নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিডিহাসনাত

আমি একজন নিয়মিত ব্লগার

ব্যারিষ্টার হাসনাত তালুকদার

ব্যারিষ্টার হাসনাত তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে দেশে চোরেরা বড়

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৩২



“হাসনাত”



দুর্নিতিতে আমরা ধারাবাহিক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান,এ খবর দেশবাসী থেকে শুরু করে বিশ্ববাসী সকলেই জানেন । কখনও কখনও আমরা দুর্নিতির শীর্ষ স্থান ধরে রাখতে ব্যার্থ হলেও শীর্ষ পাঁচ থেকে আমাদের অবস্থান কেউ টলাতে পারেনা । আমাদের রাষ্ট্রীয় দুর্নিতির মাত্রা পরিমাপ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারনেশনাল নামক একটি সংস্থা । প্রতি বৎসর যখনই সংস্থাটি রিপোর্ট প্রকাশ করে,দেশ জুড়ে ঢিঢি পড়ে যায় । দেশবাসী জানতে পারে সেরা দুর্নিতিবাজ সংস্থাটির নাম । বিশ্ববাসী জানতে পারে দুর্নিতিতে আমাদের অবস্থান । আর দুর্নিতিতে চ্যাম্পিয়ান সংস্থাটি শুরু করে প্রতিবাদ, হুমকি ধামকি,এমনকি মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারনেশনালকেই হেনন্থা করে । দুর্নিতিবাজরা দুর্নিতি বিরুদ্ধ রিপোর্টকে সংঘবদ্ধ ভাবে মোকাবেলা করে । প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশে দুর্নিতি আছে কি নেই,থাকলে সেটা কি পরিমানে আছে ?



একজন দরিদ্র কৃষক ঋণ সংস্লিষ্ট সকলকে তুষ্ট না করলে কৃষি ব্যাংকের ঋণ পায় না । সে যখন সরকারী হাপাতালে যায়,খাবার ও ঔষধ সহ সকল চিকিৎসা বিনে পয়সায় পাবার অধিকার থাকলেও এসবের কিছুই সে পায় না । ঔষধ ও সার্টিফিকেট ক্রয় বিক্রয় হাসপাতালের সাধারন ঘটনা । আইন আদালতে মামলা দায়ের,সমন, শুনানী এসবের কিছুই হয়না পকেট খরচ ছাড়া । থানা গুলোতে পোষ্টিং নিতে এবং পোষ্টিং খরচ মেটাতে আমজনতার পকেট কাটতে আমাদের পুলিশ বাহিনী বড়ই ওস্তাদ । পানি,বিদ্যুৎ,টেলিফোন সহ এমন কোন সেবা খাত নেই যেখানে টাকা ছাড়া কোন সেবা মিলে । দেশে পরিবহন খাতে ভয়াবহ সংকট রেল,বিআরটিসি আর বিমান কোন যাত্রী পায়না । বিআরটিএ,বিমান,কাষ্টমস,পাসপোর্ট আর টেক্স বিভাগের সেবা যিনি একবার নিয়েছেন, তিনি দৃশ্যমান দুর্নিতির বিষয়ে একমত হবেন । শিক্ষা বিভাগের মাউসি,ভুমি ও রেজিষ্ট্রি খাতে দুর্নিতির বিষয়ে জ্ঞাত নয়,দেশে এমন লোকের সংখ্যা বিরল ।



দেশে দুর্নিতির মাত্রা এত ভয়াবহ যে, একটি ব্যাংক লুটের কবলে পরে ফতুর হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পারে না, অর্থ মন্ত্রী চাকরী হারায় না । ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ শুরুর আগেই কমিশন চলে যায় । শেয়ার বাজার,বিটিসিএল আর বিদ্যুৎ খাত লুট হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় । দায়ী ব্যাক্তিদের সাজাতো দূরে থাক, তারা উপদেষ্টা পদ পায় বা দেশ প্রেমিক উপাধি পায় । সরকারের শীর্ষ ব্যাক্তির প্রত্যক্ষ মদদ ছাড়া এসব কুকর্ম করা সম্ভব নয় । তা ছাড়া ব্যাংক ও বীমা সহ বড় বড় লাইসেন্স আর টেন্ডার প্রাপ্তিতে স্বয়ং প্রধান মন্ত্রী বা তার পরিবারকে সন্তষ্ট করতে হয় । এত কিছুর পরেও কে বলতে পারে দেশে দুর্নিতি নেই ?



