![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“হাসনাত”
বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির চানক্যে ভর করে হাসিনার সরকার গত নির্বাচনের বৈতরনী পার হয়েছিল। এসব প্রতিশ্রুতির একদিকে ছিল সন্ত্রাস,দুর্নিতি,গুম,ক্রসফায়ার আর দ্রব্যমূল্য হ্রাস করন। ছিল বিনেপয়সায় কৃষকের সার,পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন,দশ টাকায় এক কেজি চাল আর ঘরে ঘরে যুবক ছেলে মেয়েদের জন্য চাকুরীর প্রতিশ্রুতি। শেখ মুজিব হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের মত স্পর্শ কাতর বিষয়ও তার অন্তরভূক্ত ছিল। আর অন্যদিকে ভারসাম্য মূলক পররাষ্ট্র নীতি গ্রহন করে বহিরবিশ্বে দেশের ভাব মূর্তি উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা আনয়নের প্রতিশ্রুতি ছিল অন্যতম। গত নির্বাচনের আগে হাসিনা সরকারের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতির কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে সেটাই আমার আজকের আলোচ্য বিষয়।
আমাদের দেশে সন্ত্রাসের সমস্যা আগেও ছিল। তবে গত নির্বাচনে আওয়ামিলীগ ক্ষমতাসীন হবার পর ছাত্রলীগ যুবলীগ আর শ্রমিক লীগ সন্ত্রাসের যে নজির স্থাপন করেছে তা দেশাসী বহুদিন ভীতির সঙ্গে মনে রাখবে। চাঁদাবাজী,টেন্ডারবাজী, ছিনতাই,রাহাজানি,ধর্ষন ও খুন সহ সকল বিষয়ে ছিল তাদের অবাধ বিচরন। তাদের হাতে দিনদুপুরে শুধু বিশ্বজিতের মত সাধারন মানুষ খুন নয়, পুলিশ ও প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাও লান্চিত হয়েছে। তারা সন্ত্রাসী কাজে রাস্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা পেয়েছে। গুম,খুন ও ক্রসফায়ার কমেনি। বরং ক্ষেত্র বিশেষে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহু গুন। তার উপর পেশাদার তষ্কর,ডাকাতের অত্যাচারের ব্যাপারতো আছেই। এসব অন্যায়ের লাগাম টেনে ধরার কোন চেষ্টাই করেনি গণতন্ত্রের মানষকন্যা তকমাধারী হাসিনার সরকার।
দ্রব্য মূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু খাদ্য দ্রব্য থেকে শুরু করে এমন কোন ব্যাবহার সামগ্রী নেই যার দাম গত পাঁচ বৎসরে বহুগুন বৃদ্বি পায়নি। সরকরার দ্রব্যের মূল্য জনগনের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছে এটিও দৃশ্যমান নয়। বরং সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময় দ্রব্য মূল্যের আন্তর্জাতিক বাজার বৃদ্ধির ঢোল পিটিয়ে স্থানীয় মূল্য বৃদ্ধির ব্যার্থতা আড়াল করতে চেয়েছে। দেশের রাস্তাঘাট উন্নয়নে নতুন কোন প্রকল্প দূরে চলমান রাস্তাঘাট মেরামত করে ব্যাবহার উপযোগী রাখতে পারেনি। বহুল আলোচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম,ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন রাস্তার কাজ তিন ভাগের এক ভাগও সম্পন্ন হয়নি।
কৃষি এবং শিক্ষা খাতে কিছুটা সাফল্যের কথা শোনা যায়। কিন্তু বিনে পয়সায় সার দেবার নির্বাচনী ওয়াদাকে বেমালুম অস্বীকার করে কৃষকের সঙ্গে প্রতারনা করা হয়ছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করতে হয়েছে। সিলেট এমসি কলেজের মত ঐতিহাসিক কলেজের হোষ্টেল পুরানো হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে দলীয় করন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ছাত্র ছাত্রীরাতো বটেই অসংখ্য প্রবাষক আর প্রিন্সিপাল হাসিনার সোনার ছেলেদের হাতে লান্চিত হয়েছে। বরিশাল বিএম কলেজের প্রিন্সিপালকে মারধর,বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালেয়ের শিক্ষকের উপর এসিড নিক্ষেপ, ইসলামী ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগের হামলা বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য । যে সরকারের ছত্রছায়ায় শিক্ষাঙ্গন এমন নগ্ন সন্ত্রাসের শিকার হয় সেই সরকার শিক্ষাঙ্গনে সাফল্য লাভের দাবী করার নৈতিক অধিকার রাখেনা ।
