![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সখিনার প্রস্তাব পেয়ে মোর্শেদ সানন্দ চিত্ত্বে রাজী হয়ে গেল। কথা হল দুজনে মিলে আজ একটি লং ড্রাইভে যাবে। মোরশেদ বলল,লং ড্রাইভে যাব এটা খুবই ভাল কথা,কিন্তু ব্যাপারটা কি? ব্যাপার একটা আছে এবং সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ন, তবে তুমি রাজী হয়েছ এতেই আমি খুশী, বলল সখিনা। কথা মত সখিনার সাথে মোর্শেদের লং ড্রাইভ শুরু হল। বিশেষ কোন গন্তব্য নেই,তবে দুজনেই আজ রাতটা নির্জন রাস্তায় ড্রাইভ করবে আর সেই সাথে প্রয়োজনীয় কিছু আলাপ সারবে বলে সিদ্ধান্ত নিল।
সখিনার বাগান বাড়ির গেইটে এসে মোর্শেদ গাড়ি বদল করে সখিনার গাড়িতে উঠে পড়ল। সখিনার আলিসান লিমুজিনে তখন বিস্বস্ত ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ নেই। প্রসস্ত ছিটে খুব আয়েশ করে বসেছিল সখিনা। এবার মোর্শেদ স্মিত হেসে সখিনার পাশে এসে বসল। গাড়ি চলতে শুরু করল শেরে বাংলা নগরের দিকে। এবার সখিনা কথা বলা শুরু করল,তোমাকে আমাদের কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্যই এই লং ড্রাইভে নিয়ে এসেছি। তুমি ইতিমধ্যে জান, আমাদের বিরোধী পক্ষ আসন্ন নির্বাচনে আংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করছে এই যুক্তিতে যে, এখানে লেবেল প্লেইং ফিল্ড নেই। আমি বর্তমান সংসদের ভিপি পদ থেকে রিজাইন না করলে ওরা নির্বাচনে আসবেনা, এটা কেমন কথা বল?
মোর্শেদ এতক্ষন চুপকরে সখিনার কথা শুনছিল। প্রশ্নবোধক শব্দে তার সিম্বত ফিরলে সে বলল, ওরাতো ঠিকই বলছে। তুমি যদি ভিপি পদ থেকে না সরেই নির্বাচন করো তাহলে তুমিতো বাড়তি সুবিধা নিবে। গণতান্ত্রিক রীতিতে এটাতো তুমি চাইতে পারনা। তাছাড়া এই দাবীতে তুমিই ১৭৩ দিন ক্লাস বর্জন করেছ, কলেজের চেয়ার-টেবিল ভেঙ্গেছ, কলেজগামী সম্মানীত ষ্টাফদের তোমার ছেলেরা দিগম্বর করেছে, কলেজের আশ-পাশের রাস্তায় চলা যানবাহনে আগুন দিয়েছ, এখনতো এটা তুমি করতে পারনা। আর তোমার পদত্যাগের ব্যাপারে শুধু আমাদের বিরোধীপক্ষই নয়, সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরাও এই দাবীতে সোচ্চার। বলতে পার আমি নিজেও তাই চাই।
সখিনা বলল, তুমি বাস্তব অবস্থা বিবেচনা না করেই আমার উপর রাগ করছ। আমি পদত্যাগ করে যদি ইলেকশান দেই তাহলে ভিপি-জিএস তো দূরে থাক লাইব্রেরী সম্পাদকের পোষ্টে জিততে পারব কিনা আমি নিজেই সন্দিহান। তবে কিছু সদস্য পদে জিততে পারব। আমার কাছে খবর আছে তুমি কোন সদস্য পদেও জিততে পারবেনা। গত পাঁচ বছর ছাত্র সংসদ চালাতে গিয়ে ছাত্র ভর্তি, পরিবহন খাত, উন্নয়ন খাত, এমনকি পিকনিকের বাজেট থেকে মারা টাকার ভাগ কম-বেশী তোমরাও নিয়েছ। তাছাড়া বিরোধী নেত্রীর ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে নির্বাচিত সংসদকে একবার তুমি গায়ের জোরে উৎখাত করেছিলে, মনে আছে? মনে আছে, কিন্তু এসব পুরোন কথা এখন বলে লাভকি? বলল মোর্শেদ।