আমরা যদি আমাদের চার পাশে চোখ মেলে তাকাই তবে ঘটমান দুর্নিতির সরব উপস্থিতি সহজেই উপলব্দী করতে পারি । ক্লাশের শেষ ব্রেন্চের অমনোযোগী ছাত্রটি, ছাত্র রাজনীতির কল্যাণে কয়েক বৎসরে কোটিপতি,শিল্প পতি হয় । নিম্ন বিত্তের মেধাবী ছেলে বা মেয়ে ক্যাডার চাকুরীর সুবাদে শত কোটি টাকার মালিক হয় । চাকরী শেষে বিলাসী ও ব্যায় বহুল রাজনীতিতে জড়ায় । পাড়ার বখাটে কপর্দক শূন্য ছেলে বিড়ি ফুকার পয়সা থাকেনা কিন্তু সরকার দলীয় রাজনীতির কল্যানে বাড়ি,গাড়ি আর বিশাল ব্যাবসার মালিক বনে যায় । অনেক পরিবার রয়েছে বংশ পরস্পরায় রাজনীতিক । তাদের কোন দৃশ্যমান বৈধ উপার্জন না থাকলেও দৈনন্দিন জীবনে প্রাচুর্যের অভাব নেই । উপার্জনহীন রাজনীতিক, কাল টাকার মালিক ব্যাবসায়ী বা কেরানীর ছেলে মেয়েরা উন্নত বিশ্বের নামীদামী প্রতিষ্ঠানে নিজ খরচে পরাশোনা করছে । ক্ষমতার মসনদে আসীন শীর্ষ নেতৃত্ব আর তার ডিজিটাল পরিবার যে দুর্নিতির সাগরে নিমজ্জিত এটা নাবালক শিশুও মুখস্ত বলতে পারে । দেশের দুর্নিতি ও দুর্নিতিবাজ সম্পর্কে জনগনের ধারনা খুবই পরিস্কার ।



উপরে উল্লেখিত খাত ছাড়াও অসংখ্য খাত রয়েছে যেখানে খুলামেলা দুর্নিতি হচ্ছে । কিন্তু সংক্ষিপ্ত কলেবরে সকল বিষয় উল্লেখ সম্ভব নয় । দেশে দুর্নিতি যেমন আগেও ছিল, তেমনি বর্তমানেও আছে, হয়ত ভবিষ্যতেও থাকবে । তবে হতাশার বিষয় হচ্ছে চলমান দুর্নিতিরুধ কল্পে কোন পদক্ষেপ নেই । বরং দিনকে দিন এর মাত্রা বেড়েই চলছে । যে কারনে সিস্টেমের ভেতরে পরে অনেকে হয়ত বাঁচার তাগিদে দুর্নিতিবাজের তালিকায় নাম লেখাচ্ছে । দুর্নিতিরুধে জুরালো প্রচেষ্টা থাকলে হয় এই শ্রেনীর মানুষ গুলোকে ঐ কাল পাপ থেকে বাঁচানো যেত । মুখে আমরা যতই বলি দেশের বেশীর ভাগ লোক দুর্নিতিবাজ, আসলে কিন্তু ব্যাপারটা তেমন হয় । এখনও সব সরকারী কর্ম কর্তা,রাজনীতিক,বা ব্যাবসায়ী দুর্নিতিবাজ নয় । দেশের কৃষক,শ্রমিক আর মেহনতি মানুষ যেমন দুর্নিতিবাজ নয়,তেমন তাদের দুর্নিতি করার সুযোগও নেই । সংখ্যার বিচারে এখনও দেশের অধিকাংশ মানুষ দুর্নিতি মুক্ত । একজন আদর্শ রাজনীতিক,ডাক্তার, উকিল, প্রকৌশলী বা ব্যাবসায়ী যদি দুর্নিতি রুধে ভূমিকা নিতে এগিয়ে আসেন, অতি সহজেই তিনি লক্ষ কোটি নিস্কলুস মানুষের সমর্থন পাবেন । পচেঁ যাওয়া সহকর্মিকে পেছনে ফেলে তিনিই জাতীয় মুক্তির পথ প্রদর্শক হতে পারেন । আমরা কি সহসাই তেমন একজন রাজনীতিক ডাক্তার উকিল বা বা ব্যাবসায়ী নেতার দেখা পাবনা যে এই ঘুনে ধরা সমাজকে পাল্টে দিতে পারে ।

























































মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.