দুর্নিতি দমনের বিষয়টি গত নির্বাচনে ছিল হাসিনা সরকারের অন্যতম ওয়াদা। চারদলীয় সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নিতির অভিযোগ উঠেছিল। জনগণ ভেবেছিল আওয়ামিলীগে ভোট দিলে এর উত্তরন ঘটবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নিতি কমেছে এটা দেশের জনগন বিশ্বাস করেনা। বরং তারা বিশ্বাস করে দেশের দুর্নিতি এনালগ থেকে ডিজিটাল জগতে প্রবেশ করেছে। প্রকল্পের কাজ দেশের মাটিতে হয় কিন্তু ঘুস কমিশন যায় কানাডায়। দেশে মা কাজ পাইয়ে দেয় আর ছেলে আমেরিকা বসে মাশূল নেয়। এসবই সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল ছেলের কল্যাণে। ঘুষ কেলেংকারীতে পদ্মাসেতু ডুবলেও কেশিয়ার আবুল হোসেন পায় দেশ প্রেমিকের সনদ। মশিউররা চাকুরী চ্যুত হয়না । শেয়ার বাজার লুটে তিন মিলিয়নের অধিক মানুষ পথের ফকির হলেও দরবেশ বাবার ধবল দাড়ির এতটুকু রং ফিকে হয়নি। কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে দুর্নিতি যে হারে বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিন্তু সেই হারে বৃদ্ধিপায়নি । উপদষ্টা তৌফিক এলাহীর বিরুদ্ধে কুইক লুটপাটের অভিযোগ উঠলেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। হলমার্ক কেলেংকারীতে জনগনের সোনালী ব্যাংক ফতুর হলেও ডাঃ মুদাস্সর এখনও শেখ হাসিনার প্রিয় পাত্র। সরকারের দুর্নিতি আর ব্যর্থতা দেখে বিশ্ব চেম্পিয়ান দুর্নিতিবাজ সৈরাচার এরশাদও লজ্জায় রাঙা হয়।
শেখ হাসিনা গত পাঁচ বছরে একটি কাজ সম্পন্ন করেছে, আর সেটা হল শেখ মুজিব হত্যার বিচার। তবে এ ক্ষেত্রেও ব্যার্থতা নেই বলা যাবেনা । দুর্বল কূটনৈতিক তৎপরতার কারনে দন্ড প্রাপ্ত অনেক আসামীর দন্ড কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। যোদ্ধাপরাধ মামলার বিচার ছিল অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গিকার । দেশ ও জাতি আশা করেছিল আন্তর্জাতিক মানদন্ডের স্বচ্ছ বিচারে দায়ী ব্যাক্তিরা সাজা পাবেন,জাতি পাপ মুক্ত হবে । জনগন আশা করেছিল অন্তত এই বিচারটি নিয়ে কোন রাজনীতি করন হবেনা । কিন্তু হতাশ জনগণ দেখল শেখ হাসিনার বিজ্ঞ আইন মন্ত্রী কি কৌশলে বিরুধীদল দমনে ট্রাইবুনালকে ব্যাবহার করেছেন । স্কাইফ কেলেংকারী,সুখবালার অপহরণ,কাদের মোল্লার মামলাকে কেন্দ্র করে আইন পরিবর্তন করে ভোতাপেক্ষতা প্রয়োগ আর হালের সাকা চৌধুরীর মামলা রায় প্রকাশের কেলেংকারী পুরো ট্রাইবুনালকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে ।
সরকারের পররাষ্ট্রনীতির দিকে যদি তাকাই কেবল ব্যার্থতাই চোখে পরে। বর্তমান গ্লোবাল বিশ্বে ভারসাম্য মূলক পররাষ্ট্র নীতি ছাড়া কোন দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। পার্শ্ব বর্তি দেশ ভারত,পরাশক্তি আমেরিকা,চীন ইউরোপ সবাইকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। কিন্তু ইউনুস ইস্যুতে আমেরিকার সাথে সরকার অকারনে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। অতিমাত্রায় ভারত মূখীতায় চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। সর্বাপেক্ষা বেশী রেমিটেন্স প্রদানকারী মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। আমাদের প্রজাপতি মনি স্বামীর বাশির টানে দিল্লী যেতে পারলেও শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নের উদ্দোগে মালয়এশিয়া যাবার সময় হয়নি। সরকারের শেষ সময়ে এসেও পররাষ্ট্র মন্ত্রী দেশবাসীকে কিছুই দিতে পারেননি ,শুধু মিথ্যে আশ্বাস আর কিউটি হাসি ছাড়া। ওই হাসির আবেশ ছড়িয়ে তার ব্যাক্তিগত উন্নতি হলেও দেশের সাথে বিদেশ রাষ্ট্রের সম্পর্কের কোন উন্নয়ন ঘটেনি।