সখিনা বলল, আমি কিন্তু একবার তোমার আহবানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এসেছিলাম। সেবারও বিরোধী দল এবং সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা ঐ নির্বাচন বর্জন করেছিল। আমি বেইমান হবার ঝুকি নিয়েও শুধু মাত্র তোমার অনুরোধ রক্ষায়ই নির্বাচনে এসেছিলাম। তুমি জয়ী হয়ে ভিপি হয়েছিলে। আজ কি আমরা সেই কাজটাই আবার করতে পারিনা? সেদিনের কথা বাদ দাও, তখন বয়স কম ছিল সব ধরনের ঝুকিই নিতে পারতাম, এখন বয়স বেড়েছে, এখনকি এসব হটকারীতা করা ঠিক হবে? তাছাড়া এটাই ছাত্র সংসদে আমার শেষ নির্বাচন। এখন তোমার কথামতো সবাইকে ছেড়ে যদি নির্বাচনে যাই তাহলে আমার বেইমান নাম নিয়েই মরতে হবে,বলল মোর্শেদ।
সখিনা বলল,শুন মোর্শেদ এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আমার বাবা, সেই হিসাবে আমি চাইলে নির্বাচন ছাড়াই সারাজীবন ভিপি থাকতে পারতাম। আমি গণতান্ত্রীক রীতিতে বিশ্বাসী বলেইনা নির্বাচনের ব্যাবস্থা এখনও রেখেছি। কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার অলরেডি আমাকে বলে দিয়েছেন নির্বাচনকালীন সময় আমিই ভিপি হিসাবে থাকব,তিনি আমাকে ব্যাকআপ দিবেন। মোর্শেদ বলল, এই মূহুর্তে সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর তোমার জনপ্রিয়তা নাই বললেই চলে। ওরা সবাই বিরোধী দলের নেতাকে ভিপি হিসাবে দেখতে চায়। কলেজের ক্লাস রোম, কমনরোম, খেলার মাঠ সবই বিরোধী দলের দখলে। শুধু ছাত্র সংসদ আর অফিস কক্ষ ওদের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে। এই অবস্থায় একতরফা নির্বাচন দিয়ে তুমি কি টিকতে পারবে? প্রশ্নটা শুনে সখিনা একটু বিরক্ত হল। তবে তাৎক্ষনাত নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, একটা কথা তোমাকে বলি, আমার ক্যাডার,প্রিন্সিপাল স্যারের রিজার্ভ বাহিনী এরা সবাই আমাকে নির্বাচনকালীন লিপ্টাপের সমস্ত আয়োজন সেরে রেখেছে। তাছাড়া পার্শ্ববর্তি বিশ্ববদ্যালয়ের ভিপি দাদাসিং ও তার চ্যালা শংকর মরনরাও রাত দিন কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও ভয় পেলে চলে?
সখিনার এতসব যুক্তি আর আশ্বাসেও মোর্শেদের মন ভরেনা। সে বলে, সখিনা তুমিই কিন্তু বাস্তব অবস্থা বুঝতে পাচ্ছনা। আমি যতদূর জানি ডন ভাইরা বিভিন্ন ইস্যুতে তোমার উপর ক্ষ্যাপে আছে। ওরা তোমাকে আর ভিপি পদে দেখতে চায়না,কারন তুমি দাদাসিংকে বড্ড বেশী ফেবার কর,মোর্শেদ থামল। শুন মোর্শেদ,ডন ভাইকে বলেছি কলেজের সব তাবলিগ-জামাতি-হেফাজতি ছাত্র-ছাত্রীরা বিরোধী দলে একাত্ত হয়েছে। বিরোধীদল থেকে ভিপি হওয়া মানে কলেজটা মৌলবাদীদের হাতে চলে যাওয়া, এখন তুমিই বল ডনভাই এমন ঝুকি নেবেন কি? থামল সখিনা। একটু দম নিয়ে আবার বলা শুরু করল, রাত গভীর হয়েছে,তোমাকে অনেক কথাই বললাম কিন্তু তুমি কিছুতেই আশ্বস্ত হতে পারছনা। তোমাকে শেষ একটা কথা বলি আমার কাছে খবর আছে, বিরোধীদল থেকে এবার ভিপি হলে আমার অস্তিত্ব যেমন বিপন্ন হবে তেমনি তুমিও বাচঁতে পারবেনা। কারন তুমি ওদের প্রধান নেতাকে হত্যায় জড়িত ছিলে বলে অভিযোগ আছে। এবার সুযোগ পেলে ওরা ওদের স্বাদ মিটাবে। এখন সিদ্ধান্ত নেবার দায়ীত্ব ওদের ভিপি হবার সুযোগ করে দিয়ে তোমার-জীবন হারাবে,না আমার সাথে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্যারিয়ার এগিয়ে নেবে।
