতি ছিলনা। তারপরেও ধুম-ধাম করে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের বিয়ে দিল। ছোট ভাইয়ের সম্পন্ন করে বড় ভাই আবার কাজে মনোনিবেশ করল।

বড় ভাই মনে করল এবার যেটুকু শূন্যস্থান ছিল তিনি সেটুকু পূরণ করে দিয়েছেন। কিন্ত পর-স্ত্রী যার মনে বাসা বেধে আছে তার নিজের স্ত্রী'র প্রতি আর মোহ থাকেনা। নিজের স্ত্রী'র সাথে মিলিত হলেও অবচেতন মনে থাকে পর'স্ত্রী। একই রকম অবস্থা হয় মেয়েটির ক্ষেত্রেও। নিজ স্বামীর সাথে সুখী হতে পারেনা। জল্পনা-কল্পনায় থাকে নাগর। মন সব সময় উচাটন থাকে কখন যাবে অভিসারে। তেমনি ভাবে দেবর-ভাবী বিয়ের পূর্বে যেমন ভাবে মিলা-মিশা করত, নিজেদের গোপন সম্পর্ক চালিয়ে যেত বিয়ের পরেও তাদের মধ্যে একই সম্পর্ক বহাল তবিয়তে থাকল।

বাবা-মা পড়ে গেল দুশ্চিন্তায়। আর প্রতিবেশীরা তো নিজেদের মধ্যে কানা-ঘুষা চালিয়েই যাচ্ছে যে বিয়ের পরেও ছেলেটা ভাল হচ্ছেনা আর তার ভাবী তাকে ছেড়ে থাকতে পারছেনা। কিন্ত এসব কিছুর পরেও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নীরব রইলো আর গোপনে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। মেয়েটি ধার্মিক ও সুশীল পরিবার থেকে আসার কারণে সে কোনরুপ উচ্চ-বাচ্চ করল না। স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক সে নিজ মনে চেপে যেতে লাগলো। তার কষ্ট দেখে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর মন কেঁদে উঠলো। তারা তাদের ছোট ছেলে ও বড় বৌকে অনেক বুঝাল, কিন্ত কিছুতেই কোন কাজ হলনা। বাধ্য হয়ে তারা তাদের বড় ছেলেকে বাড়ীতে ডেকে আনলো।

বড় ভাই তার স্ত্রীকে অনেক বুঝাল, কিন্ত তার স্ত্রী হ্যা-না বিশেষ কিছু বলল না। বড় ভাই এলাকার মুরব্বীদের নিয়ে ঘরোয়া শালিসের আয়োজন করল। কিভাবে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা আলোচনা-পরামর্শ শেষ মুরব্বীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে বড় ভাই তার স্ত্রীকে তালাক দিবে, তারপর ছোট ভাইয়ের সাথে ঐ বৌয়ের বিয়ে দেয়া হবে। আর ছোট ভাই তার স্ত্রীকে তালাক দিবে ও বড় ভাইয়ের সাথে ছোট ভাইয়ের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে দিবে।

শালিশী বৈঠকে সবাই এই সিদ্ধান্তে একমত হল। কিন্ত তারপর দিন ছোট ভাইয়ের বৌ তার বাপের বাড়ী চলে গেল। শালিশের সিদ্ধান্ত মত বড় ভাই তার স্ত্রীকে তালাক দিল এবং ছোট ভাইয়ের সাথে বিয়ে হল। অনেক চেষ্টা করা হল ছোট বৌকে তার বাপের বাড়ী থেকে ফেরত আনার জন্য। কিন্ত ছোট বৌ কিচুতেই রাজী হলনা তার ভাসুরের সাথে বিয়ে বসতে।

এরপর আমি দীর্ঘদিন বাইরে ছিলাম। তাদের ব্যাপারে আর কোন সংবাদ শুনিনি। গত সপ্তাহে তাদের বাড়ী গিয়ে দেখলাম বাড়ীর গেটে তালা লাগানো। একজন জানালো তারা সবাই এলাকা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছে।

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৪

ডেস্পারেট ওয়ারিয়র বলেছেন: আমি আশা করছি এই পোষ্ট দেখে কোন না কোন তরুণ বা যুবা সচেতন হবে। যদি পজিটিভ রেসপন্স পাই, পরকীয়ার ফলে পরিবার ভাঙ্গনের আরো একটি সত্য ঘটনা নিয়ে আসব।

২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
পরকীয়া কখনোই কাম্য হতে পারেনা।

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪২

ডেস্পারেট ওয়ারিয়র বলেছেন: হুম্ম, যতদুর শুনলাম মানুষের কটুক্তিতে তাদের সমাজে স্বাভাবিক চলা দারুণ ব্যহত হচ্ছিল। তার জন্য তারা বাড়ী ছেড়ে বাইরে চলে গেছে।

৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:



দু:খজনক

৪| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৪

ভাললাগে না বলেছেন: এখানে বড় ভাইএর অনেক বড় দোষ। সেই সাথে ছেলের মা বাবারও দোষ। বড় ছেলে বউকে সময় দিত না আবার ছোট ভাইকেও বিয়ে দিতে দেরী করছিল।

বউকে সময় না দিলে এরকম হবেই।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৫৭

ডেস্পারেট ওয়ারিয়র বলেছেন: পতিব্রতা স্ত্রী পাওয়া এখন নাইটমেয়ার।

৫| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১৪

জগতারন বলেছেন:
লেখক ডেস্পারেট ওয়ারিয়র ঘটনাটি সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। এ রকম ঘটনা এখন অহরহ দেখা যাচ্ছে যা কাম্য নয়।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৫৭

ডেস্পারেট ওয়ারিয়র বলেছেন: হুম্ম, অহরহ দেখা যাচ্ছে। ধন্যবাদ।

৬| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:১৯

আবু তালেব শেখ বলেছেন: পরকিয়া পরিত্যাগ করা বড়ই দুরহ ব্যাপার। এর সাধ ঘরের বউয়ের থেকেও মিঠে।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৫৮

ডেস্পারেট ওয়ারিয়র বলেছেন: নিষিদ্ধ জিনিসে আগ্রহ বেশি।

৭| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:২০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আরো আগে তালাক দেয়া উচিত ছিল। আর তালাক দিয়ে ছোট ছেলের সাথে বিয়ের সিদ্ধান্তে আর ছোট বউর সাথে বড় ছেলের বিয়ের সিদ্ধান্তে বোঝা যায় এই পরিবার 'গাঞ্জাখোর' একটা পরিবার...
ছোট বউকে স্যালুট...

০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:০০

ডেস্পারেট ওয়ারিয়র বলেছেন: আমার মনে হয় ছোট ছেলের সাথে ভাবীর বিয়ে ঠিক ছিল, কিন্ত ছোট বৌয়ের সাথে বড় ছেলের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত চরম ভুল ছিল।

৮| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৩৯

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আমাদের সমাজে পরকীয়া বেড়ে গেছে।
নিজেদের মূল্যবোধ কমে গেলে সমস্যা আরও বাড়বে।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০৩

ডেস্পারেট ওয়ারিয়র বলেছেন: মূল্যবোধ বাড়ানোর জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.