গত পাঁচ বৎসরে সরকার ভারতকে কেবল দিয়েই গেছে। ট্রানজিট,ট্রান্সশিপমেন্ট ও করিডোর দিয়েছে। সমুদ্র বন্দর ও নদী বন্দর ব্যাবহার করতে দিয়েছে অবলীলায়। নিজ দেশের গাড়ী ঘোড়া চলার মত পর্যাপ্ত রাস্তা না থকলেও ভারতের ভারী যান চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নিজের জীবন্ত নদীর উপর বাধ দিয়ে তাদের বৈদ্যুতিক যন্ত্র পরিবহনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। অপরদিকে ভারত তিস্তা চুক্তির কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটা করেনি। আমাদের ন্যায্য পাওনা করিডোর আমাদেরকে হস্তান্তর করেনি। সীমান্তে প্রতিদিন আমাদের হত্যা করছে। কখনও ফসল,পশু আবার কখনও সীমান্ত থেকে মানুষ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কি অকৃত্তিম বন্ধুত্ত্বের প্রতিদান। সরকারের অতিমাত্রায় ভারত মুখিতার বিরুধীতায় দেশবাসী একাত্ত্ব হলেও সরকার নির্বিকার। জনগনের ওয়াদা পালনে হাসিনার সরকার যত নিস্পৃহ ভারতকে নিজ দেশের স্বার্থ বিলিয়ে দিতে ততটাই আগ্রগী।
হাসিনা সরকার ভারতের মাধ্যমে আমেরিকা ও অন্যান্য পরাশক্তিকে এই বলে মেসেজ দিতে চায় যে,আগামী নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় যাওয়া মানে জঙ্গীবাদের ক্ষমতায়ন। জঙ্গীবাদ রুখতে হলে তার সরকারকে ক্ষমতায় ফেরানোর বিকল্প নেই। ধর্মিয় রাজনীতির ব্যাবহারে বিএনপির চেয়ে অনেক অগ্রগামী হলেও,নির্বাচন পূর্ব সময়ে বেগম জিয়ার চেয়ে তজবী হিজাবে অধিক সজ্জিত হয়েও শেখ হাসিনা নিজেকে অধিক সেক্যুলার হিসাবে বহির্বশ্বে গ্রহন যোগ্যতার চেষ্টা চালিয়ে সফল হন। কারন বিএনপির নির্বাচনী মিত্র জামাত । ভোটের বাজারে জামাতের আলাদা মূল্য রয়েছে । তা ছাড়া বিএনপি জমাতের সঙ্গ ছাড়লে যে আওয়ামিলীগ তাদের লুফে নিবে এটা সকলেরই জ্ঞাত সত্য। এসব কারনে জঙ্গী দমনে দক্ষতার রেকর্ড থাকার পরও বিএনপির বিরুদ্ধে অপ্রচারে আওয়ামিলীগ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে ।
দেশের সাধারন ভোটাররা যে আর আওয়ামিলীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায়না,এটা শেখ হাসিনা নিজেও জানেন। কিন্তু তার পরও সজিব জয় আওয়ামিলীগের আগাম বিজয়ের খবর ফাস করে। প্রশ্ন হল সে কিসের ভিত্তিতে এমন কথা বলে? সে কিন্তু কথার কথা বলেনি । সে জানে তার মা তত্ত্বাবধায়ক ব্যাবস্থা উঠিয়ে দিয়ে নিজের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধ পরিকর । সাজানো প্রশাসন আর মিডিয়ার কাসাজিতেই তিনি নির্বাচনে জয় লাভ করতে চান। যে কোন ভাবে বুঝিয়ে ১৮ দলকে তার অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করাতে চান । তবে শেখ হাসিনার অধীনে বিরুধী দল নির্বাচনে একবার যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তবেই তার আশা পূরন হয়। জনগণ ভোট দিক আর না দিক, আওয়ামিলীগকেই সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী ঘোষনা করা হবে। অব্যাহত প্রাপ্তির আশায় ভারত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের পক্ষে দুতিয়ালী করবে। আর জঙ্গী দমনের মোক্ষম সঙ্গী বিবেচনায় পরাশক্তি গুলো শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরাবে এমনটাই সজিব জয়ের আশা। দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটার কূল বিএনপি মিত্রের পাশে রয়েছে । জঙ্গী দমনের স্বদীচ্ছা ও স্বক্ষমতার প্রমান দিয়ে পরাশক্তি গুলোর বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করেই বিএনপি মিত্র শেখ হাসিনার চক্রান্ত মূলক বিজয়ের নীল নকশা ধূলিস্বাত করে বিজয়ের ফসল নিজ ঘড়ে তোলতে পারে ।
©somewhere in net ltd.