মোর্শেদ কিছুক্ষনের জন্য চোখ বন্ধকরে ভাবল সত্যিইতো সে বিরোধীদলের প্রধান নেতাকে হত্যা করেছিল। সুযোগ আসলে ওরা যদি সত্যিই প্রতিশোধ নেয়। আনমনা হয়ে সে সখিনাকে বলল, নির্বাচনে আমি যাবো কিভাবে? সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের আমি অসংখ্যবার বলেছি তোমার সাথে আর থাকবনা,তোমার সাথে বসব না,তোমার সাথে নির্বাচনে যাবনা, এমনকি তোমার সাথে বেহেস্তেও যাবনা। যদি যাই তবে আমি বেইমান,নেমুক হারাম,ওরা আমার মুখে থুতু দিবে। এখন যদি সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা জানে আমি তোমার সাথে লং ড্রাইভে ঘুরছি, তোমার সাথে নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তবে ওদের বুকের ভেতর আমার জন্য যে ভক্তির আসনটা ছিল সেটা ঘৃনার ঝড়ে দোলতে থাকবে, এখন আমি কি করি বল সখিনা।
চতুর সখিনা বুঝতে পারল মোর্শেদ এখন অনকটা দুর্বল হয়ে পরেছে। সে বলল মোর্শেদ তোমাকে একটা গল্প বলি শুন।" এক সমকামী শিক্ষক তার ছাত্রকে বলল, এস আমরা সমকামে লীপ্ত হই। ছাত্র শুনে বলল,আপনি গুরুজন আপনার সাথে এই পাপ কাজ আমি করতে পারবনা। শিক্ষক ছাত্রকে বলল, শিক্ষকের আদেশে ছাত্র এমন কাজে লিপ্ত হলে তাতে কোন দুষ নেই। কিন্তু চরিত্রবান ছাত্রটি লম্পট শিক্ষককে বলল, এমন কাজ পাপই নয়, যখন কেউ সমকামে লিপ্ত হয় তখন সেই পাপের ভারে সৃষ্টি কর্তার আসন কেঁপে উঠে। শিক্ষক নাছুর বান্দা, সে ছাত্রকে বলল, তুমি-আমি যদি রাজী থাকি সৃষ্টি কর্তার আসন দূরে থাক, আমাদের শয়নের আশনটিও কেঁপে উঠবেনা।" সখিনা থেমে দম নিয়ে বলল, তুমি আর আমি রাজী হলে কলেজের কোন ছাত্র-ছাত্রীই আমাদের এই গোপন বিষয়টি জানতে পারবেনা। আর একটা কথা তোমাকে বলি, গত ছাত্র সংসদে তোমাকে কোন একটা সম্মান জনক জায়গায় রাখার ওয়াদা দিয়েছিলাম কিন্তু সেকথা রাখতে পারিনি, আমি লজ্জিত। এবার যদি সব ঠিক থাকে তবে তোমাকে আমি আগের ক্ষতি পুষিয়ে দেব, এ আমার ওয়াদা-হাত বাড়িয়ে মোর্শেদের হাত ধরে সখিনা।
সার্ক ফোয়ারার আলোতে ঝলমল করছে পুরো এলাকা। তার পাশ দিয়ে চলছে সখিনার লিমুজিন। ভেতরটা ডিমডিমে অন্ধকার। মোর্শেদ সখিনার ধরা হাতে হাত রেখে বলে আমি রাজী সখিনা, তোমার অধীনেই নির্বাচনে যাব,তুমি নির্বাচনের ব্যাবস্থা করো। লিমুজিনটা চলতে চলতে কলেজ ক্যাম্পাসের একটা নির্জন জায়গায় এসে থামল। জায়গাটায় ল্যাম্পপোষ্ট নেই,ভূতূরে আর গুটগুটে অন্ধকার। সেই অন্ধকারেই সেদিন হারিয়ে গেল সাধারন ছাত্র-ছাত্রী আর বিরোধী দলের দাবীকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচন,হারিয়ে গেল গণতন্ত্র-মানবাধিকার,আর আইনের শাসন। বিরোধী পক্ষ আর সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা কি পারবে জুলুম,অন্যায়-অবিচার আর সৈরতন্ত্রের সেই তিমির ভেদ করে নতুন দিন ছিনিয়ে আনতে?
বিষয়ঃ রম্য রচনা
©somewhere in net ltd.